সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের দাবি

স্পর্শকাতর বিষয়ে সম্মানজনক সমাধান কাম্য অবশেষে মুখোমুখি জাতীয় সংসদ ও উচ্চ আদালত। একদিকে সংসদে স্পিকার আবদুল হামিদের দেওয়া বক্তব্য রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে মন্তব্য করে হাইকোর্ট বলেছেন, স্পিকার সুপ্রিম কোর্ট ও সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে উস্কে দিয়েছেন। তিনি সংসদের দায়মুক্তির অপব্যবহার করেছেন।


অন্যদিকে তিন দিনের মধ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে হাইকোর্টের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীকে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন মহাজোটের সংসদ সদস্যরা। প্রধান বিচারপতি এ উদ্যোগ না নিলে সংবিধান সংশোধন করে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে আনা হবে- এমন কথাও উচ্চারিত হয়েছে সংসদে।
উচ্চ আদালতের বেশ কিছু কার্যক্রম নিয়ে ২৯ মে মঙ্গলবার সংসদে সমালোচনা হয়। দুজন সংসদ সদস্যের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে স্পিকার আবদুল হামিদ অ্যাডভোকেট স্বয়ং আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, আদালতের রায়ে জনগণ ক্ষুব্ধ হলে বিচার বিভাগকেও তারা রুখে দাঁড়াতে পারে। একই সঙ্গে সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, সরকার স্বৈরাচারী হলে জনগণ তাদের বিরুদ্ধেও রুখে দাঁড়াতে পারে। স্পিকার বলেন, তাই কারোই এমন 'ভাবসাব' করা ঠিক নয় যে আমি ক্ষমতা পেলাম, একটা কিছু দেখাই। সংসদের ওইদিনের কার্যক্রম পরদিনের সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়। তারই রেশ ধরে আদালত অবমাননার মামলায় বিষয়টি আলোচিত হয়। সংসদের ওই দিনের কার্যক্রমের ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন তুলে ধরে রিট মামলার আইনজীবী মনজিল মোরশেদ আদালতকে বলেন, 'বিচারাধীন বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচার বিভাগকে সতর্ক করলেন স্পিকার।' তাঁর মতে, 'সংসদের কার্যক্রম আদালত অবমাননার আওতায় আসবে না। আর এ দায়মুক্তির সুযোগ নিয়ে অসত্য তথ্য দিয়ে সংসদে বিচার বিভাগের সমালোচনা করা হয়েছে।' আদালত বলেছেন, 'এটা বিচার বিভাগের মর্যাদার প্রশ্ন। স্পিকার এ ধরনের মন্তব্য করতে পারেন কি না, তা দেখতে হবে।'
বিষয়টি এখন সংসদ ও আদালত- উভয় পক্ষের জন্যই মর্যাদার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ ও সংসদ রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ। প্রত্যেক অংশকে নিজ নিজ এখতিয়ারের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। তিন অংশের সুসমন্বয় সে কারণেই আবশ্যক। আদালত থেকে এ বিষয়ে একটি আদেশ দেওয়া হয়েছে। আদেশে বলা হয়েছে, 'ওই দিন যা হয়েছে, তা অত্যন্ত হতাশাজনক। আমরা এটা পরিষ্কার করতে চাই যে, রাষ্ট্রের অন্য দুটি অঙ্গের মতো সুপ্রিম কোর্টও সাংবিধানিক ও স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আমরা কোনো মন্ত্রীর দ্বারা পরিচালিত নই। আমরা কেবল আমাদের বিবেক এবং সৃষ্টিকর্তার কাছে দায়বদ্ধ। সরকারের কাছে বা কোনো মন্ত্রীর কাছে আমরা দায়বদ্ধ নই। আমরা আমাদের স্বার্থে কোনো আদেশ দিই না, আমরা যে আদেশ দিই, তা জনগণের স্বার্থে। সুপ্রিম কোর্টে স্থান সংকুলান হওয়া জনগণের স্বার্থেই প্রয়োজন। কারণ স্থান সংকুলান না হলে নতুন বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হবে না, মামলার জটও শেষ হবে না।' আদালত বলেন, 'আমরা ভয়ভীতির উর্ধ্বে উঠে স্বাধীনভাবে আমাদের দায়িত্ব পালন করব। সরকারের কার্যক্রম অচল হবে, এমন কিছু আমরা করব না। সড়ক ও জনপথ বিভাগের কাজ সঠিকভাবে এগোবে বলে আমরা আশা করি। আমরা আশা করি, স্পিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রতি মর্যাদা দেখাবেন।'
প্রত্যেকে প্রত্যেকের মর্যাদা সুসমুন্নত রেখে নিজেদের দায়িত্ব পালন করবেন। তাতে রাষ্ট্রেরই মঙ্গল। আজ আদালত ও সংসদ যে অবস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, সে অবস্থা থেকে সরে আসতে হবে। বিষয়টি স্পর্শকাতর, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু এর একটা সম্মানজনক সমাধানও খুঁজে বের করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.