উচ্চশিক্ষা :নৈতিক অবক্ষয় by আসাদুজ্জামান
যুগে যুগে অসাধ্য সাধন ও জাতিকে বিভিন্ন সংকট থেকে উত্থানে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখে সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়েছে তরুণ সমাজ। আর এই তরুণরাই যখন নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন সমাজ, রাষ্ট্র, জাতির কল্যাণের বিপরীতে অকল্যাণ বয়ে আনে ও সার্বিকভাবে ব্যক্তি তার নিজের মূল্যকে পদদলিত করে।
ব্যক্তি নিজের জন্য, পরিবারের জন্য তথা পুরো জাতির জন্য বয়ে আনে অকল্যাণ।
একজন সুস্থ-সবল, মেধাবী তরুণ যখন নৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন সে সমাজের কতটুকু কল্যাণসাধন করতে পারে? নাগরিক হিসেবে সে রাষ্ট্রের কী উপকারে আসতে পারে এবং মানুষ হিসেবে তার মূল্য কোথায়? মা-বাবা সবসময় চান তার সন্তান সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ-জাতি তথা সারাবিশ্বের কল্যাণ সাধনে ব্রত হবে, তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটবে। সব মা-বাবাই একটা স্বপ্ন লালন করেন যে, সন্তান তাদের জন্য বয়ে আনবে সাফল্য। এমনকি একজন ভিখারিরও স্বপ্ন থাকে তার সন্তানকে যেন তার মতো পথে পথে ঘুরে বেড়াতে না হয়।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের স্বীকৃত স্থান হিসেবে মা-বাবা তাদের সন্তানকে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠান। এই সন্তান শিক্ষা গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যখন পদার্পণ করে, তখন তাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার পরিমাণও বেড়ে যায়। শুধু তা-ই নয়, পুরো জাতিই তাদের কাছে সুন্দর আগামী আশা করে। ভবিষ্যৎ কর্ণধার দেশ ও জাতির এই কাণ্ডারিরা তাদের মেধা ও মনন দ্বারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে সুন্দর আগামীর দিকে। কিন্তু এই ভবিষ্যৎ কাণ্ডারিদের মধ্যে নৈতিক অবক্ষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহপাঠীকে উত্ত্যক্ত করা, বিভিন্ন স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা, ইন্টারনেটে নগ্ন ছবি, ভিডিও প্রচার করে ব্যক্তিসহ পুরো পরিবারকে হেয় প্রতিপন্ন করা, তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার, আবাসন ও শিক্ষা লাভের ক্ষেত্রে অনৈতিক পন্থা অবলম্বন, ভালোবাসায় সাড়া না দিলে শারীরিকভাবে আহত করা, ব্যর্থ হলে নেশায় জড়িয়ে যাওয়া, আত্মহত্যার চেষ্টা_ এসব লক্ষ্য করা যায়। যার তীব্রতা আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি।
শিক্ষিত তরুণ প্রজন্মকে নৈতিক শিক্ষার দ্বারা, সঠিক পথে সচেতন করে পরিচালিত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈতিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করে নৈতিকতা সম্পর্কে বর্তমান প্রজন্মকে সচেতন করে তুলতে হবে। তাহলে এই প্রজন্মই অদূর ভবিষ্যতের সুখী-সমৃদ্ধ ও নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন সমাজ উপহার দিতে সক্ষম হবে।
স শিক্ষার্থী, দর্শন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
No comments