উত্ত্যক্তকারীদের প্রতিরোধ করতে হবে by ড. নিয়াজ আহম্মেদ
উত্ত্যক্তের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার ঘটনা এখনো হরহামেশা ঘটছে। পত্রিকা খুললে ওই কারণে আত্মহত্যার ঘটনা এখনো চোখে পড়ে। তবে উত্ত্যক্ত করা শুরু এবং আত্মহত্যা করার মধ্যে মোটামুটি সময়ও ব্যয় হয়। কখনো কখনো দীর্ঘ সময়ের পর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিকভাবে আত্মহত্যার প্রবণতা কম লক্ষ করা যায়।
এ সময়ের মধ্যে উত্ত্যক্তকারীর মা-বাবা এবং যাকে উত্ত্যক্ত করা হয় তার মা-বাবার মধ্যে সমঝোতা বা সালিস-বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে উত্ত্যক্তের শিকার মেয়েটির মা-বাবা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন ব্যক্তিবর্গের দারস্থ হন। প্রায়শই তারা উত্ত্যক্তকারীকে রক্ষা করেন। প্রতিকার চাওয়ায় উত্ত্যক্তকারী আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। সুযোগ খোঁজে কিভাবে মেয়েটিকে ঘায়েল করা যায়। অপবাদ দেওয়া থেকে শুরু করে নানা উপায়ে মেয়েটিকে অপদস্ত হয়। অপবাদ সহ্য করতে কষ্ট হয় বিধায় আত্মহননের পন্থা অবলম্বন করে। ঝরে যায় একটি তাজা প্রাণ। সাধারণত দীর্ঘ সময়ের কষ্ট এবং ক্ষোভ থেকে আত্মহনের পথ অবলম্বন করার প্রবণতা বেশি মাত্রায় লক্ষ করা যায়। প্রচলিত সমাজব্যবস্থা এবং সমাজ কাঠামোর প্রতি তার একটি বিরূপ ধারণা জন্মে। মা-বাবা এখানে অসহায়ের ভূমিকা পালন করে। আবার কখনো কখনো মা-বাবার পক্ষে মেয়েটির মানসিক অবস্থা অনুধাবন করাও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। দরিদ্রে জর্জরিত মা-বাবা যেখানে সন্তানদের মৌলিক চাহিদাগুলো পরিপূর্ণভাবে পূরণ করতে পারে না, সেখানে একান্ত ব্যক্তিগত মনো-সামাজিক সমস্যাগুলো উপলদ্ধি করা সহজ হয় না। এমতাবস্থায় কখনো মেয়েটির লেখাপড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও রেহাই পাওয়া যায় না। উত্ত্যক্তকারী কোনোভাবেই ছাড় দেয় না। সুযোগের অপেক্ষায় থাকে।
উত্ত্যক্ত শুরু এবং আত্মহত্যা করার মধ্যবর্তী সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে পরিস্থিতি কঠোরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হলে আমরা আত্মহত্যার ঘটনাকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারি। প্রয়োজন দৃঢ়ভাবে উত্ত্যক্ত করার ঘটনাগুলো মোকাবিলা করা। সালিস একটি প্রক্রিয়া যেখানে উত্ত্যক্তকারী ও তার মা-বাবাকে হাজির করে। সালিস-বৈঠকে ভবিষ্যতে আর উত্ত্যক্ত করবে না বলে অঙ্গীকার করা হয়। সমাজের চাপে এমন অঙ্গীকার করলেও তার মনে থাকে প্রতিশোধস্পৃহা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামাজিক ক্ষমতা তাকে উৎসাহী করে। কাজেই উত্ত্যক্তের পরিমাণও বেড়ে যায়। শুরু থেকে সচেতন না হলে এ ধরনের ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিপুল জনগোষ্ঠীর এ দেশে মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণের ক্ষেত্রে আমাদের রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। পাশাপাশি এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে আমাদের মনোযোগ এবং সময় আমরা সাধারণত কম পাই। আমরা এর গুরুত্বও কম অনুভব করি। ধারণা করি, কিছুই হবে না। সবকিছু ক্রমান্বয়ে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যখন আত্মহননের মতো ঘটনা ঘটে, তখন আমাদের টনক নড়ে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবাসহ সমাজের অপরাপর জনসাধারণের কার্যকর, যুগোপযোগী এবং কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া আমাদের এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ খোলা নেই। মা-বাবার প্রথম এবং প্রধানতম কাজ হলো, যে মুহূর্তে মেয়েটি উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছে, সেই মুহূর্ত থেকে মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা। মেয়েটিকে কোনোক্রমে দোষ দেওয়া চলবে না। তার সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। মেয়েটির মনোবল বাড়াতে হবে। সম্ভাব্য প্রতিরোধ কৌশল শেখাতে হবে। দ্বিতীয়ত, সালিস প্রক্রিয়াকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করার জন্য মা-বাবাকে উদ্যোগী হতে হবে। সালিস বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনসহ বেসরকারি সংস্থার সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়াকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।
এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাসহ যেকোনো সমস্যা মোকাবিলার জন্য আমাদের দরকার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। গ্রামেগঞ্জে উত্ত্যক্তকারীদের বিপরীতে যুবসমাজকে সংগঠিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে প্রতিবাদী সংগঠন। তাদের মধ্যে আশার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের কাজের মাধ্যমে তাদের উজ্জীবিত করতে হবে। সরকার যেমন তাদের এ কাজে সহায়তা করতে পারে, তেমনি বেসরকারি সংস্থাগুলোও এ ক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারে। দারিদ্র্য-বিমোচনের বিবিধ কর্মসূচির পাশাপশি সামাজিকীকরণ ও সামাজিক সুরক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। উত্ত্যক্তকারী আমাদের সমাজেরই। তার রয়েছে মা-বাবা, ভাইবোনসহ অন্য আত্মীয়স্বজন। উত্ত্যক্ত করা কোনো সম্মানের কাজ নয়। উত্ত্যক্তকারীর মা-বাবাকে এ কথা মনে রাখতে হবে। তারা নিজেরা ছেলেকে প্রশ্রয় দিলে উত্ত্যক্তকারী আরো উৎসাহী হবে। নিজের ছেলেটিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে তুলে দিতেও দ্বিধাবোধ করা উচিত নয়। প্রয়োজনে আমরা উত্ত্যক্তকারী পরিবারকে বয়কটের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই যে আপনারা কতটা অসহায়। এভাবে আমরা একটি, দুইটি ও তিনটি করে প্রতিটি পরিবারকে আসুন বয়কট করি।
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
neayahmed_2002@yahoo.com
উত্ত্যক্ত শুরু এবং আত্মহত্যা করার মধ্যবর্তী সময়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময়ে পরিস্থিতি কঠোরভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হলে আমরা আত্মহত্যার ঘটনাকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারি। প্রয়োজন দৃঢ়ভাবে উত্ত্যক্ত করার ঘটনাগুলো মোকাবিলা করা। সালিস একটি প্রক্রিয়া যেখানে উত্ত্যক্তকারী ও তার মা-বাবাকে হাজির করে। সালিস-বৈঠকে ভবিষ্যতে আর উত্ত্যক্ত করবে না বলে অঙ্গীকার করা হয়। সমাজের চাপে এমন অঙ্গীকার করলেও তার মনে থাকে প্রতিশোধস্পৃহা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামাজিক ক্ষমতা তাকে উৎসাহী করে। কাজেই উত্ত্যক্তের পরিমাণও বেড়ে যায়। শুরু থেকে সচেতন না হলে এ ধরনের ঘটনা থেকে রেহাই পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। বিপুল জনগোষ্ঠীর এ দেশে মৌলিক প্রয়োজনগুলো পূরণের ক্ষেত্রে আমাদের রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। পাশাপাশি এ ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে আমাদের মনোযোগ এবং সময় আমরা সাধারণত কম পাই। আমরা এর গুরুত্বও কম অনুভব করি। ধারণা করি, কিছুই হবে না। সবকিছু ক্রমান্বয়ে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যখন আত্মহননের মতো ঘটনা ঘটে, তখন আমাদের টনক নড়ে। এ ক্ষেত্রে মা-বাবাসহ সমাজের অপরাপর জনসাধারণের কার্যকর, যুগোপযোগী এবং কঠিন পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া আমাদের এ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার কোনো পথ খোলা নেই। মা-বাবার প্রথম এবং প্রধানতম কাজ হলো, যে মুহূর্তে মেয়েটি উত্ত্যক্তের শিকার হচ্ছে, সেই মুহূর্ত থেকে মেয়েটিকে পর্যবেক্ষণে রাখা। মেয়েটিকে কোনোক্রমে দোষ দেওয়া চলবে না। তার সঙ্গে বন্ধুর মতো আচরণ করতে হবে। মেয়েটির মনোবল বাড়াতে হবে। সম্ভাব্য প্রতিরোধ কৌশল শেখাতে হবে। দ্বিতীয়ত, সালিস প্রক্রিয়াকে কঠোরভাবে মোকাবিলা করার জন্য মা-বাবাকে উদ্যোগী হতে হবে। সালিস বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনসহ বেসরকারি সংস্থার সাহায্য চাওয়া যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে মিডিয়াকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।
এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাসহ যেকোনো সমস্যা মোকাবিলার জন্য আমাদের দরকার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা। গ্রামেগঞ্জে উত্ত্যক্তকারীদের বিপরীতে যুবসমাজকে সংগঠিত হয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। গড়ে তুলতে হবে প্রতিবাদী সংগঠন। তাদের মধ্যে আশার আলো ছড়িয়ে দিতে হবে। বিভিন্ন ধরনের কাজের মাধ্যমে তাদের উজ্জীবিত করতে হবে। সরকার যেমন তাদের এ কাজে সহায়তা করতে পারে, তেমনি বেসরকারি সংস্থাগুলোও এ ক্ষেত্রে সাহসী ভূমিকা পালন করতে পারে। দারিদ্র্য-বিমোচনের বিবিধ কর্মসূচির পাশাপশি সামাজিকীকরণ ও সামাজিক সুরক্ষামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। উত্ত্যক্তকারী আমাদের সমাজেরই। তার রয়েছে মা-বাবা, ভাইবোনসহ অন্য আত্মীয়স্বজন। উত্ত্যক্ত করা কোনো সম্মানের কাজ নয়। উত্ত্যক্তকারীর মা-বাবাকে এ কথা মনে রাখতে হবে। তারা নিজেরা ছেলেকে প্রশ্রয় দিলে উত্ত্যক্তকারী আরো উৎসাহী হবে। নিজের ছেলেটিকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে তুলে দিতেও দ্বিধাবোধ করা উচিত নয়। প্রয়োজনে আমরা উত্ত্যক্তকারী পরিবারকে বয়কটের মাধ্যমে জানিয়ে দিতে চাই যে আপনারা কতটা অসহায়। এভাবে আমরা একটি, দুইটি ও তিনটি করে প্রতিটি পরিবারকে আসুন বয়কট করি।
লেখক : অধ্যাপক, সমাজকর্ম বিভাগ, শাহ্জালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট
neayahmed_2002@yahoo.com
No comments