বাজেট ২০১২-১৩
বাস্তবায়নে বিরোধী দলের ভূমিকা বিশাল জাতীয় বাজেট ২০১২-১৩ ঘোষণা হচ্ছে আজ। রাজনৈতিক বিবেচনায় এই বাজেট মহাজোট সরকারের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ২০১৩-১৪ বাজেট ঘোষণার সুযোগ তারা পেলেও অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই নতুন সরকার ক্ষমতায় আসবে।
ফলে নির্বাচনে উন্নয়ন উদাহরণ প্রদর্শনের সর্বাধিক সুযোগ হিসেবে এই অর্থবছরটি বিবেচিত হবে। প্রতিবছরই বাজেটকে উচ্চাভিলাষী বলার যে রেওয়াজ আছে, এবারের এক লাখ ৯১ হাজার কোটি টাকার বাজেটকেও তেমনটা বলা হচ্ছে না। কারণ এবারের বাজেট প্রণয়নকালে প্রয়োজনীয়তার কথা বিবেচনা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা নিয়ে ইতিমধ্যে প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের আলোচনাতেও দেখা গেছে, উন্নয়ন প্রকল্পে বরাদ্দ অর্থ জোগানের বিষয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন তাঁরা। ৫৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন সম্ভব কি না, সে প্রশ্নও করেছেন তাঁরা। যুগের চাহিদা পূরণের জন্য এই লক্ষ্যমাত্রাকে প্রায় সবাই স্বাভাবিক মনে করেই এই প্রশ্নটি করছেন। সে ক্ষেত্রে দুর্নীতি, অর্থের জোগান, বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরশীলতা এবং বাংলাদেশের আবহাওয়াগত দিকটিও তাঁরা তুলে ধরেছেন। মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে হলে বৈদেশিক ঋণের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আনার উপায় খোঁজার যে তাগিদ প্রতিবারই প্রদান করা হয়; এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ফলে সরকারের ঘোষিত বাজেট এবং বাস্তবতার মধ্যে যে ফারাক আছে, তা মোটামুটি স্পষ্ট। সরকারকে এত কিছু সামনে রেখেই বাজেট ঘোষণা এবং সেই অনুযায়ী দেশ পরিচালনা করতে হবে। সেই পরিচালনায় দেশের বিরোধী দলের প্রস্তাবনা এবং পরামর্শও অত্যন্ত জরুরি বলে বিবেচ্য। সংগত কারণেই বাজেট অধিবেশনে তাদের উপস্থিতি প্রয়োজন। কিন্তু তারা যে বাজেট ঘোষণাকালে সংসদ অধিবেশনে থাকছে না, তাও স্পষ্ট। গত কয়েক বছরেও তারা সংসদের বাইরেই থেকেছে। তবে গত বছর তারা একটি বিকল্প বাজেট প্রস্তাবনা জনসমক্ষে উপস্থাপন করেছিল। এবারও তারা 'বাজেট ভাবনা' নাম দিয়ে গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রকাশ করেছে। এটি 'বাজেট ভাবনা' নামকরণ হলেও সরকারের অর্থনৈতিক কাজের সমালোচনার পাশাপাশি সামগ্রিক পরিস্থিতিরও আলোকপাত করা হয়েছে। চলতি বাজেটের বিশ্লেষণ করতে গিয়ে তারা পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করে তাদের পরিকল্পনার অংশবিশেষও উল্লেখ করেছে, যেখানে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উচ্চতর মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার রূপরেখাও বর্ণনা করা হয়েছে। তাদের বাজেট ভাবনার এই দিকটি নিঃসন্দেহে ভালো। ১৬টি করণীয় নির্ধারণের মাধ্যমে পরিকল্পনার মৌলিক দিকগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
এভাবে সরকারি বাজেটের পাশাপাশি বিরোধীদলীয় ভাবনাগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সহযোগিতা করতে পারে। এতে সরকারি ও বিরোধী দলের অস্বাভাবিক দূরত্বের পরও গঠনমূলক মানসিকতারই পরিচয় পাওয়া যায়। তবে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বাজেট ভাবনার নামে যেভাবে অন্যান্য বিষয় টেনে আনা হয়েছে, তাতে বাজেট ভাবনা নামকরণের সার্থকতা কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে। তবুও বিরোধী দলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতে হয়। তবে সংসদে ঘোষিত বাজেট অধিবেশনে অংশ নিয়ে বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে তাদের বিশ্লেষণগুলো তুলে ধরলে বিরোধী দলের ভূমিকা আরো উজ্জ্বল হবে এবং দেশও উপকৃত হবে। আমরা তাদের কাছে তেমনটিই প্রত্যাশা করি।
এভাবে সরকারি বাজেটের পাশাপাশি বিরোধীদলীয় ভাবনাগুলো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সহযোগিতা করতে পারে। এতে সরকারি ও বিরোধী দলের অস্বাভাবিক দূরত্বের পরও গঠনমূলক মানসিকতারই পরিচয় পাওয়া যায়। তবে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে বাজেট ভাবনার নামে যেভাবে অন্যান্য বিষয় টেনে আনা হয়েছে, তাতে বাজেট ভাবনা নামকরণের সার্থকতা কিছুটা ক্ষুণ্ন হয়েছে। তবুও বিরোধী দলের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাতে হয়। তবে সংসদে ঘোষিত বাজেট অধিবেশনে অংশ নিয়ে বাজেটের বিভিন্ন দিক নিয়ে তাদের বিশ্লেষণগুলো তুলে ধরলে বিরোধী দলের ভূমিকা আরো উজ্জ্বল হবে এবং দেশও উপকৃত হবে। আমরা তাদের কাছে তেমনটিই প্রত্যাশা করি।
No comments