জিডিপির সঙ্গে সঙ্গে বাজেট বড় হতে হবে by মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
বাজেট বড় হচ্ছে বলে প্রতিবছরই বলা হয়। এটা কোনো যুক্তিসংগত কথা নয়। সময় তো থেমে থাকে না। জিডিপি বাড়ছে। জিডিপি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজেটের আকারও বড় হতে হবে। এটাই তো স্বাভাবিক। গত বছর এক লাখ ৬৩ হাজার কোটি টাকার বাজেট ছিল। এ বছর সেই অঙ্ক গিয়ে এক লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকায় ঠেকবে।
জিডিপির প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশ হলে এটা অস্বাভাবিক নয়। তবে এডিপির আকার বড়, এ কথা বলা যায়। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ৫৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তারপর আবার এই এডিপি বৈদেশিক ঋণনির্ভর। প্রশ্ন হচ্ছে, বৈদেশিক ঋণের এত বড় অঙ্কের টাকা কি অবমুক্ত করা সম্ভব হবে? বর্তমানে অভ্যন্তরীণ ব্যাংকবহির্ভূত ঋণের পরিস্থিতিও খারাপ। সঞ্চয় তো খুবই কম। তাহলে কোথা থেকে এই টাকা আসবে? ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিতে গেলে বড় সমস্যা দেখা দেবে। এই সমস্যা এখনো আছে। সরকার এই পথেই যদি চলতে থাকে, তাহলে সুদের হার আরো বেড়ে যাবে। সুদের হার বেড়ে গেলে দেশে বিনিয়োগের ওপর প্রভাব পড়তে বাধ্য। এই অভিজ্ঞতা তো বর্তমান অবস্থা থেকেই পাওয়ার কথা। সংগত কারণেই এর প্রভাব প্রবৃদ্ধির ওপরও পড়বে। সমস্যা সমাধান করতে হলে, এডিপি বাস্তবায়ন করতে হলে বৈদেশিক সাহায্য অবমুক্তির চেষ্টা করতে হবে। দেশের বড় সমস্যা এখন জ্বালানি ও গ্যাসের। উন্নয়নের চালিকাশক্তি এই জ্বালানি খাতকে উন্নয়ন না করার কোনো বিকল্প নেই। এই খাতের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে। রাজস্ব আয় বাড়াতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই করের আওতা বেড়ে যাবে। এই কার্যক্রম উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করতে হবে। করবহির্ভূত রাজস্ব বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। সরকারের কিছু ভর্তুকি দিতে হয়, যেগুলো সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেমন জুট মিলগুলো পাট কিনতে পারে না অর্থাভাবে। এমন আরো কিছু খাত আছে সরকারের হাতে। পরিবর্তিত পরিস্থিতির কথা বিবেচনা করে বিরাষ্ট্রীয়করণ প্রয়োজন। প্রাইভেটাইজেশনের মাধ্যমে সরকারের ব্যয় সংকোচন হতে পারে। এডিপির আয়তন বড় হলে যে প্রস্তুতি প্রয়োজন, সেই প্রস্তুতি সরকারের আছে কি না তাই দেখার বিষয়।
No comments