শুষ্ক আমাজন, তৃষ্ণার্ত অরণ্য by কানন পুরকায়স্থ
আমরা যখন ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের কথা বলি, তখন তিনটি ভৌগোলিক অঞ্চলের অরণ্যকে বোঝাই। তা হলো লাতিন আমেরিকা, পশ্চিম নিরক্ষীয় আফ্রিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কিছু অঞ্চল। এই আলোচনা লাতিন আমেরিকার আমাজন নদী অববাহিকার অরণ্য নিয়ে।
আমাজনের বৃষ্টি অরণ্য বা রেইন ফরেস্টকে বলা হয়ে থাকে 'পৃথিবীর ফুসফুস'। কারণ বায়ুমণ্ডলের মোট অঙ্েিজনের ২০ শতাংশ উৎপন্ন হয় এই অরণ্য থেকে। তা ছাড়া সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে এই অরণ্য বায়ুমণ্ডল থেকে যে পরিমাণ কার্বন ডাই-অঙ্াইড শোষণ করে সেই পরিমাণ, শ্বসন ও ক্ষয়ের কারণে নিঃসরিত কার্বন ডাই-অঙ্াইডের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু সাম্প্রতিককালে অনাবৃষ্টির কারণে আমাজনে যে শুষ্কতার সৃষ্টি হয়েছে, তাতে সেখানকার অরণ্য দ্রুত ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
১৮৩২ সালের এপ্রিল মাসে বিগল্সে সমুদ্রযাত্রার কালে চার্লস ডারউইন রিও ডি জেনিরোর কাছাকাছি আসেন। তখন তিনি বিশাল অরণ্য দেখতে পান। ডায়েরিতে সেই পর্যবেক্ষণের বর্ণনা দিতে গিয়ে ডারউইন লেখেন, 'চাষাবাদে পূর্ণ দেশগুলো অতিক্রম করার পর আমরা তখন এক অঞ্চলে প্রবেশ করলাম, যেখানে রয়েছে শুধু অরণ্য। এই অরণ্যের সৌন্দর্য কেউ অতিক্রম করতে পারবে না। ইউরোপের তুলনায় এখানকার গাছপালা অনেক উঁচু এবং তাদের পরিধি তিন অথবা চার ফুটের বেশি নয়।' ডারউইন তাঁর বিগল্সের সমুদ্র লতার ডায়েরিতে আরো উল্লেখ করেন, 'এই বিশাল অরণ্যের প্রতিটি বিষয়ের প্রশংসা করতে পারি, কিন্তু একে অবলোকন করার পর যে অনুভূতি বা বিস্ময় আমাদের মনকে নাড়া দেয়, তার বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়।'
আমাজনের অরণ্যের মূল অংশ লাতিন আমেরিকার ৯টি দেশে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকাজুড়ে রয়েছে। সমগ্র ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের অর্ধেকের চেয়ে বেশি অরণ্য রয়েছে এই আমাজন নদী অববাহিকায়। বিস্তীর্ণ এই অরণ্যের স্বভাব আরো বিচিত্র। ১৫ শতকে আমাজনে স্থানীয় অধিবাসীর সংখ্যা ছিল আনুমানিক ছয় থেকে ৯ মিলিয়ন। ১৯ শতকে তা এক মিলিয়নে নেমে আসে। বর্তমানে আনুমানিক দুই লাখ ৫০ হাজার স্বাধীন অধিবাসী রয়েছে, যাদের মধ্যে ইথনিক গ্রুপের সংখ্যা ২১৫ এবং তারা ১৭০টি ভাষায় কথা বলে। অনেকের ধারণা, আমাজনের অরণ্যে এখনো অনেক উপজাতি রয়েছে, যাদের সঙ্গে বাইরের জগতের কোনো যোগাযোগ ঘটেনি। এই অরণ্যে পাওয়া গেছে তিন হাজার রকমের ভোজ্য ফলের সন্ধান। যেসব গাছের অ্যান্টি ক্যান্সার ধর্ম রয়েছে, তাদের অধিকাংশই আমাজনের অরণ্যে পাওয়া গেছে। বৃষ্টি অরণ্যের স্বাভাবিক ধর্ম হচ্ছে ভারি বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রা সাধারণত ২০-২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকা। কিন্তু ২০০৫ সালে আমাজনের বিস্তীর্ণ এলাকায় অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতি ১০০ বছরে একবার এমন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু লক্ষ করা গেল, ২০১০ সালে আবারও অনাবৃষ্টি। এই অনাবৃষ্টির ফলে ধ্বংস হচ্ছে অনেক গাছপালা। ফলে কার্বন ডাই-অঙ্াইড শোষণের চেয়ে নিঃসরণের পরিমাণ গেছে বেড়ে। এক হিসাবে দেখা যায়, আমাজন অঞ্চল থেকে এই অনাবৃষ্টির কারণে আট বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অঙ্াইড বায়ুমণ্ডলে নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাৎসরিক কার্বন নিঃসরণের পরিমাণের দ্বিগুণ। আমাজন অঞ্চলে মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুইবার বড় ধরনের অনাবৃষ্টির ঘটনা অত্যন্ত ব্যতিক্রমধর্মী। এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ক্রান্তীয় আটলান্টিক অঞ্চলের সমুদ্র পৃষ্ঠতলের উচ্চ তাপমাত্রা। এ বিষয়টিকে আরেকটু বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
আটলান্টিক মহাসাগরকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হচ্ছে নিরক্ষ রেখার উত্তর ভাগ এবং অন্যটি দক্ষিণ ভাগ। সমুদ্রের গরম বাতাস একটি বিন্দুতে মিলিত হয়ে ওপরের দিকে উঠে বৃষ্টি অরণ্যে সৃষ্টি করে আন্তঃক্রান্তীয় অভিমুখী জোন। এই জোনে জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত শুরু হয় যখন উত্তর আটলান্টিকের সমুদ্র পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা দক্ষিণ আটলান্টিকের চেয়ে বেশি থাকে। অর্থাৎ আমাজনের অধিকাংশ অরণ্য নিরক্ষ রেখার দক্ষিণে থাকায় এখানে আন্তঃক্রান্তীয় অভিমুখী জোন এখন সৃষ্টি হয় জানুয়ারি মাসে। বৃষ্টি মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে আমাজন অববাহিকায় অনাবৃষ্টির প্রভাব শুরু হয়ে যায়। অনাবৃষ্টির ফলে আমাজনে যে শুষ্কতা শুরু হয় তাতে নিট কার্বন ডাই-অঙ্াইড নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। নোয়ার (NOAA) এক উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ২০০৬-২০১০ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অঙ্াইডের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে যদিও ওই সময় শিল্পকারখানা থেকে কার্বন ডাই-অঙ্াইড নির্গত হওয়ার পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় বেশি ছিল না। বিজ্ঞান পত্রিকা 'সায়েন্স' জার্নালে প্রকাশিত উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে দেখা যায়, অনাবৃষ্টির ফলে আমাজনের অরণ্যের বৃদ্ধি পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় কম। তা ছাড়া উপগ্রহ উপাত্ত থেকে আরো দেখা যায়, বন্য আগুনের ফলে ধ্বংস হচ্ছে পৃথিবীর নানা অঞ্চলের ক্রান্তীয় অরণ্য। সম্প্রতি ইস্ট এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল আমাজনের মেটো গ্রোসো (Meto Grosso) এলাকায় গিয়ে জানতে পারে, গত ১১০ দিন সেখানে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পৃষ্ঠতল তাপমাত্রা গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে এবং এর প্রভাব পড়বে আমাজনের অরণ্যের ওপর। ফলে নির্গত হবে অধিক পরিমাণ কার্বন ডাই-অঙ্াইড। ২১০০ সালের দিকে এ অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।
আমাজনের অরণ্যের সাম্প্রতিক অবস্থা এবং এর সম্পর্কে প্রাপ্ত উপাত্ত দেখে মনে পড়ে মাইকেল ক্রিস্টনের কথা। জুরাসিক পার্কসহ অন্যান্য গ্রন্থের লেখক ক্রিস্টন এক বক্তৃতায় উল্লেখ করেন 'মানবসভ্যতা যে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন তা হচ্ছে ফ্যান্টাসি থেকে বাস্তব সত্যকে পৃথক করার সমস্যা অথবা প্রচারণা থেকে আসল সত্যকে পৃথক করে দেখার ক্ষমতা। আমাদের প্রতিদিনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যে হুমকি আমাদের সামনে রয়েছে, তা কি বাস্তব? অথবা এর সমাধান কি আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে?' তাই আমাজনের স্বরূপ উদ্ঘাটনের জন্য আমাদের আরো তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। বস্তত আমাজনের সাম্প্রতিক শুষ্কতা দেখে মনে হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব থেকে আমাদের সম্ভবত বেরিয়ে আসার উপায় নেই। আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়েই চলতে হবে। তবে উত্তর আটলান্টিকের পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রার সঙ্গে আমাজন অববাহিকায় অনাবৃষ্টির সম্পর্ক কতটুকু তা সুস্পষ্টভাবে নিরূপণের জন্য প্রয়োজন আরো দীর্ঘমেয়াদি উপাত্ত। তা ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃষ্টি অরণ্যের ওপর সমুদ্র পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রার প্রভাব বাড়ছে কি না তা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি
পরিবীক্ষণ প্রয়োজন।
লেখক : গবেষক
১৮৩২ সালের এপ্রিল মাসে বিগল্সে সমুদ্রযাত্রার কালে চার্লস ডারউইন রিও ডি জেনিরোর কাছাকাছি আসেন। তখন তিনি বিশাল অরণ্য দেখতে পান। ডায়েরিতে সেই পর্যবেক্ষণের বর্ণনা দিতে গিয়ে ডারউইন লেখেন, 'চাষাবাদে পূর্ণ দেশগুলো অতিক্রম করার পর আমরা তখন এক অঞ্চলে প্রবেশ করলাম, যেখানে রয়েছে শুধু অরণ্য। এই অরণ্যের সৌন্দর্য কেউ অতিক্রম করতে পারবে না। ইউরোপের তুলনায় এখানকার গাছপালা অনেক উঁচু এবং তাদের পরিধি তিন অথবা চার ফুটের বেশি নয়।' ডারউইন তাঁর বিগল্সের সমুদ্র লতার ডায়েরিতে আরো উল্লেখ করেন, 'এই বিশাল অরণ্যের প্রতিটি বিষয়ের প্রশংসা করতে পারি, কিন্তু একে অবলোকন করার পর যে অনুভূতি বা বিস্ময় আমাদের মনকে নাড়া দেয়, তার বর্ণনা দেওয়া সম্ভব নয়।'
আমাজনের অরণ্যের মূল অংশ লাতিন আমেরিকার ৯টি দেশে প্রায় ২.৫ মিলিয়ন বর্গমাইল এলাকাজুড়ে রয়েছে। সমগ্র ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের অর্ধেকের চেয়ে বেশি অরণ্য রয়েছে এই আমাজন নদী অববাহিকায়। বিস্তীর্ণ এই অরণ্যের স্বভাব আরো বিচিত্র। ১৫ শতকে আমাজনে স্থানীয় অধিবাসীর সংখ্যা ছিল আনুমানিক ছয় থেকে ৯ মিলিয়ন। ১৯ শতকে তা এক মিলিয়নে নেমে আসে। বর্তমানে আনুমানিক দুই লাখ ৫০ হাজার স্বাধীন অধিবাসী রয়েছে, যাদের মধ্যে ইথনিক গ্রুপের সংখ্যা ২১৫ এবং তারা ১৭০টি ভাষায় কথা বলে। অনেকের ধারণা, আমাজনের অরণ্যে এখনো অনেক উপজাতি রয়েছে, যাদের সঙ্গে বাইরের জগতের কোনো যোগাযোগ ঘটেনি। এই অরণ্যে পাওয়া গেছে তিন হাজার রকমের ভোজ্য ফলের সন্ধান। যেসব গাছের অ্যান্টি ক্যান্সার ধর্ম রয়েছে, তাদের অধিকাংশই আমাজনের অরণ্যে পাওয়া গেছে। বৃষ্টি অরণ্যের স্বাভাবিক ধর্ম হচ্ছে ভারি বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রা সাধারণত ২০-২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকা। কিন্তু ২০০৫ সালে আমাজনের বিস্তীর্ণ এলাকায় অনাবৃষ্টি দেখা দেয়। বিজ্ঞানীরা জানান, প্রতি ১০০ বছরে একবার এমন ঘটনা ঘটতে পারে। কিন্তু লক্ষ করা গেল, ২০১০ সালে আবারও অনাবৃষ্টি। এই অনাবৃষ্টির ফলে ধ্বংস হচ্ছে অনেক গাছপালা। ফলে কার্বন ডাই-অঙ্াইড শোষণের চেয়ে নিঃসরণের পরিমাণ গেছে বেড়ে। এক হিসাবে দেখা যায়, আমাজন অঞ্চল থেকে এই অনাবৃষ্টির কারণে আট বিলিয়ন টন কার্বন ডাই-অঙ্াইড বায়ুমণ্ডলে নির্গত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের মোট বাৎসরিক কার্বন নিঃসরণের পরিমাণের দ্বিগুণ। আমাজন অঞ্চলে মাত্র পাঁচ বছরের ব্যবধানে দুইবার বড় ধরনের অনাবৃষ্টির ঘটনা অত্যন্ত ব্যতিক্রমধর্মী। এর কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ক্রান্তীয় আটলান্টিক অঞ্চলের সমুদ্র পৃষ্ঠতলের উচ্চ তাপমাত্রা। এ বিষয়টিকে আরেকটু বিশদভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
আটলান্টিক মহাসাগরকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হচ্ছে নিরক্ষ রেখার উত্তর ভাগ এবং অন্যটি দক্ষিণ ভাগ। সমুদ্রের গরম বাতাস একটি বিন্দুতে মিলিত হয়ে ওপরের দিকে উঠে বৃষ্টি অরণ্যে সৃষ্টি করে আন্তঃক্রান্তীয় অভিমুখী জোন। এই জোনে জুলাই মাসে বৃষ্টিপাত শুরু হয় যখন উত্তর আটলান্টিকের সমুদ্র পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রা দক্ষিণ আটলান্টিকের চেয়ে বেশি থাকে। অর্থাৎ আমাজনের অধিকাংশ অরণ্য নিরক্ষ রেখার দক্ষিণে থাকায় এখানে আন্তঃক্রান্তীয় অভিমুখী জোন এখন সৃষ্টি হয় জানুয়ারি মাসে। বৃষ্টি মৌসুমে বৃষ্টিপাত না হওয়ার কারণে আমাজন অববাহিকায় অনাবৃষ্টির প্রভাব শুরু হয়ে যায়। অনাবৃষ্টির ফলে আমাজনে যে শুষ্কতা শুরু হয় তাতে নিট কার্বন ডাই-অঙ্াইড নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায়। নোয়ার (NOAA) এক উপাত্ত থেকে দেখা যায়, ২০০৬-২০১০ সালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অঙ্াইডের পরিমাণ ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়েছে যদিও ওই সময় শিল্পকারখানা থেকে কার্বন ডাই-অঙ্াইড নির্গত হওয়ার পরিমাণ পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় বেশি ছিল না। বিজ্ঞান পত্রিকা 'সায়েন্স' জার্নালে প্রকাশিত উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত উপাত্ত থেকে দেখা যায়, অনাবৃষ্টির ফলে আমাজনের অরণ্যের বৃদ্ধি পূর্ববর্তী বছরগুলোর তুলনায় কম। তা ছাড়া উপগ্রহ উপাত্ত থেকে আরো দেখা যায়, বন্য আগুনের ফলে ধ্বংস হচ্ছে পৃথিবীর নানা অঞ্চলের ক্রান্তীয় অরণ্য। সম্প্রতি ইস্ট এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল আমাজনের মেটো গ্রোসো (Meto Grosso) এলাকায় গিয়ে জানতে পারে, গত ১১০ দিন সেখানে কোনো বৃষ্টিপাত হয়নি। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের পৃষ্ঠতল তাপমাত্রা গ্রিনহাউস গ্যাসের কারণে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাবে এবং এর প্রভাব পড়বে আমাজনের অরণ্যের ওপর। ফলে নির্গত হবে অধিক পরিমাণ কার্বন ডাই-অঙ্াইড। ২১০০ সালের দিকে এ অবস্থা ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।
আমাজনের অরণ্যের সাম্প্রতিক অবস্থা এবং এর সম্পর্কে প্রাপ্ত উপাত্ত দেখে মনে পড়ে মাইকেল ক্রিস্টনের কথা। জুরাসিক পার্কসহ অন্যান্য গ্রন্থের লেখক ক্রিস্টন এক বক্তৃতায় উল্লেখ করেন 'মানবসভ্যতা যে বড় চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন তা হচ্ছে ফ্যান্টাসি থেকে বাস্তব সত্যকে পৃথক করার সমস্যা অথবা প্রচারণা থেকে আসল সত্যকে পৃথক করে দেখার ক্ষমতা। আমাদের প্রতিদিনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, যে হুমকি আমাদের সামনে রয়েছে, তা কি বাস্তব? অথবা এর সমাধান কি আমাদের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে?' তাই আমাজনের স্বরূপ উদ্ঘাটনের জন্য আমাদের আরো তথ্য-উপাত্ত প্রয়োজন। বস্তত আমাজনের সাম্প্রতিক শুষ্কতা দেখে মনে হচ্ছে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাব থেকে আমাদের সম্ভবত বেরিয়ে আসার উপায় নেই। আমাদের প্রকৃতির সঙ্গে খাপ খাইয়েই চলতে হবে। তবে উত্তর আটলান্টিকের পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রার সঙ্গে আমাজন অববাহিকায় অনাবৃষ্টির সম্পর্ক কতটুকু তা সুস্পষ্টভাবে নিরূপণের জন্য প্রয়োজন আরো দীর্ঘমেয়াদি উপাত্ত। তা ছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃষ্টি অরণ্যের ওপর সমুদ্র পৃষ্ঠতলের তাপমাত্রার প্রভাব বাড়ছে কি না তা নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি
পরিবীক্ষণ প্রয়োজন।
লেখক : গবেষক
No comments