পরীক্ষা পদ্ধতি-‘সৃজনশীলে’ ভয় নেই, আছে আনন্দ by মুহাম্মদ ইব্রাহীম
আমাদের শিক্ষাক্ষেত্রে বহুদিন পর একটি বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি এবং এর উপযোগী পঠন-পাঠন। কেউ কেউ একে ভীতির চোখে দেখছেন—ছাত্ররা নয়, বরং কোনো কোনো অভিভাবক ও শিক্ষকেরা। অথচ তা হওয়ার কথা ছিল না।
দীর্ঘদিন ধরে আমাদের কাঁধে চেপে বসা মুখস্থনির্ভর শিক্ষার যে দৈত্যটি ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক সবাইকে কুঁকড়ে ফেলছিল, তাকে ঝেড়ে ফেলে সত্যিকার শিক্ষার স্বাদ পেয়ে সবার আনন্দিতই হওয়ার কথা। খুশির খবর হলো, ছাত্রদের মধ্যে এই আনন্দ এখনই দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ শিক্ষকের মধ্যেও। শিক্ষা তো শুধু তথ্য মুখস্থ করার ব্যাপার নয়, এ তো সেই তথ্য নিয়ে চিন্তা করার ব্যাপার, বিচার-বিশ্লেষণ ও প্রয়োগের ব্যাপার। নইলে শিক্ষিত হয়ে লাভ কী? সৃজনশীল পদ্ধতি সেই সুযোগ এনে দিচ্ছে, দেশকে সৃষ্টিশীল নতুন প্রজন্ম উপহার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে।
আনন্দটা কী নিয়ে? কলুর বলদের একঘেয়েমি নিয়ে মুখস্থ করার প্রাণান্তকর চেষ্টায় সীমাবদ্ধ না থেকে নিজের বুদ্ধিমত্তাকে ও বহুমাত্রিক সক্ষমতাকে উত্সারিত করতে পারার মধ্যেই এই আনন্দ। শিক্ষার মধ্যে প্রতিনিয়ত নতুনত্ব আবিষ্কার করার সুযোগও আনন্দের কারণ। সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতির কাঠামোর মধ্যেই এর পরিচয় পাওয়া যায়। তথ্য মনে রাখার সক্ষমতাই যে একমাত্র জরুরি সক্ষমতা নয়, বরং অনুধাবন, প্রয়োগ, বিশ্লেষণ—এসবের সক্ষমতা যে আরও বেশি জরুরি, তার স্বীকৃতি রয়েছে এর মধ্যে। প্রচলিত পরীক্ষাব্যবস্থায় এগুলো ছাড়াই ভালো করা যায়। এমনকি যখন প্রশ্নে বলা হয়—বুঝিয়ে বলো, প্রমাণ করো, ব্যাখ্যা করো, কারণ দর্শাও ইত্যাদি, সেখানেও প্রশ্নগুলো এমন সীমাবদ্ধ ও সুনির্দিষ্ট যে পাক্কা মুখস্থ করে উত্তর দেওয়া যায়, বিশেষ কোনো অনুধাবন ছাড়াই।
সৃজনশীল পদ্ধতিতে এ সম্ভাবনা থাকবে না। এ পদ্ধতির পরীক্ষায় প্রতিবারের প্রতি প্রশ্নে নতুনত্বের শুরু হয় একটি নতুন দৃশ্যকল্প দিয়ে। এই দৃশ্যকল্প আগে কোনো পরীক্ষায় ব্যবহূত হয়নি, ছাত্রের এটি আগে দেখার সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ। ভবিষ্যতেও কোনো প্রশ্নে এটি আর ব্যবহূত হবে না। অবশ্য নতুন হলেও দৃশ্যকল্পটি পঠিত বিষয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, ওই বিষয়েরই নতুন আঙ্গিকের উপস্থাপনা বলা যায়। উপস্থাপনার এই নতুনত্বের কারণে ছাত্রকে উত্তর দেওয়ার সময় চিন্তা করতে হবে, নিজের অনুধাবন ও বিচার-বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে হবে। ওই দৃশ্যকল্পভিত্তিক একটি প্রশ্নের মধ্যে চারটি পৃথক অংশ থাকে, যার প্রথমটি আগের মতোই স্মৃতিনির্ভর। তবে এর চেয়ে বেশি নম্বর থাকে পরের অংশগুলোতে। প্রতিটি প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশে দৃশ্যকল্পের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রের অনুধাবনকে এমনভাবে যাচাই করা হয়, যাতে মুখস্থ করলে নয়; বরং ব্যাপারটি সত্যিই বুঝলে তবেই উত্তর দেওয়া যাবে। তৃতীয় অংশে জানা তথ্যগুলোকে নতুন একটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে বলা হয়, ক্ষেত্র নতুন হলেও মূল জিনিস বুঝে থাকলে উত্তর দেওয়া কঠিন হয় না। চতুর্থ অংশটিতেই চিন্তার প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি, এতে নম্বরও সবচেয়ে বেশি। এটি উচ্চ দক্ষতার প্রশ্ন—পঠিত বিষয়টিকে ব্যাপকতর পটভূমিতে বিবেচনার জন্য এতে বিশ্লেষণ ও সার্বিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয়, নিজস্ব মতামত দেওয়ারও অবকাশ থাকে। এই বিভিন্ন সক্ষমতার প্রয়োজন হয় বলে সৃজনশীল পরীক্ষায় সাধারণভাবে অনেকেই ভালো করলেও উচ্চতর দক্ষতার পরিচয় দিতে পারলে বেশি ভালো করার সুযোগ থাকে।
মজার ব্যাপার হলো, স্মৃতি সম্পর্কে আধুনিক যে তত্ত্ব রয়েছে, তাতে দেখা যায় যে বুঝে, অনুধাবন করে এবং নানাভাবে ব্যবহার করে যদি কোনো কিছু শেখা যায়, তা হলে তা মনে রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়। এর জন্য কষ্টকর পদ্ধতিতে বারবার আওড়ানো, লেখা ইত্যাদির প্রয়োজন হয় না। শিক্ষার সব ক্ষেত্রে অনেক কিছু মনে রাখতে হয়, এটি সত্য। কিন্তু সৃজনশীলভাবে লেখাপড়ায় সেই মনে রাখাটি স্বাভাবিক আনন্দদায়কভাবেই ঘটতে পারে।
সব ধরনের বিষয়কেই সৃজনশীল পদ্ধতির আওতায় আনা সম্ভব। এখানে শুধু একটি উদাহরণ দিয়ে প্রশ্নের ওই চারটি অংশকে তুলে ধরার চেষ্টা করব। ভূগোলের একটি প্রশ্নে মনে করা যাক, দৃশ্যকল্পটি দেওয়া হলো চিলির সাম্প্রতিক ভূমিকম্প নিয়ে। দক্ষিণ আমেরিকার ভূ-ত্বকে টেকটোনিক প্লেটের বিশেষ ফাটলেই এই ভূমিকম্পের উত্স ছিল, তা বলা হয়েছে। এতে জনবিরল মূল জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি ও পরিবেশ পরিবর্তনের কথার সঙ্গে ভূমিকম্পে অতীতে আমাদের ব্রহ্মপুত্র নদের গতি পরিবর্তনে যমুনা নদীর সৃষ্টির প্রসঙ্গও সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন প্রশ্নের স্মৃতিনির্ভর প্রথম অংশে জানতে চাওয়া হলো, রিখটার স্কেলটি কীভাবে স্থির করা হয়। দ্বিতীয় অংশে অর্থাৎ অনুধাবন অংশে টেকটোনিক প্লেটের ফাটলের কারণে ভূমিকম্প সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি জানতে চাওয়া হয়েছে। তৃতীয় অংশ জ্ঞানকে প্রয়োগ করা নিয়ে; এতে ঢাকা নগরে ৬ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও পরিবেশ পরিবর্তনের ধরন কী রকম হতে পারে, সেটিই হলো প্রশ্ন। আর উচ্চ দক্ষতার যাচাইয়ে চতুর্থ অংশে জানতে চাওয়া হলো, ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যমুনার সৃষ্টি হওয়ায় উভয় নদীর তীরে জনজীবনে কী প্রভাব পড়েছে।
এসব উত্তরের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাঠ্যপুস্তকে থাকলেও আগে থেকে তৈরি প্রশ্নের উত্তর হুবহু মুখস্থ করে এর কাজ চলবে না। পাঠ্য বস্তুর ভালো অনুধাবন ও অনুশীলন থাকলে তাকে কেন্দ্র করে এ রকম যেকোনো ভঙ্গির প্রশ্নেরই উত্তর চিন্তা করে দেওয়া যাবে। পরীক্ষার যে দিকটি নিজে লিখে উত্তর দেওয়ার ব্যাপার, এই গেল সেটি। এ ছাড়া বরাবরের মতো যে বহু নির্বাচনী প্রশ্নের দিকটি থাকছে, তাতেও দৃশ্যকল্পের সঙ্গে উল্লিখিত রকমের অংশ থাকবে। কিছু ক্ষেত্রে আগের মতো জানা থাকা শুদ্ধ তথ্যটি বেছে নেওয়ার বিষয় থাকবে বটে, কিন্তু অন্যগুলোতে শুদ্ধ উত্তর বেছে নিতে অনুধাবন অথবা প্রয়োগ অথবা বিশ্লেষণের প্রয়োজন হবে। আর তাতে নতুন নতুনভাবে প্রশ্ন করার অসংখ্য সুযোগ থাকবে— সীমিতসংখ্যক প্রশ্ন আন্দাজ করে মুখস্থ উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে না। সৃজনশীল শিক্ষার মধ্যে নিবিষ্ট ছাত্রের জন্য এসবই আগ্রহের ও চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হতে পারে, কিন্তু মোটেই নিরানন্দ একঘেয়ে পরিশ্রমের ব্যাপার হবে না—এখন কোচিং সেন্টার-নির্ভর ছাত্রদের ক্ষেত্রে যেমন হচ্ছে।
মনে হচ্ছে, সৃজনশীল প্রশ্নে শেষের দুটি অংশ নিয়েই অনেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন। তাঁদের ভয়, এ রকম প্রয়োগ বা বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা ছেলেমেয়েরা রাখে কি না। এটি নিজেদের ছেলেমেয়ের চিন্তাশক্তির ওপর অকারণ আস্থাহীনতাই মনে করি। মুখস্থনির্ভর পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে আমরা ভুলেই গেছি যে শিক্ষাটি শিক্ষার্থীর আনন্দ-আগ্রহের বিষয়, কোচিং সেন্টারের বিষয় নয়, পরীক্ষায় কী আসবে তার ওপর গবেষণার বিষয়ও নয়। তাই ওই ছেলেমেয়েদের যে কী প্রচণ্ড ক্ষমতা, আর সেই ক্ষমতার পরিচয় দিতে পারলে তারা যে কত আনন্দ পায়, সেটিই আমরা ভুলে গেছি। আমি শুধু আমার অন্য কিছু অভিজ্ঞতা থেকে এর একটি উদাহরণ দেব।
মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আমি বিজ্ঞানের একটি কুইজ পরিচালনা করি। এতে তথ্য জিজ্ঞাসা করার চেয়ে তাদের বৈজ্ঞানিক যুক্তি-বিস্তারের সক্ষমতার ওপরই আমি বেশি জোর দিই। সাধারণত যে রকম প্রশ্ন করি তার একটি নমুনা এ রকম—তাদের জানালাম, অতি সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে মা চিন্তাগ্রস্ত বা উদ্বিগ্ন থাকলে তাঁর গর্ভের সন্তান অস্থির হয়ে পড়ে, যা তার অতিরিক্ত ইতস্তত নড়াচড়ার মাধ্যমে ধরা পড়ে। মায়ের চিন্তিত থাকার খবর গর্ভের সন্তান কীভাবে জানতে পারে, সেটিই ছিল প্রশ্ন। নতুন আবিষ্কৃত এই বিষয়টি পাঠ্যবইতে দূরে থাক, অন্য কোথাও থেকেই দেখার সম্ভাবনা ওদের ছিল না। তার পরও সঠিক উত্তর এল নাড়ির মধ্য দিয়ে মা ও গর্ভের সন্তানের একই রক্তপ্রবাহের দরুন প্রবাহের হ্রাস-বৃদ্ধি ও তাতে হরমোনের পরিবর্তন সন্তানের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এটি নেহাতই নাড়ির বন্ধন সম্পর্কে তাদের পূর্ব-জ্ঞান ও সরল বৈজ্ঞানিক যুক্তির ভিত্তিতে দেওয়া উত্তর। মজার ব্যাপার হলো, এর আবিষ্কারক বিজ্ঞানীরা পরীক্ষণে এ কারণই খুঁজে পেয়েছেন। এ রকম উত্তর দেওয়ার সময় ওই ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে উত্সাহ, আনন্দ আর উদ্বেগ লক্ষ করি, তা অতি চমত্কার। এতো সম্পূর্ণ পাঠ্যবহির্ভূত ক্ষেত্র। পড়া জিনিসের ওপর তারা যে আরও সহজে বিচার-বুদ্ধির পরিচয় দেবে, এটিই তো স্বাভাবিক। সে সুযোগ আমাদের পরীক্ষাব্যবস্থা আগে কখনো তাদের দেয়নি।
কয়েকজন অভিভাবক আমাকে বললেন, বিজ্ঞানের পরীক্ষা কীভাবে সৃজনশীল হবে, সৃজনশীলতার কাজটি তো বিজ্ঞানীই করে গেছেন—ছাত্ররা সেটিই তো শিখবে, নতুন করে কী করবে? এ কথাটিও ঠিক নয়। বিজ্ঞানের সবকিছুকে নানাভাবে বোঝার ব্যাপার রয়েছে। সাধারণ গাণিতিক, ডায়াগ্রাম-নির্ভর, প্রায়োগিক ইত্যাদি সমস্যা সমাধানমূলক সহজ-সরল প্রশ্নে যাচাই করা যায় ছাত্ররা কতখানি বুঝেছে, কতখানি ভেবেছে। এমনকি এর বৈজ্ঞানিক নিয়মটি ঠিক ও রকম না হলে অবস্থাটি কী হতো, তার উত্তর দিতে পারাটিও অনুধাবনের চমত্কার উপায়। যেমন, পৃথিবীর অক্ষ তার কক্ষ-সমতলের সঙ্গে তেরচা হয়ে না থাকলে কী হতো, তার চৌম্বক ক্ষেত্র না থাকলে কী হতো ইত্যাদি। আর পরীক্ষায় যদি এভাবে চাওয়া হয়, তাহলে পঠন-পাঠনও এভাবে হতে হবে। শিক্ষক তখন নিরানন্দভাবে পাঠ্যবইয়ের পুনরাবৃত্তি করার কাজ থেকে রক্ষা পাবেন; বরং তিনি ক্লাসে ছাত্রদের সঙ্গে সৃজনশীল আলোচনায় তাদের সত্যিকার বিজ্ঞান-সক্ষম করে তুলতে পারবেন—সমস্যা সমাধানের দিকে নিয়ে গিয়ে। ছাত্র দেখবে, স্বাধীনভাবে বিষয়গুলোর আনন্দময় চর্চা করলেই বরং পরীক্ষায় ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে।
কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে শিক্ষক প্রতিবার নতুন নতুনভাবে সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারবেন কি না, বা করতে চাইবেন কি না। নাকি এটিও সীমাবদ্ধ প্রশ্ন-ব্যাংকের মতো হয়ে পড়বে উত্তর মুখস্থ করার জন্য। সতর্ক থাকলে এটি হওয়ার সুযোগ কম, বিশেষ করে শেষ পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষায় কেন্দ্রীয়ভাবে যে প্রশ্ন করা হবে, তা আগের কোনো কিছুর সঙ্গে মিলবে না বলে। এ পদ্ধতিতে নতুন নতুন প্রশ্ন করা শিক্ষকের জন্য একটি আনন্দদায়ক কাজ হওয়ার কথা এর সৃষ্টিশীলতার কারণে। তিনি এখন শুধু সৃজনশীল প্রশ্নই করছেন না, ক্লাসের চর্চার মধ্যেও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সব সময় সৃজনশীলতার মধ্যে থাকছেন। পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখাটিও এখন তাঁর জন্য সহজ ও স্বচ্ছন্দ হবে। কারণ, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মুখস্থ করা চর্বিত চর্বণ নয়, বুদ্ধিদীপ্ত সংক্ষিপ্ত যুক্তি-বিস্তারই এখন দেখতে হবে। শুদ্ধ উত্তরটি বিভিন্ন জনের থেকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে আসতে পারে, বিশেষ করে প্রয়োগ বা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে। সেখানে যৌক্তিক নির্ভুলতাটিই হবে বড় কথা। এসব কিছু নিয়ে শিক্ষককে সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ ইত্যাদির ব্যাপক ব্যবস্থা করা হয়েছে, ক্রমাগত আরও করা হবে। ইতিমধ্যে সৃজনশীল পদ্ধতির সুবাতাসে ছাত্র-শিক্ষক উভয়ের মধ্যে উচ্ছ্বসিত আনন্দের কিছু নমুনা আমি দেখেছি। অবশ্য কিছু কিছু উদ্বেগের প্রকাশও দেখেছি। ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য এই অত্যন্ত সম্ভাবনাময় প্রচেষ্টাটিকে আমাদের সফল করতেই হবে। এর মধ্যে বর্তমান উদ্বেগগুলো দূর করতে হবে, আনন্দকে সর্বব্যাপ্ত করতে হবে। আর একে নিয়ে যেতে হবে ক্রমান্বয়ে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে—প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। সব ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রীদের দেখতে চাই মনের টানে নিবিষ্ট সৃজনশীল শিক্ষার মধ্যে, গতানুগতিক পরীক্ষার মুখস্থসর্বস্ব অসারতার মধ্যে নয়।
ড. মুহাম্মদ ইব্রাহীম: অধ্যাপক, পদার্থবিদ্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আনন্দটা কী নিয়ে? কলুর বলদের একঘেয়েমি নিয়ে মুখস্থ করার প্রাণান্তকর চেষ্টায় সীমাবদ্ধ না থেকে নিজের বুদ্ধিমত্তাকে ও বহুমাত্রিক সক্ষমতাকে উত্সারিত করতে পারার মধ্যেই এই আনন্দ। শিক্ষার মধ্যে প্রতিনিয়ত নতুনত্ব আবিষ্কার করার সুযোগও আনন্দের কারণ। সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতির কাঠামোর মধ্যেই এর পরিচয় পাওয়া যায়। তথ্য মনে রাখার সক্ষমতাই যে একমাত্র জরুরি সক্ষমতা নয়, বরং অনুধাবন, প্রয়োগ, বিশ্লেষণ—এসবের সক্ষমতা যে আরও বেশি জরুরি, তার স্বীকৃতি রয়েছে এর মধ্যে। প্রচলিত পরীক্ষাব্যবস্থায় এগুলো ছাড়াই ভালো করা যায়। এমনকি যখন প্রশ্নে বলা হয়—বুঝিয়ে বলো, প্রমাণ করো, ব্যাখ্যা করো, কারণ দর্শাও ইত্যাদি, সেখানেও প্রশ্নগুলো এমন সীমাবদ্ধ ও সুনির্দিষ্ট যে পাক্কা মুখস্থ করে উত্তর দেওয়া যায়, বিশেষ কোনো অনুধাবন ছাড়াই।
সৃজনশীল পদ্ধতিতে এ সম্ভাবনা থাকবে না। এ পদ্ধতির পরীক্ষায় প্রতিবারের প্রতি প্রশ্নে নতুনত্বের শুরু হয় একটি নতুন দৃশ্যকল্প দিয়ে। এই দৃশ্যকল্প আগে কোনো পরীক্ষায় ব্যবহূত হয়নি, ছাত্রের এটি আগে দেখার সম্ভাবনাও খুব ক্ষীণ। ভবিষ্যতেও কোনো প্রশ্নে এটি আর ব্যবহূত হবে না। অবশ্য নতুন হলেও দৃশ্যকল্পটি পঠিত বিষয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত, ওই বিষয়েরই নতুন আঙ্গিকের উপস্থাপনা বলা যায়। উপস্থাপনার এই নতুনত্বের কারণে ছাত্রকে উত্তর দেওয়ার সময় চিন্তা করতে হবে, নিজের অনুধাবন ও বিচার-বুদ্ধিকে কাজে লাগাতে হবে। ওই দৃশ্যকল্পভিত্তিক একটি প্রশ্নের মধ্যে চারটি পৃথক অংশ থাকে, যার প্রথমটি আগের মতোই স্মৃতিনির্ভর। তবে এর চেয়ে বেশি নম্বর থাকে পরের অংশগুলোতে। প্রতিটি প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশে দৃশ্যকল্পের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্রের অনুধাবনকে এমনভাবে যাচাই করা হয়, যাতে মুখস্থ করলে নয়; বরং ব্যাপারটি সত্যিই বুঝলে তবেই উত্তর দেওয়া যাবে। তৃতীয় অংশে জানা তথ্যগুলোকে নতুন একটি ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে বলা হয়, ক্ষেত্র নতুন হলেও মূল জিনিস বুঝে থাকলে উত্তর দেওয়া কঠিন হয় না। চতুর্থ অংশটিতেই চিন্তার প্রয়োজন হয় সবচেয়ে বেশি, এতে নম্বরও সবচেয়ে বেশি। এটি উচ্চ দক্ষতার প্রশ্ন—পঠিত বিষয়টিকে ব্যাপকতর পটভূমিতে বিবেচনার জন্য এতে বিশ্লেষণ ও সার্বিক জ্ঞানের প্রয়োজন হয়, নিজস্ব মতামত দেওয়ারও অবকাশ থাকে। এই বিভিন্ন সক্ষমতার প্রয়োজন হয় বলে সৃজনশীল পরীক্ষায় সাধারণভাবে অনেকেই ভালো করলেও উচ্চতর দক্ষতার পরিচয় দিতে পারলে বেশি ভালো করার সুযোগ থাকে।
মজার ব্যাপার হলো, স্মৃতি সম্পর্কে আধুনিক যে তত্ত্ব রয়েছে, তাতে দেখা যায় যে বুঝে, অনুধাবন করে এবং নানাভাবে ব্যবহার করে যদি কোনো কিছু শেখা যায়, তা হলে তা মনে রাখা অনেক সহজ হয়ে যায়। এর জন্য কষ্টকর পদ্ধতিতে বারবার আওড়ানো, লেখা ইত্যাদির প্রয়োজন হয় না। শিক্ষার সব ক্ষেত্রে অনেক কিছু মনে রাখতে হয়, এটি সত্য। কিন্তু সৃজনশীলভাবে লেখাপড়ায় সেই মনে রাখাটি স্বাভাবিক আনন্দদায়কভাবেই ঘটতে পারে।
সব ধরনের বিষয়কেই সৃজনশীল পদ্ধতির আওতায় আনা সম্ভব। এখানে শুধু একটি উদাহরণ দিয়ে প্রশ্নের ওই চারটি অংশকে তুলে ধরার চেষ্টা করব। ভূগোলের একটি প্রশ্নে মনে করা যাক, দৃশ্যকল্পটি দেওয়া হলো চিলির সাম্প্রতিক ভূমিকম্প নিয়ে। দক্ষিণ আমেরিকার ভূ-ত্বকে টেকটোনিক প্লেটের বিশেষ ফাটলেই এই ভূমিকম্পের উত্স ছিল, তা বলা হয়েছে। এতে জনবিরল মূল জায়গায় ক্ষয়ক্ষতি ও পরিবেশ পরিবর্তনের কথার সঙ্গে ভূমিকম্পে অতীতে আমাদের ব্রহ্মপুত্র নদের গতি পরিবর্তনে যমুনা নদীর সৃষ্টির প্রসঙ্গও সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়েছে। এখন প্রশ্নের স্মৃতিনির্ভর প্রথম অংশে জানতে চাওয়া হলো, রিখটার স্কেলটি কীভাবে স্থির করা হয়। দ্বিতীয় অংশে অর্থাৎ অনুধাবন অংশে টেকটোনিক প্লেটের ফাটলের কারণে ভূমিকম্প সৃষ্টির প্রক্রিয়াটি জানতে চাওয়া হয়েছে। তৃতীয় অংশ জ্ঞানকে প্রয়োগ করা নিয়ে; এতে ঢাকা নগরে ৬ রিখটার স্কেলের ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতি ও পরিবেশ পরিবর্তনের ধরন কী রকম হতে পারে, সেটিই হলো প্রশ্ন। আর উচ্চ দক্ষতার যাচাইয়ে চতুর্থ অংশে জানতে চাওয়া হলো, ব্রহ্মপুত্রের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যমুনার সৃষ্টি হওয়ায় উভয় নদীর তীরে জনজীবনে কী প্রভাব পড়েছে।
এসব উত্তরের জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদান পাঠ্যপুস্তকে থাকলেও আগে থেকে তৈরি প্রশ্নের উত্তর হুবহু মুখস্থ করে এর কাজ চলবে না। পাঠ্য বস্তুর ভালো অনুধাবন ও অনুশীলন থাকলে তাকে কেন্দ্র করে এ রকম যেকোনো ভঙ্গির প্রশ্নেরই উত্তর চিন্তা করে দেওয়া যাবে। পরীক্ষার যে দিকটি নিজে লিখে উত্তর দেওয়ার ব্যাপার, এই গেল সেটি। এ ছাড়া বরাবরের মতো যে বহু নির্বাচনী প্রশ্নের দিকটি থাকছে, তাতেও দৃশ্যকল্পের সঙ্গে উল্লিখিত রকমের অংশ থাকবে। কিছু ক্ষেত্রে আগের মতো জানা থাকা শুদ্ধ তথ্যটি বেছে নেওয়ার বিষয় থাকবে বটে, কিন্তু অন্যগুলোতে শুদ্ধ উত্তর বেছে নিতে অনুধাবন অথবা প্রয়োগ অথবা বিশ্লেষণের প্রয়োজন হবে। আর তাতে নতুন নতুনভাবে প্রশ্ন করার অসংখ্য সুযোগ থাকবে— সীমিতসংখ্যক প্রশ্ন আন্দাজ করে মুখস্থ উত্তর দেওয়া সম্ভব হবে না। সৃজনশীল শিক্ষার মধ্যে নিবিষ্ট ছাত্রের জন্য এসবই আগ্রহের ও চ্যালেঞ্জের ব্যাপার হতে পারে, কিন্তু মোটেই নিরানন্দ একঘেয়ে পরিশ্রমের ব্যাপার হবে না—এখন কোচিং সেন্টার-নির্ভর ছাত্রদের ক্ষেত্রে যেমন হচ্ছে।
মনে হচ্ছে, সৃজনশীল প্রশ্নে শেষের দুটি অংশ নিয়েই অনেক অভিভাবক উদ্বিগ্ন। তাঁদের ভয়, এ রকম প্রয়োগ বা বিশ্লেষণমূলক প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার ক্ষমতা ছেলেমেয়েরা রাখে কি না। এটি নিজেদের ছেলেমেয়ের চিন্তাশক্তির ওপর অকারণ আস্থাহীনতাই মনে করি। মুখস্থনির্ভর পরীক্ষা পদ্ধতির কারণে আমরা ভুলেই গেছি যে শিক্ষাটি শিক্ষার্থীর আনন্দ-আগ্রহের বিষয়, কোচিং সেন্টারের বিষয় নয়, পরীক্ষায় কী আসবে তার ওপর গবেষণার বিষয়ও নয়। তাই ওই ছেলেমেয়েদের যে কী প্রচণ্ড ক্ষমতা, আর সেই ক্ষমতার পরিচয় দিতে পারলে তারা যে কত আনন্দ পায়, সেটিই আমরা ভুলে গেছি। আমি শুধু আমার অন্য কিছু অভিজ্ঞতা থেকে এর একটি উদাহরণ দেব।
মাধ্যমিক আর উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্রছাত্রীদের জন্য আমি বিজ্ঞানের একটি কুইজ পরিচালনা করি। এতে তথ্য জিজ্ঞাসা করার চেয়ে তাদের বৈজ্ঞানিক যুক্তি-বিস্তারের সক্ষমতার ওপরই আমি বেশি জোর দিই। সাধারণত যে রকম প্রশ্ন করি তার একটি নমুনা এ রকম—তাদের জানালাম, অতি সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে মা চিন্তাগ্রস্ত বা উদ্বিগ্ন থাকলে তাঁর গর্ভের সন্তান অস্থির হয়ে পড়ে, যা তার অতিরিক্ত ইতস্তত নড়াচড়ার মাধ্যমে ধরা পড়ে। মায়ের চিন্তিত থাকার খবর গর্ভের সন্তান কীভাবে জানতে পারে, সেটিই ছিল প্রশ্ন। নতুন আবিষ্কৃত এই বিষয়টি পাঠ্যবইতে দূরে থাক, অন্য কোথাও থেকেই দেখার সম্ভাবনা ওদের ছিল না। তার পরও সঠিক উত্তর এল নাড়ির মধ্য দিয়ে মা ও গর্ভের সন্তানের একই রক্তপ্রবাহের দরুন প্রবাহের হ্রাস-বৃদ্ধি ও তাতে হরমোনের পরিবর্তন সন্তানের মধ্যে প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এটি নেহাতই নাড়ির বন্ধন সম্পর্কে তাদের পূর্ব-জ্ঞান ও সরল বৈজ্ঞানিক যুক্তির ভিত্তিতে দেওয়া উত্তর। মজার ব্যাপার হলো, এর আবিষ্কারক বিজ্ঞানীরা পরীক্ষণে এ কারণই খুঁজে পেয়েছেন। এ রকম উত্তর দেওয়ার সময় ওই ছেলেমেয়েদের মধ্যে যে উত্সাহ, আনন্দ আর উদ্বেগ লক্ষ করি, তা অতি চমত্কার। এতো সম্পূর্ণ পাঠ্যবহির্ভূত ক্ষেত্র। পড়া জিনিসের ওপর তারা যে আরও সহজে বিচার-বুদ্ধির পরিচয় দেবে, এটিই তো স্বাভাবিক। সে সুযোগ আমাদের পরীক্ষাব্যবস্থা আগে কখনো তাদের দেয়নি।
কয়েকজন অভিভাবক আমাকে বললেন, বিজ্ঞানের পরীক্ষা কীভাবে সৃজনশীল হবে, সৃজনশীলতার কাজটি তো বিজ্ঞানীই করে গেছেন—ছাত্ররা সেটিই তো শিখবে, নতুন করে কী করবে? এ কথাটিও ঠিক নয়। বিজ্ঞানের সবকিছুকে নানাভাবে বোঝার ব্যাপার রয়েছে। সাধারণ গাণিতিক, ডায়াগ্রাম-নির্ভর, প্রায়োগিক ইত্যাদি সমস্যা সমাধানমূলক সহজ-সরল প্রশ্নে যাচাই করা যায় ছাত্ররা কতখানি বুঝেছে, কতখানি ভেবেছে। এমনকি এর বৈজ্ঞানিক নিয়মটি ঠিক ও রকম না হলে অবস্থাটি কী হতো, তার উত্তর দিতে পারাটিও অনুধাবনের চমত্কার উপায়। যেমন, পৃথিবীর অক্ষ তার কক্ষ-সমতলের সঙ্গে তেরচা হয়ে না থাকলে কী হতো, তার চৌম্বক ক্ষেত্র না থাকলে কী হতো ইত্যাদি। আর পরীক্ষায় যদি এভাবে চাওয়া হয়, তাহলে পঠন-পাঠনও এভাবে হতে হবে। শিক্ষক তখন নিরানন্দভাবে পাঠ্যবইয়ের পুনরাবৃত্তি করার কাজ থেকে রক্ষা পাবেন; বরং তিনি ক্লাসে ছাত্রদের সঙ্গে সৃজনশীল আলোচনায় তাদের সত্যিকার বিজ্ঞান-সক্ষম করে তুলতে পারবেন—সমস্যা সমাধানের দিকে নিয়ে গিয়ে। ছাত্র দেখবে, স্বাধীনভাবে বিষয়গুলোর আনন্দময় চর্চা করলেই বরং পরীক্ষায় ভালো করার সম্ভাবনা বেড়ে যাচ্ছে।
কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করছেন যে শিক্ষক প্রতিবার নতুন নতুনভাবে সৃজনশীল প্রশ্ন করতে পারবেন কি না, বা করতে চাইবেন কি না। নাকি এটিও সীমাবদ্ধ প্রশ্ন-ব্যাংকের মতো হয়ে পড়বে উত্তর মুখস্থ করার জন্য। সতর্ক থাকলে এটি হওয়ার সুযোগ কম, বিশেষ করে শেষ পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষায় কেন্দ্রীয়ভাবে যে প্রশ্ন করা হবে, তা আগের কোনো কিছুর সঙ্গে মিলবে না বলে। এ পদ্ধতিতে নতুন নতুন প্রশ্ন করা শিক্ষকের জন্য একটি আনন্দদায়ক কাজ হওয়ার কথা এর সৃষ্টিশীলতার কারণে। তিনি এখন শুধু সৃজনশীল প্রশ্নই করছেন না, ক্লাসের চর্চার মধ্যেও ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে সব সময় সৃজনশীলতার মধ্যে থাকছেন। পরীক্ষার উত্তরপত্র দেখাটিও এখন তাঁর জন্য সহজ ও স্বচ্ছন্দ হবে। কারণ, পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা মুখস্থ করা চর্বিত চর্বণ নয়, বুদ্ধিদীপ্ত সংক্ষিপ্ত যুক্তি-বিস্তারই এখন দেখতে হবে। শুদ্ধ উত্তরটি বিভিন্ন জনের থেকে বিভিন্ন ভঙ্গিতে আসতে পারে, বিশেষ করে প্রয়োগ বা বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে। সেখানে যৌক্তিক নির্ভুলতাটিই হবে বড় কথা। এসব কিছু নিয়ে শিক্ষককে সহায়তা দেওয়ার জন্য প্রশিক্ষণ ইত্যাদির ব্যাপক ব্যবস্থা করা হয়েছে, ক্রমাগত আরও করা হবে। ইতিমধ্যে সৃজনশীল পদ্ধতির সুবাতাসে ছাত্র-শিক্ষক উভয়ের মধ্যে উচ্ছ্বসিত আনন্দের কিছু নমুনা আমি দেখেছি। অবশ্য কিছু কিছু উদ্বেগের প্রকাশও দেখেছি। ভবিষ্যতের বাংলাদেশের জন্য এই অত্যন্ত সম্ভাবনাময় প্রচেষ্টাটিকে আমাদের সফল করতেই হবে। এর মধ্যে বর্তমান উদ্বেগগুলো দূর করতে হবে, আনন্দকে সর্বব্যাপ্ত করতে হবে। আর একে নিয়ে যেতে হবে ক্রমান্বয়ে পুরো শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে—প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। সব ক্ষেত্রেই ছাত্রছাত্রীদের দেখতে চাই মনের টানে নিবিষ্ট সৃজনশীল শিক্ষার মধ্যে, গতানুগতিক পরীক্ষার মুখস্থসর্বস্ব অসারতার মধ্যে নয়।
ড. মুহাম্মদ ইব্রাহীম: অধ্যাপক, পদার্থবিদ্যা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments