রাবিতে ছাত্রলীগ নেতার হাতে শিক্ষক প্রহৃতঃ নতুন করে বলার কিছু নেই

আবারও সংবাদ শিরোনামে স্থান করে নিয়েছে ছাত্রলীগের ছেলেরা। না, ছাত্র আন্দোলন বা দেশ, জাতি ও জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে ভূমিকা পালনের জন্য নয়। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা এমদাদুল হক খবর হয়েছে শিক্ষক পিটিয়ে। গতকালের আমার দেশসহ বিভিন্ন পত্রিকায় ফলাও করে তার এই কীর্তির কথা ছাপা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন ভর্তির মৌসুম। এ সুযোগে সরকারি দলের ক্ষমতা ব্যবহার করে চাঁদাবাজিতে মেতে উঠেছেন ছাত্রলীগ নেতারা। বুধবার দুপুরে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হতে আসা হিমানিস বিশ্বাসকে ডেকে নিয়ে ৩০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে তার মূল সার্টিফিকেটসহ অন্যান্য কাগজপত্র কেড়ে নেয়া হয়। হিমানিস তত্ক্ষণাত্ মোবাইল ফোনে বিষয়টি তার কাকা ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক অনুপম হীরা মণ্ডলকে জানায়। ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে নিজ পরিচয় জানিয়ে তিনি জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করলে ছাত্রলীগ নেতা এমদাদ, ডালিমসহ উপস্থিত ক্যাডাররা তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। আশপাশের লোকজন এসে অনুপম হীরাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে এবং অন্যরা পালিয়ে গেলেও এমদাদকে ধরে পার্শ্ববর্তী পুলিশ ফাঁড়িতে সোপর্দ করে। খবর শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর চৌধুরী জাকারিয়া এসে সাংবাদিকদের বের করে দিয়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। লিখিত অভিযোগ পেয়ে পুলিশ আটক ছাত্রলীগ নেতাকে স্থানীয় থানায় নিয়ে যায়। শিক্ষক প্রহৃত হওয়ার ঘটনায় ক্যাম্পাসের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ফোকলোর বিভাগের শিক্ষক-ছাত্ররা চাঁদাবাজ ছাত্রলীগ নেতার ছাত্রত্ব বাতিলসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে ক্লাস বর্জন করে উপাচার্যকে স্মারকলিপি পেশ করে এবং বিভাগীয় কার্যক্রম বন্ধসহ ক্যাম্পাসে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘটের ডাক দেয়।
বছরের শুরুতে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতা গ্রহণের মুহূর্ত থেকেই ছাত্রলীগের সোনার ছেলেদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দখল উত্সবে মেতে উঠতে দেখা যায়। এ নিয়ে বিরোধীদের চেয়ে নিজেদের মধ্যেই সংঘাত-সংঘর্ষের খবরে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটা করে দেয়া আহ্বান-আবেদনে ফল না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়েই প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগের আনুষ্ঠানিক নেতৃত্ব বর্জনের ঘোষণা দেন। তারপরও যে সন্ত্রাস, দখল, চাঁদাবাজি বন্ধ হয়নি বছরের শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাই তার প্রমাণ। নিজেদের মধ্যে কোন্দল বা প্রতিপক্ষের ওপর চড়াও হয়েই তারা থেমে থাকেনি, হামলে পড়েছে শিক্ষকের ওপরও। কতটা বেপরোয়া হলে এটা হতে পারে, তা সহজেই অনুমেয়। পিতা-পুত্রের মতো যে শিক্ষক-ছাত্র সম্পর্ক তা নেমে এসে এখন কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে, তার কারণ ভেবে দেখার বিষয়। এ জন্য যে আমাদের জাতীয় নেতৃত্বই প্রধানত দায়ী সেটা অস্বীকার করা যাবে না। শিক্ষাঙ্গনসহ সমাজের সর্বত্র নীতি-নৈতিকতা ও মূল্যবোধের যে অবক্ষয় দেখা দিয়েছে তা ঠেকানো না গেলে ভবিষ্যত্ নিয়ে আশাবাদী হওয়া যায় না। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীনদেরই উদ্যোগী ভূমিকা নিতে হবে।
তবে আশাহত হওয়ার কথা বিরোধীদের বানানো এটা বলার রেওয়াজ বর্তমান সরকারের মজ্জাগত বলা যায়। অবশ্য সত্য চাপা থাকে না। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে, মহাজোট সরকারের অংশীদার দলের ছাত্র সংগঠনও সরকারি দলের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে। রাজশাহীর ঘটনার দিনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের অনুষ্ঠানে ছাত্রমৈত্রীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ দিনবদলের কথা বলে ক্ষমতায় এলেও দিনবদল হয়েছে ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাস, দখলদারিত্ব, টেন্ডারবাজি আর চাঁদাবাজিতে। সরকার এসব বন্ধ করতে কার্যত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি দাবি করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ এবং সহাবস্থান নিশ্চিত করেনি বলে অভিযোগ তুলেছে তারা। এরপর বলার আর কী বাকি থাকে? গত এক বছরে এসব নিয়ে অনেক কথাই বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছু হয়েছে বলে মনে হয় না।

No comments

Powered by Blogger.