ন্যাটোর প্রতিবেদন ফাঁস-পশ্চিমাদের বিদায়ের পর ক্ষমতায় ফিরতে আশাবাদী তালেবান

আফগানিস্তানের তালেবান জঙ্গিরা মনে করে, পশ্চিমা সেনা প্রত্যাহারের পরই তাদের দেশটির ক্ষমতায় ফিরে আসা অবশ্যম্ভাবী। বিবিসি ও টাইমস পত্রিকায় গতকাল বুধবার ফাঁস করে দেওয়া ন্যাটোর এক গোপন প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়েছে, আফগান সরকার ও পশ্চিমা সেনাদের বিরুদ্ধে লড়াইরত তালেবানকে সক্রিয় সহায়তা দিচ্ছে পাকিস্তান।


এই প্রতিবেদনের ব্যাপারে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তালেবান। মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ও বলেছে, তারা প্রতিবেদনটি দেখেনি বলে এ নিয়ে কথা বলবে না। একে ‘ফালতু’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে ইসলামাবাদ।
তালেবানের সঙ্গে আফগান সরকারের শান্তি আলোচনার উদ্যোগের প্রেক্ষাপটে ন্যাটোর ওই কথিত প্রতিবেদন ফাঁস হলো।
আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খারের গতকালের নির্ধারিত বৈঠকের আগে এ খবর প্রকাশ পায়, যা বৈঠকের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছিল।
ন্যাটোর ‘স্টেট অব দ্য তালেবান’ শিরোনামের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই আফগান তালেবান নেতাদের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করছে। কৌশলগত পরামর্শসহ নানা সহায়তা দিচ্ছে।
বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়া চার হাজারের বেশি তালেবান ও আল-কায়েদা জঙ্গিকে অন্তত ২৭ হাজার বার জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্রতিবেদন তৈরি করেছে ন্যাটো।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবানের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। আফগান তালেবান জঙ্গিদের কর্মতৎপরতা সম্পর্কে আইএসআই সব কিছু জানে।
কাবুলেরও অভিযোগ, প্রায় ১০ বছর ধরে তালেবান জঙ্গিদের মদদ দিয়ে আসছে ইসলামাবাদ।
তালেবান ন্যাটোর কথিত প্রতিবেদন সম্পর্কে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। তবে শান্তি আলোচনার শর্ত হিসেবে অস্ত্রবিরতিতে রাজি হতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে তারা। আফগান তালেবানের মুখপাত্র ইউসুফ আহমাদি গতকাল রয়টার্সকে বলেন, ‘আফগানিস্তানে পূর্ণ ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা না করা পর্যন্ত আমাদের জিহাদ চলবে। ২০১৪ কিংবা ২০১৫ সালে বিদেশি সেনা প্রত্যাহার করা হোক বা না হোক।’
ন্যাটোর ওই প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে টাইমস-এর খবরে বলা হয়েছে, তালেবান জঙ্গিদের শক্তিসামর্থ্য এবং তহবিল প্রাপ্তি, জিহাদে উদ্বুদ্ধকরণ ও কৌশলগত বিষয়ে দক্ষতা অক্ষুণ্ন রয়েছে। এ ছাড়া কারজাই সরকারের দুর্নীতিতে অতিষ্ঠ অধিকাংশ সাধারণ আফগানও চায়, ২০০১ সালে মার্কিন অভিযানে ক্ষমতাচ্যুত তালেবান আবার ক্ষমতায় ফিরে আসুক।
পত্রিকাটির সম্পাদকীয়তে মন্তব্য করা হয়েছে, এ প্রতিবেদনে আইএসআইয়ের যে চেহারা ফুটে উঠেছে তাতে তাদের খুবই—এমনকি তালেবানের চেয়ে বেশি— দুর্বৃত্তোচিত বলে মনে হয়।
আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সহায়তা বাহিনীর (আইএসএএফ) মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিমি কামিংস বলেছেন, ফাঁস হওয়া ওই গোপন প্রতিবেদন মার্কিন সামরিক বাহিনীর তৈরি করা। এটি বিশ্লেষণধর্মী নয়, তথ্যধর্মী। গ্রেপ্তার হওয়া তালেবান ও আল-কায়েদা জঙ্গিদের দেওয়া মন্তব্য ও তথ্যের সংকলন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর পেন্টাগনের মুখপাত্র জর্জ লিটল এএফপিকে বলেন, ‘আমরা ওই প্রতিবেদন দেখিনি। তাই এ সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তবে তালেবান জঙ্গিদের সঙ্গে আইএসআইয়ের সম্পর্কের বিষয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টা বলেন, ‘পাকিস্তানে তালেবানের নিরাপদ আশ্রয়স্থল রয়েছে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। পাকিস্তানের উচিত এই সমস্যা শনাক্ত করা।’
ন্যাটোর প্রতিবেদন ‘ফালতু’ মন্তব্য করে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আবদুল বাসিত এএফপিকে বলেন, ‘পাকিস্তান আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। আমরা আফগান নেতৃত্বে তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনাও সমর্থন করি।’ এএফপি, বিবিসি ও রয়টার্স।

No comments

Powered by Blogger.