সন্তানঘাতী এশা ক্ষমা চায়
তোহুর আহমদ: জেলখানা থেকে আদালতের কাঠগড়ায় নেয়ার পথে আজমের সঙ্গে এশার আবেগঘন কথোপকথন। এশা বলেছে, পরকীয়ার মোহ ভেঙেছে। আমি সংসার করতে চাই। বুঝেছি স্বামী কি জিনিস। সব অপরাধ ক্ষমা করে ঘরে তুলে নেয়ার আকুতি তার। আয়েশা হুমায়রা এশা প্রেমিকের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সন্তানকে হত্যার অভিযোগে প্রায় দু’বছর ধরে জেল খাটছে। আদাবরের চাঞ্চল্যকর সামিউল হত্যাকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এশার প্রেমিক সামসুজ্জামান বাক্কুও আছে কারাগারে। গতকাল আদালতে হাজির করে তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করা হয়। পাঁচ বছর বয়সী সামিউল তার মায়ের অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলায় ২০১০ সালের ২৩শে জুন রাতে তাকে হত্যা করা হয়। সামিউলকে অপহরণ করে শ্বাসরোধে হত্যা করার পর মোহাম্মদপুরের নবোদয় হাউজিংয়ের পাশে বস্তাবন্দি করে লাশ ফেলে রাখা হয়। গতকাল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নিহত সামিউলের মা আয়েশা হুমায়রা এশা ও তার প্রেমিক শামসুজ্জামান বাক্কু ওরফে আরিফকে পৃথকভাবে আদালতে হাজির করা হয়। আদালত চত্বরে দাঁড়িয়ে থাকা সামিউলের বাবা কে আর আজমকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে এশা। পরে আদালতের বারান্দা দিয়ে যাওয়ার সময় আজমকে সে বলে, সব অপরাধ ক্ষমা করে দাও। আমি আবার তোমার সংসার করতে চাই। প্রয়োজনে তুমিই আমাকে শাস্তি দাও, কিন্তু জেলখানায় আর রেখো না। এশার এসব কথা শুনে মুখ ঘুরিয়ে নেন কে আর আজম। গতকাল তিনি বলেন, তার পাপের কঠোর শাস্তি হোক এটাই চাই। সে মা জাতির কলঙ্ক। তার কোন ক্ষমা নেই। আজম বলেন, আমার ফুটফুটে সন্তানকে আমি এক মুহূর্তের জন্যও ভুলতে পারি না। সবসময় তার স্মৃতি আমাকে তাড়া করে ফেরে। আজ বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো আট। আজম বলেন, এশা এর আগেও জেল থেকে বেরিয়ে আসা দু’জন নারীর মাধ্যমে আমার কাছে ক্ষমা চেয়েছে। বলেছে, সে আবার আমার সংসার করতে চায়। কিন্তু তাকে ফিরিয়ে নেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আমার বাবা-মা, ভাই কেউই তাকে আর মেনে নিতে পারবে না। সমাজ তাকে গ্রহণ করবে না। কঠোর শাস্তিই তার একমাত্র পাওনা। আজম বলেন, আমরা সামিউলের নামে কিছু একটা করতে চাই। তার জন্য একটা এতিমখানা বা মাদরাসা করার চিন্তা আছে। তিনি বলেন, এশা যখন যা চেয়েছে তাই তাকে দিয়েছি। গহনার পর গহনা দিয়েছি। যখন যে ড্রেস পছন্দ হয়েছে কিনে দিয়েছি। কিন্তু তাতে তার মন ভরেনি। অন্য ছেলের সঙ্গে সে পরকীয়ায় জড়িয়েছে। ২০১০ সালের ২৩শে জুন আদাবরের নবোদয় হাউজিং থেকে সামিউলের লাশ উদ্ধার করার পর হত্যাকাণ্ডের ক্লু খুঁজতে থাকে পুলিশ। এ ঘটনায় মায়ের প্রেমিক শামসুজ্জামান বাক্কুকে র্যাব গ্রেপ্তার করে। বাক্কু ঘটনা আড়াল করতে চতুরতার আশ্রয় নেয়। বলে, আমাদের অনৈতিক কাজ দেখে ফেলায় তাকে এশা ও আমি মিলে হত্যা করেছি। কিন্তু পরে পুলিশের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর বাক্কু স্বীকার করে, সামিউল তাদের সম্পর্কের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্য ২২শে জুন বাসার সামনে থেকে তাকে অপহরণ করা হয়। পরদিন তাকে অচেতন করে হত্যা করে লাশ ফেলে দেয়া হয় নবোদয় হাউজিংয়ে তাদের বাসার সামনে। মামলার তদারক কর্মকর্তা তেজগাঁও জোনের তৎকালীন উপ-কমিশনার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, এ ধরনের ঘটনা যেন আর কোন পরিবারে না ঘটে। গতকাল আদালতে হাজির করে এশা ও বাক্কুকে তাদের বিরুদ্ধে শিশু সামিউলকে হত্যা করে লাশ গুমের অভিযোগ পড়ে শোনানো হলে তারা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী মাহবুব হাসান রানা এবং শহিদুল ইসলাম জুয়েল জানান, এর আগে বিভিন্ন কারণে আট বার এ মামলার অভিযোগ গঠন পিছিয়েছে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার তৎকালীন এসআই কাজী শাহান হক গত বছরের ২৫শে অক্টোবর ওই দু’জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। গতকাল ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৪-এর বিচারক জেসমিন আনোয়ার অভিযোগ গঠন করেন। একই সঙ্গে আদালত আগামী ১লা মার্চ সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন। সন্তানকে হত্যার অভিযোগে সামিউলের পিতা কে. আর. আজম আদাবর থানায় হত্যা ও লাশ গুমের অভিযোগে এশা ও তার প্রেমিক বাক্কুর বিরুদ্ধে মামলা করেন।
No comments