এই নগরীর দিনরাত্রিঃ সভ্যতার বিরুদ্ধে by রেজোয়ান সিদ্দিকী

বাংলাদেশের বর্তমান শাসকরা দিন বদলের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এসে সময় বদল করে দিয়েছে। দিন বদলের এই স্লোগান নিয়ে হাজির হয়েছিল একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি। জেলেদের ঠকিয়ে মাছ কিনত এক পাইকার। সে জানাত, মাছের দাম পাওয়া যায় না, তাই মাছ সস্তা; কিন্তু জেলে কিনে ফেলল একটা মোবাইল ফোন।

ব্যস, সে পাইকারি বাজারের দাম জেনে ফেলল ফোন করে। ফলে মাছের পাইকার তাকে আর ঠকাতে পারল না। জেলে পাইকারকে বলল, ‘সেদিন কি আর আছে? দিন বদলাইয়া গেছে না।’ এই ছিল দিন বদলে যাওয়ার সার কথা।
মহাজোট সরকার যখন দিন বদলের ঘোষণা দিল, তখন নাগরিকরা হয়তো আশা করেছিলেন যে, ভাগ্য বদলে যাবে। কেউ আর তাদের ঠকাতে পারবে না; কিন্তু সে আশা নিতান্তই মরীচিকা হয়ে দেখা দিতে খুব বেশি সময় লাগেনি। এমনিতেই অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের দু’বছরের স্বৈরাচারী শাসনকালে মানুষকে পিষ্ট করে ফেলেছিল অত্যাচার-নির্যাতনের মাধ্যমে। তাদের ‘এরে ধরো, তারে মারো’ নীতির ফলে নাগরিকদের ছিল ত্রাহি মধুসূদন অবস্থা। মানুষ সেই অপশাসন থেকে নিস্তার চেয়েছিল। তাই দিন বদলের স্লোগানটি তাদের মন্দ লাগেনি। তারা ভেবেছিলেন, দিন বদল মানে বোধকরি তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন। জিনিসপত্রের দাম কমবে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে, বেকারত্ব দূর হবে। অন্যায়-অত্যাচার পালিয়ে যাবে। নাগরিকরা পূর্ণোদ্যমে কাজ করে যাবে। জাতি এগিয়ে যাবে সামনে।
কিন্তু নাগরিকদের সে আশা মিইয়ে যেতে সময় লাগেনি। যারা দিন বদলের স্লোগান দিয়ে ক্ষমতায় এলো, তাদের আমলে স্বৈরাচারী সরকারের শাসন ধারার অবসান ঘটল না। বরং পূর্ববর্তী সরকারের ধারাবাহিকতায় তারা নতুন করে শোষণ-নির্যাতনের পথ প্রশস্ত করল। দলীয়করণ, আত্মীয়করণ, জেলাকরণের ঠেলায় প্রশাসন স্থবির হয়ে যেতে থাকল। নানা কারসাজির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য আরও একধাপ বাড়িয়ে দেয়া হলো। দখলের মোচ্ছব শুরু হলো চারদিকে। চাঁদাবাজি আর অস্ত্রবাজি দেখা গেল সর্বত্র। টেন্ডারবাজি চলছে। সে টেন্ডারবাজিকে হালাল করার জন্য নিয়ম-নীতিতেও পরিবর্তন আনা হলো। লুটের সে এক বিশাল আয়োজন!
তাহলে দিন বদলের কী হবে? সে ফন্দিও পাওয়া গেল। কেউ বুদ্ধি দিল, ঘড়ির কাঁটা বদলে দিলেই দিন বদলে যাবে। ব্যস, বাজার নয়, টেন্ডার নয়, আইন-শৃঙ্খলা নয়, দ্রব্যমূল্য নয়, ঘড়ির কাঁটা এগারোটার জায়গায় ১২টা বাজিয়ে দিয়ে দিন বদলের কাজ শুরু হয়ে গেল। এখন সকাল ৬টায় সাতটা বাজে। রাত এগারোটায়ই বারোটা। কী চমত্কার দিন বদল!
কিন্তু প্রায় পাঁচ হাজার বছর আগে মানুষ সময় মাপার কৌশল উদ্ভাবনে নানাভাবে কাজ করেছে। বালি-ঘড়ি, সূর্য-ঘড়ি উদ্ভাবন করে দিন-রাতের হিসাব বের করার চেষ্টা করেছে। সেটাও যে করেছে, তখনও দেশে দেশে সময়ের ভেদ হয়েছে। কারণ, পৃথিবীর সব দেশে একসঙ্গে সকাল হয় না। একসঙ্গে রাত নামে না। তারপর মানুষ সময়কে আরও পরিশীলিত করেছে। পৃথিবীকে নানা রেখায় বিভক্ত করে সময়ের হেরফের নির্ধারণ করেছে। শেষ পর্যন্ত গ্রীনিচ সময়কে একটা মান ধরে বিভিন্ন দেশের সময়ের হিসাব নির্ধারণ করেছে। গ্রীনিচ মান সময়ের সঙ্গে সময়ের হেরফের কত, সেটা আমলে নিয়েই বলে দেয়া যায়, দেশটির অবস্থান ঠিক কোথায়।
বাংলাদেশে সময় গ্রীনিচ মান সময় থেকে ছয়ঘণ্টা বেশি। ফলে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়, সেটা বোঝা যায়; কিন্তু দিন বদলের সরকারের অজ্ঞতাপ্রসূত স্বেচ্ছাচারিতায় পৃথিবীর মানচিত্র থেকে বাংলাদেশ যেন হারিয়ে যেতে বসেছিল। বিজ্ঞ নাগরিকরা বার বার বলছিলেন যে, এভাবে সময় বদলানো সঠিক নয়; কিন্তু অজ্ঞ শাসকরা বললেন, দিন বদলাতে হলে তো সময় বদলাতেই হবে। তাই সভ্যতার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে, ভূগোলের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তারা ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে দিলেন।
নাগরিকদের দুর্ভোগের আর সীমা থাকল না। বাচ্চাদের স্কুলে নেয়ার জন্য আগে যে মা ছয়টায় ঘুম থেকে উঠতেন, এখন তাকে পাঁচটায় উঠতে হবে। আগে যে অফিসযাত্রী আটটায় তার প্রস্তুতি শেষ করতেন, এখন তা করতে হবে সাতটায়। সাড়ে পাঁচটায় যেখানে সূর্য ডুবত, এখন ডোবে সাড়ে ছয়টায়; কিন্তুু নীতিনির্ধারকরা তো আর পৃথিবীর ঘূর্ণন থামিয়ে দিতে পারে না। তাদের ইচ্ছামত সূর্য ওঠাতেও পারে না, সূর্য ডোবাতেও পারে না। ফলে দেশের পনের কোটি মানুষ চরম বিড়ম্বনা ও ভোগান্তির মধ্যে পড়ল। মানুষ বলল, ফিরিয়ে দাও ঘড়ির কাঁটা। সভ্যতা ও ভূগোলের বিপরীতে দাঁড়িয়ে সরকার বলল, সময় না বদলালে দিন বদলাব কেমন করে। অতএব, সময় বদলাতেই হবে, বদলানো সময় পরিবর্তন করা যাবে না। হ্যাঁ, সভ্য হোক, অসভ্য হোক ভদ্রলোকের এক কথা।
কিন্তু নীতিনির্ধারক নিজেরাও বোধহয় হাঁফিয়ে উঠেছেন। তাই শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ঘড়ির কাঁটা আবার আগের জায়গায় নিয়ে যাওয়া হবে। নাগরিকরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন; কিন্তু ভয় তাদের দূর হয়নি। তারা আতঙ্কের মধ্যে আছেন। কারণ, দিন বদলঅলারা জানিয়ে দিয়েছেন, আপাতত থামলেও, তারা আবারও দিন বদলের প্রক্রিয়ায় ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে দেবেন। হায়রে দিন বদল! তার চেয়ে মা ভিক্ষা চাই না, কুত্তা সামলান।
বৃক্ষনিধন বিপর্যয় ডেকে আনছে
অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন। সে সম্মেলনের আগে থেকেই বিশ্বে আলোচিত হচ্ছিল বাংলাদেশের নাম। কারণ, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পৃথিবীর যেসব দেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ তার মধ্যে শীর্ষে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী এবং প্রায় ৮০-৯০ জনের এক প্রতিনিধিদল সে সম্মেলন-সফরে ডেনমার্ক গিয়েছিলেন।
জলবায়ু পরিবর্তন মানে বিশ্বের উষ্ণতা বৃদ্ধি। বিশ্বের উষ্ণতা বাড়লে মেরু অঞ্চলের জমাট বরফ গলবে। হিমালয়ের বরফ গলবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়বে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে বাংলাদেশের উপকূলের বিরাট এলাকা পানিতে ডুবে যাবে। লবণাক্ত পানি ঢুকবে উর্বর শস্যের জমিনে। বসতি হারাবে লাখ লাখ মানুষ। কর্মও হারাবে। প্রাণবৈচিত্র্যের বিনাশ ঘটবে। এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে বাংলাদেশে।
মিডিয়ার ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ফলে মানুষ সে সত্য উপলব্ধি করতে শিখেছে। ফলে আতঙ্ক বেড়েছে। প্রতিকার নিয়ে চিন্তা করছে। জলবায়ু পরিবর্তন হলে এই মহানগরীর মানুষের আতঙ্কের কী আছে! সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়লে সে পানিতে কি নাগরিকের পা ভিজে যাবে। হয়তো যাবে না; কিন্তু নাগরিক মানুষ জানে, সাধারণ মানুষের শস্যের জমিন নষ্ট হলে তার জীবনমানে আঘাত আসবেই। তাই নাগরিকেরও উদ্বেগ আছে।
কোপেনহেগেনের জলবায়ু সম্মেলনের তামাশা সেরে বাংলাদেশ ফিরে এসেছে শূন্য হাতে। যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী, তারাই আবার বিশ্বের নিয়ন্তা। ফলে কিছু প্রতিশ্রুতি ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি। যা দাঁড়িয়েছে, তা হলো, নিজেদের ভবিষ্যতের চিন্তা নিজেদেরই করতে হবে।
সে কারণেই অনেক আগে থেকেই চলছিল উপকূলের বনায়ন প্রক্রিয়া। উপকূলীয় এলাকায় বেড়ে উঠছিল হাজার হাজার গাছ। যা হতে পারত জলবায়ুর ক্ষতি রোধের কার্যকর পথ; কিন্তু ডিজিটাল বা দিন বদলের সরকার যন্ত্রমুখী। ফলে এসব গাছপালা তাদের কাছে আগাছা বলে বিবেচিত হতে শুরু করল। ফলে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলে দিয়ে সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সেখানে গড়ে তুলতে শুরু করল জাহাজ ভাঙার কারখানা, শুঁটকি শুকানোর প্রান্তর।
আতঙ্কিত নাগরিকরা প্রতিকার চাইলেন। কিন্তু সে প্রতিকার কিছুই হলো না। ওই এলাকায় প্রভাবশালী যদি বৃক্ষনিধন করে পার পেয়ে যায়, তাহলে এই এলাকায় আমি আর বসে থাকি কেন। নেমে যাই বৃক্ষনিধনে। সে নিধন চলছে। গালভরা বুলির সরকার পরিবেশ রক্ষায় সর্বাত্মক ব্যবস্থার ঘোষণা দিচ্ছে; কিন্তু বন উজাড় করে বিপর্যয় ডেকে আনা হচ্ছে। ডিজিটালি সরকার চুপ। কারণ, ডিজিটাল তো যন্ত্র, যন্ত্রের বিকাশ ঘটছে উপকূলীয় এলাকায়। সেখানে বৃক্ষবিনাশ রোধের জন্য এত আহাজারির কি কোনো মানে হয়?
প্রিয় এলাকাবাসী, একটি শোক সংবাদ!
এই নগরীতে মাইকের কত যে ব্যবহার! যানবাহনের ভেঁপুর শব্দেই অতিষ্ঠ নগরবাসী। তার ওপর হঠাত্ হঠাত্ যুক্ত হয় মাইকের গর্জন। তার নানা উপলক্ষ। এলাকায় কারও মৃত্যু হলে নামে মাইক। মাইকে জানানো হয় তাদের জীবনের নানা কীর্তি-কাহিনী। তবে অবশ্যই তাকে নামি-দামি কেউ হতে হয়। তার জানাজার সময়-ক্ষণও বার বার ঘোষণা করা হতে থাকে। তিনি কৃতী ফুটবলার ছিলেন, সমাজসেবক ছিলেন। স্থানীয় ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা, শরীর চর্চা কেন্দ্রের সভাপতি, দানবীর প্রভৃতি। আরও অধিক খ্যাতিমান হলে মাইকিংয়ের দরকার পড়ে না। রেডিও-টেলিভিশনে সে খবর প্রচারিত হতে থাকে। প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলের পর্দায় স্ক্রলে সে খবর ভাসতে থাকে। আর অতি সাধারণ মানুষ যারা, তাদের জন্মেরও জানান নেই, মৃত্যুরও খবর নেই। তারা প্রাকৃতিক নিয়মে জন্মগ্রহণ করে। বেড়ে ওঠে, খায়-দায়, সাধ্যমত কর্ম করে, তারপর প্রাকৃতিক নিয়মেই একদিন টুপ করে মরে যায়। তাদের জন্য মাইকিং করে জানান দেয়ার প্রয়োজন হয় না।
শুধু মৃত্যু সংবাদই নয়, জনসভার সংবাদ, ওয়াজ-মাহফিলের সংবাদ, গরু-ছাগলের বিরাট হাটের সংবাদ, একটি হারানো বিজ্ঞপ্তি—সবকিছু প্রচার করার মাধ্যম এই মাইকিং। গোটা এলাকা কাঁপিয়ে দিন নেই রাত নেই, মাইকিং চলছে। এছাড়াও আছে নানা রকম টোটকা ওষুধের প্রচার। নাগরিকের নিস্তার নেই। তিনি চান বা না চান, তাকে শুনতেই হবে মাইকিংয়ের আওয়াজ।
কখনও কখনও পরীক্ষার্থীরা মাইকিংয়ের শব্দের কাছে অসহায়। কাল হয়তো পরীক্ষা, আজ সারারাত মাইকে শব্দের ঝড়। দরজা-জানালা বন্ধ করেও মাইকিংয়ের শব্দ ঠেকানো যায় না। লেখাপড়ায় মনোযোগী হতে পারে না তারা। কিন্তু কোথাও কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। অনেক সময় এমনও হয়, কোনো একটি বাড়ি হঠাত্ তারাবাতিতে ছেয়ে যায়। ছাদে খাটানো হয় সামিয়ানা। তারপর হয়তো খানাপিনার আয়োজন চলে। রাত গভীর হলে মাইকে ফুল ভল্যুম দিয়ে চলে হিন্দি সিনেমার গান। কখনও হয়তো সে গান বাজানো হয় সিডিতে, কখনও স্থানীয় শিল্পীরা গায়। আমি শুনতে চাই বা না চাই, শুনতে আমাকে হবেই।
মাইক যিনি আবিষ্কার করেছিলেন, তার উদ্দেশ্য মহত্ ছিল। একই বক্তব্য যাতে হাজার-লাখ মানুষ একযোগে শুনতে পায়, সে জন্যই মাইকের আবিষ্কার; কিন্তু এই মাইক যে নাগরিক জীবনে এত বিড়ম্বনা বয়ে আনতে পারে, আবিষ্কারক সম্ভবত সে কথা মনে রাখেননি। ফলে এখন নগরে মাইক এক যন্ত্রণার নাম। রাতের নিস্তব্ধতা ভেদ করে যখন হুট করে মাইকে আওয়াজ আসে, ‘ভাইসব, একটি বিশেষ ঘোষণা’, তখন বুক দুরুদুরু করতে থাকে, কতক্ষণ চলবে এই শব্দ যাতনা। কখন, ভাইসবকে জানান দেয়া বন্ধ হবে, কখন মাইকের শব্দ থেকে নিস্তার পাব।
এখানে নাগরিকরা যেমন নিরূপায়, তেমনি নিরূপায় বোধকরি পুলিশও। যখন হারানো বিজ্ঞপ্তি বা টোটকা ওষুধের শ্লীল-অশ্লীল প্রচারণায় মাইক বেজে ওঠে, তখন আমরা পুলিশকে নির্বিকার দেখি; কিন্তু মাইক বাজানোর জন্য, অন্য নাগরিকদের জীবন নিরূপদ্রব করার জন্য নির্দিষ্ট আইন আছে, সে আইনের প্রয়োগ কোনোদিন হয়েছে বলে শুনিনি; কিন্তু পুলিশের মাইক কেড়ে নেয়ার ঘটনা মাঝে মধ্যেই শুনতে পাই। পুলিশ সাধারণত মাইকিংয়ে বাধা দেয় বিরোধী রাজনৈতিক দলের জনসভার প্রচারণার ক্ষেত্রে। যদি কেউ প্রচার করতে নামে যে, কাল অমুক জায়গায় অমুক দলের ‘এক বিরাট জনসভা’। তাতে বক্তৃতা করবেন ‘অমুক অমুক’, আর সেটা যদি সরকারের পছন্দ না হয়, তাহলে মাইকিং আইন, শব্দ দূষণ আইন, পাবলিক নুইম্যান্স প্রভৃতি অজুহাতে পুলিশ মাইক কেড়ে নেয়, মাইকিংকারীকে আটক করে নিয়ে যায়। পরদিন সংবাদপত্রে খবর দেখি। নাগরিকরা শঙ্কিত হই; কিন্তু মাইকের যন্ত্রণা থেকে যুগের পর যুগ ধরে নিস্তার পাই না। এভাবেই যুগের পর যুগ পার হয়ে যায়; কিন্তু নাগরিক নিস্তার পায় না।
ফুটনোট
মস্কোর লেনিনগ্রাদের পাশের এক গির্জায় গণবিবাহ অনুষ্ঠিত হলো। আনুষ্ঠানিকতা শেষে বরেরা কনেদের কোলে করে নিয়ে যাচ্ছিল গাড়িতে। তারপর বিদায়। এক সময় এলেন এক তরুণ দম্পতি। বর হাল্কা-পাতলা। কনে তার ডাবল। বর কয়েকবার চেষ্টা করেও কনেকে কোলে তুলতে পারছিলেন না। তখন কনে বরের হাত থেকে নিজেকে মুক্ত করে এক ঝটকায় শিশুর মতো বরকে কোলে তুলে নিয়ে গাড়িতে উঠে গেল। দর্শকরা দ্বিগুণ উত্সাহে করতালি দিতে থাকল।
লেখক : প্রাবন্ধিক, ঔপন্যাসিক ও সাংবাদিক

No comments

Powered by Blogger.