আকিবের সহকারীর জীবন
আপনার চুলগুলো তো দারুণ ছিল, ছেঁটে ফেললেন কেন?
সময়...সময়ে সবকিছু বদলে যায়, এটাই প্রকৃতির নিয়ম!
জীবনে যে শব্দটা সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়েছে, সেটাই এখন আকিব জাভেদের কণ্ঠে—‘সময়!’ ক্যারিয়ারজুড়ে অসংখ্যবার শুনেছেন, নিজেও বারবার উপলব্ধি করেছেন জন্ম হয়েছে তাঁর ভুল সময়ে। যে প্রতিভা ও সামর্থ্য ছিল তাতে ২২টি টেস্ট নয়, জন্মটা বছর দশেক এদিক-সেদিক হলে হয়তো ৭০-৮০টি টেস্ট খেলে ফেলতেন। ওয়ানডে অবশ্য খেলেছেন ১৬৩টি, কিন্তু তাঁর মানের একজনের জন্য এটাকে যে মনে হয় বড্ড কম!
মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেক, সুইং ও নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দ্রুতই দলে জায়গা পাকা করলেন। ১৯ বছর বয়সে ওয়ানডের কনিষ্ঠতম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন। ভারতের বিপক্ষে শারজার ওই ম্যাচের ৩৭ রানে ৭ উইকেট ওয়ানডের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড ছিল দীর্ঘদিন। ১৯৯২ বিশ্বকাপের পাকিস্তানের জয়ের অন্যতম নায়ক, ওয়ানডেতে চারবার ৫ উইকেট, এই বোলারটিই কিনা জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২৬ বছর বয়সে!
খেলোয়াড়ি জীবনে পেসার আকিব ঢাকা পড়েছেন ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুসের ছায়ায়। এখনো তিনি ‘ডব্লু’র ছায়ায়। পাকিস্তানের মূল কোচ ওয়াকার, তাঁর সহকারী আকিব, বোলিং কোচ। তাঁর জীবনটাই কি তবে সহকারীর? আকিব হাসেন, ‘ওয়াসিম-ওয়াকারের সহকারী হওয়াও তো চাট্টিখানি কথা নয়! সত্যি বলছি, ক্যারিয়ার নিয়ে আমার কোনো কষ্ট নেই। বরং নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ওয়াসিম-ওয়াকার-ইমরানের পাশে খেলতে পারাটাই তো অনেক। ওদের মতো বোলার থাকার পরও দলে আমার একটা ভূমিকা ছিল, এটাই বা কম কী! এটা তো মানতেই হবে ওয়াসিম-ওয়াকাররা বিশ্বের সর্বকালের সেরা বোলারদের মধ্যে থাকবে।’
যুক্তি দিয়ে যতই বোঝানোর চেষ্টা করুন, এটা তো সত্যি যে প্রাপ্তির চেয়ে তাঁর ক্যারিয়ারের অপ্রাপ্তিই আগে চোখে পড়ে। ‘আকিব জাভেদ’ বললেই সবকিছুর আগে সবার মনে ভাসে ‘ভুল সময়!’ সামর্থ্য আর প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে গেলে আক্ষেপ না হয়ে পারেই না।
তবে শুধু আক্ষেপের গল্পই নয়, আছে স্মরণীয় অনেক স্মৃতিও। শারজার সেই হ্যাটট্রিক, হেডব্যান্ড পরে বোলিং, টেন্ডুলকার, আজহার, রবি শাস্ত্রী তিনজনই এলবিডব্লু—সব যেন চোখের সামনে দেখতে পান। সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ’৯২ বিশ্বকাপ জয়, ‘ওই সময়টাই ছিল অসাধারণ। বিশ্বকাপের ঠিক আগে আমরা ভারতে নেহরু কাপ জিতেছিলাম, যেটাও ছিল একরকম বিশ্বকাপ। শারজায় অনেক টুর্নামেন্ট জিতেছি। তবে ১৯৯২ অবশ্যই সবচেয়ে স্পেশাল। আমার নিজের কাছে আরও বেশি স্পেশাল, কারণ ওয়াকার ইনজুরড হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার পর আমার ওপর অনেক দায়িত্ব এসে পড়ে। আমি সেটা পূরণ করতে পেরেছিলাম।’
মাত্র ৩০ বছর বয়সে ক্রিকেট ছেড়েছিলেন ক্রিকেটেই থাকবেন বলে। প্রস্তাব পেয়েছিলেন ধারাভাষ্য দেওয়ার, কিন্তু মন সায় দিল না। বরং বেছে নিলেন কঠিন পথ ‘ওই এসি রুমে বসে অনেক কিছুই বলা যায়। কিন্তু ক্যারিয়ারে যা শিখলাম, সেগুলো যদি শেয়ার করতে না পারি, তাহলে এর মূল্য কী? কোচিং করানো কঠিন চ্যালেঞ্জিং। নিজের অভিজ্ঞতা তরুণদের সঙ্গে শেয়ার করার মাঝে আনন্দ অনেক।’ লেভেল ১, ২, ৩ শেষ করেই কোচিংয়ে এসেছেন, পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭, ১৯—সব দলকেই কোচিং করিয়েছেন। বাংলাদেশে ২০০৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলের কোচ ছিলেন তিনিই। এরপর জাতীয় দল। পাকিস্তানের অনুশীলনে সবচেয়ে বেশি ঘাম ঝরানো ব্যক্তিটিও তিনিই। এই বোলারকে টিপস দিচ্ছেন, হাতে-কলমে দেখিয়ে দিচ্ছেন, ফিল্ডিং প্র্যাকটিস করাচ্ছেন, আবার নক করার জন্য ব্যাটসম্যানদের বল ছুড়ে যাচ্ছেন অবিরাম। তাঁর কোচিং-দর্শনটাই এমন ‘কোচিং মানে কিন্তু নির্দেশনা দেওয়া নয়, সাহায্য করা। ব্যাটসম্যানরা চাইলে আমি সারা দিন নেটে বল থ্রো করতে পারি। কোচিং মানে শুধু টেকনিক নয়, যেভাবে পারা যায় সাহায্য করা।’
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য জাতীয় দলের মূল কোচ হওয়া, পাকিস্তানের বা অন্য কোনো দলের। আর সারা জীবন থাকতে চান ক্রিকেটের সঙ্গে। কারণ, ‘ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা!’
শুধু কি এটাই? আরেকটা কারণও না থেকে পারেই না, খেলোয়াড়ি জীবনের অপূর্ণতাগুলো যতটা পারা যায় ঘোচানো!
সময়...সময়ে সবকিছু বদলে যায়, এটাই প্রকৃতির নিয়ম!
জীবনে যে শব্দটা সবচেয়ে বেশি শুনতে হয়েছে, সেটাই এখন আকিব জাভেদের কণ্ঠে—‘সময়!’ ক্যারিয়ারজুড়ে অসংখ্যবার শুনেছেন, নিজেও বারবার উপলব্ধি করেছেন জন্ম হয়েছে তাঁর ভুল সময়ে। যে প্রতিভা ও সামর্থ্য ছিল তাতে ২২টি টেস্ট নয়, জন্মটা বছর দশেক এদিক-সেদিক হলে হয়তো ৭০-৮০টি টেস্ট খেলে ফেলতেন। ওয়ানডে অবশ্য খেলেছেন ১৬৩টি, কিন্তু তাঁর মানের একজনের জন্য এটাকে যে মনে হয় বড্ড কম!
মাত্র ১৬ বছর বয়সে অভিষেক, সুইং ও নিয়ন্ত্রণ দিয়ে দ্রুতই দলে জায়গা পাকা করলেন। ১৯ বছর বয়সে ওয়ানডের কনিষ্ঠতম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন। ভারতের বিপক্ষে শারজার ওই ম্যাচের ৩৭ রানে ৭ উইকেট ওয়ানডের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড ছিল দীর্ঘদিন। ১৯৯২ বিশ্বকাপের পাকিস্তানের জয়ের অন্যতম নায়ক, ওয়ানডেতে চারবার ৫ উইকেট, এই বোলারটিই কিনা জীবনের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন মাত্র ২৬ বছর বয়সে!
খেলোয়াড়ি জীবনে পেসার আকিব ঢাকা পড়েছেন ওয়াসিম আকরাম ও ওয়াকার ইউনুসের ছায়ায়। এখনো তিনি ‘ডব্লু’র ছায়ায়। পাকিস্তানের মূল কোচ ওয়াকার, তাঁর সহকারী আকিব, বোলিং কোচ। তাঁর জীবনটাই কি তবে সহকারীর? আকিব হাসেন, ‘ওয়াসিম-ওয়াকারের সহকারী হওয়াও তো চাট্টিখানি কথা নয়! সত্যি বলছি, ক্যারিয়ার নিয়ে আমার কোনো কষ্ট নেই। বরং নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। ওয়াসিম-ওয়াকার-ইমরানের পাশে খেলতে পারাটাই তো অনেক। ওদের মতো বোলার থাকার পরও দলে আমার একটা ভূমিকা ছিল, এটাই বা কম কী! এটা তো মানতেই হবে ওয়াসিম-ওয়াকাররা বিশ্বের সর্বকালের সেরা বোলারদের মধ্যে থাকবে।’
যুক্তি দিয়ে যতই বোঝানোর চেষ্টা করুন, এটা তো সত্যি যে প্রাপ্তির চেয়ে তাঁর ক্যারিয়ারের অপ্রাপ্তিই আগে চোখে পড়ে। ‘আকিব জাভেদ’ বললেই সবকিছুর আগে সবার মনে ভাসে ‘ভুল সময়!’ সামর্থ্য আর প্রাপ্তির হিসাব মেলাতে গেলে আক্ষেপ না হয়ে পারেই না।
তবে শুধু আক্ষেপের গল্পই নয়, আছে স্মরণীয় অনেক স্মৃতিও। শারজার সেই হ্যাটট্রিক, হেডব্যান্ড পরে বোলিং, টেন্ডুলকার, আজহার, রবি শাস্ত্রী তিনজনই এলবিডব্লু—সব যেন চোখের সামনে দেখতে পান। সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে ’৯২ বিশ্বকাপ জয়, ‘ওই সময়টাই ছিল অসাধারণ। বিশ্বকাপের ঠিক আগে আমরা ভারতে নেহরু কাপ জিতেছিলাম, যেটাও ছিল একরকম বিশ্বকাপ। শারজায় অনেক টুর্নামেন্ট জিতেছি। তবে ১৯৯২ অবশ্যই সবচেয়ে স্পেশাল। আমার নিজের কাছে আরও বেশি স্পেশাল, কারণ ওয়াকার ইনজুরড হয়ে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে পড়ার পর আমার ওপর অনেক দায়িত্ব এসে পড়ে। আমি সেটা পূরণ করতে পেরেছিলাম।’
মাত্র ৩০ বছর বয়সে ক্রিকেট ছেড়েছিলেন ক্রিকেটেই থাকবেন বলে। প্রস্তাব পেয়েছিলেন ধারাভাষ্য দেওয়ার, কিন্তু মন সায় দিল না। বরং বেছে নিলেন কঠিন পথ ‘ওই এসি রুমে বসে অনেক কিছুই বলা যায়। কিন্তু ক্যারিয়ারে যা শিখলাম, সেগুলো যদি শেয়ার করতে না পারি, তাহলে এর মূল্য কী? কোচিং করানো কঠিন চ্যালেঞ্জিং। নিজের অভিজ্ঞতা তরুণদের সঙ্গে শেয়ার করার মাঝে আনন্দ অনেক।’ লেভেল ১, ২, ৩ শেষ করেই কোচিংয়ে এসেছেন, পাকিস্তানের অনূর্ধ্ব-১৫, ১৭, ১৯—সব দলকেই কোচিং করিয়েছেন। বাংলাদেশে ২০০৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলের কোচ ছিলেন তিনিই। এরপর জাতীয় দল। পাকিস্তানের অনুশীলনে সবচেয়ে বেশি ঘাম ঝরানো ব্যক্তিটিও তিনিই। এই বোলারকে টিপস দিচ্ছেন, হাতে-কলমে দেখিয়ে দিচ্ছেন, ফিল্ডিং প্র্যাকটিস করাচ্ছেন, আবার নক করার জন্য ব্যাটসম্যানদের বল ছুড়ে যাচ্ছেন অবিরাম। তাঁর কোচিং-দর্শনটাই এমন ‘কোচিং মানে কিন্তু নির্দেশনা দেওয়া নয়, সাহায্য করা। ব্যাটসম্যানরা চাইলে আমি সারা দিন নেটে বল থ্রো করতে পারি। কোচিং মানে শুধু টেকনিক নয়, যেভাবে পারা যায় সাহায্য করা।’
ভবিষ্যৎ লক্ষ্য জাতীয় দলের মূল কোচ হওয়া, পাকিস্তানের বা অন্য কোনো দলের। আর সারা জীবন থাকতে চান ক্রিকেটের সঙ্গে। কারণ, ‘ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা!’
শুধু কি এটাই? আরেকটা কারণও না থেকে পারেই না, খেলোয়াড়ি জীবনের অপূর্ণতাগুলো যতটা পারা যায় ঘোচানো!
No comments