প্রথম থেকে দশম খসড়ার পূর্বাপর by মো. নুরুল ইসলাম
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ২৫ অক্টোবর ২০১০ খসড়া কয়লানীতির দশম সংস্করণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সবার মতামত প্রদানের জন্য উন্মুক্ত করেছে। খসড়া কয়লানীতি সম্পর্কে মতামত প্রদানের সুযোগ দেওয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। এই প্রবন্ধে খসড়া কয়লানীতির প্রথম থেকে দশম সংস্করণ পর্যন্ত প্রণয়নের প্রেক্ষাপট আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। সামনে অন্য লেখায় কয়লানীতির দশম সংস্করণ সম্পর্কে মতামত দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশের যেকোনো ভূমির অন্তঃস্থ সব খনিজ সম্পদের মালিকানা বাংলাদেশের জনগণ এবং জনগণের পক্ষে তা সরকারের ওপর ন্যস্ত। কয়লাসহ সব ধরনের খনিজ সম্পদ উন্নয়নের জন্য সরকার খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ প্রণয়ন করেছে। খনি ও খনিজ সম্পদ আইন অনুসারে কয়লা ও খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য দি মাইন অ্যান্ড মিনারেলস রুলস ১৯৬৮-এর (সংশোধিত ১৯৯৫, ১৯৯৯, ২০০২, ২০০৪) বিধিবিধান প্রযোজ্য। ওই আইনের ৩ ধারায় বর্ণিত আছে, বিধির বিধান অনুসরণ ব্যতীত অন্য কোনো পন্থায় অনুসন্ধান লাইসেন্স বা খনি ইজারা প্রদান করা যাবে না।
খনি ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন বহুলভাবে পরিবেশ দূষণ করে এবং স্থানীয় জনগণের জীবন-জীবিকা বিঘ্নিত করে। সে কারণে খনি ও খনিজ সম্পদ উন্নয়নের সময় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ রুলস, ১৯৯৭-এর (পরে সংশোধিত) বিধিবিধানও প্রযোজ্য। স্বচ্ছতার সঙ্গে কয়লা ও খনিজ সম্পদ উন্নয়নের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস, ২০০৮-এর বিধিবিধান মেনে চলা প্রয়োজন। খনি ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন আইন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ভঙ্গের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে যথাক্রমে তিন বছর এবং ১০ বছর। উপরিউক্ত আইন ও বিধিবিধান মেনে চলা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য কাম্য। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, দেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে সংবিধান। তার পরে সংবিধানের অধীনে প্রণীত আইন ও বিধিবিধানের অবস্থান। এর পরে হচ্ছে সরকার কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন নীতির অবস্থান।
গত ২০ বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিনিয়োগকারী এবং তাদের সুবিধাভোগী কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এ দেশের জনগণকে বঞ্চিত করে দেশের খনিজ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদকে তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের জন্য পরিকল্পিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দেশের সরকার ও জনগণ সতর্ক দৃষ্টি রাখবে, এটা সবার কাম্য। এ প্রচেষ্টার প্রধান কৌশল হলো, যেভাবেই হোক নিজেরা কিছু পাওয়ার বিনিময়ে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বিদেশিদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে চুক্তি করার প্রচেষ্টা চালানো।
টাটা কোম্পানির কর্ণধার রতন টাটা ২০০৪ সালের ১৩ অক্টোবর বিনিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে রপ্তানিমুখী সার কারখানা, স্টিল মিল এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আগ্রহপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। এ ছাড়া সরকার অনুমতি দিলে টাটা কোম্পানি উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগেও আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। ১৯৯৮ সালে বিএইচপি মিনারেলসের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি অ্যাসাইনমেন্ট (মালিকানা হস্তান্তর) চুক্তির সূত্রে এশিয়া এনার্জি করপোরেশন (বাংলাদেশ) ২ অক্টোবর ২০০৫ উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্রের কয়লা উন্নয়ন ও উত্তোলনের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে একটি ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি প্রতিবেদন দাখিল করে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ওই প্রস্তাবটি মূল্যায়নের জন্য ১৭ নভেম্বর ২০০৫ একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমি ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ প্রথমবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তৎকালীন সচিবের কাছে কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করি। কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, আইনগত, প্রযুক্তিগত, পরিবেশগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও কারিগরি দুর্বলতার কারণে এশিয়া এনার্জি করপোরেশন (বাংলাদেশ) কর্তৃক দাখিলকৃত প্রকল্প প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য নয়। কমিটির সুপারিশ কর্তৃপক্ষের মনঃপূত না হওয়ার কারণে দাখিলকৃত প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয় ও সরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উপস্থাপিত হয়নি। শোনা যায়, পরবর্তীকালে ওই প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয় থেকে হারিয়ে গেছে। যে কারণে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পরবর্তী সচিবের অনুরোধে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ কমিটির আহ্বায়ক পুনরায় প্রতিবেদনটি সচিব বরাবর প্রেরণ করেছেন। কিন্তু ২০১০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়নি। খসড়া কয়লানীতির দশম সংস্করণ বিবেচনার আগে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য দাখিলকৃত ফিজিবিলিটি রিপোর্ট মূল্যায়নের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করার বিনীত অনুরোধ করছি।
অক্টোবর ২০০৪ সালে টাটা কোম্পানি কর্তৃক উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ এবং অক্টোবর ২০০৫ সালে এশিয়া এনার্জি কর্তৃক উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনি উন্নয়নের প্রস্তাব দাখিল করার পর—জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, খনি ও খনিজ সম্পদ আইন (১৯৯২) এবং সংশ্লিষ্ট মাইনিং রুলস বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কয়লাখনি উন্নয়নের জন্য কয়লানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এখানে বলা প্রয়োজন, দেশের বিদ্যমান আইন ও বিধিকে পাশ কাটিয়ে দুটি বিদেশি কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ কয়লানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সময়ের ক্রমানুসারে ওই প্রচেষ্টার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে উপস্থাপন করা হলো: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক নিয়োগকৃত কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান (আইআইএফসি) ডিসেম্বর ২০০৫ সালে খসড়া কয়লানীতির প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণ প্রণয়ন করে। ওই খসড়া কয়লানীতিতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে এশিয়ান এনার্জি করপোরেশনকে দিয়ে উন্মুক্ত খনি পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনি এবং ২০১১ সাল থেকে টাটা কোম্পানিকে দিয়ে উন্মুক্ত খনি পদ্ধতিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়। বিভিন্ন সেমিনারে খসড়া কয়লানীতি নিয়ে আলোচনার সময় ওই সুপারিশ সম্পর্কে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। যে কারণে পরে কয়লানীতির বিভিন্ন সংস্করণে বিষয়টি ঊহ্য রেখে কয়লানীতির খসড়ার পরবর্তী সংস্করণসমূহ প্রণয়ন করা হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৩০ মে ২০০৬ আইআইএফসি কর্তৃক প্রণীত খসড়া কয়লানীতির পঞ্চম সংস্করণ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ওই খসড়ার ওপর বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করে এবং সে মতামত অনুসারে খসড়া কয়লানীতির পঞ্চম সংস্করণ সংশোধনের জন্য আগস্ট ২০০৬ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে নির্দেশ প্রদান করে।
সরকার পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খসড়া কয়লানীতির পঞ্চম সংস্করণের ওপর বিশেষজ্ঞদের প্রাপ্ত মতামত অনুসারে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ মার্চ ও জুন ২০০৭ খসড়া কয়লানীতির ষষ্ঠ এবং সপ্তম সংস্করণ প্রণয়ন করে। তৎকালীন জ্বালানি উপদেষ্টা তপন চৌধুরীর নির্দেশে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জুন ২০০৭ সালে খসড়া কয়লানীতির সপ্তম সংস্করণ পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মতিন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে। কমিটি জুন থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৭ পর্যন্ত মোট ১৯টি উন্মুক্ত সভায় আলোচনার মাধ্যমে খসড়া কয়লানীতির অষ্টম সংস্করণ প্রণয়ন করে এবং ৮ জানুয়ারি ২০০৮ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে দাখিল করে। অধ্যাপক পাটওয়ারী কমিটি কর্তৃক প্রণীত অষ্টম খসড়া কয়লানীতির প্রধান কয়েকটি সুপারিশ ছিল নিম্নরূপ:
(১) কয়লানীতি জাতীয় জ্বালানিনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে, (২) পাবলিক সেক্টর প্রতিষ্ঠান ‘কোল বাংলা’ কয়লা উত্তোলনের সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে, বিদেশি সাহায্যের প্রয়োজন হলে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে, (৩) দেশে বর্তমানে আবিষ্কৃত কয়লাক্ষেত্রসমূহ থেকে উত্তোলিত কয়লা রপ্তানির কোনো সুযোগ নেই, (৪) দেশের আগামী ৫০ বছরের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কয়লা রপ্তানির বিষয় বিবেচনা করা যাবে, (৫) দেশের কয়লার চাহিদার সঙ্গে সমতা রেখে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে, (৬) খনি উন্নয়নকারীকে খনিমুখে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, (৭) পরিবেশগত আইন ও বিধি মেনে কয়লা উত্তোলন করতে হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, (৮) খনি উন্নয়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, (৯) কয়লা উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি পুনরুদ্ধার করে উৎপাদনের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে এনে ভূমির মূল মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে, (১০) কোল পলিসির সঙ্গে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসারে বাস্তবসম্মত কয়লার রয়্যালটির হার নির্ধারণ করতে হবে, (১১) বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে প্রচলিত সুড়ঙ্গের অনুরূপ পদ্ধতিতে অন্যান্য কয়লাক্ষেত্রেও কয়লা উত্তোলন করা চলবে, (১২) বাংলাদেশের খনি অঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হাইড্রো-জিওলজিক্যাল অবস্থার কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উত্তর দিকে পরীক্ষামূলকভাবে একটি উন্মুক্ত কয়লাখনি বাস্তবায়ন করা উচিত হবে, সন্তোষজনকভাবে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন করার অনুমতি প্রদান করা যাবে। পাটওয়ারী কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত খসড়া কয়লানীতির বিভিন্ন শর্ত উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লা উত্তোলনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব দাখিলকৃত কোম্পানির জন্য যথার্থ হয়নি। সে কারণে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ওই কোম্পানির স্বার্থে অষ্টম সংস্করণের কিছু শর্ত পরিবর্তন করে নবম সংস্করণ প্রণয়ন করে। যে বিষয়গুলো পরিবর্তন করা হয় তা হলো: (ক) পুনরুদ্ধারকৃত ভূমি মূল মালিকদের কাছে ফেরত না দেওয়া, (খ) পরিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মূলনীতি থেকে স্থানান্তরিত করে গুরুত্বহীন করার উদ্যোগ নেওয়া, (গ) ভবিষ্যতে রয়্যালটি নির্ধারণের জন্য অষ্টম সংস্করণে বর্ণিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতির জন্য ৬ শতাংশ হারে এবং সুড়ঙ্গ পদ্ধতির জন্য ৫ শতাংশ হারে রয়্যালটির হার নির্ধারণ করা। খসড়া কয়লানীতির এই উদ্দেশ্যমূলক পরিবর্তন সম্পর্কে প্রথম আলোতে লেখা হয়, একটি বিদেশি কোম্পানির স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি রেখে কয়লানীতির নবম সংস্করণ খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে (প্রথম আলো, আগস্ট ৪, ২০০৯)। নবম সংস্করণে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো বিবেচনা না করার অনুরোধ করে সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয় (প্রথম আলো, আগস্ট ১৩, ২০০৯)। মন্ত্রিসভা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক প্রণীত খসড়া কয়লানীতির নবম সংস্করণ অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
২০০৫-০৬ সময়কালে কয়লানীতির পাঁচটি সংস্করণ এবং ২০০৭-০৮ সময়কালে তিনটি সংস্করণ প্রণয়ন করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ অত্যন্ত সতর্কতা ও গোপনীয়তার সঙ্গে ইতিপূর্বে প্রণীত খসড়া কয়লানীতির নবম সংস্করণ সংশোধন করে দশম সংস্করণ প্রণয়ন করে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পেশ করে। প্রধানমন্ত্রী ওই খসড়া সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত প্রদানের সুযোগ প্রদান করেন।
মো. নুরুল ইসলাম: অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪৩ অনুচ্ছেদ অনুসারে বাংলাদেশের যেকোনো ভূমির অন্তঃস্থ সব খনিজ সম্পদের মালিকানা বাংলাদেশের জনগণ এবং জনগণের পক্ষে তা সরকারের ওপর ন্যস্ত। কয়লাসহ সব ধরনের খনিজ সম্পদ উন্নয়নের জন্য সরকার খনি ও খনিজ সম্পদ (নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন) আইন, ১৯৯২ প্রণয়ন করেছে। খনি ও খনিজ সম্পদ আইন অনুসারে কয়লা ও খনিজ সম্পদ উত্তোলনের জন্য দি মাইন অ্যান্ড মিনারেলস রুলস ১৯৬৮-এর (সংশোধিত ১৯৯৫, ১৯৯৯, ২০০২, ২০০৪) বিধিবিধান প্রযোজ্য। ওই আইনের ৩ ধারায় বর্ণিত আছে, বিধির বিধান অনুসরণ ব্যতীত অন্য কোনো পন্থায় অনুসন্ধান লাইসেন্স বা খনি ইজারা প্রদান করা যাবে না।
খনি ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন বহুলভাবে পরিবেশ দূষণ করে এবং স্থানীয় জনগণের জীবন-জীবিকা বিঘ্নিত করে। সে কারণে খনি ও খনিজ সম্পদ উন্নয়নের সময় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ এবং পরিবেশ সংরক্ষণ রুলস, ১৯৯৭-এর (পরে সংশোধিত) বিধিবিধানও প্রযোজ্য। স্বচ্ছতার সঙ্গে কয়লা ও খনিজ সম্পদ উন্নয়নের জন্য পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট, ২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস, ২০০৮-এর বিধিবিধান মেনে চলা প্রয়োজন। খনি ও খনিজ সম্পদ উন্নয়ন আইন এবং পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ভঙ্গের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে যথাক্রমে তিন বছর এবং ১০ বছর। উপরিউক্ত আইন ও বিধিবিধান মেনে চলা সংশ্লিষ্ট সবার জন্য কাম্য। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, দেশের সর্বোচ্চ আইন হচ্ছে সংবিধান। তার পরে সংবিধানের অধীনে প্রণীত আইন ও বিধিবিধানের অবস্থান। এর পরে হচ্ছে সরকার কর্তৃক প্রণীত বিভিন্ন নীতির অবস্থান।
গত ২০ বছরে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিনিয়োগকারী এবং তাদের সুবিধাভোগী কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এ দেশের জনগণকে বঞ্চিত করে দেশের খনিজ ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদকে তাদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহারের জন্য পরিকল্পিতভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে দেশের সরকার ও জনগণ সতর্ক দৃষ্টি রাখবে, এটা সবার কাম্য। এ প্রচেষ্টার প্রধান কৌশল হলো, যেভাবেই হোক নিজেরা কিছু পাওয়ার বিনিময়ে দেশের স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে বিদেশিদের স্বার্থ সংরক্ষণ করে চুক্তি করার প্রচেষ্টা চালানো।
টাটা কোম্পানির কর্ণধার রতন টাটা ২০০৪ সালের ১৩ অক্টোবর বিনিয়োগ বোর্ডের সঙ্গে প্রাকৃতিক গ্যাস ব্যবহার করে রপ্তানিমুখী সার কারখানা, স্টিল মিল এবং বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের আগ্রহপত্রে স্বাক্ষর করেছিলেন। এ ছাড়া সরকার অনুমতি দিলে টাটা কোম্পানি উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগেও আগ্রহ প্রকাশ করেছিল। ১৯৯৮ সালে বিএইচপি মিনারেলসের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি অ্যাসাইনমেন্ট (মালিকানা হস্তান্তর) চুক্তির সূত্রে এশিয়া এনার্জি করপোরেশন (বাংলাদেশ) ২ অক্টোবর ২০০৫ উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্রের কয়লা উন্নয়ন ও উত্তোলনের জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের কাছে একটি ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি প্রতিবেদন দাখিল করে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ওই প্রস্তাবটি মূল্যায়নের জন্য ১৭ নভেম্বর ২০০৫ একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আমি ২৪ সেপ্টেম্বর ২০০৬ প্রথমবার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের তৎকালীন সচিবের কাছে কমিটির প্রতিবেদন দাখিল করি। কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, আইনগত, প্রযুক্তিগত, পরিবেশগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক ও কারিগরি দুর্বলতার কারণে এশিয়া এনার্জি করপোরেশন (বাংলাদেশ) কর্তৃক দাখিলকৃত প্রকল্প প্রস্তাবটি গ্রহণযোগ্য নয়। কমিটির সুপারিশ কর্তৃপক্ষের মনঃপূত না হওয়ার কারণে দাখিলকৃত প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয় ও সরকারি পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য উপস্থাপিত হয়নি। শোনা যায়, পরবর্তীকালে ওই প্রতিবেদনটি মন্ত্রণালয় থেকে হারিয়ে গেছে। যে কারণে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের পরবর্তী সচিবের অনুরোধে ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৯ কমিটির আহ্বায়ক পুনরায় প্রতিবেদনটি সচিব বরাবর প্রেরণ করেছেন। কিন্তু ২০১০ সালের নভেম্বর পর্যন্ত জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়নি। খসড়া কয়লানীতির দশম সংস্করণ বিবেচনার আগে উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্রের উন্নয়নের জন্য দাখিলকৃত ফিজিবিলিটি রিপোর্ট মূল্যায়নের জন্য গঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রতিবেদনটি পর্যালোচনা করার বিনীত অনুরোধ করছি।
অক্টোবর ২০০৪ সালে টাটা কোম্পানি কর্তৃক উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উন্নয়নে আগ্রহ প্রকাশ এবং অক্টোবর ২০০৫ সালে এশিয়া এনার্জি কর্তৃক উন্মুক্ত পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনি উন্নয়নের প্রস্তাব দাখিল করার পর—জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ, খনি ও খনিজ সম্পদ আইন (১৯৯২) এবং সংশ্লিষ্ট মাইনিং রুলস বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও কয়লাখনি উন্নয়নের জন্য কয়লানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। এখানে বলা প্রয়োজন, দেশের বিদ্যমান আইন ও বিধিকে পাশ কাটিয়ে দুটি বিদেশি কোম্পানিকে বিশেষ সুবিধা প্রদান করার জন্য জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ কয়লানীতি প্রণয়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
সময়ের ক্রমানুসারে ওই প্রচেষ্টার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে উপস্থাপন করা হলো: জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক নিয়োগকৃত কনসালট্যান্সি প্রতিষ্ঠান (আইআইএফসি) ডিসেম্বর ২০০৫ সালে খসড়া কয়লানীতির প্রথম ও দ্বিতীয় সংস্করণ প্রণয়ন করে। ওই খসড়া কয়লানীতিতে অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে ২০০৮ সাল থেকে এশিয়ান এনার্জি করপোরেশনকে দিয়ে উন্মুক্ত খনি পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লাখনি এবং ২০১১ সাল থেকে টাটা কোম্পানিকে দিয়ে উন্মুক্ত খনি পদ্ধতিতে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি উন্নয়নের সুপারিশ করা হয়। বিভিন্ন সেমিনারে খসড়া কয়লানীতি নিয়ে আলোচনার সময় ওই সুপারিশ সম্পর্কে তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়। যে কারণে পরে কয়লানীতির বিভিন্ন সংস্করণে বিষয়টি ঊহ্য রেখে কয়লানীতির খসড়ার পরবর্তী সংস্করণসমূহ প্রণয়ন করা হয়। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ৩০ মে ২০০৬ আইআইএফসি কর্তৃক প্রণীত খসড়া কয়লানীতির পঞ্চম সংস্করণ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য প্রেরণ করে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ওই খসড়ার ওপর বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ করে এবং সে মতামত অনুসারে খসড়া কয়লানীতির পঞ্চম সংস্করণ সংশোধনের জন্য আগস্ট ২০০৬ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে নির্দেশ প্রদান করে।
সরকার পরিবর্তনের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় খসড়া কয়লানীতির পঞ্চম সংস্করণের ওপর বিশেষজ্ঞদের প্রাপ্ত মতামত অনুসারে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ মার্চ ও জুন ২০০৭ খসড়া কয়লানীতির ষষ্ঠ এবং সপ্তম সংস্করণ প্রণয়ন করে। তৎকালীন জ্বালানি উপদেষ্টা তপন চৌধুরীর নির্দেশে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ জুন ২০০৭ সালে খসড়া কয়লানীতির সপ্তম সংস্করণ পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক পর্যালোচনা করে সুপারিশ প্রদান করার জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল মতিন পাটওয়ারীর নেতৃত্বে একটি পরামর্শক কমিটি গঠন করে। কমিটি জুন থেকে ৩১ ডিসেম্বর ২০০৭ পর্যন্ত মোট ১৯টি উন্মুক্ত সভায় আলোচনার মাধ্যমে খসড়া কয়লানীতির অষ্টম সংস্করণ প্রণয়ন করে এবং ৮ জানুয়ারি ২০০৮ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগে দাখিল করে। অধ্যাপক পাটওয়ারী কমিটি কর্তৃক প্রণীত অষ্টম খসড়া কয়লানীতির প্রধান কয়েকটি সুপারিশ ছিল নিম্নরূপ:
(১) কয়লানীতি জাতীয় জ্বালানিনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হবে, (২) পাবলিক সেক্টর প্রতিষ্ঠান ‘কোল বাংলা’ কয়লা উত্তোলনের সার্বিক দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে, বিদেশি সাহায্যের প্রয়োজন হলে উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে, (৩) দেশে বর্তমানে আবিষ্কৃত কয়লাক্ষেত্রসমূহ থেকে উত্তোলিত কয়লা রপ্তানির কোনো সুযোগ নেই, (৪) দেশের আগামী ৫০ বছরের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কয়লা রপ্তানির বিষয় বিবেচনা করা যাবে, (৫) দেশের কয়লার চাহিদার সঙ্গে সমতা রেখে কয়লা উত্তোলনের ব্যবস্থা করতে হবে, (৬) খনি উন্নয়নকারীকে খনিমুখে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপন করতে হবে, (৭) পরিবেশগত আইন ও বিধি মেনে কয়লা উত্তোলন করতে হবে এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে, (৮) খনি উন্নয়নের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অধিবাসীদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করতে হবে, (৯) কয়লা উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি পুনরুদ্ধার করে উৎপাদনের পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে এনে ভূমির মূল মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা প্রদানের জন্য আইন প্রণয়ন করতে হবে, (১০) কোল পলিসির সঙ্গে দাখিলকৃত প্রতিবেদনে বর্ণিত পদ্ধতি অনুসারে বাস্তবসম্মত কয়লার রয়্যালটির হার নির্ধারণ করতে হবে, (১১) বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে প্রচলিত সুড়ঙ্গের অনুরূপ পদ্ধতিতে অন্যান্য কয়লাক্ষেত্রেও কয়লা উত্তোলন করা চলবে, (১২) বাংলাদেশের খনি অঞ্চল পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় এবং বৈশিষ্ট্যপূর্ণ হাইড্রো-জিওলজিক্যাল অবস্থার কারণে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির উত্তর দিকে পরীক্ষামূলকভাবে একটি উন্মুক্ত কয়লাখনি বাস্তবায়ন করা উচিত হবে, সন্তোষজনকভাবে ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে ভবিষ্যতে উন্মুক্ত পদ্ধতিতে বাণিজ্যিকভাবে কয়লা উত্তোলন করার অনুমতি প্রদান করা যাবে। পাটওয়ারী কমিটি কর্তৃক দাখিলকৃত খসড়া কয়লানীতির বিভিন্ন শর্ত উন্মুক্ত খনন পদ্ধতিতে ফুলবাড়ী কয়লা উত্তোলনের জন্য প্রকল্প প্রস্তাব দাখিলকৃত কোম্পানির জন্য যথার্থ হয়নি। সে কারণে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ ওই কোম্পানির স্বার্থে অষ্টম সংস্করণের কিছু শর্ত পরিবর্তন করে নবম সংস্করণ প্রণয়ন করে। যে বিষয়গুলো পরিবর্তন করা হয় তা হলো: (ক) পুনরুদ্ধারকৃত ভূমি মূল মালিকদের কাছে ফেরত না দেওয়া, (খ) পরিবেশগত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো মূলনীতি থেকে স্থানান্তরিত করে গুরুত্বহীন করার উদ্যোগ নেওয়া, (গ) ভবিষ্যতে রয়্যালটি নির্ধারণের জন্য অষ্টম সংস্করণে বর্ণিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে উন্মুক্ত পদ্ধতির জন্য ৬ শতাংশ হারে এবং সুড়ঙ্গ পদ্ধতির জন্য ৫ শতাংশ হারে রয়্যালটির হার নির্ধারণ করা। খসড়া কয়লানীতির এই উদ্দেশ্যমূলক পরিবর্তন সম্পর্কে প্রথম আলোতে লেখা হয়, একটি বিদেশি কোম্পানির স্বার্থের প্রতি দৃষ্টি রেখে কয়লানীতির নবম সংস্করণ খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে (প্রথম আলো, আগস্ট ৪, ২০০৯)। নবম সংস্করণে প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলো বিবেচনা না করার অনুরোধ করে সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয় (প্রথম আলো, আগস্ট ১৩, ২০০৯)। মন্ত্রিসভা জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ কর্তৃক প্রণীত খসড়া কয়লানীতির নবম সংস্করণ অনুমোদন না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।
২০০৫-০৬ সময়কালে কয়লানীতির পাঁচটি সংস্করণ এবং ২০০৭-০৮ সময়কালে তিনটি সংস্করণ প্রণয়ন করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার পর জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ অত্যন্ত সতর্কতা ও গোপনীয়তার সঙ্গে ইতিপূর্বে প্রণীত খসড়া কয়লানীতির নবম সংস্করণ সংশোধন করে দশম সংস্করণ প্রণয়ন করে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য পেশ করে। প্রধানমন্ত্রী ওই খসড়া সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতামত প্রদানের সুযোগ প্রদান করেন।
মো. নুরুল ইসলাম: অধ্যাপক, ইনস্টিটিউট অব অ্যাপ্রোপ্রিয়েট টেকনোলজি, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
No comments