দুঃস্বপ্নের শুরু ফ্রি-হিটে শুধু একভাবেই আউট হওয়া সম্ভব, আত্মহত্যার জন্য ব্রেন্ডন টেলর বেছে নিলেন সেটিকেই। সেটিও কিনা আবার ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই! কাভারে বল ঠেলেই এমন দৌড় দিলেন, যেন জয়ের জন্য প্রয়োজন এক বলে এক রান! মাসাকাদজার তা মনে হয়নি, ঠায় দাঁড়িয়ে রইলেন তাই নিজের প্রান্তে। ওয়ানডেতে এই প্রথম প্রথম ওভারেই রানআউট টেলর।
উন্নতি-অবনতি সিরিজ শুরু করেছিলেন আট নম্বরে ব্যাটিং করে। কিথ দাবেংওয়া পরের ম্যাচে এক লাফে উঠে এলেন চারে, কাল প্রথমবারের মতো তিনে। বাংলাদেশের বাঁহাতি স্পিন সামলাতেই এই বাঁহাতিকে ওপরে আনা। কিন্তু শুধু স্পিন সামলালেই তো চলবে না, পেসও সামলাতে হবে! বেশ কবার অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়ার পর আউট হলেন মাশরাফির বলে।
নাদির শাহর ‘রেকর্ড’ স্টাম্প সোজা বলটি আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ব্যাটে-বলে হলো না হ্যামিল্টন মাসাকাদজার, বোলার মাশরাফি আবেদন শুরু করতেই আউট দিয়ে দিলেন আম্পায়ার নাদির শাহ। এটাই দ্রুততম এলবিডব্লু দেওয়ার রেকর্ড কিনা, এই আলোচনা জমে উঠতেই তা থামিয়ে দিলেন নাদির। এবার দাবেংওয়ার প্যাডে লাগল বল, আবেদন করার জন্য বোলার মাশরাফি ঘুরে দেখেন এরই মধ্যে আঙুল তুলে দিয়েছেন নাদির! তবে দুবারই নাদির শাহর সিদ্ধান্ত ছিল সঠিক।
বাউন্ডারি-খরা শুরুতেই তিন উইকেট হারানো, বাংলাদেশি বোলারদের দুর্দান্ত বোলিং আর ভারী আউটফিল্ড মিলিয়ে বাউন্ডারির দেখাই পাচ্ছিল না জিম্বাবুয়ে। অবশেষে ২৪তম ওভারের শেষ বলে প্রথম চার এনে দিলেন টাটেন্ডা টাইবু। ওয়ানডেতে এটাই সবচেয়ে দেরিতে চার কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ১৯৮৩ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাকিস্তান ৬০ ওভারে মাত্র দুটি চার মারতে পেরেছিল, প্রথমটি কততম ওভারে এসেছিল কে জানে!
ছয় নম্বর সাকিব অনেক দিন ধরেই শুধু দলের সেরা স্পিনারই নন, সেরা বোলারও সাকিব। এ জন্য নিয়মিতই বোলিং আক্রমণে আগেভাগে দেখা যায় তাঁকে। কাল সেই সাকিব নিজেকে বোলিংয়ে আনলেন ছয় নম্বর বোলার হিসেবে। গত জুনে এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ছয় নম্বরে বোলিং করেছিলেন সাকিব, তার আগে ২০০৭ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে।
ধাক্কা-ছক্কা টেলরের দ্বিতীয় ওভার। হালকা হাতে খেলে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছিলেন জুনায়েদ, অন্য প্রান্তে নিজেকে বাঁচাতে ক্রিজে ফেরার চেষ্টা করছিলেন তামিম। তাঁর সঙ্গে ধাক্কা লাগায় সহজ ক্যাচটি নিতে পারলেন না টেলর, রাগে ক্রূর দৃষ্টিতে তাকালেন তামিমের দিকে। তামিমের তা ভালো লাগবে কেন? টেলরের পরের চার বলে এক ছয়সহ ১১ রান তুলে জবাব দিলেন ব্যাটেই।
ছক্কা-অক্কা তামিমকে তখন ছয়ের নেশায় পেয়েছে। ক্রেমারকে টানা দুটি ছয়। দাবেংওয়ার পরের ওভারে এক ইনিংসে কোনো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি ছক্কার নিজের রেকর্ডটিই ভাঙলেন। এই ছয়েই মাশরাফিকে (৪০) তিনে ঠেলে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কার তালিকায় উঠে এলেন দুইয়ে। কিন্তু আফতাবের (৪৯ ছক্কা) আরেকটু কাছে যাওয়ার চেষ্টাটা হয়ে গেল ক্যাচ। ঘরের ছেলের দুঃখে গ্যালারিতে নেমে এল পিনপতন নীরবতা।
প্রাইসের কুর্নিশ পোফুর সঙ্গে অভিনব উদ্যাপন দেখিয়েছেন পুরো সিরিজেই। কাল রে প্রাইস দেখালেন নতুন আরেকটি উদ্যাপন। সাকিবকে আউট করার পর প্রথমে মুষ্টিবদ্ধ হাত ছুড়লেন বাতাসে, এরপর ঘুরে দাঁড়িয়ে কুর্নিশ করলেন সাকিবকে। পুরো সিরিজেই প্রাইসের সঙ্গে মাঠে একটা ঠান্ডা লড়াই চলেছে পুরো বাংলাদেশ দলের, এই কুর্নিশে কী বোঝাতে চাইলেন, বুঝে নিন নিজের মতো করে!
No comments