জমজমের পানি ও কূপের ইতিবৃত্ত by মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান
কাবাগৃহের দ্বারপ্রান্তে অবস্থিত ‘জমজম কূপ’ আল্লাহর অসীম কুদরতের একটি অপূর্ব নিদর্শন। আরবদের কাছে জমজম শব্দের অর্থ প্রাচুর্য ও জমা হওয়া। পৃথিবীতে যত আশ্চর্যজনক সৃষ্টি রয়েছে, ‘জমজম কূপ’ তার একটি। জমজমের পানি কখনো নিঃশেষ হয় না, যা অতি পবিত্র ও উপকারী। প্রায় চার হাজার বছর আগে সৃষ্টিকর্তার অশেষ কৃপায় হজরত ইব্রাহীম (আ.)-এর দ্বিতীয় বিবি হাজেরার গর্ভে একটি পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে, তাঁর নাম রাখা হয় ইসমাইল (আ.)। নবজাতককে আদর-সোহাগ করতে দেখে বিবি সারার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে একদিন তিনি তাঁর স্বামীকে বললেন, ‘এই মাতা-পুত্রকে আমার চক্ষুর আড়াল করুন।’ হজরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর নির্দেশের অপেক্ষমাণ অবস্থায় ইরশাদ হলো, ‘হে ইব্রাহীম! সারার মন রক্ষার্থে ইসমাইল ও হাজেরাকে তরুলতাহীন নির্জন মরুপ্রান্তে নির্বাসন দাও, যাতে তার দ্বারা এমন অভিনব মহানিদর্শন সৃষ্টি হয়, যা কিয়ামত পর্যন্ত অটুট থাকবে!’
সর্বজ্ঞ স্রষ্টার হেকমতের মহাকৌশলে এই নবজাতকের দ্বারা পুণ্যময় আরবভূমি মক্কায় জমজম কূপ আবিষ্কৃত হবে; জগতের পুণ্যতীর্থ কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণ হবে; তাঁর বংশেই বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরব দেশের মক্কা নগরে আগমন করবেন। তাই সর্বনিয়ন্তা এই নবজাতককে মরুপ্রান্তরে পাঠানোর সুব্যবস্থা করলেন। যেখানে কোনো ধরনের তরুলতা, গাছপালা, নদ-নদী, খাদ্য-পানীয় পর্যন্ত নেই। যেদিকে চোখ যায়, ধু-ধু মাঠ আর মাঠ, বালু আর বালু। হজরত ইব্রাহীম (আ.) চরম ধৈর্যধারণপূর্বক দুহাত তুলে প্রার্থনা করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি নবজাতককে নিরীহ মাতাসহ নির্জন প্রান্তরে রেখে গেলাম, তা কেবল তোমারই নৈকট্য লাভের আশায়। হে আল্লাহ! এই জনমানবহীন দুর্গম প্রান্তরে আমি তাদেরকে তোমারই হাতে ন্যস্ত করলাম। তাদের তত্ত্বাবধানের ভার-দায়িত্ব তোমার ওপরই রইল।’
আরবের নির্জন মরুভূমিতে কিছু খেজুর ও এক মশক পানি—এই সামান্য খাবার দ্রুত নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল এবং দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাইল (আ.) তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েছিলেন। কয়েক দিন অনাহারে থাকার কারণে বিবি হাজেরার বুকে এক ফোঁটা দুধও আর দেখা গেল না। শিশুসন্তানের প্রাণ ওষ্ঠাগত দেখে বিবি হাজেরা ব্যাকুল হয়ে পার্শ্ববর্তী ‘সাফা’ নামক পাহাড়ের ওপরের দিকে উঠে চারদিকে তাকাতে লাগলেন। কোথাও পানি বা খাদ্যের কোনো নিদর্শন না পেয়ে ‘মারওয়া’ নামক অপর পাহাড়ে উঠে পানির সন্ধান করতে লাগলেন। এভাবে বিবি হাজেরা সাফা-মারওয়া পর্বতদ্বয়ে সাতবার পর্যন্ত আসা-যাওয়ার মাধ্যমে যখন ওঠা-নামা করছিলেন, তা আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয় হয়েছে বিধায় ইসলামের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার অন্তর্ভুক্ত হজ ও ওমরায় ‘সাঈ’ করার মাধ্যমে শামিল করেন, যা বিবি হাজেরা ও শিশু ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ হজের অঙ্গরূপে কিয়ামত পর্যন্ত অটুট থাকবে।
আল্লাহ তাআলা বিবি হাজেরার এই ব্যাকুলতা দেখে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-কে পাঠিয়ে দেন এবং তিনি স্বীয় পাখার আঘাতে শিশু ইসমাইল (আ.)-এর পদাঘাতের স্থানের নিচ থেকে কুদরতি পানির এক পবিত্র উৎস রচনা করে দেন। ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে দেখে বিবি হাজেরা অধিক আনন্দিত হন এবং প্রাণভরে পানি পান করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। প্রবাহিত পানি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি চতুর্দিকে দ্রুত বালুর বাঁধ দিয়ে আটকাতে লাগলেন, তখন পানি প্রবলবেগে প্রবাহিত হওয়ার কারণে বাঁধ ভেঙে যেতে দেখে পানির দিকে লম্বা করে বললেন, ‘জমজম’ অর্থাৎ থাম, স্থির বা অবরুদ্ধ হও। তখন আল্লাহর কুদরতে পানি আর চারদিকে প্রবাহিত না হয়ে স্থির হয়ে যায়। পানির এই উৎসই ‘জমজম কূপ’ নামে পরিচিত। এটিই হলো হজরত ইসমাইল (আ.)-এর শৈশবকালীন অসাধারণ কীর্তিময় মুজিজা।
জমজম কূপের পানি এর কয়েক শতাব্দী পর হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে প্রায় ৫০০ বছর জমজম কূপটি অজ্ঞাত অবস্থায় পড়ে থাকে। কেউ এর সন্ধান দিতে পারেনি। প্রায় ১৫০০ বছর আগে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া বরকতময় পানি জমজম কূপ পুনরুদ্ধার করেন। এক রাতে তিনি কাবাগৃহের আঙিনায় শায়িত অবস্থায় স্বপ্নে দেখেন যে একজন লোক তাঁকে প্রথম রাতে ‘তাইবা’, দ্বিতীয় রাতে ‘বাররা’ এবং তৃতীয় রাতে ‘মজনুনা’ খনন করার নির্দেশ দিয়ে অন্তর্হিত হয়ে গেলেন। ওগুলো কী জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর পেলেন না। এই তিনটি শব্দই জমজম কূপের নাম। ‘তাইবা’ অর্থাৎ পবিত্র, ‘বাররা’ অর্থাৎ নেক, আর ‘মজনুনা’ অর্থাৎ সংরক্ষিত। এরপর চতুর্থ রাতে পুনরায় ওই ব্যক্তি এসে তাঁকে জমজম কূপ খননের নির্দেশ দিলেন। আবদুল মুত্তালিব জিজ্ঞেস করলেন, তা কী? উত্তর এল, ‘যার পানি কখনো নিঃশেষ হয় না, যার তলদেশ পাওয়া যায় না, যা হাজিদের পানি সরবরাহ করে।’ এই নির্দেশ পেয়ে তিনি ঘুম থেকে জেগে একমাত্র পুত্র হারিসকে সঙ্গে নিয়ে স্বপ্নে নির্দেশিত স্থানে গিয়ে খননকাজ শুরু করলেন। সব বাধা-বিপত্তি সরিয়ে পরিত্যক্ত মূর্তি জমজম কূপ থেকে সরিয়ে ফেললে পানির প্রবাহ আবার শুরু হয়।
বিদায় হজের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) জমজম কূপের কাছে যান এবং বড় এক বালতি পানি ভর্তি করার আহ্বান জানান। তিনি সেই পানি দিয়ে অজু করেন এবং বলেন, ‘হে বনি আবদুল মুত্তালিব! তোমরা পানি তোল, তোমরা পানি না ওঠালে অন্যরা তোমাদেরকে ওই কাজ থেকে বঞ্চিত করবে।’ এরপর তিনি দাঁড়িয়ে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে অনেকক্ষণ পানি পান করেন। তারপর মাথা ওপরের দিকে তুলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলেন। এভাবে নবীজি তিনবার পানি পান করেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘জমিনের ওপর সর্বোত্তম পানি হচ্ছে দ্বীনদারের পানীয় জমজমের পানি।’ (ইবনে হিব্বান) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি যে যেই নিয়তে পান করবে, তার সেই নিয়ত পূরণ হবে। যদি তুমি এই পানি রোগমুক্তির জন্য পান কর, তাহলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। যদি তুমি পিপাসা মেটানোর জন্য পান কর, তাহলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন। যদি তুমি ক্ষুধা দূর করার উদ্দেশ্যে তা পান কর, তাহলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা দূর করে তৃপ্তি দান করবেন। এটি জিবরাইল (আ.)-এর পায়ের গোড়ালির আঘাতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পানীয় হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে।’ (ইবনে মাজা ও আল-আজরাকি)
সুদীর্ঘ কয়েক শতাব্দী পর সৌদি সরকার আধুনিক মেশিনের সাহায্যে জমজম কূপ পুনরায় খনন করেন। হাজিদের সুবিধার্থে কাবাগৃহের সম্মুখে জমজম কূপের অদূরে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক দুটি স্থ্থান তৈরি করা হয়েছে। দৈনিক অগণিত আল্লাহর মেহমান হাজিগণ কাতারবেঁধে সেখান থেকে তৃপ্তিসহকারে পানি পান করছেন। এই প্রবাহিত ঝর্ণাধারা সেই থেকেই বিশ্বমানবের কল্যাণে অনবরত পানির প্রবাহ জুগিয়ে চলেছে।
মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
সর্বজ্ঞ স্রষ্টার হেকমতের মহাকৌশলে এই নবজাতকের দ্বারা পুণ্যময় আরবভূমি মক্কায় জমজম কূপ আবিষ্কৃত হবে; জগতের পুণ্যতীর্থ কাবাগৃহ পুনর্নির্মাণ হবে; তাঁর বংশেই বিশ্বমানবতার মুক্তিদূত বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) আরব দেশের মক্কা নগরে আগমন করবেন। তাই সর্বনিয়ন্তা এই নবজাতককে মরুপ্রান্তরে পাঠানোর সুব্যবস্থা করলেন। যেখানে কোনো ধরনের তরুলতা, গাছপালা, নদ-নদী, খাদ্য-পানীয় পর্যন্ত নেই। যেদিকে চোখ যায়, ধু-ধু মাঠ আর মাঠ, বালু আর বালু। হজরত ইব্রাহীম (আ.) চরম ধৈর্যধারণপূর্বক দুহাত তুলে প্রার্থনা করে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি নবজাতককে নিরীহ মাতাসহ নির্জন প্রান্তরে রেখে গেলাম, তা কেবল তোমারই নৈকট্য লাভের আশায়। হে আল্লাহ! এই জনমানবহীন দুর্গম প্রান্তরে আমি তাদেরকে তোমারই হাতে ন্যস্ত করলাম। তাদের তত্ত্বাবধানের ভার-দায়িত্ব তোমার ওপরই রইল।’
আরবের নির্জন মরুভূমিতে কিছু খেজুর ও এক মশক পানি—এই সামান্য খাবার দ্রুত নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল এবং দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাইল (আ.) তৃষ্ণায় কাতর হয়ে পড়েছিলেন। কয়েক দিন অনাহারে থাকার কারণে বিবি হাজেরার বুকে এক ফোঁটা দুধও আর দেখা গেল না। শিশুসন্তানের প্রাণ ওষ্ঠাগত দেখে বিবি হাজেরা ব্যাকুল হয়ে পার্শ্ববর্তী ‘সাফা’ নামক পাহাড়ের ওপরের দিকে উঠে চারদিকে তাকাতে লাগলেন। কোথাও পানি বা খাদ্যের কোনো নিদর্শন না পেয়ে ‘মারওয়া’ নামক অপর পাহাড়ে উঠে পানির সন্ধান করতে লাগলেন। এভাবে বিবি হাজেরা সাফা-মারওয়া পর্বতদ্বয়ে সাতবার পর্যন্ত আসা-যাওয়ার মাধ্যমে যখন ওঠা-নামা করছিলেন, তা আল্লাহর কাছে খুবই পছন্দনীয় হয়েছে বিধায় ইসলামের ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার অন্তর্ভুক্ত হজ ও ওমরায় ‘সাঈ’ করার মাধ্যমে শামিল করেন, যা বিবি হাজেরা ও শিশু ইসমাইল (আ.)-এর স্মৃতিচিহ্নস্বরূপ হজের অঙ্গরূপে কিয়ামত পর্যন্ত অটুট থাকবে।
আল্লাহ তাআলা বিবি হাজেরার এই ব্যাকুলতা দেখে ফেরেশতা জিবরাইল (আ.)-কে পাঠিয়ে দেন এবং তিনি স্বীয় পাখার আঘাতে শিশু ইসমাইল (আ.)-এর পদাঘাতের স্থানের নিচ থেকে কুদরতি পানির এক পবিত্র উৎস রচনা করে দেন। ঝর্ণাধারা প্রবাহিত হতে দেখে বিবি হাজেরা অধিক আনন্দিত হন এবং প্রাণভরে পানি পান করে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করেন। প্রবাহিত পানি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় তিনি চতুর্দিকে দ্রুত বালুর বাঁধ দিয়ে আটকাতে লাগলেন, তখন পানি প্রবলবেগে প্রবাহিত হওয়ার কারণে বাঁধ ভেঙে যেতে দেখে পানির দিকে লম্বা করে বললেন, ‘জমজম’ অর্থাৎ থাম, স্থির বা অবরুদ্ধ হও। তখন আল্লাহর কুদরতে পানি আর চারদিকে প্রবাহিত না হয়ে স্থির হয়ে যায়। পানির এই উৎসই ‘জমজম কূপ’ নামে পরিচিত। এটিই হলো হজরত ইসমাইল (আ.)-এর শৈশবকালীন অসাধারণ কীর্তিময় মুজিজা।
জমজম কূপের পানি এর কয়েক শতাব্দী পর হঠাৎ করে বন্ধ হয়ে যায়। সেই থেকে প্রায় ৫০০ বছর জমজম কূপটি অজ্ঞাত অবস্থায় পড়ে থাকে। কেউ এর সন্ধান দিতে পারেনি। প্রায় ১৫০০ বছর আগে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পিতামহ আবদুল মুত্তালিব কালের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া বরকতময় পানি জমজম কূপ পুনরুদ্ধার করেন। এক রাতে তিনি কাবাগৃহের আঙিনায় শায়িত অবস্থায় স্বপ্নে দেখেন যে একজন লোক তাঁকে প্রথম রাতে ‘তাইবা’, দ্বিতীয় রাতে ‘বাররা’ এবং তৃতীয় রাতে ‘মজনুনা’ খনন করার নির্দেশ দিয়ে অন্তর্হিত হয়ে গেলেন। ওগুলো কী জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর পেলেন না। এই তিনটি শব্দই জমজম কূপের নাম। ‘তাইবা’ অর্থাৎ পবিত্র, ‘বাররা’ অর্থাৎ নেক, আর ‘মজনুনা’ অর্থাৎ সংরক্ষিত। এরপর চতুর্থ রাতে পুনরায় ওই ব্যক্তি এসে তাঁকে জমজম কূপ খননের নির্দেশ দিলেন। আবদুল মুত্তালিব জিজ্ঞেস করলেন, তা কী? উত্তর এল, ‘যার পানি কখনো নিঃশেষ হয় না, যার তলদেশ পাওয়া যায় না, যা হাজিদের পানি সরবরাহ করে।’ এই নির্দেশ পেয়ে তিনি ঘুম থেকে জেগে একমাত্র পুত্র হারিসকে সঙ্গে নিয়ে স্বপ্নে নির্দেশিত স্থানে গিয়ে খননকাজ শুরু করলেন। সব বাধা-বিপত্তি সরিয়ে পরিত্যক্ত মূর্তি জমজম কূপ থেকে সরিয়ে ফেললে পানির প্রবাহ আবার শুরু হয়।
বিদায় হজের সময় রাসুলুল্লাহ (সা.) জমজম কূপের কাছে যান এবং বড় এক বালতি পানি ভর্তি করার আহ্বান জানান। তিনি সেই পানি দিয়ে অজু করেন এবং বলেন, ‘হে বনি আবদুল মুত্তালিব! তোমরা পানি তোল, তোমরা পানি না ওঠালে অন্যরা তোমাদেরকে ওই কাজ থেকে বঞ্চিত করবে।’ এরপর তিনি দাঁড়িয়ে ‘বিসমিল্লাহ’ বলে অনেকক্ষণ পানি পান করেন। তারপর মাথা ওপরের দিকে তুলে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলেন। এভাবে নবীজি তিনবার পানি পান করেন। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ‘জমিনের ওপর সর্বোত্তম পানি হচ্ছে দ্বীনদারের পানীয় জমজমের পানি।’ (ইবনে হিব্বান) রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জমজমের পানি যে যেই নিয়তে পান করবে, তার সেই নিয়ত পূরণ হবে। যদি তুমি এই পানি রোগমুক্তির জন্য পান কর, তাহলে আল্লাহ তোমাকে আরোগ্য দান করবেন। যদি তুমি পিপাসা মেটানোর জন্য পান কর, তাহলে আল্লাহ তোমার পিপাসা দূর করবেন। যদি তুমি ক্ষুধা দূর করার উদ্দেশ্যে তা পান কর, তাহলে আল্লাহ তোমার ক্ষুধা দূর করে তৃপ্তি দান করবেন। এটি জিবরাইল (আ.)-এর পায়ের গোড়ালির আঘাতে হজরত ইসমাইল (আ.)-এর পানীয় হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে।’ (ইবনে মাজা ও আল-আজরাকি)
সুদীর্ঘ কয়েক শতাব্দী পর সৌদি সরকার আধুনিক মেশিনের সাহায্যে জমজম কূপ পুনরায় খনন করেন। হাজিদের সুবিধার্থে কাবাগৃহের সম্মুখে জমজম কূপের অদূরে নারী ও পুরুষের জন্য পৃথক দুটি স্থ্থান তৈরি করা হয়েছে। দৈনিক অগণিত আল্লাহর মেহমান হাজিগণ কাতারবেঁধে সেখান থেকে তৃপ্তিসহকারে পানি পান করছেন। এই প্রবাহিত ঝর্ণাধারা সেই থেকেই বিশ্বমানবের কল্যাণে অনবরত পানির প্রবাহ জুগিয়ে চলেছে।
মুহাম্মদ আবদুল মুনিম খান: সহকারী অধ্যাপক, ইসলামিক একাডেমী ও বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ অ্যান্ড দাওয়াহ, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়।
No comments