রক্তাক্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের বর্বরতার সর্বশেষ দৃষ্টান্ত দেখা গেল গত সোমবার রাতভর ছাত্রলীগ ও পুলিশের সঙ্গে তাদের সশস্ত্র সংঘর্ষের ঘটনায়। ফারুক হোসেন নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ম্যানহোলে ফেলে দেওয়া, আরও তিন কর্মীর হাত-পায়ের রগ কেটে দেওয়া, পুলিশের সঙ্গে তাদের রাতভর গুলিবিনিময়, ছাত্রাবাসগুলোর ফটক ভাঙা, ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর কক্ষ ভাঙচুর, কয়েকটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া—এসবের বিবরণ ছাপা হয়েছে বুধবারের জাতীয় দৈনিকগুলোতে। চিত্রটি এমন, যেন ইসলামী ছাত্রশিবির ছাত্রদের সংগঠন নয়, বরং প্রশিক্ষিত, সশস্ত্র, সংঘবদ্ধ একটি দুর্বৃত্ত বাহিনী; যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তত্পর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আবু বকর সিদ্দিক নামের এক সাধারণ ছাত্রের মৃত্যুর এক সপ্তাহের মাথায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেনের মৃত্যু দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আকস্মিক অবনতির লক্ষণ। রাজশাহীর ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বিস্ময়ের সঙ্গে মন্তব্য করেছেন: সব তো ঠিকভাবেই চলছিল, হঠাত্ করে কেন এসব শুরু হলো? তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব সহিংসতার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটা করা খুবই জরুরি; তবে সাধারণভাবে দেখা যায়, কিছু বোঝাও যায় যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহিংসতার আশঙ্কা সব সময়ই রয়েছে। কোন মুহূর্তে তা শুরু হচ্ছে, সেটা নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর।
শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো যদি পড়াশোনার পরিবর্তে ক্যাম্পাসের ভেতর, আবাসিক হলগুলোতে ও সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ, দখলদারি এবং সেসবের সঙ্গে আনুষঙ্গিক বৈষয়িক প্রাপ্তির বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে তাদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দ্বন্দ্ব ছাত্রলীগের ভেতরই বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে, রাজশাহীতে তা ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে। দ্বন্দ্বটা আধিপত্যের। ছাত্রলীগের এক কর্মীর একটি আবাসিক হলে প্রবেশের চেষ্টা এবং ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের তাতে বাধা দেওয়ার ঘটনা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিরাট সংঘর্ষ ঘটে গেল, তা থেকেই আধিপত্যের লড়াইটা খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তথাকথিত ছাত্রসংগঠনগুলোর আধিপত্যের লড়াইকে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলো প্রশ্রয় দেয়। যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে, তার অনুসারী ছাত্রসংগঠন সেই লড়াইয়ে সরকারি সহযোগিতা পায়। সেখানে দেশের প্রচলিত আইন কাজ করে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে, সেই সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও সংগঠনটি একই রকম সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ নিকটবর্তী এলাকার সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের প্রভাব ও আধিপত্য এতটাই বিস্তৃত ও গভীর হয়েছে যে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে তারা এমনকি সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও রীতিমতো যুদ্ধ চালাতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের দৌরাত্ম্য মাত্রা ছাড়িয়েছে; তাদের ঘাঁটি উচ্ছেদ করতে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ আইনি উদ্যোগ নিতে হবে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যদি মনে করে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের আধিপত্য অপসারিত হবে ছাত্রলীগের দ্বারা, তাহলে সংঘর্ষ, রক্তপাত, প্রাণহানি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা-বিপর্যয় বন্ধ হবে না। বকর ও ফারুকের মতো সম্ভাবনাময় তরুণদের অকালে ঝরে পড়া থামবে না। সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে শিক্ষাঙ্গনকে সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করে শিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। এই ধারার ছাত্ররাজনীতিও আর চলতে দেওয়া উচিত কি না, তা গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আবু বকর সিদ্দিক নামের এক সাধারণ ছাত্রের মৃত্যুর এক সপ্তাহের মাথায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ-ছাত্রশিবির সংঘর্ষে ছাত্রলীগের কর্মী ফারুক হোসেনের মৃত্যু দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আকস্মিক অবনতির লক্ষণ। রাজশাহীর ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বিস্ময়ের সঙ্গে মন্তব্য করেছেন: সব তো ঠিকভাবেই চলছিল, হঠাত্ করে কেন এসব শুরু হলো? তিনি বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এসব সহিংসতার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটা করা খুবই জরুরি; তবে সাধারণভাবে দেখা যায়, কিছু বোঝাও যায় যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সহিংসতার আশঙ্কা সব সময়ই রয়েছে। কোন মুহূর্তে তা শুরু হচ্ছে, সেটা নির্ভর করে পরিস্থিতির ওপর।
শিক্ষার্থীদের সংগঠনগুলো যদি পড়াশোনার পরিবর্তে ক্যাম্পাসের ভেতর, আবাসিক হলগুলোতে ও সংলগ্ন এলাকায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ, দখলদারি এবং সেসবের সঙ্গে আনুষঙ্গিক বৈষয়িক প্রাপ্তির বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়, তাহলে তাদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ অনিবার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে দ্বন্দ্ব ছাত্রলীগের ভেতরই বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে, রাজশাহীতে তা ছাত্রলীগ ও ছাত্রশিবিরের মধ্যে। দ্বন্দ্বটা আধিপত্যের। ছাত্রলীগের এক কর্মীর একটি আবাসিক হলে প্রবেশের চেষ্টা এবং ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের তাতে বাধা দেওয়ার ঘটনা থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে যে বিরাট সংঘর্ষ ঘটে গেল, তা থেকেই আধিপত্যের লড়াইটা খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তথাকথিত ছাত্রসংগঠনগুলোর আধিপত্যের লড়াইকে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারগুলো প্রশ্রয় দেয়। যে সরকার যখন ক্ষমতায় থাকে, তার অনুসারী ছাত্রসংগঠন সেই লড়াইয়ে সরকারি সহযোগিতা পায়। সেখানে দেশের প্রচলিত আইন কাজ করে না। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের একচ্ছত্র আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে, সেই সরকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়েও সংগঠনটি একই রকম সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনসহ নিকটবর্তী এলাকার সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে তাদের প্রভাব ও আধিপত্য এতটাই বিস্তৃত ও গভীর হয়েছে যে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে তারা এমনকি সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও রীতিমতো যুদ্ধ চালাতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামী ছাত্রশিবিরের দৌরাত্ম্য মাত্রা ছাড়িয়েছে; তাদের ঘাঁটি উচ্ছেদ করতে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ আইনি উদ্যোগ নিতে হবে।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার যদি মনে করে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের আধিপত্য অপসারিত হবে ছাত্রলীগের দ্বারা, তাহলে সংঘর্ষ, রক্তপাত, প্রাণহানি, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা-বিপর্যয় বন্ধ হবে না। বকর ও ফারুকের মতো সম্ভাবনাময় তরুণদের অকালে ঝরে পড়া থামবে না। সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে শিক্ষাঙ্গনকে সব ধরনের দলীয় রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করে শিক্ষার প্রকৃত পরিবেশ ফিরিয়ে আনার। এই ধারার ছাত্ররাজনীতিও আর চলতে দেওয়া উচিত কি না, তা গভীরভাবে ভেবে দেখার সময় হয়েছে।
No comments