রাজ্য নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক শক্তি বিপর্যস্ত by জগলুল আহেমদ চৌধূরী
ভারতের সদ্যসমাপ্ত রাজ্য নির্বাচন দেশের শাসক দল কংগ্রেসকে উত্ফুল্ল করেছে, অন্যদিকে প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় জনতা পার্টিকে (বিজেপি) হতাশ করেছে। তিনটি রাজ্য—মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা ও অরুণাচল প্রদেশের বিধানসভার নির্বাচন ছিল এ বছরের এপ্রিল-মে মাসে জাতীয় নির্বাচনের পর বড় ও আঞ্চলিকভাবে প্রভাবশালী দলগুলোর জনপ্রিয়তার একটি কঠিন পরীক্ষা। কংগ্রেস লোকসভার নির্বাচনে জয়ী হয়ে ভারতে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে এবং বিজেপির ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা অন্তত আরও প্রায় পাঁচ বছরের জন্য তিরোহিত হয়েছে। এ পটভূমিকায় তিনটি রাজ্য নির্বাচন ছিল বেশ তাত্পর্যপূর্ণ এবং সে কারণে এ ভোটপর্বের ফলাফলের দিকে দেশ-বিদেশের অনেকেরই দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল। বিশ্লেষকেরা ফলাফল নিয়ে বেশ দ্বিধাবিভক্তই ছিলেন, বলা যেতে পারে এ কারণে যে, রাজ্যগুলোতে ক্ষমতায় থাকার কারণে কংগ্রেস ও তার মিত্ররা জনপ্রিয়তা বজায় রাখতে সমর্থ হবে কি না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। কিন্তু সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে কংগ্রেসের নেতৃত্বে জোটগুলো আবারও এসব রাজ্যে সরকার গঠন করতে সক্ষম হচ্ছে। একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের পর বিজেপির হতাশা স্বাভাবিকভাবেই বেড়েছে এবং এতে সংগঠনে মতভেদ ও কোন্দল আরও তীব্র হতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।
এ তিনটি রাজ্যের নির্বাচনের মধ্যে পশ্চিমের মহারাষ্ট্রই ছিল সবার আগ্রহ ও কৌতূহলের কেন্দ্রে। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী বলে পরিচিত মহারাষ্ট্রে এবার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারণা করা হয়েছিল কংগ্রেস ও জাতীয়তাবাদী কংগ্রেসের শাসক মোর্চার সঙ্গে বিজেপি ও শিবসেনা আঁতাতের। সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দল কেন্দ্রীয় নেতা শারদ পাওয়ারের জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস আশাতীত সাফল্য অর্জন করেই জয়ী হয়েছে। সাম্প্রদায়িক বলে বিবেচিত বিজেপি ও তার মিত্র প্রচণ্ডভাবে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বাল থ্যাকারের শিবসেনার বিপর্যয় সাম্প্রদায়িক শক্তির জন্য আরও একটি আঘাত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে এবং ফলাফলে তাদের হতাশাও ফুটে উঠেছে।
মহারাষ্ট্র রাজনৈতিকভাবেও ভারতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত লোকসভার ভোট নিয়ে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মোর্চার মধ্যে যে ভালো লড়াই হয়নি, তা নয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে মুম্বাইয়ে শাসরুদ্ধকর সন্ত্রাসী হামলা রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে একটি নতুন বিতর্কিত মাত্রা যোগ করেছিল। শহরের আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসীদের আক্রমণে প্রায় দেড় শ মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং কয়েক শ আহত হয়। পাকিস্তান প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে যে সন্ত্রাসীরা সেই দেশ থেকেই ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল। একজন সন্ত্রাসী ছাড়া বাকি পাঁচজন নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়। একমাত্র জীবিত হামলাকারী আজমল কাসাব ধরা পড়ে এবং ভারতে বিচারাধীন। অন্যদিকে নয়াদিল্লি এ হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে ইসলামাবাদের কাছে এবং বিষয়টি তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দারুণভাবে বিঘ্নিত করেছে। পাকিস্তান বলেছে, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না; তবে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছে। কিন্তু ভারত এ বিচারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মুম্বাই হামলা লোকসভা ও মহারাষ্ট্রের রাজ্য নির্বাচনে একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। বিজেপি ও শিবসেনা অভিযোগ করেছে, ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীতে এমন চাঞ্চল্যকর হামলা সত্ত্বেও নয়াদিল্লি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা পাকিস্তানকে ‘যথাযথ শিক্ষা’ দিতে এমনকি দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধেরও পক্ষপাতী। কিন্তু মনমোহন সরকার এ হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করা সত্ত্বেও কূটনীতি ও সংযমের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েনস (ইউপিএ) সরকারের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতাই প্রতিফলিত হয়েছে। জাতীয় ও রাজ্য নির্বাচনে জনগণ সেই অবস্থানকেই সমর্থন করেছে; তবে মহারাষ্ট্র নির্বাচনে একটি নতুন দল বেশ সফলতা পেয়েছে অনেকটা অভাবিতভাবে। এ দলের নেতা রাজ থ্যাকারে আগে শিবসেনা নেতা বাল থ্যাকারেরই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। নীতি ও ব্যক্তিগত কারণে তিনি মহারাষ্ট্র নাভারিমান সেনা (এমএনএস) গঠন করে শিবসেনা থেকে সরে আসেন। অবশ্য, এ দলের উদ্ভব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি কংগ্রেস ও মিত্রদের নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক শক্তিতে ভোটবিভক্তির মাধ্যমে জয়লাভে কার্যকরভাবে সহায়তা করেছে সন্দেহাতীতভাবে। হরিয়ানা রাজ্য ছোট হলেও হিন্দিভাষী প্রভাবশালী অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। এখানে কংগ্রেস কোনোভাবে জয় পেতে সক্ষম হয়েছে, যদিও আসনসংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। রাজ্যের বিধানসভায় এবার আর কংগ্রেস সরাসরি জয় পায়নি; তবে স্বতন্ত্র সদস্যদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করার মতো শক্তি সঞ্চয় করেছে এবং এতেই কংগ্রেস সন্তুষ্ট। বিজেপির শক্তি এখানে তেমন ছিল না এবং যতটুকু ছিল, সেটাও কমেছে। তবে রাজ্যের আঞ্চলিক দল হরিয়ানা লোকদল, যা কিনা সাবেক ভারতীয় উপপ্রধানমন্ত্রী দেবীলালের ছেলে ওম প্রকাশ চৌতালার নেতৃত্বে পরিচালিত, বেশ সাফল্য পেয়েছে এবং কংগ্রেসের পরই দ্বিতীয় স্থান পেতে সক্ষম হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব অরুণাচলের নির্বাচন সেভাবে ততটা তাত্পর্যপূর্ণ ছিল না; তবে গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিকভাবে এ রাজ্যের নাম উঠে এসেছিল অন্য কারণে। সেটা হলো, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন নিজ দলের জন্য নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সেখানে সফরে যান, প্রতিবেশী দেশ চীন সে সফর নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। বেইজিং এ রাজ্যকে বিরোধপূর্ণ অঞ্চল মনে করে এবং এর বিস্তীর্ণ এলাকাকে নিজেদের অঞ্চল বলে দাবি করে আসছে। এটা চীন-ভারত সীমান্ত সমস্যা। নির্বাচনে কংগ্রেসই ভালো করেছে।
তিনটি রাজ্যের নির্বাচনে, বিশেষ করে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় বিজেপি ও মিত্রদের পরাজয় নিঃসন্দেহে ভারতের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আরও দুর্বল করে দেবে। বিজেপিই এ শক্তির প্রধান অবয়ব এবং জাতীয় নির্বাচনে পর্যুদস্ত হওয়ার পর রাজ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলটি মানসিক ও সাংগঠনিক শক্তি ফিরে পেতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের পর এ দলের মধ্যে বিভাজনও পরিলক্ষিত হচ্ছে। কট্টরপন্থী সভাপতি রাজনাথ সিং, সাবেক সংগঠনপ্রধান ও পার্লামেন্টে দলীয় নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি আর সাবেক তথ্যমন্ত্রী সুষমা স্বরাজরা মনে করছেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি গ্রহণ করেই দলকে আবার চাঙা করা সম্ভব। তাঁদের সঙ্গে আছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিতর্কিত নরেন্দ্র মোদী, যাঁর উগ্র সাম্প্রদায়িকতা সবারই জানা। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও উদারপন্থী হিসেবে বিবেচিত অটল বিহারি বাজপেয়ি ও অন্যরা উগ্র হিন্দুত্ববাদের সমর্থক নন। অবশ্য বাজপেয়ি শারীরিক কারণে আর আগের মতো সক্রিয় নন। তাঁর ঘনিষ্ঠজন সাবেক অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশোবন্ত সিংকে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে পাকিস্তানের স্রষ্টা জিন্নাহকে প্রশংসা করে বই লেখার জন্য। কট্টরপন্থীরা সুযোগ বুঝে উদারপন্থী এ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এখন দলে কট্টরপন্থীদের প্রাধান্য হলেও জাতীয় ও সদ্যসমাপ্ত রাজ্য নির্বাচন প্রমাণ করে, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ভারতীয় রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারছে না। এবং এটা শুভ লক্ষণ।
জগলুল আহেমদ চৌধূরী: সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক।
এ তিনটি রাজ্যের নির্বাচনের মধ্যে পশ্চিমের মহারাষ্ট্রই ছিল সবার আগ্রহ ও কৌতূহলের কেন্দ্রে। ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী বলে পরিচিত মহারাষ্ট্রে এবার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার ধারণা করা হয়েছিল কংগ্রেস ও জাতীয়তাবাদী কংগ্রেসের শাসক মোর্চার সঙ্গে বিজেপি ও শিবসেনা আঁতাতের। সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দল কেন্দ্রীয় নেতা শারদ পাওয়ারের জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস আশাতীত সাফল্য অর্জন করেই জয়ী হয়েছে। সাম্প্রদায়িক বলে বিবেচিত বিজেপি ও তার মিত্র প্রচণ্ডভাবে হিন্দু জাতীয়তাবাদী বাল থ্যাকারের শিবসেনার বিপর্যয় সাম্প্রদায়িক শক্তির জন্য আরও একটি আঘাত বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে এবং ফলাফলে তাদের হতাশাও ফুটে উঠেছে।
মহারাষ্ট্র রাজনৈতিকভাবেও ভারতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত লোকসভার ভোট নিয়ে দুই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী মোর্চার মধ্যে যে ভালো লড়াই হয়নি, তা নয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে মুম্বাইয়ে শাসরুদ্ধকর সন্ত্রাসী হামলা রাজ্য ও জাতীয় রাজনীতিতে একটি নতুন বিতর্কিত মাত্রা যোগ করেছিল। শহরের আকর্ষণীয় ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে পাকিস্তান থেকে আসা সন্ত্রাসীদের আক্রমণে প্রায় দেড় শ মানুষের প্রাণহানি ঘটে এবং কয়েক শ আহত হয়। পাকিস্তান প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে যে সন্ত্রাসীরা সেই দেশ থেকেই ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল। একজন সন্ত্রাসী ছাড়া বাকি পাঁচজন নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়। একমাত্র জীবিত হামলাকারী আজমল কাসাব ধরা পড়ে এবং ভারতে বিচারাধীন। অন্যদিকে নয়াদিল্লি এ হামলার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের দাবি জানিয়ে আসছে ইসলামাবাদের কাছে এবং বিষয়টি তাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক দারুণভাবে বিঘ্নিত করেছে। পাকিস্তান বলেছে, সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পাকিস্তান সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না; তবে দোষী ব্যক্তিদের বিচারের প্রক্রিয়া তারা শুরু করেছে। কিন্তু ভারত এ বিচারের আন্তরিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
মুম্বাই হামলা লোকসভা ও মহারাষ্ট্রের রাজ্য নির্বাচনে একটি বড় রাজনৈতিক ইস্যু হয়ে আবির্ভূত হয়েছে। বিজেপি ও শিবসেনা অভিযোগ করেছে, ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীতে এমন চাঞ্চল্যকর হামলা সত্ত্বেও নয়াদিল্লি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা পাকিস্তানকে ‘যথাযথ শিক্ষা’ দিতে এমনকি দেশটির বিরুদ্ধে যুদ্ধেরও পক্ষপাতী। কিন্তু মনমোহন সরকার এ হামলার জন্য ইসলামাবাদকে দায়ী করা সত্ত্বেও কূটনীতি ও সংযমের মাধ্যমে সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার দিয়েছে। এতে কংগ্রেসের নেতৃত্বে ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েনস (ইউপিএ) সরকারের প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতাই প্রতিফলিত হয়েছে। জাতীয় ও রাজ্য নির্বাচনে জনগণ সেই অবস্থানকেই সমর্থন করেছে; তবে মহারাষ্ট্র নির্বাচনে একটি নতুন দল বেশ সফলতা পেয়েছে অনেকটা অভাবিতভাবে। এ দলের নেতা রাজ থ্যাকারে আগে শিবসেনা নেতা বাল থ্যাকারেরই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। নীতি ও ব্যক্তিগত কারণে তিনি মহারাষ্ট্র নাভারিমান সেনা (এমএনএস) গঠন করে শিবসেনা থেকে সরে আসেন। অবশ্য, এ দলের উদ্ভব ধর্মনিরপেক্ষ শক্তি কংগ্রেস ও মিত্রদের নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক শক্তিতে ভোটবিভক্তির মাধ্যমে জয়লাভে কার্যকরভাবে সহায়তা করেছে সন্দেহাতীতভাবে। হরিয়ানা রাজ্য ছোট হলেও হিন্দিভাষী প্রভাবশালী অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। এখানে কংগ্রেস কোনোভাবে জয় পেতে সক্ষম হয়েছে, যদিও আসনসংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। রাজ্যের বিধানসভায় এবার আর কংগ্রেস সরাসরি জয় পায়নি; তবে স্বতন্ত্র সদস্যদের সমর্থন নিয়ে সরকার গঠন করার মতো শক্তি সঞ্চয় করেছে এবং এতেই কংগ্রেস সন্তুষ্ট। বিজেপির শক্তি এখানে তেমন ছিল না এবং যতটুকু ছিল, সেটাও কমেছে। তবে রাজ্যের আঞ্চলিক দল হরিয়ানা লোকদল, যা কিনা সাবেক ভারতীয় উপপ্রধানমন্ত্রী দেবীলালের ছেলে ওম প্রকাশ চৌতালার নেতৃত্বে পরিচালিত, বেশ সাফল্য পেয়েছে এবং কংগ্রেসের পরই দ্বিতীয় স্থান পেতে সক্ষম হয়েছে।
উত্তর-পূর্ব অরুণাচলের নির্বাচন সেভাবে ততটা তাত্পর্যপূর্ণ ছিল না; তবে গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিকভাবে এ রাজ্যের নাম উঠে এসেছিল অন্য কারণে। সেটা হলো, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং যখন নিজ দলের জন্য নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সেখানে সফরে যান, প্রতিবেশী দেশ চীন সে সফর নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিল। বেইজিং এ রাজ্যকে বিরোধপূর্ণ অঞ্চল মনে করে এবং এর বিস্তীর্ণ এলাকাকে নিজেদের অঞ্চল বলে দাবি করে আসছে। এটা চীন-ভারত সীমান্ত সমস্যা। নির্বাচনে কংগ্রেসই ভালো করেছে।
তিনটি রাজ্যের নির্বাচনে, বিশেষ করে মহারাষ্ট্র ও হরিয়ানায় বিজেপি ও মিত্রদের পরাজয় নিঃসন্দেহে ভারতের সাম্প্রদায়িক শক্তিকে আরও দুর্বল করে দেবে। বিজেপিই এ শক্তির প্রধান অবয়ব এবং জাতীয় নির্বাচনে পর্যুদস্ত হওয়ার পর রাজ্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দলটি মানসিক ও সাংগঠনিক শক্তি ফিরে পেতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের পর এ দলের মধ্যে বিভাজনও পরিলক্ষিত হচ্ছে। কট্টরপন্থী সভাপতি রাজনাথ সিং, সাবেক সংগঠনপ্রধান ও পার্লামেন্টে দলীয় নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি আর সাবেক তথ্যমন্ত্রী সুষমা স্বরাজরা মনে করছেন, উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি গ্রহণ করেই দলকে আবার চাঙা করা সম্ভব। তাঁদের সঙ্গে আছেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী বিতর্কিত নরেন্দ্র মোদী, যাঁর উগ্র সাম্প্রদায়িকতা সবারই জানা। অন্যদিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও উদারপন্থী হিসেবে বিবেচিত অটল বিহারি বাজপেয়ি ও অন্যরা উগ্র হিন্দুত্ববাদের সমর্থক নন। অবশ্য বাজপেয়ি শারীরিক কারণে আর আগের মতো সক্রিয় নন। তাঁর ঘনিষ্ঠজন সাবেক অর্থ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী যশোবন্ত সিংকে বিজেপি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে পাকিস্তানের স্রষ্টা জিন্নাহকে প্রশংসা করে বই লেখার জন্য। কট্টরপন্থীরা সুযোগ বুঝে উদারপন্থী এ নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়। এখন দলে কট্টরপন্থীদের প্রাধান্য হলেও জাতীয় ও সদ্যসমাপ্ত রাজ্য নির্বাচন প্রমাণ করে, উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ভারতীয় রাজনীতিতে সুবিধা করতে পারছে না। এবং এটা শুভ লক্ষণ।
জগলুল আহেমদ চৌধূরী: সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক।
No comments