সাংবাদিকতার জন্য অশনি সংকেত -সময়ের প্রতিবিম্ব by এবিএম মূসা
তথ্যমন্ত্রী সম্প্রতি সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম সম্পর্কীয় দুটি বক্তব্য দিয়েছেন। এক. বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদ সম্প্রচার ও অনুষ্ঠান পরিবেশনা একটি নীতিমালার আওতায় আনা হবে। দুই. সরকার সংবাদপত্র তথা সাংবাদিকদের আচরণবিধি প্রণয়ন করবে। তাপসের প্রাণনাশের জন্য বোমা হামলা, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার, তেল-গ্যাস নিয়ে আন্দোলনের হুমকি, জঙ্গিবাদের বিস্তার, প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দলের একটু-আধটু নড়াচড়া ইত্যাকার চাঞ্চল্যকর ও আকর্ষণীয় সংবাদের মধ্যে তথ্যমন্ত্রীর দেওয়া তথ্যটি পত্রিকার পাতায় তেমন গুরুত্ব পায়নি। আমি কিন্তু একই চরিত্রের দুটি খবরের মধ্যে স্বাধীন সাংবাদিকতাচর্চার ক্ষেত্রে সংবাদপত্র বা মিডিয়ার ওপর নিয়ন্ত্রণের খাঁড়া নেমে আসছে, এমন আভাস পাচ্ছি। এর বিপরীতে সাংবাদিকসমাজ, মানবাধিকার সংগঠন ও জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের যাঁরা অহর্নিশ বক্তব্য দিয়ে থাকেন, তাঁদের কোনো প্রতিক্রিয়ার আভাস পাইনি। তাঁরা বোধহয় তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের মাজেজা অথবা অন্তর্নিহিত সত্যটি অনুধাবন করতে পারেননি।
আমি পেরেছি, মানে তথ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারণের ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দোহাই দিয়ে কী করতে চান, আমি তার আভাস পাচ্ছি। আমি ঘর পোড়া গরুদের অন্যতম, দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল সাংবাদিকতার অঙ্গনে বিচরণকালে আমি বহুবার স্বৈরাচারী ও নির্বাচিত প্রায় সব কটি শাসনামলে শাসকদের মুখে সংবাদপত্রের নীতিমালা, আচরণবিধি প্রয়োজনীয়তার কথা শুনেছি। সাংবাদিকদের শুধু ‘বস্তুনিষ্ঠ’ হওয়ার উপদেশবর্ষণ নয়, কীভাবে ভাতে মেরে, হাতে মেরে শেখানোর প্রচেষ্টা হয়, তাও বোঝার ও জানার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে প্রচেষ্টা কী রূপের ও কী চরিত্রের ছিল, তা নিয়ে প্রথমে সে আলোচনা করব, স্মৃতির ইতিহাস ঘাঁটব। পঞ্চাশের দশকে ভারত বিভক্তির অব্যবহিতপরের সময় থেকে আজ পর্যন্ত সরকারের ‘নসিহতের’ বর্ণনা দিয়ে সেসবের মাজেজা ব্যাখ্যা করব। আগের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের সুদীর্ঘকালটি নিয়েও আলোচনা শুরু করতে পারতাম। কিন্তু সে সময়ে গণমাধ্যম বা সংবাদপত্র দেশে আর্থসামাজিক ও বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক জগতে তেমন প্রভাব ফেলত না। তাই সেই যুগ আলোচনা করে এই প্রতিবেদন দীর্ঘায়িত করতে চাই না। আপাতত দেশ বিভাগের পর ও ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান শেষে ‘স্বাধীন’ দেশে সাংবাদিকতার ও সাংবাদিকদের শাসকেরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছেন, স্বল্পাকারে তা-ই স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে তুলে আনব। বলা বাহুল্য, সেসব নিয়ন্ত্রণ এসেছে বাহ্যত আচরণবিধি নির্ধারণ ও বস্তুনিষ্ঠতা শেখানোর অছিলায়।
প্রসঙ্গত, স্বৈরতান্ত্রিক আমল থেকে গণতান্ত্রিক শাসনের নিশ্চয়তা প্রদানকারী সরকারের শাসনকালে সাংবাদিক নির্যাতনের ধারাবাহিকতা কীভাবে চলমান রয়েছে, তা স্মরণ করতে হবে। একই সঙ্গে নীতি ও আচরণ নির্ধারণের অজুহাতে শৃঙ্খলিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে অতীতের সাংবাদিকসমাজ, পাঠকেরা ও সংবাদপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার ইতিবৃত্ত আলোচনায় আসবে। প্রথমে জানাই আদি পর্বে শুধু এ অঞ্চলে তথা পূর্ব পাকিস্তানে মোসলেম লীগ সরকারের আমলে সংবাদপত্র দলনের ইতিবৃত্ত। সাতচল্লিশে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকালে দেশে কোনো দৈনিক পত্রিকা ছিল না। ঢাকা ও কয়েকটি জেলা সদরে ছিল সাপ্তাহিক পত্রিকা। সেসবের মিলিত প্রচারসংখ্যা ছিল কয়েক হাজার। পূর্ব পাকিস্তানে যখন প্রথম অসন্তোষের আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলছিল, তখন সাপ্তাহিকগুলোই সীমিত পরিধিতে সেই আগুন একটু-আধটু উসকে দিচ্ছিল। প্রচারসংখ্যা সীমিত হলেও এসব সাপ্তাহিক পত্রিকার শিক্ষিত ও রাজনীতিসচেতন জনগণের মধ্যে প্রভাব ছিল অপরিসীম। শাসকগোষ্ঠী সেই প্রভাবের প্রভা অনুধাবন করল প্রথম ভাষা আন্দোলনের প্রাক্কালে। সীমিত প্রভাব বিস্তারকারী সাপ্তাহিকগুলোর ওপর খড়গ নেমে এল। নিষিদ্ধ করা হলো ঢাকায় ইনসাফ, সিলেটের নওবেলাল, ফেনীর সংগ্রাম, চট্টগ্রামের সীমান্ত। পরবর্তীকালে যখন দু-চারটি দৈনিকের আত্মপ্রকাশ ঘটল, তখনো সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা অব্যাহত রইল। বন্ধ করা হলো সদ্যপ্রকাশিত ইংরাজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার ও চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্ব পাকিস্তান। সম্পাদকদের কয়েকজন জেলে গেলেন।
প্রথম দিকে সাংবাদিকতার ওপর আদিতে যেসব আঘাত এসেছিল, তার প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার জন্য কোনো সংঘবদ্ধ সাংবাদিকসমাজ তখনো গড়ে ওঠেনি। তবে ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলের জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ-সচেতনতার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সে কারণে সংবাদপত্রের এবং সাংবাদিকতার ওপর আঘাত ও স্বাধীনচেতা সাংবাদিকদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমনে অসন্তোষের সঞ্চার হয়েছিল। স্বাধীন মত প্রকাশের পথে ক্ষমতাধরদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণও তাদের কাছে সুস্পষ্ট হতে থাকে। তারপর এল সামরিক শাসনের যুগ। জেনারেল-পরবর্তী সময়ে ফিল্ড মার্শাল উপাধিধারী আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিলেন। সামরিক অধ্যাদেশ জারি করে প্রথমে সেন্সরশিপ এবং সংবাদ প্রকাশের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলেন। সেই নিয়ন্ত্রণের ফাঁকফোকরের মধ্যেও সংবাদপত্র, সাময়িকী এবং সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা অতি কৌশলে একটু-আধটু স্বাধীন জনমত গঠনের ভূমিকা রাখছিলেন। গণতন্ত্র ও জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হতে থাকলেন। সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার চার বছর পর সামরিক শাসক সেসব ফাঁকফোকর বন্ধ করার জন্য নতুন একটি কালাকানুন করল, ‘সংবাদপত্র প্রকাশ ও প্রকাশনা অর্ডিন্যান্স’। সেই প্রথম সংবাদপত্রজগতের সবাই একসঙ্গে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলেন। মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের অভূতপূর্ব নজির সৃষ্টি করলেন। সেটিকে সাংবাদিকদের ও সাংবাদিকজগতের একটি নবজাগরণ বলে আখ্যায়িত করতে পারি। সেই জাগরণের ঢেউয়ে, ব্যাপক আন্দোলনের চাপে সামরিক শাসক অধ্যাদেশটি পুরোপুরি বাতিল না করলেও অনেকাংশে সংশোধন ও পরিমার্জন করল। কিন্তু সাংবাদিকদের ও সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি অব্যাহত রইল।
কী ছিল সংবাদপত্র প্রকাশনা ও মুদ্রণ অধ্যাদেশে? স্বৈরতান্ত্রিক সামরিক সরকারের আইন তথা অধ্যাদেশের মুখবন্ধে ছিল সেই কথাগুলো, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে যার পুনরুক্তি শুনছি। অধ্যাদেশের মুখবন্ধের কথা ছিল, সংবাদপত্রের সংবাদ প্রকাশ নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে না। আইয়ুব সরকার কী ছাপা যাবে আর যাবে না, তা কতিপয় বিধিমালা আর নীতিমালা বাস্তবে নির্দেশনার মাধ্যমে নির্ধারণ করে দিল। পরবর্তী সময়ে বিধিমালা তৈরির জন্য একটি প্রচ্ছন্ন সরকারি সংস্থা গঠন করা হয়। নাম দেওয়া হয় ‘প্রেস কাউন্সিল’, যাকে দেওয়া হয় সংবাদপত্রের ওপর নজরদারি করার অধিকার। উল্লেখযোগ্য, সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সেই কাউন্সিল বিলুপ্ত হয়। অধ্যাদেশটির ধার কমলেও বর্তমানের বিশেষ ক্ষমতা আইনের আদলে বিদ্যমান ‘জননিরাপত্তা আইনে’ আর সামরিক অধ্যাদেশে সাংবাদিক গ্রেপ্তার ও সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি। তবে এত সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকসমাজ যতটুক সম্ভব সব ঝুঁকি নিয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিল। সংবাদপত্র ভাষা আন্দোলনে যেমন সীমিত আকারে জনমত গঠন করেছিল, তার চেয়েও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়ে ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনে ইন্ধন জোগাল। সাংবাদিকেরা নিজস্ব পেশার সীমানা ছাড়িয়ে বিভিন্ন আন্দোলনেও সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন।
অতঃপর স্বাধীনতার অব্যবহিতপরের অধ্যায়। বস্তুত, তখনই সাংবাদিকেরা নিজেদের স্বকীয়তা ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষার সাহসিকতা ও প্রতিবাদী মনোভাব হারালেন। বাস্তবে সাংবাদিকতার এক ধরনের অবক্ষয়ের সূচনা হলো। সাংবাদিকসমাজের কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিল। ক্ষমতাসীনদের প্রতি অদ্ভুত বশ্যতা, ক্ষমতাসীন সরকারের কৌশল ও ফাঁদে পড়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল। তার পরও একটু-আধটু স্বকীয়তা ও স্বাধীন মনোভাবের পরিচয় দেওয়ার কারণে স্বাধীন সাংবাদিকতা বিপাকে পড়েছিল। স্বাধীন দেশে নিরবচ্ছিন্ন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল সরকারের তৈরি, বহুলাংশে ছিল স্ব-আরোপিত, যাকে বলা হলো সেলফ সেন্সরশিপ। সেই প্রতিবন্ধকতার বাধা দু-একটি সংবাদপত্র অতিক্রম করার চেষ্টা করায় স্বাধীন দেশে ঔপনিবেশিক আমলের মতোই তাদের ওপর খাঁড়া নেমে এসেছিল। সম্ভাব্য প্রতিবাদী কণ্ঠ চিরতরে বন্ধ করে দিতে সরকার চারটি সংবাদপত্র নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে এনে বাকিগুলো বন্ধই করে দিল। এর সবই পুরোনো কাহিনী, বহুবার বলা হয়েছে। তাই বিস্তৃত পুনরাবৃত্তি করলাম না, আলোচনার ধারাবাহিকতায় শুধু স্বল্পাকারে উল্লেখ করলাম। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এতসবের কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না সংগ্রামী ঐতিহ্যধারী সাংবাদিকসমাজের মধ্যে। বিনা প্রতিবাদে টুঁ শব্দটি না করে তাঁরা সব মেনে নিলেন। এই মেনে নেওয়াই কাল হলো, তাঁদের নিজেদের ও ব্যাপকাকারে সাংবাদিকতার জন্য। তাই প্রতিরোধশক্তি হারিয়ে পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসনামলে দীর্ঘদিন উভয়ই নিস্তেজ হয়ে রইল।
পরবর্তী অধ্যায় সামরিক শক্তি স্বাধীন সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রণে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করল। এক. সাংবাদিকদের প্রলোভিত করা; দুই. হুঁশিয়ার করা; তিন; শারীরিক লাঞ্ছনা, জীবননাশের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন। রাষ্ট্রপতি জিয়ার আমলের পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘প্রেস অ্যাডভাইস’। এই অ্যাডভাইস তথা ‘উপদেশ’ ছিল, ঠিক পথে চলো, না হলে খবর আছে। মিছেমিছি নিজেদের ওপর বিপদ টেনে আনবে না। আবার অতীতের সেলফ সেন্সরশিপ, সংযত ও সাবধানী সাংবাদিকতা যা ছিল প্রকারান্তরে কাপুরুষতা। জেনারেল এরশাদের আমলে একই অবস্থা ও পরিস্থিতির মধ্যে কাটল সাংবাদিকতার একটি দশক। কালক্রমে সাংবাদিকসমাজ তখন একটু-আধটু প্রতিরোধশক্তিতে জেগে উঠল। অবশ্য স্বৈরাচারবিরোধী গণজাগরণের কারণে তাঁরা সাহসী হয়ে উঠলেন। সেই আইয়ুব মহলে যেমন, ঠিক তেমনভাবে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ ও একাট্টা হলেন হারানো স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য।
স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটল, বহুদিন পর জনগণ যেমন গণতন্ত্রের স্বাদ পেল, সাংবাদিকতাও পেল মুক্ত পরিবেশ। এদিকে বিধাতা অলক্ষে হাসলেন। সংবাদপত্র স্বাধীন, সাংবাদিকতার ওপর প্রকাশ্য বিধিনিষেধ নেই, কিন্তু সাংবাদিকেরা রয়ে গেলেন ঝুঁকিপর্ণ ও বিপত্সংকুল। সাংবাদিক প্রাণ হারাতে লাগলেন, নির্যাতিত হতে থাকলেন, পঙ্গু হয়ে গেলেন। এসবের বিবরণ সবার জানা, সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনে যে ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর প্রচ্ছন্ন মদদ ছিল, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তবে সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার পাশাপাশি এসবের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের প্রতিবাদের শক্তি হরণেরও ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাধীন স্বাধীনতার কণ্ঠরোধকারী শক্তি। সাংবাদিকদের বিভক্ত করা হয়েছে এবং অদ্ভুতভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে পুরোনো কালাকানুনগুলোও প্রয়োগ অব্যাহত রইল।
এতসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গণমাধ্যম জনগণের সব অধিকার আদায়ে স্বীয় কর্তব্য পালন থেকে বিচ্যুত হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে, গণমাধ্যমের মালিকানায় অপশক্তির অভ্যুদয়। সাংবাদিকেরা যদিও বা সরকারের ভ্রূকুটি, বিভিন্ন মহলের নির্যাতন ও হত্যার ঝুঁকি সাহসিকতার সঙ্গে অগ্রাহ্য অথবা মোকাবিলা করেছেন, গণমাধ্যমে অর্থশক্তির অনুপ্রবেশ স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অভূতপূর্ব অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। জানি না, বিদ্যমান বিরূপ পরিস্থিতিতেও যেসব সাংবাদিক স্বাধীন মত প্রকাশের, জনগণের স্বার্থ রক্ষায়, রাষ্ট্রীয় ও সরকারব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রভাব অক্ষুণ্ন রাখতে চান, তাঁরা কত দিন টিকে থাকতে পারবেন। সাহসী সাংবাদিকসমাজ স্বার্থপরতার ও ক্ষমতাসীন রাজনীতির কূটচক্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে কবে সাংবাদিকতায় অতীতের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে?
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
আমি পেরেছি, মানে তথ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান সরকারের নীতিনির্ধারণের ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দোহাই দিয়ে কী করতে চান, আমি তার আভাস পাচ্ছি। আমি ঘর পোড়া গরুদের অন্যতম, দীর্ঘ অর্ধশতাব্দীরও অধিককাল সাংবাদিকতার অঙ্গনে বিচরণকালে আমি বহুবার স্বৈরাচারী ও নির্বাচিত প্রায় সব কটি শাসনামলে শাসকদের মুখে সংবাদপত্রের নীতিমালা, আচরণবিধি প্রয়োজনীয়তার কথা শুনেছি। সাংবাদিকদের শুধু ‘বস্তুনিষ্ঠ’ হওয়ার উপদেশবর্ষণ নয়, কীভাবে ভাতে মেরে, হাতে মেরে শেখানোর প্রচেষ্টা হয়, তাও বোঝার ও জানার অভিজ্ঞতা রয়েছে। সে প্রচেষ্টা কী রূপের ও কী চরিত্রের ছিল, তা নিয়ে প্রথমে সে আলোচনা করব, স্মৃতির ইতিহাস ঘাঁটব। পঞ্চাশের দশকে ভারত বিভক্তির অব্যবহিতপরের সময় থেকে আজ পর্যন্ত সরকারের ‘নসিহতের’ বর্ণনা দিয়ে সেসবের মাজেজা ব্যাখ্যা করব। আগের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক আমলের সুদীর্ঘকালটি নিয়েও আলোচনা শুরু করতে পারতাম। কিন্তু সে সময়ে গণমাধ্যম বা সংবাদপত্র দেশে আর্থসামাজিক ও বিশেষ ধরনের রাজনৈতিক জগতে তেমন প্রভাব ফেলত না। তাই সেই যুগ আলোচনা করে এই প্রতিবেদন দীর্ঘায়িত করতে চাই না। আপাতত দেশ বিভাগের পর ও ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান শেষে ‘স্বাধীন’ দেশে সাংবাদিকতার ও সাংবাদিকদের শাসকেরা কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছেন, স্বল্পাকারে তা-ই স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে তুলে আনব। বলা বাহুল্য, সেসব নিয়ন্ত্রণ এসেছে বাহ্যত আচরণবিধি নির্ধারণ ও বস্তুনিষ্ঠতা শেখানোর অছিলায়।
প্রসঙ্গত, স্বৈরতান্ত্রিক আমল থেকে গণতান্ত্রিক শাসনের নিশ্চয়তা প্রদানকারী সরকারের শাসনকালে সাংবাদিক নির্যাতনের ধারাবাহিকতা কীভাবে চলমান রয়েছে, তা স্মরণ করতে হবে। একই সঙ্গে নীতি ও আচরণ নির্ধারণের অজুহাতে শৃঙ্খলিত করার প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে অতীতের সাংবাদিকসমাজ, পাঠকেরা ও সংবাদপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতিহত ও প্রতিরোধ করার ইতিবৃত্ত আলোচনায় আসবে। প্রথমে জানাই আদি পর্বে শুধু এ অঞ্চলে তথা পূর্ব পাকিস্তানে মোসলেম লীগ সরকারের আমলে সংবাদপত্র দলনের ইতিবৃত্ত। সাতচল্লিশে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠাকালে দেশে কোনো দৈনিক পত্রিকা ছিল না। ঢাকা ও কয়েকটি জেলা সদরে ছিল সাপ্তাহিক পত্রিকা। সেসবের মিলিত প্রচারসংখ্যা ছিল কয়েক হাজার। পূর্ব পাকিস্তানে যখন প্রথম অসন্তোষের আগুন ধিকিধিকি করে জ্বলছিল, তখন সাপ্তাহিকগুলোই সীমিত পরিধিতে সেই আগুন একটু-আধটু উসকে দিচ্ছিল। প্রচারসংখ্যা সীমিত হলেও এসব সাপ্তাহিক পত্রিকার শিক্ষিত ও রাজনীতিসচেতন জনগণের মধ্যে প্রভাব ছিল অপরিসীম। শাসকগোষ্ঠী সেই প্রভাবের প্রভা অনুধাবন করল প্রথম ভাষা আন্দোলনের প্রাক্কালে। সীমিত প্রভাব বিস্তারকারী সাপ্তাহিকগুলোর ওপর খড়গ নেমে এল। নিষিদ্ধ করা হলো ঢাকায় ইনসাফ, সিলেটের নওবেলাল, ফেনীর সংগ্রাম, চট্টগ্রামের সীমান্ত। পরবর্তীকালে যখন দু-চারটি দৈনিকের আত্মপ্রকাশ ঘটল, তখনো সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধের প্রচেষ্টা অব্যাহত রইল। বন্ধ করা হলো সদ্যপ্রকাশিত ইংরাজি দৈনিক পাকিস্তান অবজারভার ও চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্ব পাকিস্তান। সম্পাদকদের কয়েকজন জেলে গেলেন।
প্রথম দিকে সাংবাদিকতার ওপর আদিতে যেসব আঘাত এসেছিল, তার প্রতিবাদ ও প্রতিহত করার জন্য কোনো সংঘবদ্ধ সাংবাদিকসমাজ তখনো গড়ে ওঠেনি। তবে ক্রমান্বয়ে এ অঞ্চলের জনগণের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ-সচেতনতার আকাঙ্ক্ষা বৃদ্ধি পেয়েছিল। সে কারণে সংবাদপত্রের এবং সাংবাদিকতার ওপর আঘাত ও স্বাধীনচেতা সাংবাদিকদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে জনমনে অসন্তোষের সঞ্চার হয়েছিল। স্বাধীন মত প্রকাশের পথে ক্ষমতাধরদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কারণও তাদের কাছে সুস্পষ্ট হতে থাকে। তারপর এল সামরিক শাসনের যুগ। জেনারেল-পরবর্তী সময়ে ফিল্ড মার্শাল উপাধিধারী আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে জনগণের রাজনৈতিক অধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা কেড়ে নিলেন। সামরিক অধ্যাদেশ জারি করে প্রথমে সেন্সরশিপ এবং সংবাদ প্রকাশের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করলেন। সেই নিয়ন্ত্রণের ফাঁকফোকরের মধ্যেও সংবাদপত্র, সাময়িকী এবং সম্পাদক ও সাংবাদিকেরা অতি কৌশলে একটু-আধটু স্বাধীন জনমত গঠনের ভূমিকা রাখছিলেন। গণতন্ত্র ও জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার হতে থাকলেন। সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার চার বছর পর সামরিক শাসক সেসব ফাঁকফোকর বন্ধ করার জন্য নতুন একটি কালাকানুন করল, ‘সংবাদপত্র প্রকাশ ও প্রকাশনা অর্ডিন্যান্স’। সেই প্রথম সংবাদপত্রজগতের সবাই একসঙ্গে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠলেন। মালিক, সম্পাদক ও সাংবাদিক ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের অভূতপূর্ব নজির সৃষ্টি করলেন। সেটিকে সাংবাদিকদের ও সাংবাদিকজগতের একটি নবজাগরণ বলে আখ্যায়িত করতে পারি। সেই জাগরণের ঢেউয়ে, ব্যাপক আন্দোলনের চাপে সামরিক শাসক অধ্যাদেশটি পুরোপুরি বাতিল না করলেও অনেকাংশে সংশোধন ও পরিমার্জন করল। কিন্তু সাংবাদিকদের ও সাংবাদিকতার প্রতি হুমকি অব্যাহত রইল।
কী ছিল সংবাদপত্র প্রকাশনা ও মুদ্রণ অধ্যাদেশে? স্বৈরতান্ত্রিক সামরিক সরকারের আইন তথা অধ্যাদেশের মুখবন্ধে ছিল সেই কথাগুলো, বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের তথ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে যার পুনরুক্তি শুনছি। অধ্যাদেশের মুখবন্ধের কথা ছিল, সংবাদপত্রের সংবাদ প্রকাশ নিয়ন্ত্রণহীন হতে পারে না। আইয়ুব সরকার কী ছাপা যাবে আর যাবে না, তা কতিপয় বিধিমালা আর নীতিমালা বাস্তবে নির্দেশনার মাধ্যমে নির্ধারণ করে দিল। পরবর্তী সময়ে বিধিমালা তৈরির জন্য একটি প্রচ্ছন্ন সরকারি সংস্থা গঠন করা হয়। নাম দেওয়া হয় ‘প্রেস কাউন্সিল’, যাকে দেওয়া হয় সংবাদপত্রের ওপর নজরদারি করার অধিকার। উল্লেখযোগ্য, সাংবাদিকদের প্রতিষ্ঠান সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় সেই কাউন্সিল বিলুপ্ত হয়। অধ্যাদেশটির ধার কমলেও বর্তমানের বিশেষ ক্ষমতা আইনের আদলে বিদ্যমান ‘জননিরাপত্তা আইনে’ আর সামরিক অধ্যাদেশে সাংবাদিক গ্রেপ্তার ও সংবাদপত্র বন্ধ করে দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়নি। তবে এত সব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সামরিক শাসন ও স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকসমাজ যতটুক সম্ভব সব ঝুঁকি নিয়ে সাহসী ভূমিকা পালন করেছিল। সংবাদপত্র ভাষা আন্দোলনে যেমন সীমিত আকারে জনমত গঠন করেছিল, তার চেয়েও বলিষ্ঠ ভূমিকা নিয়ে ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলনে ইন্ধন জোগাল। সাংবাদিকেরা নিজস্ব পেশার সীমানা ছাড়িয়ে বিভিন্ন আন্দোলনেও সক্রিয় অংশ নিয়েছিলেন।
অতঃপর স্বাধীনতার অব্যবহিতপরের অধ্যায়। বস্তুত, তখনই সাংবাদিকেরা নিজেদের স্বকীয়তা ও সাংবাদিকতার স্বাধীনতা রক্ষার সাহসিকতা ও প্রতিবাদী মনোভাব হারালেন। বাস্তবে সাংবাদিকতার এক ধরনের অবক্ষয়ের সূচনা হলো। সাংবাদিকসমাজের কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা দেখা দিল। ক্ষমতাসীনদের প্রতি অদ্ভুত বশ্যতা, ক্ষমতাসীন সরকারের কৌশল ও ফাঁদে পড়ে নিজেদের মধ্যে বিভেদ করে নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল। তার পরও একটু-আধটু স্বকীয়তা ও স্বাধীন মনোভাবের পরিচয় দেওয়ার কারণে স্বাধীন সাংবাদিকতা বিপাকে পড়েছিল। স্বাধীন দেশে নিরবচ্ছিন্ন মত প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করল সরকারের তৈরি, বহুলাংশে ছিল স্ব-আরোপিত, যাকে বলা হলো সেলফ সেন্সরশিপ। সেই প্রতিবন্ধকতার বাধা দু-একটি সংবাদপত্র অতিক্রম করার চেষ্টা করায় স্বাধীন দেশে ঔপনিবেশিক আমলের মতোই তাদের ওপর খাঁড়া নেমে এসেছিল। সম্ভাব্য প্রতিবাদী কণ্ঠ চিরতরে বন্ধ করে দিতে সরকার চারটি সংবাদপত্র নিজস্ব নিয়ন্ত্রণে এনে বাকিগুলো বন্ধই করে দিল। এর সবই পুরোনো কাহিনী, বহুবার বলা হয়েছে। তাই বিস্তৃত পুনরাবৃত্তি করলাম না, আলোচনার ধারাবাহিকতায় শুধু স্বল্পাকারে উল্লেখ করলাম। তবে অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এতসবের কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা গেল না সংগ্রামী ঐতিহ্যধারী সাংবাদিকসমাজের মধ্যে। বিনা প্রতিবাদে টুঁ শব্দটি না করে তাঁরা সব মেনে নিলেন। এই মেনে নেওয়াই কাল হলো, তাঁদের নিজেদের ও ব্যাপকাকারে সাংবাদিকতার জন্য। তাই প্রতিরোধশক্তি হারিয়ে পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসনামলে দীর্ঘদিন উভয়ই নিস্তেজ হয়ে রইল।
পরবর্তী অধ্যায় সামরিক শক্তি স্বাধীন সাংবাদিকতা নিয়ন্ত্রণে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করল। এক. সাংবাদিকদের প্রলোভিত করা; দুই. হুঁশিয়ার করা; তিন; শারীরিক লাঞ্ছনা, জীবননাশের হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন। রাষ্ট্রপতি জিয়ার আমলের পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছিল ‘প্রেস অ্যাডভাইস’। এই অ্যাডভাইস তথা ‘উপদেশ’ ছিল, ঠিক পথে চলো, না হলে খবর আছে। মিছেমিছি নিজেদের ওপর বিপদ টেনে আনবে না। আবার অতীতের সেলফ সেন্সরশিপ, সংযত ও সাবধানী সাংবাদিকতা যা ছিল প্রকারান্তরে কাপুরুষতা। জেনারেল এরশাদের আমলে একই অবস্থা ও পরিস্থিতির মধ্যে কাটল সাংবাদিকতার একটি দশক। কালক্রমে সাংবাদিকসমাজ তখন একটু-আধটু প্রতিরোধশক্তিতে জেগে উঠল। অবশ্য স্বৈরাচারবিরোধী গণজাগরণের কারণে তাঁরা সাহসী হয়ে উঠলেন। সেই আইয়ুব মহলে যেমন, ঠিক তেমনভাবে তাঁরা ঐক্যবদ্ধ ও একাট্টা হলেন হারানো স্বাধীনতা ফিরে পাওয়ার জন্য।
স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটল, বহুদিন পর জনগণ যেমন গণতন্ত্রের স্বাদ পেল, সাংবাদিকতাও পেল মুক্ত পরিবেশ। এদিকে বিধাতা অলক্ষে হাসলেন। সংবাদপত্র স্বাধীন, সাংবাদিকতার ওপর প্রকাশ্য বিধিনিষেধ নেই, কিন্তু সাংবাদিকেরা রয়ে গেলেন ঝুঁকিপর্ণ ও বিপত্সংকুল। সাংবাদিক প্রাণ হারাতে লাগলেন, নির্যাতিত হতে থাকলেন, পঙ্গু হয়ে গেলেন। এসবের বিবরণ সবার জানা, সাংবাদিক হত্যা ও নির্যাতনে যে ক্ষমতাসীন সরকারগুলোর প্রচ্ছন্ন মদদ ছিল, তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি। তবে সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যার পাশাপাশি এসবের বিরুদ্ধে সাংবাদিকদের প্রতিবাদের শক্তি হরণেরও ব্যবস্থা নিয়েছে স্বাধীন স্বাধীনতার কণ্ঠরোধকারী শক্তি। সাংবাদিকদের বিভক্ত করা হয়েছে এবং অদ্ভুতভাবে দলীয়করণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে পুরোনো কালাকানুনগুলোও প্রয়োগ অব্যাহত রইল।
এতসব প্রতিকূলতা সত্ত্বেও গণমাধ্যম জনগণের সব অধিকার আদায়ে স্বীয় কর্তব্য পালন থেকে বিচ্যুত হয়নি। কিন্তু এরই মধ্যে নতুন উপসর্গ দেখা দিয়েছে, গণমাধ্যমের মালিকানায় অপশক্তির অভ্যুদয়। সাংবাদিকেরা যদিও বা সরকারের ভ্রূকুটি, বিভিন্ন মহলের নির্যাতন ও হত্যার ঝুঁকি সাহসিকতার সঙ্গে অগ্রাহ্য অথবা মোকাবিলা করেছেন, গণমাধ্যমে অর্থশক্তির অনুপ্রবেশ স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে অভূতপূর্ব অন্তরায় সৃষ্টি করেছে। জানি না, বিদ্যমান বিরূপ পরিস্থিতিতেও যেসব সাংবাদিক স্বাধীন মত প্রকাশের, জনগণের স্বার্থ রক্ষায়, রাষ্ট্রীয় ও সরকারব্যবস্থায় গণতান্ত্রিক পদ্ধতির প্রভাব অক্ষুণ্ন রাখতে চান, তাঁরা কত দিন টিকে থাকতে পারবেন। সাহসী সাংবাদিকসমাজ স্বার্থপরতার ও ক্ষমতাসীন রাজনীতির কূটচক্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে কবে সাংবাদিকতায় অতীতের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনবে?
এবিএম মূসা: সাংবাদিক ও কলাম লেখক।
No comments