মুক্তিযুদ্ধের নিভৃত এক সহযাত্রী by প্রশান্ত কর্মকার
শরীফ ইমাম ছিলেন পেশাগত দিক থেকে একজন প্রকৌশলী। দেশপ্রেমিক এই ব্যক্তিত্ব মুক্তিযুদ্ধের সময় মারা যান। এই স্বল্পবাক মানুষটি সব সময় ছিলেন মঞ্চের আড়ালে। তাঁর নির্দেশনায় স্ত্রী ও সন্তানেরা মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। পরবর্তী সময় তাঁরা জাতির কাছে পরিচিত হয়েছেন শহীদ শাফি ইমাম রুমী বীর বিক্রম ও শহীদ জননী জাহানারা ইমাম।
শরীফ ইমামের জন্ম ১৯২৫ সালের ৩০ অক্টোবর। তাঁর আদিনিবাস নীলফামারী জেলায় ডোমার উপজেলার খাটুরিয়া গ্রামে। রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় ছিল তাঁর বাবার বাড়ি। বাবার নাম মোহাম্মদ আলী। তিনি পেশায় উকিল ছিলেন।
শরীফ ইমামের দুই বোন, এক ভাই। সবার ছোট শরীফ ইমাম। তাঁর পুরো নাম শরীফুল আলম ইমাম আহমেদ। শরীফ ইমামের জন্মের দুই বছর পর তাঁর মা মারা যান। মাতৃহারা চারটি সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছিলেন তাঁর বাবা।
শরীফ ইমাম রংপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর রংপুর কারমাইকেল কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং কলেজে পড়ার সময় জাহানারা বেগমের সঙ্গে পরিচয় হয়।
১৯৮৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নিপুণ ম্যাগাজিনের ১৫ বর্ষ পঞ্চম সংখ্যার প্রকাশিত শরীফ ইমামের ওপর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে জাহানারা ইমাম বলেছিলেন, “দেখা হয়েছিল সেই কিশোর বেলা। লালগোলাপের পাঁপড়িতে লিখে পাঠিয়েছিল, ‘আমি তোমায় ভালোবাসাসি’। তুমিও কি...। হ্যাঁ আমিও। সেই কবেকার, চার দশকেরও ওই প্রান্তের ১৯৪৩ সালের কথা। দুজনেই তখন রংপুর কারমাইকেল কলেজে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়ি। পড়ার সুবাদে মুখচেনা ছিল। প্রথম সামনাসামনি দেখি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে। ...সেই প্রথম ভালো করে দেখা। তারপর সেও দেখেছে আমায়। স্মৃতির ছবিরা সার বেঁধে চোখের সামনে ভেসে ভেসে চলে আসছে। ধুতি, শার্ট পরা শরীফ সাইকেল চেপে কলেজে যাচ্ছে, আমাদের ঘোড়ায় গাড়ি তাকে পার হয়ে চলে গেল।...কলেজের বার্ষিক নাট্যনুষ্ঠানে একলব্য অভিনীত হচ্ছে—তাতে গুরু দ্রোনাচার্য সেজেছে শরীফ। সে যা লাজুক, মুখচোরা ছেলে, তাতে প্রবল প্রতাপান্বিত, রাগী দ্রোনাচার্যের অভিনয়টাও ওই রকমই হয়েছে।...
পরবর্তী সময় রক্ত গোলাপের পাঁপড়ি। সোনালী ফ্রেমের চশমার ভেতর দিয়ে দুচোখের মুগ্ধতা। তারপর প্রায় তিন দশক ধরে সে মুগ্ধতার আর শেষ ছিল না। শেষ হলো একেবারে ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর, তখন চিরতরে মুদিত হলো সেই চোখ দুটি।”
রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে প্রথম বিভাগে আইএসসি ও কলকাতার শিরপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পাস করেন। ডিজাইনে বিভাগে তিনি সোনার মেডেল পান। ১৯৪৮ সালে ৯ আগস্ট তিনি জাহানারা ইমামের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুই পুত্রসন্তান শাফী ইমাম রুমী ও সাইফ ইমাম জামী। ১৯৫০ সালে শরীফ ইমাম ঢাকায় সিএন্ডবিতে ডিজাইন বিভাগে যোগদান করেছিলেন। পরে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে দি ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডে যোগদান করেন। ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত নম্র, বিনয়ী ও মিতভাষী। সময়ের মূল্যের ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুব সচেতন। শরীফ ইমাম বাড়িতে কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা প্রচলন করেছিলেন। দুই ছেলেকে তিনি নিজে পড়াতেন। তাঁর উদার মনোভাব ও সহযোগিতার কারণে জাহানারা ইমাম শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, সামাজিক পটভূমি—সব দিক দিয়ে নিজেকে বিকশিত করতে পেরেছিলেন।
শরীফ ইমাম ছিলেন রাজনীতি-সচেতন ও দেশপ্রেমিক মানুষ। ভাষা আন্দোলনের সময় যেদিন হরতাল পালিত হতো, সেদিন তিনি কোনো না কোনো অজুহাতে অফিসে যাওয়া বন্ধ করে হরতাল সমর্থন করতেন। ১৯৭১ সালে রুমী যুদ্ধে চলে গেলে ইমাম পরিবারের ভূমিকাও হয়ে পড়ে আরও সক্রিয়। শরীফ ইমাম ও তাঁর বন্ধু সাজেদুর রহমান খান টাকা সংগ্রহ করে অল্প অল্প করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঠাতেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধারা শরীফ ইমামের ‘কণিকা’ বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। জুন মাসের শেষের দিকে দুই নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের একটি চিঠি নিয়ে শাহাদাত চৌধুরী ও হাবিবুল আলম আসেন শরীফ ইমামের বাড়িতে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চলাচল ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে খালেদ মোশাররফ তাঁর কাছে বাংলাদেশের ব্রিজ ও কালভার্টের ব্যাপারে তথ্য চেয়ে পাঠান।
শরীফ ইমাম ঘোর অমানিশার মধ্যেও দেশ স্বাধীন হওয়ার ব্যাপারে ছিলেন প্রচণ্ড আশাবাদী। তিনি এতটাই দেশপ্রেমিক ছিলেন যে স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চিন্তা করে ব্রিজের ঠিক কোন কোন পয়েন্টে এক্সপ্লসিভ বেঁধে ওড়ালে ব্রিজ ভাঙবে অথচ কম ক্ষতি হবে অর্থাত্ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সহজে মেরামত করা যাবে, সেভাবে বিস্তারিত তথ্য দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট রুমী ও পরিবারের অন্য সদস্যে সঙ্গে শরীফ ইমামকেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শরীফ ইমামকে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আহত অবস্থায় ছেড়ে দেয়।
রুমীকে উদ্ধার করার জন্য শরীফ ইমামের বন্ধু বাকা ও ফকির সাহেব মার্সি পিটিশন করার কথা বললেও প্রখর আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন শরীফ ইমাম তাতে রাজি হননি। পরিণতিতে হয়েছেন পুত্রহারা।
স্তব্ধ ও পাষাণের মতো চেহরায় শরীফ ইমাম প্রাণপ্রিয় পুত্রের কথা চিন্তা করতে করতে এবং চরম অপমানের যন্ত্রণা সহ্য করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করে গিয়েছিলেন। তাঁর একরোখা মনোভাব পুঞ্জীভূত হয়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গোপনে সাহায্য প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে। দিনে দিনে তাঁর জীবনীশক্তি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তানি আর্মির বন্দিশিবিরে তিন দিন তিন রাতের অমানুষিক নির্যাতনের জের ধরে। তাই যে স্বাধীনতা দেখার জন্য তিনি এত উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছিলেন, সেই স্বাধীনতা দেখে যেতে পারলেন না। স্বাধীনতার মাত্র তিন দিন আগে তাঁর হূত্স্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল। এভাবেই এই নীরব কর্মী, যথার্থ মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, সবার আড়ালে নিঃশব্দে চলে গেলেন। আমরা তাঁদের কথা কখনোই ভুলতে পারি না।
শরীফ ইমামের জন্ম ১৯২৫ সালের ৩০ অক্টোবর। তাঁর আদিনিবাস নীলফামারী জেলায় ডোমার উপজেলার খাটুরিয়া গ্রামে। রংপুর শহরের মুন্সিপাড়ায় ছিল তাঁর বাবার বাড়ি। বাবার নাম মোহাম্মদ আলী। তিনি পেশায় উকিল ছিলেন।
শরীফ ইমামের দুই বোন, এক ভাই। সবার ছোট শরীফ ইমাম। তাঁর পুরো নাম শরীফুল আলম ইমাম আহমেদ। শরীফ ইমামের জন্মের দুই বছর পর তাঁর মা মারা যান। মাতৃহারা চারটি সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছিলেন তাঁর বাবা।
শরীফ ইমাম রংপুর জিলা স্কুল থেকে ১৯৪২ সালে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন। তারপর রংপুর কারমাইকেল কলেজে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন এবং কলেজে পড়ার সময় জাহানারা বেগমের সঙ্গে পরিচয় হয়।
১৯৮৮ সালের ডিসেম্বর মাসে নিপুণ ম্যাগাজিনের ১৫ বর্ষ পঞ্চম সংখ্যার প্রকাশিত শরীফ ইমামের ওপর স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে জাহানারা ইমাম বলেছিলেন, “দেখা হয়েছিল সেই কিশোর বেলা। লালগোলাপের পাঁপড়িতে লিখে পাঠিয়েছিল, ‘আমি তোমায় ভালোবাসাসি’। তুমিও কি...। হ্যাঁ আমিও। সেই কবেকার, চার দশকেরও ওই প্রান্তের ১৯৪৩ সালের কথা। দুজনেই তখন রংপুর কারমাইকেল কলেজে ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়ি। পড়ার সুবাদে মুখচেনা ছিল। প্রথম সামনাসামনি দেখি কলেজের বার্ষিক ক্রীড়ানুষ্ঠানে। ...সেই প্রথম ভালো করে দেখা। তারপর সেও দেখেছে আমায়। স্মৃতির ছবিরা সার বেঁধে চোখের সামনে ভেসে ভেসে চলে আসছে। ধুতি, শার্ট পরা শরীফ সাইকেল চেপে কলেজে যাচ্ছে, আমাদের ঘোড়ায় গাড়ি তাকে পার হয়ে চলে গেল।...কলেজের বার্ষিক নাট্যনুষ্ঠানে একলব্য অভিনীত হচ্ছে—তাতে গুরু দ্রোনাচার্য সেজেছে শরীফ। সে যা লাজুক, মুখচোরা ছেলে, তাতে প্রবল প্রতাপান্বিত, রাগী দ্রোনাচার্যের অভিনয়টাও ওই রকমই হয়েছে।...
পরবর্তী সময় রক্ত গোলাপের পাঁপড়ি। সোনালী ফ্রেমের চশমার ভেতর দিয়ে দুচোখের মুগ্ধতা। তারপর প্রায় তিন দশক ধরে সে মুগ্ধতার আর শেষ ছিল না। শেষ হলো একেবারে ১৯৭১ সালের ১৩ ডিসেম্বর, তখন চিরতরে মুদিত হলো সেই চোখ দুটি।”
রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে ১৯৪৪ সালে প্রথম বিভাগে আইএসসি ও কলকাতার শিরপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে পাস করেন। ডিজাইনে বিভাগে তিনি সোনার মেডেল পান। ১৯৪৮ সালে ৯ আগস্ট তিনি জাহানারা ইমামের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের দুই পুত্রসন্তান শাফী ইমাম রুমী ও সাইফ ইমাম জামী। ১৯৫০ সালে শরীফ ইমাম ঢাকায় সিএন্ডবিতে ডিজাইন বিভাগে যোগদান করেছিলেন। পরে সরকারি চাকরি ছেড়ে দিয়ে দি ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডে যোগদান করেন। ব্যক্তি হিসেবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত নম্র, বিনয়ী ও মিতভাষী। সময়ের মূল্যের ব্যাপারে তিনি ছিলেন খুব সচেতন। শরীফ ইমাম বাড়িতে কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা ও সময়ানুবর্তিতা প্রচলন করেছিলেন। দুই ছেলেকে তিনি নিজে পড়াতেন। তাঁর উদার মনোভাব ও সহযোগিতার কারণে জাহানারা ইমাম শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, সামাজিক পটভূমি—সব দিক দিয়ে নিজেকে বিকশিত করতে পেরেছিলেন।
শরীফ ইমাম ছিলেন রাজনীতি-সচেতন ও দেশপ্রেমিক মানুষ। ভাষা আন্দোলনের সময় যেদিন হরতাল পালিত হতো, সেদিন তিনি কোনো না কোনো অজুহাতে অফিসে যাওয়া বন্ধ করে হরতাল সমর্থন করতেন। ১৯৭১ সালে রুমী যুদ্ধে চলে গেলে ইমাম পরিবারের ভূমিকাও হয়ে পড়ে আরও সক্রিয়। শরীফ ইমাম ও তাঁর বন্ধু সাজেদুর রহমান খান টাকা সংগ্রহ করে অল্প অল্প করে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য পাঠাতেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে মুক্তিযোদ্ধারা শরীফ ইমামের ‘কণিকা’ বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। জুন মাসের শেষের দিকে দুই নম্বর সেক্টর কমান্ডার মেজর খালেদ মোশাররফের একটি চিঠি নিয়ে শাহাদাত চৌধুরী ও হাবিবুল আলম আসেন শরীফ ইমামের বাড়িতে। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর চলাচল ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে খালেদ মোশাররফ তাঁর কাছে বাংলাদেশের ব্রিজ ও কালভার্টের ব্যাপারে তথ্য চেয়ে পাঠান।
শরীফ ইমাম ঘোর অমানিশার মধ্যেও দেশ স্বাধীন হওয়ার ব্যাপারে ছিলেন প্রচণ্ড আশাবাদী। তিনি এতটাই দেশপ্রেমিক ছিলেন যে স্বাধীনতার পর একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চিন্তা করে ব্রিজের ঠিক কোন কোন পয়েন্টে এক্সপ্লসিভ বেঁধে ওড়ালে ব্রিজ ভাঙবে অথচ কম ক্ষতি হবে অর্থাত্ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর সহজে মেরামত করা যাবে, সেভাবে বিস্তারিত তথ্য দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের। ১৯৭১ সালের ২৯ আগস্ট রুমী ও পরিবারের অন্য সদস্যে সঙ্গে শরীফ ইমামকেও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরবর্তীকালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী শরীফ ইমামকে অমানুষিক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আহত অবস্থায় ছেড়ে দেয়।
রুমীকে উদ্ধার করার জন্য শরীফ ইমামের বন্ধু বাকা ও ফকির সাহেব মার্সি পিটিশন করার কথা বললেও প্রখর আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন শরীফ ইমাম তাতে রাজি হননি। পরিণতিতে হয়েছেন পুত্রহারা।
স্তব্ধ ও পাষাণের মতো চেহরায় শরীফ ইমাম প্রাণপ্রিয় পুত্রের কথা চিন্তা করতে করতে এবং চরম অপমানের যন্ত্রণা সহ্য করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করে গিয়েছিলেন। তাঁর একরোখা মনোভাব পুঞ্জীভূত হয়ে উঠেছিল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য গোপনে সাহায্য প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে। দিনে দিনে তাঁর জীবনীশক্তি ক্ষয় হয়ে যাচ্ছিল পাকিস্তানি আর্মির বন্দিশিবিরে তিন দিন তিন রাতের অমানুষিক নির্যাতনের জের ধরে। তাই যে স্বাধীনতা দেখার জন্য তিনি এত উদগ্রীব হয়ে অপেক্ষা করছিলেন, সেই স্বাধীনতা দেখে যেতে পারলেন না। স্বাধীনতার মাত্র তিন দিন আগে তাঁর হূত্স্পন্দন বন্ধ হয়ে গেল। এভাবেই এই নীরব কর্মী, যথার্থ মুক্তিযুদ্ধের সহযোগী, সবার আড়ালে নিঃশব্দে চলে গেলেন। আমরা তাঁদের কথা কখনোই ভুলতে পারি না।
No comments