পর্নো ব্যবসা এত বিপুল হয়ে উঠলো কীভাবে : পর্ব ১ by ফ্রাঙ্কি কুকনি
ঠিক
৫০ বছর আগে ডেনমার্কের কোপেনহেগেনে নতুন এক ঘটনা ঘটলো। ১৯৬৯ সালের ১ জুলাই
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই দেশটি পর্নোগ্রাফির ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে।
মাস কয়েক পর, ২১শে অক্টোবর বিশ্বের প্রথম পর্নোগ্রাফি ট্রেড শো অনুষ্ঠিত
হয়। এই ট্রেড শো নিয়ে তখন যুক্তরাজ্যের অবজারভার পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন
প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, ডেনমার্ক থেকে যৌনতা সম্বলিত বই ও নীলছবি
রপ্তানির বার্ষিক আর্থিক মূল্য প্রায় ৩৮ লাখ ডলার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে
তখনও প্রকাশ্যে পর্নোগ্রাফি সম্বলিত বস্তু বিক্রি, প্রদর্শন বা বিতরণ
নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ১৯৬৯ সালেই দেশটির বিখ্যাত স্ট্যানলি বনাম জর্জিয়া
মামলায় জনগণের ‘গোপনীয়তার অধিকার’ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে অশ্লীল বলে
পরিগণিত বই বা নীলছবি সংরক্ষণের দায়ে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যেত না।
এছাড়া আদালতের পর্যবেক্ষণে ‘অশ্লীলতা’রও কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ছিল না।
ওদিকে ডেনমার্কের ওই পর্নোগ্রাফি ট্রেড শো দেখতে যায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। ওই শো’র নাম দেওয়া হয় ‘সেক্স ৬৯’। এতে অংশগ্রহণ করেন আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যালেক্স দ্য রেঞ্জি, যিনি ওই শো নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় ‘সেন্সরশিপ ইন ডেনমার্ক- অ্যা নিউ অ্যাপ্রোচ’ নামে ওই তথ্যচিত্র। এতে ওই বাণিজ্য মেলার প্রতিবেদন যেমন ছিল, তেমনি কোপেনহেগেনের বিভিন্ন স্থান থেকে জনগণের মন্তব্যও ছিল। কিন্তু ওই তথ্যচিত্র যে কারণে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হলো, সেখানে ওই বাণিজ্য মেলায় প্রদর্শিত অত্যন্ত খোলামেলা যৌনতার ছবিও প্রায় স্পষ্টভাবেই দেখানো হয়। এ ধরণের দৃশ্য সম্বলিত যেকোনো মুভি তখন আমেরিকান সিনেমায় দেখানো নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ‘সেন্সরশিপ ইন ডেনমার্ক’ সেই বিধিনিষেধ এড়াতে সক্ষম হয়, কেননা এটি ছিল একটি তথ্যচিত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় তখন লেখা হয়, ‘সেন্সরশিপ ইন ডেনমার্ক- তথ্যচিত্রে খোদ ওই পণ্যেরই অনেককিছু দেখানো হয়েছে। সেখানে ছবি, নীলছবি এবং নীলছবি তৈরির সেট দেখানো হয়। এমনকি ওই সেটে অর্থাৎ পর্নো ক্লাবে যৌনমিলনরত অবস্থায় অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও দেখানো হয় সরাসরি। কিন্তু সম্ভবত, এটি আইনগতভাবে এখানে দেখানো সিদ্ধ। কারণ, এটি আসলে পর্নোগ্রাফি নিয়ে একটি তথ্যচিত্র।’
১৯৭০ থেকে এবার সরাসরি ২০১৯-এ চলে আসুন। বার্লিন পর্নো চলচ্চিত্র উৎসব হতে যাচ্ছে এ নিয়ে ১৩তম বারের মতো। এতে ছয় দিন ধরে টানা দেখানো হবে প্রায় ১০০টি প্রাপ্তবয়স্কদের ছবি। আজকের দিনে এসে অনলাইন পর্নো শিল্প ব্যবসার প্রকৃত আকার পরিমাপ করা কঠিন। তবে অনেকে অনুমান করে বলেন, এই ব্যবসার আর্থিক মূল্য ৬০০ কোটি থেকে ৯৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু পর্নো ব্যবসা এত বিপুল হয়ে উঠলো কীভাবে?
১৯৭০ সালে দ্য রেঞ্জির ওই তথ্যচিত্রই একমাত্র আলোড়ন সৃষ্টিকারী চলচ্চিত্র ছিল না। ১৯৬৯ সালেই অ্যান্ডি ওয়ারহল মুক্তি দিলেন তার বিতর্কিত চলচ্চিত্র ‘ব্লু মুভি’ (নীল ছবি)। এটি ছিল প্রথম কোনো চলচ্চিত্র যেখানে প্রকৃত যৌনদৃশ্য দেখানো হয়। কিন্তু ‘সেন্সরশিপ ইন ডেনমার্ক’-এর মতো ওই ছবিও ‘অশ্লীল দৃশ্য’ থাকা সত্ত্বেও পার পেয়ে যায়। কেননা, ওই ছবিকে বিবেচনা করা হচ্ছিল শিল্প হিসেবে। ওয়ারহল পরে নিজের আত্মজীবনীতে বলেন, ‘ব্লু মুভি’ প্রকৃত ছিল। কিন্তু এটি পর্নোগ্রাফি হিসেবে বানানো হয়নি। স্রেফ একটি পরীক্ষা হিসেবে এটি বানানো হয়।’
সেই ১৯৬৯ থেকে শুরু। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সময়কে এখন বলা হচ্ছে পর্নোগ্রাফির সোনালী সময় হিসেবে। তখন খুব সামান্য বাজেটের নীলছবিও বক্স অফিসে সাফল্য পেতো। ১৯৭৫ সাল নাগাদ, সরাসরি যৌনদৃশ্য সম্বলিত পর্নোগ্রাফির খুচরা বাজারদর ছিল ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ডলারে, যা আজকের মূল্যে ২ কোটি ৪০ লাখ থেকে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সমতুল্য।
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণেই ব্যবসার ধরণ পরিবর্তিত হয়। ভিএইচএস, ভিসিআর ও পরে ক্যামকর্ডার আসে আশির দশকে। ফলে দৃশ্যধারণ করার খরচ কমে যায়। সত্তরের দশকের পর্নো ছবিতেও এক ধরণের কাহিনী বা চলচ্চিত্রের আবরণ লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আশির দশকে ‘অ্যামেচার’ পর্নের আধিক্য দেখা যেতে শুরু করে। এরপর নব্বইয়ের দশকে ডিভিডি ও ইন্টারনেটের বদৌলতে পর্নো ব্যবসা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।
(ফ্রাঙ্কি কুকনি একজন লেখিকা ও সাংবাদিক। তার এই নিবন্ধ মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এর ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছে। আগামী পর্বে সমাপ্য।)
এছাড়া আদালতের পর্যবেক্ষণে ‘অশ্লীলতা’রও কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা ছিল না।
ওদিকে ডেনমার্কের ওই পর্নোগ্রাফি ট্রেড শো দেখতে যায় প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। ওই শো’র নাম দেওয়া হয় ‘সেক্স ৬৯’। এতে অংশগ্রহণ করেন আমেরিকান চলচ্চিত্র নির্মাতা অ্যালেক্স দ্য রেঞ্জি, যিনি ওই শো নিয়ে একটি তথ্যচিত্র নির্মাণ করছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় ‘সেন্সরশিপ ইন ডেনমার্ক- অ্যা নিউ অ্যাপ্রোচ’ নামে ওই তথ্যচিত্র। এতে ওই বাণিজ্য মেলার প্রতিবেদন যেমন ছিল, তেমনি কোপেনহেগেনের বিভিন্ন স্থান থেকে জনগণের মন্তব্যও ছিল। কিন্তু ওই তথ্যচিত্র যে কারণে দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হলো, সেখানে ওই বাণিজ্য মেলায় প্রদর্শিত অত্যন্ত খোলামেলা যৌনতার ছবিও প্রায় স্পষ্টভাবেই দেখানো হয়। এ ধরণের দৃশ্য সম্বলিত যেকোনো মুভি তখন আমেরিকান সিনেমায় দেখানো নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু ‘সেন্সরশিপ ইন ডেনমার্ক’ সেই বিধিনিষেধ এড়াতে সক্ষম হয়, কেননা এটি ছিল একটি তথ্যচিত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকায় তখন লেখা হয়, ‘সেন্সরশিপ ইন ডেনমার্ক- তথ্যচিত্রে খোদ ওই পণ্যেরই অনেককিছু দেখানো হয়েছে। সেখানে ছবি, নীলছবি এবং নীলছবি তৈরির সেট দেখানো হয়। এমনকি ওই সেটে অর্থাৎ পর্নো ক্লাবে যৌনমিলনরত অবস্থায় অভিনেতা-অভিনেত্রীদেরও দেখানো হয় সরাসরি। কিন্তু সম্ভবত, এটি আইনগতভাবে এখানে দেখানো সিদ্ধ। কারণ, এটি আসলে পর্নোগ্রাফি নিয়ে একটি তথ্যচিত্র।’
১৯৭০ থেকে এবার সরাসরি ২০১৯-এ চলে আসুন। বার্লিন পর্নো চলচ্চিত্র উৎসব হতে যাচ্ছে এ নিয়ে ১৩তম বারের মতো। এতে ছয় দিন ধরে টানা দেখানো হবে প্রায় ১০০টি প্রাপ্তবয়স্কদের ছবি। আজকের দিনে এসে অনলাইন পর্নো শিল্প ব্যবসার প্রকৃত আকার পরিমাপ করা কঠিন। তবে অনেকে অনুমান করে বলেন, এই ব্যবসার আর্থিক মূল্য ৬০০ কোটি থেকে ৯৭০০ কোটি ডলার। কিন্তু পর্নো ব্যবসা এত বিপুল হয়ে উঠলো কীভাবে?
১৯৭০ সালে দ্য রেঞ্জির ওই তথ্যচিত্রই একমাত্র আলোড়ন সৃষ্টিকারী চলচ্চিত্র ছিল না। ১৯৬৯ সালেই অ্যান্ডি ওয়ারহল মুক্তি দিলেন তার বিতর্কিত চলচ্চিত্র ‘ব্লু মুভি’ (নীল ছবি)। এটি ছিল প্রথম কোনো চলচ্চিত্র যেখানে প্রকৃত যৌনদৃশ্য দেখানো হয়। কিন্তু ‘সেন্সরশিপ ইন ডেনমার্ক’-এর মতো ওই ছবিও ‘অশ্লীল দৃশ্য’ থাকা সত্ত্বেও পার পেয়ে যায়। কেননা, ওই ছবিকে বিবেচনা করা হচ্ছিল শিল্প হিসেবে। ওয়ারহল পরে নিজের আত্মজীবনীতে বলেন, ‘ব্লু মুভি’ প্রকৃত ছিল। কিন্তু এটি পর্নোগ্রাফি হিসেবে বানানো হয়নি। স্রেফ একটি পরীক্ষা হিসেবে এটি বানানো হয়।’
সেই ১৯৬৯ থেকে শুরু। ১৯৬৯ থেকে ১৯৮৪ পর্যন্ত সময়কে এখন বলা হচ্ছে পর্নোগ্রাফির সোনালী সময় হিসেবে। তখন খুব সামান্য বাজেটের নীলছবিও বক্স অফিসে সাফল্য পেতো। ১৯৭৫ সাল নাগাদ, সরাসরি যৌনদৃশ্য সম্বলিত পর্নোগ্রাফির খুচরা বাজারদর ছিল ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি ডলারে, যা আজকের মূল্যে ২ কোটি ৪০ লাখ থেকে ৪ কোটি ৮০ লাখ ডলারের সমতুল্য।
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কারণেই ব্যবসার ধরণ পরিবর্তিত হয়। ভিএইচএস, ভিসিআর ও পরে ক্যামকর্ডার আসে আশির দশকে। ফলে দৃশ্যধারণ করার খরচ কমে যায়। সত্তরের দশকের পর্নো ছবিতেও এক ধরণের কাহিনী বা চলচ্চিত্রের আবরণ লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু আশির দশকে ‘অ্যামেচার’ পর্নের আধিক্য দেখা যেতে শুরু করে। এরপর নব্বইয়ের দশকে ডিভিডি ও ইন্টারনেটের বদৌলতে পর্নো ব্যবসা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়।
(ফ্রাঙ্কি কুকনি একজন লেখিকা ও সাংবাদিক। তার এই নিবন্ধ মার্কিন সাময়িকী ফোর্বস-এর ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া হয়েছে। আগামী পর্বে সমাপ্য।)
No comments