প্রেমিকাকে দেওয়া রাজ-মর্যাদা ফিরিয়ে নিলেন থাই রাজা

রানি হওয়ার অন্যায় প্রচেষ্টা আর প্রদত্ত ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ এনে থাইল্যান্ডের রাজা ভাজিরালংকরান তার দীর্ঘদিনের এক প্রেমিকাকে দেওয়া সব রাজকীয় সম্মাননা ও পদ ছিনিয়ে নিয়েছেন। সে দেশের প্রায় এক শতাব্দীর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ওয়ংভাজিরাপাকদি সিনিনাত নামের ওই নারীকে ‘রয়াল কনসোর্ট’ মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল। সোমবার আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ঘোষণা দেওয়া হয়, সিনিনাত উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছিলেন এবং নিজে রানির মর্যাদা পাওয়ার স্বার্থে বিভিন্ন অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সে কারণে তার রাজকীয় ও সামরিক পদমর্যাদাসহ সব উপাধি কেড়ে নেওয়া হয়।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইভিনিং স্ট্যান্ডার্ড-এর এক প্রতিবেদন বলছে, ৩৪ বছর বয়সী সিনিনাত ওংভাজিরাপাকদি থাই রাজার দীর্ঘদিনের প্রেমিকা। তিনি একজন দক্ষ বিমানচালক। সামরিক বাহিনীতে তিনি মেজর জেনারেল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এরপর রাজার দেহরক্ষী ও সেবিকার ভূমিকাও পালন করেছেন তিনি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, জুলাই মাসের শেষ দিকে প্রায় ১০০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সিনিনাতকে ‘রয়াল নোবেল কনসর্ট’ হিসেবে নিয়োগ দেন থাই রাজা। সেই ঘোষণার কয়েক মাসের মধ্যে রানির সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভিযোগ তুলে সিনিনাতের পদবি কেড়ে নেওয়া হলো।
থাই রাজা ভাজিরালংকরানের চার স্ত্রী। তারা হলেন রাজকুমারী সোমশাওয়ালি (১৯৭৭-১৯৯৩), ইয়ুভাধিদা পলপ্রাসের্থ (১৯৯৪-১৯৯৬), শ্রিরাসমি সুয়াদি (২০০১-২০১৪) ও রানি সুথিদা (২০১৯-)। ৪১ বছর বয়সী রানি সুথিদা আগে একজন বিমানবালা হিসেবে কাজ করতেন। এছাড়া রাজার দেহরক্ষী বাহিনীর উপ-প্রধান ছিলেন তিনি। ফলে অনেক দিন ধরেই তিনি রাজার সঙ্গী। এ বছর মে মাসে বিয়ের আগে থেকেই জনসম্মুখে তাদের একসঙ্গে বেশ কয়েকবার দেখা গেছে। তবে রানি সুথিদার সঙ্গে রাজার বিয়ের পরও সিনিনাতের প্রাধান্য ছিল রাজার কাছে। রাজকীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিয়মিত মেহমান ছিলেন তিনি। তাকে রাজ-মর্যাদাও দেওয়া হয়েছিল রাজার বিয়ের পরে। তবে হঠাৎ করেই সিনিনাত রাজার সুনজরের বাইরে চলে যান বলে জানিয়েছে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম।
সোমবারে প্রকাশিত রাজবার্তায় দাবি করা হয়, গত মে মাসে রাজার চতুর্থ স্ত্রী সুথিদাকে রানি হিসেবে নির্বাচন করার আগে সিনিনাত এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। তিনি নতুন রানি নির্বাচনের সব প্রক্রিয়া নস্যাতের চেষ্টা করেছেন। রাজবার্তায় বলা হয়, সিনিনাতকে রাজ-মর্যাদা দেওয়া হয়েছিল, যেন তিনি বিভিন্ন চাপ ও ষড়যন্ত্র থামাতে পারেন। তবে তিনি রাজা এবং বর্তমান রানির বিরোধিতা করেন এবং রাজার পক্ষ হয়ে বিভিন্ন আদেশ প্রদান করে তাকে দেওয়া ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। একপর্যায়ে রাজা বুঝতে সক্ষম হয়েছেন, সিনিনাতকে যে ক্ষমতা এবং পদ দেওয়া হয়েছিল সেই পদের জন্য তিনি কখনোই কৃতজ্ঞ ছিলেন না এবং তিনি কখনোই তার পদ ও ক্ষমতার সঠিক ব্যবহার করেননি। এরপরই রাজা তার সব রাজকীয় ও সামরিক পদমর্যাদা ও উপাধি কেড়ে নেওয়ার আদেশ দেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, থাইল্যান্ডের রাজপ্রাসাদের বিভিন্ন বিষয়ের গোপনীয়তাজনিত কারণে সিনিনাতের পদমর্যাদা কেড়ে নেওয়ার প্রকৃত তথ্য হয়তো জনসম্মুখে প্রচার হবে না। দেশটির রাজকীয় আইন তার রাজতন্ত্রের প্রতি যেকোনও ধরনের অপমানজনক বিষয় সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, যা কিনা বিশ্বের কঠিনতম আইনগুলোর একটি।

No comments

Powered by Blogger.