হাসিনার আশা সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে
আগামী
জাতীয় নির্বাচনে সব দল অংশ নেবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা। জনগণের ম্যান্ডেটের ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেছেন, আমার জোর হচ্ছে
দেশের জনগণ। জনগণ ভোট দিলে আছি না দিলে নেই। এটাই আমার চিন্তা। গতকাল
গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের
অধিবেশনে অংশ নেয়ার বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করতে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকা হলে
প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নির্বাচন,
রোহিঙ্গা ইস্যু ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে কথা বলেন। সাবেক প্রধান
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বই প্রকাশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী
নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে বৈঠক করার বিষয়টি আসে প্রশ্নোত্তরে। নির্বাচনের আগে
সরকারের পদত্যাগে বিরোধী পক্ষের দাবির প্রসঙ্গে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে
বলেন, সরকার প্রায় ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় আছে।
অন্যায়টা কি করেছি যে, এখনই পদত্যাগ করতে হবে। দিন বদল কি হয়নি? চিকিৎসা, শিক্ষাখাতে উন্নয়ন হয়নি? সারা দেশে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাইরের দেশের কে আমাকে সমর্থন করলো আর কে করলো না তা বিচার্য বিষয় নয়। আমার জোর হচ্ছে দেশের জনগণ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে সাংবাদিকরা মনে করে তারা কোনো অন্যায় কাজ করে না, কারও বিরুদ্ধে অপবাদ বা মিথ্যা তথ্য দেবে না বা বিভ্রান্ত করবে না, তাদের উদ্বিঘ্ন হওয়ার কিছু নাই।
তিনি বলেন, বরং আমি ওখানে একটা ঘাটতি দেখছি। একটা জিনিস ওখানে ঢোকানো উচিত আমি মনে করি। সেটা হলো- যদি কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা তথ্য দেয়, তাহলে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে এটা সত্য। যদি সে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়। যে সাংবাদিক লিখবে, যে পত্রিকা বা মিডিয়া তাদের সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। এবং যার বিরুদ্ধে লিখবে, তার যে ক্ষতিপূরণ হবে সেটার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এদিকে নির্বাচন প্রসঙ্গে চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন হবে। দেশের মানুষও ভোট দেবে। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে কোন দল আসবে, আর কোন দল আসবে না, সে সিদ্ধান্ত তো আমরা নিতে পারি না। তবে আমাদের আশা, সব দলই নির্বাচনে আসবে। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ২০১৪ এর নির্বাচনে আমার চেষ্টা ছিল, সবাই অংশ নিক। কিন্তু সেই নির্বাচন ঠেকানোর নামে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা হলো। আপনারা যাদের নির্বাচনে চাইছেন, তারা মানুষ পুড়িয়ে মারে। আর যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, তাদের জন্য এত কান্নাকাটি কেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ এর নির্বাচন ঠেকানোর নামে যাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তারা কেমন আছে, কেউ কি খোঁজ নিয়েছেন? আমি অনুরোধ করবো, ওই সময় যাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, তাদের পরিবার কেমন আছে, তাদের খোঁজ নিন। মানুষ পুড়িয়ে মারার ওই অন্দোলনে অনেক মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়েছে, তাদের সংসার কেমন চলছে? যে দলের আন্দোলন মানুষ পুড়িয়ে মারা, তাদের জন্য এত মায়াকান্না কেন? তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপির আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে আমার কাছে আসে। আমি তাদের সাহায্য করি। যাদের কারণে মানুষের এই অবস্থা, তাদের জন্য মায়াকান্নার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।
ল’ উইল টেক ইটস ওন কোর্স: সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ উঠেছে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ল’ উইল টেক ইটস ওন কোর্স। ৭১ টিভির সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবুর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বই প্রকাশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন না দেয়ার অনুরোধ প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। সিনিয়র এ সাংবাদিক ভারতের সংবাদ মাধ্যম পিটিআই’র রিপোর্ট তার হাতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সিনহা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ভারতের উচিত নয়। কারণ বাংলাদেশের জনগণ এই সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। তারা হয়তো একবার বা দুই বারের জন্য ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কিন্তু একদিন সময় আসবে জনগণ রুখে দাঁড়াবে। তখন ভারত নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব হারাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয় উল্লেখ করে সিনহা বলেন, মোদিকে তিনি বলেছেন, একটি স্বৈরাচারী সরকারকে সমর্থন দিয়ে ভারত যে ভুল করছে সামনে এর মাশুল দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিনহার প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিষয়টি তার পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বলেন, বাংলাদেশে প্রথম একজন সংখ্যালঘু থেকে তাকে আমরা প্রধান বিচারপতি বানিয়েছিলাম। তিনি সেই পদটিকে সম্মানজনকভাবে ধরে রাখতে পারেননি। এখানে কিন্তু আমাদের কিছু করার ছিল না। কারণ আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, তারই সহকর্মীরা তার নামে অভিযোগ পেশ করেন এবং তার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। সমস্যা কিন্তু ওখান থেকেই তৈরি। এখানে কিন্তু আমরা কিছু করিনি। এখন যে কথাগুলো উনি বলছেন, এখানে আমার কমেন্ট করার কিছু নেই। আমি আগেই বলেছি, তাই আমি কমেন্ট করতে চাই না। শেষ পর্যন্ত কী করেন, আমি দেখি। আমি বিষয়টা অবজার্ভ করছি, এটুকু আমি বলতে পারি। শেখ হাসিনা বলেন, কথা হচ্ছে, আমরা কারও মুখাপেক্ষী হয়ে রাজনীতি করি না। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে উনি অনুরোধ করেছেন আমাকে সমর্থন না দিতে। এই রকম তিনি কেন, সবাই করেছে। এই যে বিএনপি যাচ্ছে (ভারতে), সবাই যাচ্ছে (ভারতে), গিয়ে অনুরোধ করে আসছে। এখন কে সমর্থন করবে, আর কে সমর্থন করবে না বা বাইরের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে আমার রাজনীতি না। আমি মনে করি, আমার জোর হচ্ছে আমার দেশের জনগণ। আমার জনগণের সমর্থন আছে কি না, জনগণ আমাকে চায় কি না, জনগণ আমাকে ভোট দেবে কি না, সেটাই বিবেচ্য বিষয় আমার কাছে। এ সময় ২০০১ সালে আমেরিকাকে গ্যাস দেয়ার গোপন চুক্তিতে সম্মতি না দেয়ার কারণে সরকার গঠন করতে না পারার দিকটি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার ওরকম কারও সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে কি হবে না সে প্রশ্ন যদি করেন আমি বলব, আমার ক্ষমতায় না থাকাই ভালো। আর দরকার নাই ক্ষমতার। আমার দেশের মানুষের শক্তিটা হচ্ছে আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। সেই শক্তি যদি না থাকে, আর দেশের মানুষ যদি না চায়, কে আমাকে ক্ষমতায় এনে বসাবে? ওই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজনীতি আমি করি না।
ঘায়েল করার জন্য ডকুমেন্ট তৈরি করে বসে আছে: ডিজিটার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগের বিষয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে, তিনি বলেন, এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই যদি কেউ মিথ্যা তথ্য প্রকাশ না করে।
সাংবাদিকরা খুব উদ্বিগ্ন, আমি বুঝলাম। কিন্তু আমাদের উদ্বেগটা দেখবে কে। বা যারা ভিকটিমাইজ হচ্ছে, তাদের উদ্বেগটা কে দেখবে। আর তাদের কীভাবে কম্পোনসেট করবেন। ওই জায়গায় একটু কমতি আছে। যেটা ইংল্যান্ডের আইনে আছে। আমরা এটা করার আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনগুলো দেখেছি। আইনগুলো দেখা হয়নি, তা নয়। তারপর এটা অনলাইনে ছিল। এটা সকলের সঙ্গে আলোচনাও হয়ে গেছে। এরপর এসে হঠাৎ এত উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন কিসের জন্য। আমার কাছে সেটা প্রশ্ন। কারও যদি অপরাধী মন না থাকে, বা ভবিষ্যতে কিছু অপরাধ করবে এরকম পরিকল্পনা না থাকে, তার উদ্বেগ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আগে তো সমন জারি করা হতো, সরাসরি গ্রেপ্তার করা হতো। আমি সেটা পরিবর্তন করে দিয়েছি। আগে তো চট করে ধরে নিতো। আপনারা সাংবাদিকরা যাদের কাছে নির্যাতিত হয়েছেন। তাদের জন্য কি করতে পেরেছেন। আর আপনারা এখন উদ্বিগ্ন। আমার যেটা মনে হয়েছে। বৈঠকের পর বৈঠক। বৈঠকে আমি এমন এমন মানুষ দেখেছি। তারা লেখা তৈরি করে বসে আছে। একটার পর একটা লেখা আমার বিরুদ্ধে চালাবে। উদ্বিগ্ন হবে তারা। আপনাদের তো উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অন্তত আমি যত দিন আছি। আপনাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখানে স্পষ্ট বলবো- যে সাংবাদিকরা মনে করেন তারা কোনো অন্যায় কাজ করে না, কারও বিরুদ্ধে অপবাদ বা মিথ্যা তথ্য দেবে না বা বিভ্রান্ত করবে না, তাদের উদ্বেগ হওয়ার কিছু নাই। সেখানে আইনে যেটা দেয়া আছে, সিআরপিসিতে যা আছে-তাই দেয়া আছে। সেখানে ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ব্যবহার সম্পর্কে উল্লেখ করা আছে। জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের কিছু কিছু ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে, তাদেরকে ট্র্যাক করার জন্য। এখন ট্র্যাক করার পর তো বসে থাকা যাবে না। তাকে তো ধরতে হবে। কারণ সেতো আমাদের জন্য বসে থাকবে না।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালে আমি যখন বন্দি। আমার বিরুদ্ধে যত নিউজ করা হলো। পরে সেটা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হলো। ওই পত্রিকার কোনো সাজা হলো না। কিন্তু তার সম্মান তো নষ্ট হলো। তাদের তো এই লজ্জা হয় না যে একটা মিথ্যা তথ্য দিলো। কিন্তু যার সমাজে সম্মান নষ্ট হলো। তার তো সব গেল। পদ্মা সেতু নিয়ে যারা বড় বড় হেডলাইন লেখেছে, তারা তো এখনও সমাজে বুক উঁচু করে চলছে। কিন্তু পরিবারের কাছে, সমাজের কাছে যে হেয়প্রতিপন্ন হলো; অসম্মান হলো তাদের কে দেখবে। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি প্রতিটি দেশেই একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় সামাজিক, পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নানা ধরনের ক্রাইম, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং পর্নো-নানা ধরনের ঘটনা দেখা দিচ্ছে। সেজন্য সকলেই এ ব্যাপারে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অসামপ্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এবং আমরা অসামপ্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি। হ্যাঁ এটা তো ঠিক র্যাডিকালিজম তো আছে, একেবারে নাই- তা না। তবে যারা এই ধরনের কাজ করে তারা আসলে বিকৃতমনা। এদের কোনো নীতি-টীতি নাই। এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সমাজকে আরো সচেতন করে তোলার এবং সাংবাদিকদের তাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখার ওপর জোর দেন সরকারপ্রধান।
জোটের কলেবর বাড়ানোর ইচ্ছা নেই: নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কলেবর বৃদ্ধির কোনো চিন্তা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চারদিকে অনেক বড় বড় জোট-মহাজোট হচ্ছে। এ সবের মধ্যে আমাদের জোটের কলেবর বাড়ানোর তেমন কোনো চিন্তা নেই। এরপরেও কেউ যদি আমাদের সঙ্গে আসতে আগ্রহী থাকে, তখন আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারি। এ সময় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো ফর্মুলা নেই। সংবিধানে বলা আছে প্রতি ৬০ দিন অন্তর সংসদ অধিবেশন বসার জন্য। তবে নির্বাচনের আগে এ বিষয়টি শিথিল থাকে। তখন আমরা সংসদ বহাল রেখে কীভাবে নির্বাচন আয়োজন করা যায় সে বিষয়ে কথা শুরু করেছি। আমাদের জোটের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কয়েকটির সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের নির্দেশনাও নেয়া হবে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে তাদের সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, সরকার যেভাবে থাকে সেভাবে রেখেই পাঁচবছর পূর্ণ হওয়ার আগের তিন মাসে নির্বাচন আয়োজন করে। তবে কোনো কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হলে তারা সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে। এটাই আসলে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নিয়ম। তিনি আরও বলেন, আমরা ওই নিয়মেই নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করবো। এক্ষেত্রে ক্যাবিনেট ছোট করে নিয়ে কাজ করা হবে। চিন্তা-ভাবনা করে দেখবো কি করা যায়। কারণ, নির্বাচনের সময়ে আরপিও অনুযায়ী চলাচলে বিভিন্ন সমস্যা থাকে। এ সময় চলতি সংসদের ওপর জনগণের আস্থা বেড়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের সংসদ অন্য যে কোনো সংসদের চেয়ে ভালো ছিল।
আমি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে: আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার চান বলে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি ইভিএম ব্যবহার কতটুকু সমর্থন করেন এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আপনি সবচেয়ে প্রিয় জিনিস টাকা মোবাইল ফোনে পাঠাতে পারেন। ভোটটাও আপনার প্রিয় জিনিস, তো ভোটটাও কেন আপনি ইভিএম-এ দিতে পারবেন না? আমি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। তিনি আরও বলেন, বরং এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করা উচিত, যেন মোবাইল থেকেও মানুষ ভোট দিতে পারে। তাহলে আর ভোটকেন্দ্রে যাওয়া লাগবে না। ইভিএমটা হোক। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ) প্রজেক্ট পাস করে দিয়েছি। যেহেতু আমরা পাস করে দিয়েছি, তাহলে বুঝতেই পারেন, আমাদের মানসিকতা কি। জনগণের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তাদের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করা আমাদের দায়িত্ব। আর সেটা মনে করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
শত ফুল ফুটতে দিন: কারও সমাবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছি। আমি বলেছি, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে একটা জায়গা করে দিন, যে যতো খুশি বক্তব্য দিক। আরও দু’-একটি জায়গা পাওয়া যায় কিনা তাও দেখছি। এটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। তারা যদি সমাবেশে মানুষ চায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিতে পারি। তাদের এসব সমাবেশ নিয়ে আমার ভয়ের কিছু নেই। যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে গঠিত জোটকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের জোট করার জন্য যদি সহযোগিতা করা লাগে তবে তা আমি করবো। কারণ আমরা জানি, বাংলাদেশে ভোট আছে দু’পক্ষে। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও আরেকটি হলো এন্টি আওয়ামী লীগ। এখন এন্টিআওয়ামী লীগ ভোটগুলোকেতো একটি জায়গায় যেতে হবে। তাদের জন্য একটি জোট হচ্ছে এবং সেখানে বড় বড় মানুষও আছে। জোট হওয়াতো ভালো কথা। আমার কথা হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দিন। শেখ হাসিনা বলেন, জোট গঠন নির্বাচনের জন্য ভালো। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে আসবে কিনা বা আসার সামর্থ্য তাদের আছে কিনা বা সে সাহস তাদের আছে কিনা সেটিও কিন্তু একটি প্রশ্ন।
তাদের জন্য ভবিষ্যৎ ঠিকানা করে দিয়েছি: কওমি শিক্ষার স্বীকৃতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কওমি মাদ্রাসার ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ ছিল না। তারা কি করতো কোথায় যেত কোনো ঠিকানা ছিল না। আমি তাদের জন্য ভবিষ্যৎ ঠিকানা করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার কোনো শত্রু ছিল না। তবে হ্যাঁ ওই হেফাজতের ঘটনার রাতের আগে খালেদা জিয়া সবাইকে আহ্বান জানালেন আপনারা সবাই ঢাকা চলে আসেন। আমার মতো চেষ্টা করেছি পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য। ওই রকম পরিস্থিতি যেন বাংলাদেশে না ঘটে। খালেদা জিয়া তাতে ওপেন সমর্থন দিয়েছিলেন, জামায়াত আল্লামা শফীকে সমর্থন দিয়েছিল। তিনি বলেন, ওই রাতে মতিঝিল শাপলা চত্বরসহ মানুষ যে টেনশনে ছিল তাদের তো টেনশনমুক্ত করেছি।
এজন্য আমি তো ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সে সময় অনেকে বলেছে আমি তো ধর্মই বিশ্বাস করি না। যাই হোক এখন যদি তারা আমাকে ধন্যবাদ দেয় তাহলে আমিও তাদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ এ ধরনের ঘটনা হয়তো আর ঘটবে না। এ রকম একটা ভাবনা অনেকের মধ্যে ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপারে বলবো যে, ওখানে লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করে। তাদের কোনো স্বীকৃতি ছিল না। তারা নিজেরা নিজেদের মতো করে জীবন যাপন করতো। তিনি বলেন, আপনারা যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন, উপমহাদেশে শিক্ষার যাত্রা শুরু হয় মাদ্রাসা দিয়ে। হিন্দু ধর্মের জন্য টং থেকে। কাজেই এটাকে একবারে বাদ দেয়া যাবে না। কারণ ১৪ থেকে ১৫ লাখ ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখছে। তাদের জন্য ভবিষ্যৎ ঠিকানা করে দিয়েছি।
থাকে লক্ষ্মী যায় বালাই: প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কাছে উন্নয়ন যাতে দৃশ্যমান হয় সেজন্য আমার ইচ্ছা ছিল পরপর দুই টার্ম ক্ষমতায় থাকা। আমি তা পেরেছি। এখন আমার কাছে ক্ষমতা- থাকে লক্ষ্মী যায় বালাই। আমার কোনও চিন্তা নাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে যে উন্নয়ন করেছিলাম তা বিএনপি আসার পর থেমে যায়। আমার ইচ্ছা ছিল আমি যদি একটানা দুইবার থাকতে পারি তবে উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হবে। মানুষ তার সুফলটা পাবে। দুই টার্ম থেকেছি। মানুষ তার সুফল পেয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০ দলীয় জোটের সমপ্রসারণ নিয়ে আমার কোনো ভয় নেই। ভয় থাকে তার, যার হারানোর কিছু আছে। আমার হারানোর কিছু নেই। আমি আমার বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি। আমরা দুই বোন আছি, আমাদের ছেলেমেয়ে আছে। তারা আপনাদের জন্যই কাজ করে যাচ্ছে। দেশের জন্য কাজ করছে। সেটা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেন বা অটিজম বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অংশ নেয়া ও সাইড লাইনে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও সাক্ষাতের বিষয় তুলে ধরেন। এসব বৈঠক ও সাক্ষাতে বিশ্ব নেতারা শেখ হাসিনাকে আবারো সরকার প্রধান হিসেবে দেখতে চান বলে আশা প্রকাশ করেছেন বলেও প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
অন্যায়টা কি করেছি যে, এখনই পদত্যাগ করতে হবে। দিন বদল কি হয়নি? চিকিৎসা, শিক্ষাখাতে উন্নয়ন হয়নি? সারা দেশে উন্নয়নের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাইরের দেশের কে আমাকে সমর্থন করলো আর কে করলো না তা বিচার্য বিষয় নয়। আমার জোর হচ্ছে দেশের জনগণ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যে সাংবাদিকরা মনে করে তারা কোনো অন্যায় কাজ করে না, কারও বিরুদ্ধে অপবাদ বা মিথ্যা তথ্য দেবে না বা বিভ্রান্ত করবে না, তাদের উদ্বিঘ্ন হওয়ার কিছু নাই।
তিনি বলেন, বরং আমি ওখানে একটা ঘাটতি দেখছি। একটা জিনিস ওখানে ঢোকানো উচিত আমি মনে করি। সেটা হলো- যদি কেউ কারও বিরুদ্ধে কোনো মিথ্যা তথ্য দেয়, তাহলে তাকে প্রমাণ করতে হবে যে এটা সত্য। যদি সে প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়। যে সাংবাদিক লিখবে, যে পত্রিকা বা মিডিয়া তাদের সবাইকে শাস্তি পেতে হবে। এবং যার বিরুদ্ধে লিখবে, তার যে ক্ষতিপূরণ হবে সেটার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এদিকে নির্বাচন প্রসঙ্গে চ্যানেল আইয়ের পরিচালক ও বার্তাপ্রধান শাইখ সিরাজের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নির্বাচন হবে। দেশের মানুষও ভোট দেবে। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল। নির্বাচনে কোন দল আসবে, আর কোন দল আসবে না, সে সিদ্ধান্ত তো আমরা নিতে পারি না। তবে আমাদের আশা, সব দলই নির্বাচনে আসবে। বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ২০১৪ এর নির্বাচনে আমার চেষ্টা ছিল, সবাই অংশ নিক। কিন্তু সেই নির্বাচন ঠেকানোর নামে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারা হলো। আপনারা যাদের নির্বাচনে চাইছেন, তারা মানুষ পুড়িয়ে মারে। আর যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, তাদের জন্য এত কান্নাকাটি কেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৪ এর নির্বাচন ঠেকানোর নামে যাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছে, তারা কেমন আছে, কেউ কি খোঁজ নিয়েছেন? আমি অনুরোধ করবো, ওই সময় যাদের পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, তাদের পরিবার কেমন আছে, তাদের খোঁজ নিন। মানুষ পুড়িয়ে মারার ওই অন্দোলনে অনেক মানুষ কর্মক্ষমতা হারিয়েছে, তাদের সংসার কেমন চলছে? যে দলের আন্দোলন মানুষ পুড়িয়ে মারা, তাদের জন্য এত মায়াকান্না কেন? তিনি বলেন, ২০১৪ সালে বিএনপির আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকে আমার কাছে আসে। আমি তাদের সাহায্য করি। যাদের কারণে মানুষের এই অবস্থা, তাদের জন্য মায়াকান্নার দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।
ল’ উইল টেক ইটস ওন কোর্স: সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব অভিযোগ উঠেছে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ল’ উইল টেক ইটস ওন কোর্স। ৭১ টিভির সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবুর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে সাংবাদিক মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বই প্রকাশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন না দেয়ার অনুরোধ প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। সিনিয়র এ সাংবাদিক ভারতের সংবাদ মাধ্যম পিটিআই’র রিপোর্ট তার হাতে রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেয়া সাক্ষাৎকারে সিনহা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারকে সমর্থন করে বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া ভারতের উচিত নয়। কারণ বাংলাদেশের জনগণ এই সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। তারা হয়তো একবার বা দুই বারের জন্য ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। কিন্তু একদিন সময় আসবে জনগণ রুখে দাঁড়াবে। তখন ভারত নিশ্চিতভাবে বাংলাদেশের ওপর প্রভাব হারাবে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয় উল্লেখ করে সিনহা বলেন, মোদিকে তিনি বলেছেন, একটি স্বৈরাচারী সরকারকে সমর্থন দিয়ে ভারত যে ভুল করছে সামনে এর মাশুল দিতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সিনহার প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে সতর্ক প্রতিক্রিয়া জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বিষয়টি তার পর্যবেক্ষণে রয়েছে। বলেন, বাংলাদেশে প্রথম একজন সংখ্যালঘু থেকে তাকে আমরা প্রধান বিচারপতি বানিয়েছিলাম। তিনি সেই পদটিকে সম্মানজনকভাবে ধরে রাখতে পারেননি। এখানে কিন্তু আমাদের কিছু করার ছিল না। কারণ আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, তারই সহকর্মীরা তার নামে অভিযোগ পেশ করেন এবং তার সঙ্গে কাজ করতে অস্বীকৃতি জানান। সমস্যা কিন্তু ওখান থেকেই তৈরি। এখানে কিন্তু আমরা কিছু করিনি। এখন যে কথাগুলো উনি বলছেন, এখানে আমার কমেন্ট করার কিছু নেই। আমি আগেই বলেছি, তাই আমি কমেন্ট করতে চাই না। শেষ পর্যন্ত কী করেন, আমি দেখি। আমি বিষয়টা অবজার্ভ করছি, এটুকু আমি বলতে পারি। শেখ হাসিনা বলেন, কথা হচ্ছে, আমরা কারও মুখাপেক্ষী হয়ে রাজনীতি করি না। ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে উনি অনুরোধ করেছেন আমাকে সমর্থন না দিতে। এই রকম তিনি কেন, সবাই করেছে। এই যে বিএনপি যাচ্ছে (ভারতে), সবাই যাচ্ছে (ভারতে), গিয়ে অনুরোধ করে আসছে। এখন কে সমর্থন করবে, আর কে সমর্থন করবে না বা বাইরের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে আমার রাজনীতি না। আমি মনে করি, আমার জোর হচ্ছে আমার দেশের জনগণ। আমার জনগণের সমর্থন আছে কি না, জনগণ আমাকে চায় কি না, জনগণ আমাকে ভোট দেবে কি না, সেটাই বিবেচ্য বিষয় আমার কাছে। এ সময় ২০০১ সালে আমেরিকাকে গ্যাস দেয়ার গোপন চুক্তিতে সম্মতি না দেয়ার কারণে সরকার গঠন করতে না পারার দিকটি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমার ওরকম কারও সহযোগিতা নিয়ে ক্ষমতায় থাকতে হবে কি হবে না সে প্রশ্ন যদি করেন আমি বলব, আমার ক্ষমতায় না থাকাই ভালো। আর দরকার নাই ক্ষমতার। আমার দেশের মানুষের শক্তিটা হচ্ছে আমার সবচেয়ে বড় শক্তি। সেই শক্তি যদি না থাকে, আর দেশের মানুষ যদি না চায়, কে আমাকে ক্ষমতায় এনে বসাবে? ওই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে রাজনীতি আমি করি না।
ঘায়েল করার জন্য ডকুমেন্ট তৈরি করে বসে আছে: ডিজিটার নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগের বিষয়ে একাধিক প্রশ্নের জবাবে, তিনি বলেন, এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই যদি কেউ মিথ্যা তথ্য প্রকাশ না করে।
সাংবাদিকরা খুব উদ্বিগ্ন, আমি বুঝলাম। কিন্তু আমাদের উদ্বেগটা দেখবে কে। বা যারা ভিকটিমাইজ হচ্ছে, তাদের উদ্বেগটা কে দেখবে। আর তাদের কীভাবে কম্পোনসেট করবেন। ওই জায়গায় একটু কমতি আছে। যেটা ইংল্যান্ডের আইনে আছে। আমরা এটা করার আগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আইনগুলো দেখেছি। আইনগুলো দেখা হয়নি, তা নয়। তারপর এটা অনলাইনে ছিল। এটা সকলের সঙ্গে আলোচনাও হয়ে গেছে। এরপর এসে হঠাৎ এত উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন কিসের জন্য। আমার কাছে সেটা প্রশ্ন। কারও যদি অপরাধী মন না থাকে, বা ভবিষ্যতে কিছু অপরাধ করবে এরকম পরিকল্পনা না থাকে, তার উদ্বেগ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আগে তো সমন জারি করা হতো, সরাসরি গ্রেপ্তার করা হতো। আমি সেটা পরিবর্তন করে দিয়েছি। আগে তো চট করে ধরে নিতো। আপনারা সাংবাদিকরা যাদের কাছে নির্যাতিত হয়েছেন। তাদের জন্য কি করতে পেরেছেন। আর আপনারা এখন উদ্বিগ্ন। আমার যেটা মনে হয়েছে। বৈঠকের পর বৈঠক। বৈঠকে আমি এমন এমন মানুষ দেখেছি। তারা লেখা তৈরি করে বসে আছে। একটার পর একটা লেখা আমার বিরুদ্ধে চালাবে। উদ্বিগ্ন হবে তারা। আপনাদের তো উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অন্তত আমি যত দিন আছি। আপনাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখানে স্পষ্ট বলবো- যে সাংবাদিকরা মনে করেন তারা কোনো অন্যায় কাজ করে না, কারও বিরুদ্ধে অপবাদ বা মিথ্যা তথ্য দেবে না বা বিভ্রান্ত করবে না, তাদের উদ্বেগ হওয়ার কিছু নাই। সেখানে আইনে যেটা দেয়া আছে, সিআরপিসিতে যা আছে-তাই দেয়া আছে। সেখানে ডিজিটাল ডিভাইসগুলো ব্যবহার সম্পর্কে উল্লেখ করা আছে। জঙ্গিবাদ দমনে আমাদের কিছু কিছু ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে, তাদেরকে ট্র্যাক করার জন্য। এখন ট্র্যাক করার পর তো বসে থাকা যাবে না। তাকে তো ধরতে হবে। কারণ সেতো আমাদের জন্য বসে থাকবে না।
তিনি বলেন, ২০০৭ সালে আমি যখন বন্দি। আমার বিরুদ্ধে যত নিউজ করা হলো। পরে সেটা তদন্তে মিথ্যা প্রমাণিত হলো। ওই পত্রিকার কোনো সাজা হলো না। কিন্তু তার সম্মান তো নষ্ট হলো। তাদের তো এই লজ্জা হয় না যে একটা মিথ্যা তথ্য দিলো। কিন্তু যার সমাজে সম্মান নষ্ট হলো। তার তো সব গেল। পদ্মা সেতু নিয়ে যারা বড় বড় হেডলাইন লেখেছে, তারা তো এখনও সমাজে বুক উঁচু করে চলছে। কিন্তু পরিবারের কাছে, সমাজের কাছে যে হেয়প্রতিপন্ন হলো; অসম্মান হলো তাদের কে দেখবে। অপর এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সাইবার সিকিউরিটি প্রতিটি দেশেই একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় সামাজিক, পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নানা ধরনের ক্রাইম, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং পর্নো-নানা ধরনের ঘটনা দেখা দিচ্ছে। সেজন্য সকলেই এ ব্যাপারে প্রচণ্ড উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ অসামপ্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এবং আমরা অসামপ্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি। হ্যাঁ এটা তো ঠিক র্যাডিকালিজম তো আছে, একেবারে নাই- তা না। তবে যারা এই ধরনের কাজ করে তারা আসলে বিকৃতমনা। এদের কোনো নীতি-টীতি নাই। এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সমাজকে আরো সচেতন করে তোলার এবং সাংবাদিকদের তাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখার ওপর জোর দেন সরকারপ্রধান।
জোটের কলেবর বাড়ানোর ইচ্ছা নেই: নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের কলেবর বৃদ্ধির কোনো চিন্তা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চারদিকে অনেক বড় বড় জোট-মহাজোট হচ্ছে। এ সবের মধ্যে আমাদের জোটের কলেবর বাড়ানোর তেমন কোনো চিন্তা নেই। এরপরেও কেউ যদি আমাদের সঙ্গে আসতে আগ্রহী থাকে, তখন আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারি। এ সময় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকারের সুনির্দিষ্ট কোনো ফর্মুলা নেই। সংবিধানে বলা আছে প্রতি ৬০ দিন অন্তর সংসদ অধিবেশন বসার জন্য। তবে নির্বাচনের আগে এ বিষয়টি শিথিল থাকে। তখন আমরা সংসদ বহাল রেখে কীভাবে নির্বাচন আয়োজন করা যায় সে বিষয়ে কথা শুরু করেছি। আমাদের জোটের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কয়েকটির সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রেসিডেন্টের নির্দেশনাও নেয়া হবে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয় নিয়ে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা হয়েছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, যেসব দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র রয়েছে তাদের সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, সরকার যেভাবে থাকে সেভাবে রেখেই পাঁচবছর পূর্ণ হওয়ার আগের তিন মাসে নির্বাচন আয়োজন করে। তবে কোনো কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হলে তারা সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে। এটাই আসলে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নিয়ম। তিনি আরও বলেন, আমরা ওই নিয়মেই নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করবো। এক্ষেত্রে ক্যাবিনেট ছোট করে নিয়ে কাজ করা হবে। চিন্তা-ভাবনা করে দেখবো কি করা যায়। কারণ, নির্বাচনের সময়ে আরপিও অনুযায়ী চলাচলে বিভিন্ন সমস্যা থাকে। এ সময় চলতি সংসদের ওপর জনগণের আস্থা বেড়েছে দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের সংসদ অন্য যে কোনো সংসদের চেয়ে ভালো ছিল।
আমি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে: আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) ব্যবহার চান বলে মত দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আপনি ইভিএম ব্যবহার কতটুকু সমর্থন করেন এ প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। আপনি সবচেয়ে প্রিয় জিনিস টাকা মোবাইল ফোনে পাঠাতে পারেন। ভোটটাও আপনার প্রিয় জিনিস, তো ভোটটাও কেন আপনি ইভিএম-এ দিতে পারবেন না? আমি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। তিনি আরও বলেন, বরং এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করা উচিত, যেন মোবাইল থেকেও মানুষ ভোট দিতে পারে। তাহলে আর ভোটকেন্দ্রে যাওয়া লাগবে না। ইভিএমটা হোক। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা একনেকে (জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ) প্রজেক্ট পাস করে দিয়েছি। যেহেতু আমরা পাস করে দিয়েছি, তাহলে বুঝতেই পারেন, আমাদের মানসিকতা কি। জনগণের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে। তাদের ভোটের অধিকার সুরক্ষিত করা আমাদের দায়িত্ব। আর সেটা মনে করেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
শত ফুল ফুটতে দিন: কারও সমাবেশে বাধা দেয়া হচ্ছে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছি। আমি বলেছি, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে একটা জায়গা করে দিন, যে যতো খুশি বক্তব্য দিক। আরও দু’-একটি জায়গা পাওয়া যায় কিনা তাও দেখছি। এটি মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার। তারা যদি সমাবেশে মানুষ চায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিতে পারি। তাদের এসব সমাবেশ নিয়ে আমার ভয়ের কিছু নেই। যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সমন্বয়ে গঠিত জোটকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের জোট করার জন্য যদি সহযোগিতা করা লাগে তবে তা আমি করবো। কারণ আমরা জানি, বাংলাদেশে ভোট আছে দু’পক্ষে। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও আরেকটি হলো এন্টি আওয়ামী লীগ। এখন এন্টিআওয়ামী লীগ ভোটগুলোকেতো একটি জায়গায় যেতে হবে। তাদের জন্য একটি জোট হচ্ছে এবং সেখানে বড় বড় মানুষও আছে। জোট হওয়াতো ভালো কথা। আমার কথা হচ্ছে শত ফুল ফুটতে দিন। শেখ হাসিনা বলেন, জোট গঠন নির্বাচনের জন্য ভালো। তবে শেষ পর্যন্ত তারা নির্বাচনে আসবে কিনা বা আসার সামর্থ্য তাদের আছে কিনা বা সে সাহস তাদের আছে কিনা সেটিও কিন্তু একটি প্রশ্ন।
তাদের জন্য ভবিষ্যৎ ঠিকানা করে দিয়েছি: কওমি শিক্ষার স্বীকৃতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কওমি মাদ্রাসার ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যৎ ছিল না। তারা কি করতো কোথায় যেত কোনো ঠিকানা ছিল না। আমি তাদের জন্য ভবিষ্যৎ ঠিকানা করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার কোনো শত্রু ছিল না। তবে হ্যাঁ ওই হেফাজতের ঘটনার রাতের আগে খালেদা জিয়া সবাইকে আহ্বান জানালেন আপনারা সবাই ঢাকা চলে আসেন। আমার মতো চেষ্টা করেছি পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য। ওই রকম পরিস্থিতি যেন বাংলাদেশে না ঘটে। খালেদা জিয়া তাতে ওপেন সমর্থন দিয়েছিলেন, জামায়াত আল্লামা শফীকে সমর্থন দিয়েছিল। তিনি বলেন, ওই রাতে মতিঝিল শাপলা চত্বরসহ মানুষ যে টেনশনে ছিল তাদের তো টেনশনমুক্ত করেছি।
এজন্য আমি তো ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। সে সময় অনেকে বলেছে আমি তো ধর্মই বিশ্বাস করি না। যাই হোক এখন যদি তারা আমাকে ধন্যবাদ দেয় তাহলে আমিও তাদের ধন্যবাদ জানাই। কারণ এ ধরনের ঘটনা হয়তো আর ঘটবে না। এ রকম একটা ভাবনা অনেকের মধ্যে ছিল। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার ব্যাপারে বলবো যে, ওখানে লাখ লাখ ছেলে-মেয়ে পড়াশোনা করে। তাদের কোনো স্বীকৃতি ছিল না। তারা নিজেরা নিজেদের মতো করে জীবন যাপন করতো। তিনি বলেন, আপনারা যদি লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন, উপমহাদেশে শিক্ষার যাত্রা শুরু হয় মাদ্রাসা দিয়ে। হিন্দু ধর্মের জন্য টং থেকে। কাজেই এটাকে একবারে বাদ দেয়া যাবে না। কারণ ১৪ থেকে ১৫ লাখ ছেলে-মেয়ে লেখাপড়া শিখছে। তাদের জন্য ভবিষ্যৎ ঠিকানা করে দিয়েছি।
থাকে লক্ষ্মী যায় বালাই: প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কাছে উন্নয়ন যাতে দৃশ্যমান হয় সেজন্য আমার ইচ্ছা ছিল পরপর দুই টার্ম ক্ষমতায় থাকা। আমি তা পেরেছি। এখন আমার কাছে ক্ষমতা- থাকে লক্ষ্মী যায় বালাই। আমার কোনও চিন্তা নাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থেকে যে উন্নয়ন করেছিলাম তা বিএনপি আসার পর থেমে যায়। আমার ইচ্ছা ছিল আমি যদি একটানা দুইবার থাকতে পারি তবে উন্নয়নগুলো দৃশ্যমান হবে। মানুষ তার সুফলটা পাবে। দুই টার্ম থেকেছি। মানুষ তার সুফল পেয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ২০ দলীয় জোটের সমপ্রসারণ নিয়ে আমার কোনো ভয় নেই। ভয় থাকে তার, যার হারানোর কিছু আছে। আমার হারানোর কিছু নেই। আমি আমার বাবা, মা, ভাই সব হারিয়েছি। আমরা দুই বোন আছি, আমাদের ছেলেমেয়ে আছে। তারা আপনাদের জন্যই কাজ করে যাচ্ছে। দেশের জন্য কাজ করছে। সেটা ডিজিটাল বাংলাদেশ বলেন বা অটিজম বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর পাশে মঞ্চে ছিলেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে অংশ নেয়া ও সাইড লাইনে বিশ্ব নেতাদের সঙ্গে বৈঠক ও সাক্ষাতের বিষয় তুলে ধরেন। এসব বৈঠক ও সাক্ষাতে বিশ্ব নেতারা শেখ হাসিনাকে আবারো সরকার প্রধান হিসেবে দেখতে চান বলে আশা প্রকাশ করেছেন বলেও প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
No comments