খুলনা মডেলের দিকে চোখ সবার by রোকনুজ্জামান পিয়াস ও রাশিদুল ইসলাম
রাত
পোহালেই ভোট। প্রচার-প্রচারণা শেষ। চলছে শেষ মুহূর্তের হিসাব-নিকাশ। ভোট
নিয়ে রয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। কেমন হবে খুলনার ভোট। নির্বাচন কমিশন
শান্তিপূর্ণ ভোট উপহার দিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে মডেল তৈরি করবে নাকি আগের
দখল-কারচুপির মডেলই দেখা যাবে এই নির্বাচনে? এমন প্রশ্ন এখন মানুষের মুখে
মুখে। প্রায় পাঁচ লাখ ভোটারের এ সিটিতে নির্বাচন হলেও পুরো দেশের দৃষ্টি
এখন এই শিল্পনগরীতে। জাতীয় নির্বাচনের আগে এই নির্বাচনকে গুরুত্বপূর্ণ মনে
করা হচ্ছে। আর তাই প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ নির্বাচনে
মেয়র পদটি তাদের দখলে নিতে মরিয়া। প্রচার-প্রচারণা, কৌশল, অভিযোগ, পাল্টা
অভিযোগে উত্তাপ ছড়িয়ে নেতাকর্মীদের চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করেছেন তারা। আপাতত
প্রার্থীদের সব চেষ্টার পর এবার আসল পরীক্ষা নির্বাচন কমিশনের। রাজনৈতিক
বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে খুলনার ভোট নির্বাচন কমিশনের সামনে
বড় চ্যালেঞ্জ। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ নাকচ করে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দাবি করে
আসা নির্বাচন কমিশনকে ভোটের দিন আসল পরীক্ষা দিতে হবে দেশবাসী ও খুলনার
ভোটারদের কাছে। তারা চাইলে খুলনা হতে পারে একটি নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ
নির্বাচনের মডেল। আর তা না হয়ে যদি অতীতের দখল-কারচুপির দৃষ্টান্ত হয় খুলনা
তা দেশের ভবিষ্যৎ নির্বাচনের জন্য একটি অশনি সংকেত হতে পারে। নির্বাচনকে
ঘিরে নগরীতে একদিনে যেমন উৎসবের পরিবেশ বিরাজ করছে, ঠিক এর উল্টো চিত্রও
রয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে শঙ্কা আছে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে। বিগত দিনে বড়
দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তুলনামূলক প্রচারণা, প্রচারণার লেভেল প্লেয়িং
ফিল্ড এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার কারণে সংশ্লিষ্টদের মনে এমন প্রশ্ন
ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে মানুুষ তাকিয়ে আছে আগামীকালের ভোটের মাঠের দিকে।
ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে নির্বাচনের সকল ধরনের প্রচার-প্রচারণা। নির্বাচন
কমিশনের বিধি মোতাবেক গতকাল রাত ১২টার পর থেকেই বন্ধ হয়ে গেছে প্রচারণা।
মাঝে শুধু একদিনের বিরতি। এই বিরতিতে আত্মসমালোচনায় প্রার্থীরা। কে কতটুকু
প্রচারণা চালাতে সক্ষম হয়েছেন, কত ভোটারের কাছে হাজির হতে পেরেছেন সে সব
হিসাব কষছেন তারা। পাশাপাশি কার কত ভোটব্যাংক রয়েছে তার সংখ্যাও হিসাব
করছেন প্রার্থী ও সংশ্লিষ্টরা। খুলনা রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা গেছে,
এবারের খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মোট ভোটারের সংখ্যা ৪ লাখ ৯৩ হাজার
৯৩ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৬ জন, নারী ভোটার ২
লাখ ৪৪ হাজার ১০৭ জন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের নির্বাচনে দলীয় ভোটারের
বাইরে নতুন ভোটাররা একটা ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া বরাবরের মতো
বস্তিবাসীর ১ লাখ, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৭০ হাজার, নতুন ৫২ হাজার ভোট
নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণের নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে। নির্বাচনে প্রভাব
ফেলবে জামায়াতের ৬০ হাজার, শ্রমিক শ্রেণির ৬০ হাজার, উর্দু ভাষাভাষীর
(বিহারী) প্রায় ২০ হাজার এবং খুলনায় বসবাসরত একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক
আঞ্চলিক ভোটার।
সূত্রমতে, ২০১৩ সালের ১৫ই জুন কেসিসি নির্বাচনে এক লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক এক লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট পেয়েছিলেন। অপর মেয়র প্রার্থী জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু পেয়েছিলেন তিন হাজার ৭৪ ভোট। দলীয় মনোনয়নে প্রথমবারের এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত তালুকদার আবদুল খালেক, বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জাতীয় পার্টির এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক ও সিপিবি’র মিজানুর রহমান বাবু। এর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন বড় দু’দলের মনোনীত আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক ও বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
বিগত দিনের নির্বাচনগুলোর ফলাফল অনুযায়ী, খুলনা মহানগরীতে দীর্ঘদিন ধরেই ভোটের ক্ষেত্রে বিএনপি এগিয়ে। খুলনা-২ নির্বাচনী এলাকায় মুসলিম লীগপন্থিদের প্রভাবের কারণে সংসদীয় কিংবা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বেশির ভাগ সময়ই বিএনপি’র প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। কেসিসি’র আরেক অংশ খুলনা-৩ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাব বেশি বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। তবে স্বাধীনতা-উত্তর কোনো দলই ধারাবাহিকভাবে এই আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে পারেনি। কখনো আওয়ামী লীগ ও কখনো বিএনপির প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এই দুই সংসদীয় আসনের ভোটাররাই আগামীকালের নির্বাচনে ভোট দেবেন।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের তুলনায় এবার নতুন ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫২ হাজার। এসব ভোট উভয়দলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাবে বলে নগরবাসী মনে করছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তালুকদার আবদুল খালেককে ইতিমধ্যেই সমর্থন দিয়েছেন ১৪ দল ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি (জেপি)। আঞ্চলিকতার দিক দিয়ে খুলনায় অবস্থানকারী বরিশাল, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জ, যশোর ও নড়াইলের একটি অংশের সমর্থন পাবেন বলে আশা করছেন নৌকার সমর্থকরা।
তবে আঞ্চলিকতার অপর অংশ মাদারীপুর ও সাতক্ষীরার একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে মঞ্জুর প্রতি। এছাড়া তিনি বরিশাল, ঝালকাঠি, বাগেরহাটসহ অন্যান্য অঞ্চলের একাংশের সমর্থন পাবেন বলে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন। আঞ্চলিক সমিতির সমর্থন পাওয়ার জন্য দু’দলের নেতারাই সমিতির কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হয়েছেন। অপরদিকে ২০দলীয় জোটের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত দল হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ১৯৯৪ সালে মেয়র পদে খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে এ দল থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ওই নির্বাচনে তিনি ২৭ হাজারেরও বেশি ভোট পান। এরপর ২৪ বছরেও দলটি সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচন করেনি। জামায়াতের দাবি, এই দুই যুগে তাদের ভোট বেড়েছে দ্বিগুণ। এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি অ্যাড. শাহ আলম বলেন, সংগঠন বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন শক্তিশালী। বিভিন্ন সময় খুলনার ৬টি আসনের মধ্যে দুটি আসনেই আমাদের নির্বাচিত এমপি ছিলেন। এবারের কেসিসি নির্বাচনেও আমাদের পাঁচজন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। নগরীতে আমাদের ভোট ৬০ হাজারের উপরে। দলীয় মেয়র প্রার্থী না থাকায় ২০দলীয় জোট প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে জামায়াতের সমর্থন রয়েছে।
নগরীতে উর্দু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর ভোট প্রায় ২০ হাজার। এ ভোটের একটি বড় অংশ বরাবরই বিএনপি পেয়ে আসছে। এবারের নির্বাচনে এই ভোট পাওয়ার জন্য দুই প্রার্থীই মরিয়া। দু’দলের শীর্ষ নেতারাই বিহারী ক্যাম্পে তাদের ভোট পেতে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। এ ব্যাপারে উর্দু ভাষাভাষীদের সংগঠন এসপিজিআরসি’র খুলনার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। সব নেতারাই আমাদের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে আমরা চাই, নির্বাচিত মেয়র আমাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক ভূমিকা রাখবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ভোট এবার উভয় দলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাবে।
নগরীতে বস্তিবাসীর ভোট রয়েছে ১ লাখের মতো। এর আগের নির্বাচনগুলোতে এই ভোট অর্থের বিনিময়ে নিজের পক্ষে টানতে দেখা গেছে বিভিন্ন প্রার্থীকে। অনেকে মনে করছেন, সেই সময় আর নেই। এখন তাদের আয় রোজগার ভালো। তাদের ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়া শিখছে। সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভোট দেয়ার সম্ভাবনা কমেছে। তাই বিশাল এই ভোট ব্যাংক সম্পর্কে কারোই স্পষ্ট ধারণা নেই।
এদিকে শ্রমিক শ্রেণির ভোটারের একটি বড় অংশ খালিশপুর-দৌলতপুর এলাকার পাটকল শ্রমিক। সম্প্রতি বকেয়া মজুরির দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছিলো। তাদের ভোট নিয়ন্ত্রণের জন্য আওয়ামী লীগের নেতারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিজিএমসি’র মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেন। যে কারণে ক্ষমতাসীন লোকজনের দাবি, পাটকল শ্রমিকদের অধিকাংশ ভোট এবার নৌকায় যাবে।
খুলনায় হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১৫-২০টি মাদরাসা। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে এসব মাদরাসার শিক্ষক- কর্মচারীরা সরাসরি বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড নিয়ে সচিত্র লিফলেট ছেপে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণায় নামে। তখন তালুকদার খালেকের পরাজয়ের পেছনে হেফাজতের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এবারের নির্বাচনে তাদের তেমন কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। তবে তাদের এক নেতা খুলনা ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গোলাম কিবরিয়া ও খেলাফতে মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে গণসংযোগে দেখা গেছে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ২০২১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে তার আলোকে আমরা খুলনার মেয়র দেখতে চাই। যার মধ্যে দক্ষতা, সততা, স্বচ্ছতা ও সক্ষমতা আছে এমন মেয়রই খুলনার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন, আমরা তেমন ব্যক্তিকে পাশে চাই। নারী নেত্রী শামিমা সুলতানা শিলু বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে সৎ, যোগ্য ও প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিকে দেখতে চাই। যিনি হবেন পরিবেশ ও নাগরিকবান্ধব এবং যিনি সুন্দর নগরী গড়ে তুলবেন।
কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের প্রধান সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন বলেন, খুলনার রূপসা থেকে ফুলবাড়ী পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। খুলনার মানুষ দলমত নির্বিশেষে উন্নয়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সাধারণ মানুষের ভেতর একটি জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, যা ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটবে। লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে তালুকদার খালেক মেয়র নির্বাচিত হবেন।
২০দলীয় ঐক্যজোটের প্রধান সমন্বয়কারী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শফিকুল আলম মনা বলেন, গ্রেপ্তার-অত্যাচার-নির্যাতন করে মানুষের মন জয় করা যায় না। খুলনার মানুষ বারবার ধানের শীষের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। জনগণ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে ও স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বিপুল ভোটে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিজয়ী হবেন।
প্রস্তুতি সম্পন্ন: আগামীকাল সকাল ৮টা থকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল থেকেই মাঠে নেমেছ বিজিবি। এ নির্বাচনে সাড়ে ৯ হাজার পুলিশ, বিজিবি, এপি ব্যাটালিয়ান, আনসার-ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি থাকছে র্যাবের ৩২টি টহল টিম এবং ৪টি স্টাইকিং ফোর্স। একইসঙ্গে নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সিটি নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা তদারকি করতে সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করছে ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তারা কেন্দ্রভিত্তিক নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকবেন।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশনে প্রথমবারের মতো মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক (নৌকা), বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাত পাখা) ও সিপিবি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)। এছাড়া নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্র রয়েছে ২৫৪টি এবং ৩৫টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এবার ভোট কক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৫৬১টি। আর অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৫৫টি। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার রয়েছেন ৪ হাজার ৯৭২ জন।
কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী জানান, সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শাস্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য ব্যালট পেপার, সিল, কালিসহ নির্বাচনী মালামাল খুলনায় এসেছে। এসব মালামাল বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। এই নির্বাচনে ১ হাজার ৮১০টি ব্যালট বাক্স প্রয়োজন। আজ সকাল ১০টা থেকে স্ব স্ব কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারদের এসব মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, বিকাল থেকে ২২ সদস্যের নির্বাচন পর্যবেক্ষক টিম দায়িত্ব পালন করছে। তারা নির্বাচনের সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে। একইসঙ্গে গতকাল থেকে ১৬ই মে পর্যন্ত ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে ২টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। এ দু’টি কেন্দ্রে সোমবার সকাল ১০টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ইভিএম’র মাধ্যমে মক ভোটিং কার্যক্রম। এছাড়া তিনটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন- উল আহসান বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। রোববার দুপুরের পর থেকে ১৬ প্লাটুন বিজিবি মাঠে নেমেছে। এছাড়া নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন নিশ্চিতকরণে ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রোববার সকাল থেকে তারা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া সোমবার ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
র্যাব-৬’র অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাচনে র্যাবের ৩২টি টিম দায়িত্ব পালন করছে। যার প্রতিটি টিমে ৮ জন সদস্য থাকছে। এছাড়া ৪টি স্টাইকিং ফোর্স রয়েছে। এ টিমে ১০ জন করে থাকবে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সোনালী সেন বলেন, এ নির্বাচনে সাড়ে ৯ হাজার পুলিশ, বিজিবি, এপি ব্যাটালিয়ান ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। এর মধ্যে পুলিশের পাশাপাশি ১৬ প্লাটুন বিজিবি, সাড়ে ৪ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্য, ৯শ’ অঙ্গীভূত আনসার-ভিডিপি সদস্য, নির্বাচনের ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্রে ২৪ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া পুলিশের ৭০টি টিম দায়িত্ব পালন করবে। প্রত্যেক ম্যাজিস্ট্রেটের টিমের সঙ্গে একটি করে পুলিশের টিম থাকছে। ৮টি মোটরসাইকেল টিম এবং ১১টি পিকেট টিম দায়িত্ব পালন করবে।
সূত্রমতে, ২০১৩ সালের ১৫ই জুন কেসিসি নির্বাচনে এক লাখ ৮০ হাজার ৯৩ ভোট পেয়ে নগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেক এক লাখ ১৯ হাজার ৪২২ ভোট পেয়েছিলেন। অপর মেয়র প্রার্থী জাতীয় পার্টির জেলা সভাপতি শফিকুল ইসলাম মধু পেয়েছিলেন তিন হাজার ৭৪ ভোট। দলীয় মনোনয়নে প্রথমবারের এ নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৫ জন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত তালুকদার আবদুল খালেক, বিএনপি মনোনীত নজরুল ইসলাম মঞ্জু, জাতীয় পার্টির এসএম শফিকুর রহমান মুশফিক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক ও সিপিবি’র মিজানুর রহমান বাবু। এর মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছেন বড় দু’দলের মনোনীত আওয়ামী লীগের তালুকদার আবদুল খালেক ও বিএনপির নজরুল ইসলাম মঞ্জু।
বিগত দিনের নির্বাচনগুলোর ফলাফল অনুযায়ী, খুলনা মহানগরীতে দীর্ঘদিন ধরেই ভোটের ক্ষেত্রে বিএনপি এগিয়ে। খুলনা-২ নির্বাচনী এলাকায় মুসলিম লীগপন্থিদের প্রভাবের কারণে সংসদীয় কিংবা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বেশির ভাগ সময়ই বিএনপি’র প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছেন। কেসিসি’র আরেক অংশ খুলনা-৩ নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের প্রভাব বেশি বলে মন্তব্য বিশ্লেষকদের। তবে স্বাধীনতা-উত্তর কোনো দলই ধারাবাহিকভাবে এই আসনটি নিজেদের দখলে রাখতে পারেনি। কখনো আওয়ামী লীগ ও কখনো বিএনপির প্রার্থীরা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এই দুই সংসদীয় আসনের ভোটাররাই আগামীকালের নির্বাচনে ভোট দেবেন।
জানা গেছে, ২০১৩ সালের তুলনায় এবার নতুন ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৫২ হাজার। এসব ভোট উভয়দলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাবে বলে নগরবাসী মনে করছেন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে তালুকদার আবদুল খালেককে ইতিমধ্যেই সমর্থন দিয়েছেন ১৪ দল ও আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টি (জেপি)। আঞ্চলিকতার দিক দিয়ে খুলনায় অবস্থানকারী বরিশাল, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, গোপালগঞ্জ, যশোর ও নড়াইলের একটি অংশের সমর্থন পাবেন বলে আশা করছেন নৌকার সমর্থকরা।
তবে আঞ্চলিকতার অপর অংশ মাদারীপুর ও সাতক্ষীরার একটি বড় অংশের সমর্থন রয়েছে মঞ্জুর প্রতি। এছাড়া তিনি বরিশাল, ঝালকাঠি, বাগেরহাটসহ অন্যান্য অঞ্চলের একাংশের সমর্থন পাবেন বলে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আশা করছেন। আঞ্চলিক সমিতির সমর্থন পাওয়ার জন্য দু’দলের নেতারাই সমিতির কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হয়েছেন। অপরদিকে ২০দলীয় জোটের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ও সুসংগঠিত দল হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী। ১৯৯৪ সালে মেয়র পদে খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে এ দল থেকে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ওই নির্বাচনে তিনি ২৭ হাজারেরও বেশি ভোট পান। এরপর ২৪ বছরেও দলটি সিটি করপোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচন করেনি। জামায়াতের দাবি, এই দুই যুগে তাদের ভোট বেড়েছে দ্বিগুণ। এ ব্যাপারে খুলনা মহানগর জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি অ্যাড. শাহ আলম বলেন, সংগঠন বিগত যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন শক্তিশালী। বিভিন্ন সময় খুলনার ৬টি আসনের মধ্যে দুটি আসনেই আমাদের নির্বাচিত এমপি ছিলেন। এবারের কেসিসি নির্বাচনেও আমাদের পাঁচজন কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। নগরীতে আমাদের ভোট ৬০ হাজারের উপরে। দলীয় মেয়র প্রার্থী না থাকায় ২০দলীয় জোট প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে জামায়াতের সমর্থন রয়েছে।
নগরীতে উর্দু ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর ভোট প্রায় ২০ হাজার। এ ভোটের একটি বড় অংশ বরাবরই বিএনপি পেয়ে আসছে। এবারের নির্বাচনে এই ভোট পাওয়ার জন্য দুই প্রার্থীই মরিয়া। দু’দলের শীর্ষ নেতারাই বিহারী ক্যাম্পে তাদের ভোট পেতে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন। এ ব্যাপারে উর্দু ভাষাভাষীদের সংগঠন এসপিজিআরসি’র খুলনার সাধারণ সম্পাদক হুমায়ূন কবির বলেন, দীর্ঘদিন থেকে আমরা আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন করছি। সব নেতারাই আমাদের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে আমরা চাই, নির্বাচিত মেয়র আমাদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিক ভূমিকা রাখবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ভোট এবার উভয় দলের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যাবে।
নগরীতে বস্তিবাসীর ভোট রয়েছে ১ লাখের মতো। এর আগের নির্বাচনগুলোতে এই ভোট অর্থের বিনিময়ে নিজের পক্ষে টানতে দেখা গেছে বিভিন্ন প্রার্থীকে। অনেকে মনে করছেন, সেই সময় আর নেই। এখন তাদের আয় রোজগার ভালো। তাদের ছেলেমেয়েরাও লেখাপড়া শিখছে। সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে। কারো দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভোট দেয়ার সম্ভাবনা কমেছে। তাই বিশাল এই ভোট ব্যাংক সম্পর্কে কারোই স্পষ্ট ধারণা নেই।
এদিকে শ্রমিক শ্রেণির ভোটারের একটি বড় অংশ খালিশপুর-দৌলতপুর এলাকার পাটকল শ্রমিক। সম্প্রতি বকেয়া মজুরির দাবিতে তারা আন্দোলনে নেমেছিলো। তাদের ভোট নিয়ন্ত্রণের জন্য আওয়ামী লীগের নেতারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিজিএমসি’র মাধ্যমে বকেয়া পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেন। যে কারণে ক্ষমতাসীন লোকজনের দাবি, পাটকল শ্রমিকদের অধিকাংশ ভোট এবার নৌকায় যাবে।
খুলনায় হেফাজতে ইসলামের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ১৫-২০টি মাদরাসা। ২০১৩ সালের সিটি নির্বাচনে এসব মাদরাসার শিক্ষক- কর্মচারীরা সরাসরি বিএনপির মেয়র প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। এমনকি শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ড নিয়ে সচিত্র লিফলেট ছেপে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রচারণায় নামে। তখন তালুকদার খালেকের পরাজয়ের পেছনে হেফাজতের ভূমিকা ছিল উল্লেখযোগ্য। এবারের নির্বাচনে তাদের তেমন কোনো কর্মকাণ্ড চোখে পড়েনি। তবে তাদের এক নেতা খুলনা ইমাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা গোলাম কিবরিয়া ও খেলাফতে মজলিসের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মাওলানা সাখাওয়াত হোসেনকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর পক্ষে গণসংযোগে দেখা গেছে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, ২০২১ সালের বাংলাদেশ কেমন হবে তার আলোকে আমরা খুলনার মেয়র দেখতে চাই। যার মধ্যে দক্ষতা, সততা, স্বচ্ছতা ও সক্ষমতা আছে এমন মেয়রই খুলনার উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবেন, আমরা তেমন ব্যক্তিকে পাশে চাই। নারী নেত্রী শামিমা সুলতানা শিলু বলেন, একজন নাগরিক হিসেবে সৎ, যোগ্য ও প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিকে দেখতে চাই। যিনি হবেন পরিবেশ ও নাগরিকবান্ধব এবং যিনি সুন্দর নগরী গড়ে তুলবেন।
কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেকের প্রধান সমন্বয়কারী ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন বলেন, খুলনার রূপসা থেকে ফুলবাড়ী পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মধ্যে নৌকার পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। খুলনার মানুষ দলমত নির্বিশেষে উন্নয়নের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সাধারণ মানুষের ভেতর একটি জাগরণ সৃষ্টি হয়েছে, যা ভোটের মাধ্যমে প্রতিফলন ঘটবে। লক্ষাধিক ভোটের ব্যবধানে তালুকদার খালেক মেয়র নির্বাচিত হবেন।
২০দলীয় ঐক্যজোটের প্রধান সমন্বয়কারী জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. শফিকুল আলম মনা বলেন, গ্রেপ্তার-অত্যাচার-নির্যাতন করে মানুষের মন জয় করা যায় না। খুলনার মানুষ বারবার ধানের শীষের পক্ষে ভোট দিয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না। জনগণ ভোটকেন্দ্রে যেতে পারলে ও স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারলে ব্যালট বিপ্লবের মাধ্যমে বিপুল ভোটে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিজয়ী হবেন।
প্রস্তুতি সম্পন্ন: আগামীকাল সকাল ৮টা থকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রস্তুত নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গতকাল থেকেই মাঠে নেমেছ বিজিবি। এ নির্বাচনে সাড়ে ৯ হাজার পুলিশ, বিজিবি, এপি ব্যাটালিয়ান, আনসার-ভিডিপি সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। পাশাপাশি থাকছে র্যাবের ৩২টি টহল টিম এবং ৪টি স্টাইকিং ফোর্স। একইসঙ্গে নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও সিটি নির্বাচনের আচরণ বিধিমালা তদারকি করতে সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করছে ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। তারা কেন্দ্রভিত্তিক নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে দায়িত্বে থাকবেন।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশনে প্রথমবারের মতো মেয়র পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এবার মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আবদুল খালেক (নৌকা), বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু (ধানের শীষ), জাতীয় পার্টি মনোনীত মেয়র প্রার্থী শফিকুর রহমান মুশফিক (লাঙল), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত মেয়র প্রার্থী মাওলানা মুজ্জাম্মিল হক (হাত পাখা) ও সিপিবি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মো. মিজানুর রহমান বাবু (কাস্তে)। এছাড়া নগরীর ৩১টি সাধারণ ওয়ার্ডে ১৪৮ জন এবং ১০টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ৩৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২৮৯টি কেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ (ঝুঁকিপূর্ণ) কেন্দ্র রয়েছে ২৫৪টি এবং ৩৫টি সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে পুলিশ। এবার ভোট কক্ষ রয়েছে ১ হাজার ৫৬১টি। আর অস্থায়ী ভোট কক্ষ ৫৫টি। প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পোলিং অফিসার রয়েছেন ৪ হাজার ৯৭২ জন।
কেসিসি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী জানান, সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শাস্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের ভোটগ্রহণের জন্য ব্যালট পেপার, সিল, কালিসহ নির্বাচনী মালামাল খুলনায় এসেছে। এসব মালামাল বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সে রাখা হয়েছে। এই নির্বাচনে ১ হাজার ৮১০টি ব্যালট বাক্স প্রয়োজন। আজ সকাল ১০টা থেকে স্ব স্ব কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসারদের এসব মালামাল বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি আরো জানান, বিকাল থেকে ২২ সদস্যের নির্বাচন পর্যবেক্ষক টিম দায়িত্ব পালন করছে। তারা নির্বাচনের সকল বিষয় পর্যবেক্ষণ করছে। একইসঙ্গে গতকাল থেকে ১৬ই মে পর্যন্ত ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন। তিনি বলেন, এ নির্বাচনে ২টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে। এ দু’টি কেন্দ্রে সোমবার সকাল ১০টা হতে দুপুর ২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে ইভিএম’র মাধ্যমে মক ভোটিং কার্যক্রম। এছাড়া তিনটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ চলছে।
খুলনা জেলা প্রশাসক মো. আমিন- উল আহসান বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রয়েছে। রোববার দুপুরের পর থেকে ১৬ প্লাটুন বিজিবি মাঠে নেমেছে। এছাড়া নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা প্রতিপালন নিশ্চিতকরণে ৩১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। রোববার সকাল থেকে তারা নিজ নিজ অধিক্ষেত্রে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া সোমবার ১০ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
র্যাব-৬’র অধিনায়ক খোন্দকার রফিকুল ইসলাম জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক নির্বাচনে র্যাবের ৩২টি টিম দায়িত্ব পালন করছে। যার প্রতিটি টিমে ৮ জন সদস্য থাকছে। এছাড়া ৪টি স্টাইকিং ফোর্স রয়েছে। এ টিমে ১০ জন করে থাকবে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সোনালী সেন বলেন, এ নির্বাচনে সাড়ে ৯ হাজার পুলিশ, বিজিবি, এপি ব্যাটালিয়ান ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছে। এর মধ্যে পুলিশের পাশাপাশি ১৬ প্লাটুন বিজিবি, সাড়ে ৪ হাজার আনসার-ভিডিপি সদস্য, ৯শ’ অঙ্গীভূত আনসার-ভিডিপি সদস্য, নির্বাচনের ঝুঁকিপূর্ণ (গুরুত্বপূর্ণ) কেন্দ্রে ২৪ জন এবং সাধারণ কেন্দ্রে ২২ জন করে পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া পুলিশের ৭০টি টিম দায়িত্ব পালন করবে। প্রত্যেক ম্যাজিস্ট্রেটের টিমের সঙ্গে একটি করে পুলিশের টিম থাকছে। ৮টি মোটরসাইকেল টিম এবং ১১টি পিকেট টিম দায়িত্ব পালন করবে।
No comments