‘যেন কংক্রিটের কবরে রাখা হয়েছিল আমাকে’ by মিছবাহ পাটওয়ারী
১৩
বছর যুক্তরাষ্ট্রের কারাগারে বন্দিজীবন কাটিয়েছেন কাতারের নাগরিক আলি
আল-মাররি। পড়াশুনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে গ্রেফতার হন ৯/১১-এর ঘটনায়
সন্দেহভাজন হিসেবে। বন্দিদশায় ভয়াবহ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হন আলি আল-মাররি।
তার ভাষায়, ‘আমাকে সমকামের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি
দেওয়া হচ্ছিল। জানতাম আমার কোনও অধিকার নেই। আমার সেলে ছয়টি ধাপ ছিল। হাঁটু
ভেঙে ঘুমাতে হতো। কখন দিন আর কখন রাত, তা দেখতে পেতাম না। মনে হতো যেন
কংক্রিটের কবরে রয়েছি। আমি জানি আমেরিকানরা ক্ষুব্ধ। কিন্তু সেটি তাদের
আমার সঙ্গে এমন আচরণের অধিকার দেয়নি। পরীক্ষার সময় আপনার নৈতিকতা ও মান
পরিবর্তন করা উচিত নয়। দুর্ভাগ্যবশত, সেই সময়ে আপনি নির্দোষ প্রমাণিত না
হওয়া পর্যন্ত দোষী। আমেরিকান বিচার ও সংবিধানের যাবতীয় গর্জন, আস্ফালন
জানালার বাইরে চলে যায়। মনে হতো, তারা আমাকে গুলি করবে, ঝুলিয়ে দেবে।’
অনিদ্রা, জিজ্ঞাসাবাদ ও নিঃসঙ্গতার মুহূর্তগুলো পর্যবেক্ষণ করা হতো নজরদারি ক্যামেরার মাধ্যমে। ২০০৪ সালের ১১ মার্চ জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের অংশ হিসেবে তার গলায় মোজা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। হাত-পায়ে বেড়ি পরা অবস্থায় ফিতা দিয়ে মাথা প্রায় আবৃত করে ফেলা হয়। তার ভাষায়, ‘আমি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম, মারা যাচ্ছিলাম।’ নৌ ব্রিগেডটির ১১ মার্চের নথি অনুযায়ী, কোরআনের আয়াত শোনার হতাশা থেকে মুখে ফিতা বেঁধে দেওয়া হয়।
আলি আল-মাররি বলেন, ‘আমেরিকার অন্য যেকোনও কয়েদির চেয়ে আমার সঙ্গে নিকৃষ্টতম আচরণ করা হয়েছিল। আমার কোনও ম্যাট্রেস, কম্বল বা বালিশ ছিল না। কোনও কোরআন বা জায়নামাজ ছিল না। মক্কা বা কিবলা কোন দিকে, সে সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা ছিল না। তাই আমি প্রত্যেক সময়ে প্রত্যেক দিকেই প্রার্থনা করেছি। আমি ভীত ছিলাম, মৃত্যুর ভয় ছিল। সন্তানদের জন্য আমার বাড়ি ফেরার কাতরতা ছিল। বাতাসের গন্ধ নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাদের এটা বুঝতে দিতে চাইতাম না।’
১৩ বছর কারা প্রকোষ্ঠে কাটানো এই কাতারের নাগরিক বলেন, নিঃসঙ্গতার সাত বছরে আমি আমার সন্তানকে মিস করেছে, স্ত্রীর শূন্যতা অনুভব করেছি। মাকে চুম্বনের চেয়েও আগে তার কাছে নিজেকে নির্দোষ হিসেবে তুলে ধরার প্রয়োজন বেশি ছিল। কিন্তু সামরিক কারাগারে টানেলের শেষে কোনও আলো নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমার সাজার সেরা সময়টা ছিল ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। বেরিয়ে আসা।’ দেশে ফিরে নায়কোচিত সংবর্ধনা পান আলি আল-মাররি। স্বয়ং কাতারের প্রধানমন্ত্রী তাকে ফোন করেন। তার দেশে ফেরা উদযাপন করা হয়। আলি আল-মাররি বলেন, ‘লোকজন আমাকে রাস্তায় থামিয়ে দিচ্ছিল, তারা সেলফি তুলছিল। তারা কী উদযাপন করছিল? কারা প্রকোষ্ঠে দিনগোনা একজন বন্দির কারামুক্তি?’
আলি আল-মাররি বলেন, ‘তারা বিশ্বাস করে না যে আমি সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী একটি আপেক্ষিক শব্দ। একজনের কাছে সন্ত্রাসী আরেকজনের কাছে বীর। আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিটিশদের কাছে একজন সন্ত্রাসী ছিল। পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে আমি একজন সন্ত্রাসী। কিন্তু আরবদের কাছে আমি তা নই, এখানে আমি একজন বীর। তাহলে কি ওসামা বিন লাদেনও একজন বীর? তারা আমাকে সন্ত্রাসী বা বীর যাই বলুক না কেন, আমি এসবে ভ্রূক্ষেপ করি না।’ তিনি বলেন, ‘আমি একটি মাস্টার্স ডিগ্রি এবং হয়তো একটি পিএইচডি’র পরিকল্পনা করেছিলাম। আমেরিকান আতিথেয়তায় আমার পিএইচডি শেষ হয়েছে।’
এফবিআই’র পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে দ্য গার্ডিয়ান’কে বলা হয়েছে, এই মামলার ব্যাপারে তারা কোনও মন্তব্য করবে না। তবে এফবিআই নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত নয়। বরং জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে তারা সঠিক তথ্য প্রাপ্তির সবচেয়ে কার্যকর উপায় প্রয়োগ করে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার ‘স্নিপার টেররিস্ট’ হিসেবে তাকে গ্রেফতার করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। গ্রেফতারের পর আলি আল-মাররিকে ‘শত্রুযোদ্ধা’ হিসেবে ঘোষণা দেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। কোনও ধরনের অভিযোগ গঠন ছাড়াই ছয় বছর ধরে তাকে সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি নৌ ব্রিগেডে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়। ওই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন; এমন ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাকে কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারের বাইরে আটকে রাখা হয়েছিল।
২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসামরিক আদালত আল কায়েদাকে উপাদানগত সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। তবে রায়ে তার আগের বন্দিদশা বিবেচনার কথা বলা হয়।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা অ্যাডভোকেসি গ্রুপ কেজ-এর পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন আলি আল-মাররি। তিনি চাইছেন, মার্কিন সরকার যেন তার বিরুদ্ধে আরোপিত মামলা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিবেচনা করে। তার ভাষায়, ‘এ ব্যাপারে আমি তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি।’
অনিদ্রা, জিজ্ঞাসাবাদ ও নিঃসঙ্গতার মুহূর্তগুলো পর্যবেক্ষণ করা হতো নজরদারি ক্যামেরার মাধ্যমে। ২০০৪ সালের ১১ মার্চ জিজ্ঞাসাবাদে নির্যাতনের অংশ হিসেবে তার গলায় মোজা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। হাত-পায়ে বেড়ি পরা অবস্থায় ফিতা দিয়ে মাথা প্রায় আবৃত করে ফেলা হয়। তার ভাষায়, ‘আমি শ্বাসরুদ্ধ হয়ে যাচ্ছিলাম, মারা যাচ্ছিলাম।’ নৌ ব্রিগেডটির ১১ মার্চের নথি অনুযায়ী, কোরআনের আয়াত শোনার হতাশা থেকে মুখে ফিতা বেঁধে দেওয়া হয়।
আলি আল-মাররি বলেন, ‘আমেরিকার অন্য যেকোনও কয়েদির চেয়ে আমার সঙ্গে নিকৃষ্টতম আচরণ করা হয়েছিল। আমার কোনও ম্যাট্রেস, কম্বল বা বালিশ ছিল না। কোনও কোরআন বা জায়নামাজ ছিল না। মক্কা বা কিবলা কোন দিকে, সে সম্পর্কে আমার কোনও ধারণা ছিল না। তাই আমি প্রত্যেক সময়ে প্রত্যেক দিকেই প্রার্থনা করেছি। আমি ভীত ছিলাম, মৃত্যুর ভয় ছিল। সন্তানদের জন্য আমার বাড়ি ফেরার কাতরতা ছিল। বাতাসের গন্ধ নিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাদের এটা বুঝতে দিতে চাইতাম না।’
১৩ বছর কারা প্রকোষ্ঠে কাটানো এই কাতারের নাগরিক বলেন, নিঃসঙ্গতার সাত বছরে আমি আমার সন্তানকে মিস করেছে, স্ত্রীর শূন্যতা অনুভব করেছি। মাকে চুম্বনের চেয়েও আগে তার কাছে নিজেকে নির্দোষ হিসেবে তুলে ধরার প্রয়োজন বেশি ছিল। কিন্তু সামরিক কারাগারে টানেলের শেষে কোনও আলো নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমার সাজার সেরা সময়টা ছিল ২০১৫ সালের ১৮ জানুয়ারি। বেরিয়ে আসা।’ দেশে ফিরে নায়কোচিত সংবর্ধনা পান আলি আল-মাররি। স্বয়ং কাতারের প্রধানমন্ত্রী তাকে ফোন করেন। তার দেশে ফেরা উদযাপন করা হয়। আলি আল-মাররি বলেন, ‘লোকজন আমাকে রাস্তায় থামিয়ে দিচ্ছিল, তারা সেলফি তুলছিল। তারা কী উদযাপন করছিল? কারা প্রকোষ্ঠে দিনগোনা একজন বন্দির কারামুক্তি?’
আলি আল-মাররি বলেন, ‘তারা বিশ্বাস করে না যে আমি সন্ত্রাসী। সন্ত্রাসী একটি আপেক্ষিক শব্দ। একজনের কাছে সন্ত্রাসী আরেকজনের কাছে বীর। আমেরিকার স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিটিশদের কাছে একজন সন্ত্রাসী ছিল। পশ্চিমা দুনিয়ার কাছে আমি একজন সন্ত্রাসী। কিন্তু আরবদের কাছে আমি তা নই, এখানে আমি একজন বীর। তাহলে কি ওসামা বিন লাদেনও একজন বীর? তারা আমাকে সন্ত্রাসী বা বীর যাই বলুক না কেন, আমি এসবে ভ্রূক্ষেপ করি না।’ তিনি বলেন, ‘আমি একটি মাস্টার্স ডিগ্রি এবং হয়তো একটি পিএইচডি’র পরিকল্পনা করেছিলাম। আমেরিকান আতিথেয়তায় আমার পিএইচডি শেষ হয়েছে।’
এফবিআই’র পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে দ্য গার্ডিয়ান’কে বলা হয়েছে, এই মামলার ব্যাপারে তারা কোনও মন্তব্য করবে না। তবে এফবিআই নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত নয়। বরং জিজ্ঞাসাবাদের ক্ষেত্রে তারা সঠিক তথ্য প্রাপ্তির সবচেয়ে কার্যকর উপায় প্রয়োগ করে।
২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের টুইন টাওয়ারে হামলার ‘স্নিপার টেররিস্ট’ হিসেবে তাকে গ্রেফতার করে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। গ্রেফতারের পর আলি আল-মাররিকে ‘শত্রুযোদ্ধা’ হিসেবে ঘোষণা দেন জর্জ ডব্লিউ বুশ। কোনও ধরনের অভিযোগ গঠন ছাড়াই ছয় বছর ধরে তাকে সাউথ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি নৌ ব্রিগেডে নির্জন কারাবাসে রাখা হয়। ওই ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক নন; এমন ব্যক্তিদের মধ্যে তিনিই একমাত্র ব্যক্তি, যাকে কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগারের বাইরে আটকে রাখা হয়েছিল।
২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসামরিক আদালত আল কায়েদাকে উপাদানগত সহায়তা দেওয়ার মাধ্যমে ষড়যন্ত্রের দায়ে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেন। তবে রায়ে তার আগের বন্দিদশা বিবেচনার কথা বলা হয়।
বর্তমানে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা অ্যাডভোকেসি গ্রুপ কেজ-এর পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন আলি আল-মাররি। তিনি চাইছেন, মার্কিন সরকার যেন তার বিরুদ্ধে আরোপিত মামলা নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিবেচনা করে। তার ভাষায়, ‘এ ব্যাপারে আমি তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছি।’
No comments