খালেদা ও নির্বাচন ইস্যুতে কূটনীতিকদের বিএনপির ব্রিফিং
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEioFRUDPxcupa_jHg6p08CLDS2gWcRSdHygL6lZo5bO_smpIwW9_1UP2Sj3UmmQBFzrHTq97b-bzYtl450E6T5lTZ2nF9beyInkm8wI_t_RfQv99Moapp-sc0LwMBqzsXvzwcb1Z-pEGRM/s400/%25E0%25A6%2595%25E0%25A7%2582%25E0%25A6%259F%25E0%25A6%25A8%25E0%25A7%2580%25E0%25A6%25A4%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2595%25E0%25A6%25A6%25E0%25A7%2587%25E0%25A6%25B0+%25E0%25A6%25AC%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%258F%25E0%25A6%25A8%25E0%25A6%25AA%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25B0+%25E0%25A6%25AC%25E0%25A7%258D%25E0%25A6%25B0%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%25AB%25E0%25A6%25BF%25E0%25A6%2582.jpg)
বিএনপি
চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতি ও আগামী নির্বাচন নিয়ে
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকদের ব্রিফ করেছে বিএনপি। দলের চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়া কারাগারে যথাযথ চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে কূটনৈতিকদের অবহিত
করেছেন দলটির নেতারা। সেই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে
কূটনীতিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান
রাজনৈতিক কার্যালয়ে গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত
কূটনীতিকদের কাছে সার্বিক পরিস্থিতি ব্রিফ করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।
বৈঠকে অংশ নেয়া এক নেতা বলেন, জাতীয় রাজনীতি ও আগামী জাতীয় নির্বাচন ,
দেশের আইনশৃঙ্খলা ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা
জিয়ার শারীরিক পরিস্থিতিসহ সার্বিক বিষয়ে কূটনীতিকদের কাছে অবহিত করা
হয়েছে। কূটনীতিকদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
লিখিত বক্তব্য দেয়ার পর তিনিসহ সিনিয়র নেতারা নানা প্রশ্নের জবাব দেন।
সূত্র জানায়, বৈঠকের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব তিন পৃৃষ্ঠার লিখিত বক্তব্য
রাখেন। এই বক্তব্যে মূলত খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বিষয়টিকেই বেশি প্রাধান্য
দেয়া হয়। তার অসুস্থতার বিষয়ে দলের উদ্বেগের কথা জানিয়ে মির্জা আলমগীর
বলেছেন, একটি পরিত্যক্ত কারাগারের পুরোনো ভবনে খালেদা জিয়াকে বন্দি করে
রাখা হয়েছে। কারাগারের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের কারণে তিনি বেশি অসুস্থ হয়ে
পড়েছেন। তিনি অর্থপেডিক রোগী হলেও তার জন্য অর্থপেডিক বেড দেয় হয়নি। একজন
সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে বা বয়স বিবেচনায় কারাকর্তৃপক্ষ তাকে ন্যূনতম
সুযোগ-সুবিধা দেয়নি। কারাগারে খালেদা জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তার
সুচিকিৎসার কোনো উদ্যোগই নেয়নি। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরাও খালেদা জিয়ার অসুস্থতা
নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তারা খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য
বিশেষায়িত হাসপাতালে নেয়ার পরামর্শ দিলেও সরকার সময়ক্ষেপণ করছে। এমন
পরিস্থিতিতে তার সুচিকিৎসার স্বার্থে জামিন প্রয়োজন। এ ছাড়া মামলাটি
রাজনৈতিক এবং তাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কারাগারে বন্দি করে রাখা হয়েছে।
আগামীকাল মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির রায়ের দিন ধার্য রয়েছে
উল্লেখ করে মির্জা আলমগীর বলেন, দেশের মামলার ইতিহাসে এ ধরনের মামলায় জামিন
পাওয়ার প্রতিবন্ধকতার কোনো নজির না থাকলেও তার ক্ষেত্রে হচ্ছে। তাকে
রাজনৈতিকভাবে কারাবন্দি করে রাখার জন্যই এটা করা হচ্ছে। কূটনীতিকদের কাছে
গাজীপুর ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়েও কথা বলেন মির্জা ফখরুল। তিনি
বলেন, এই দুটি সিটি নির্বাচনেও সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে পারেনি
নির্বাচন কমিশন। গাজীপুর সিটি নির্বাচন স্থগিত হওয়ার দিনই দলের প্রবীণ নেতা
আবদুল্লাহ আল নোমানসহ ১২ জনকে আটক করে পুলিশ। নোমানকে পরে ছেড়ে দিলেও
অন্যদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে মিথ্যা মামলায়। মামলার এজাহারে গাড়ি পোড়ানোর
কথা বলা হলেও সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে- ওই দিন কোনো গাড়িই পোড়ানো
হয়নি। তারা এ সংক্রান্ত একটি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনও কূটনীতিকদের সরবরাহ
করেন। খুলনা সিটি নিয়েও কূটনীতিকদের কাছে নিজেদের আশঙ্কা তুলে ধরেন বিএনপি
নেতারা। দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিরোধী দলের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড
সংকোচন করে গ্রেপ্তারসহ হুমকি-ধামকির বিষয়ে তাদের জানিয়েছেন। বৈঠক সূত্র
জানায়, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কূটনীতিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি
নেতারা বলেন- বিএনপি গণতান্ত্রিক দল এবং বর্তমানে সবচেয়ে জনপ্রিয় দল।
নির্বাচনে গেলে এবং জনগণ ভোট দিতে পারলে বিএনপি বিজয়ী হবে। তাহলে বিএনপি
কেন নির্বাচনে যাবে না? কিন্তু বিএনপির সামনে নানারকম প্রতিবন্ধকতার দেয়াল
তুলে রেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার। বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সে
নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দলই
এটা বিশ্বাস করে। তাই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে
বিএনপিসহ সরকারের বাইরে থাকা সব রাজনৈতিক দল। ইউরোপীয় কয়েকজন কূটনীতিকের
প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন করে বিএনপি নেতারা। তারা বলেন, ইউরোপে কি
কোনো রাজনৈতিক দলকে আপনারা- নির্বাচনে যাবে কি না এমন প্রশ্ন করেন? আপনারা
সে প্রশ্ন করেন না কারণ সেখানে প্রতিটি গণতান্ত্রিক দল নির্বাচনে যায় এবং
সবার জন্য সমান অধিকার ও সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে তার উল্টো
ঘটনা ঘটে। আমরা নির্বাচনে যাবো কি না- আপনাদের এমন প্রশ্নের মধ্যেই আপনাদের
উত্তর পাবেন। আপনাদের প্রশ্নই প্রমাণ করে, বাংলাদেশে এমন কোনো পরিস্থিতি
আছে যেখানে বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। বিএনপি
নেতাদের মধ্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন,
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. আবদুল মইন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী,
চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান, সাবিহউদ্দিন আহমেদ, আন্তর্জাতিক বিষয়ক
সহ-সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা ও নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল
বৈঠকে অংশ নেন। কূটনীতিকদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা,
ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তান, ভারত, নরওয়ে, স্পেন, জাপান, ইউএনডিপি,
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
No comments