ভালো নেই সিদ্দিকুর by মারুফ কিবরিয়া
‘চাকরি
আছে, স্থায়ী নয়। বেতন খুবই সামান্য। যা দিয়ে দিনাতিপাত করা কঠিন। যে
বাসাটি ভাড়া নিয়ে থাকি সেটা খুব ছোট। এক রুমে মা আর ভাগনে সেলিমকে নিয়ে
থাকতে হয়। নিরাপত্তাও নেই। একবার মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা চুরি হয়ে গেছে।
তাছাড়া ঘরটি বসবাস অযোগ্য। মাকে নিয়ে এই বাসাটিতে খুব কষ্টে আছি। প্রতিটি
মুহূর্ত খারাপ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কাটাতে হয়’। কথাগুলো বলছিলেন গত বছরের
২০শে জুলাই রাজধানীর শাহবাগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ৭ কলেজের
পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশের দাবিতে আন্দোলনে নেমে পুলিশের টিয়ারশেলের আঘাতে
দৃষ্টিশক্তি হারানো সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী সিদ্দিকুর রহমান।
মানবজমিনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, মাকে নিয়ে মোটেও ভালো নেই তিনি। যে
বেতন পান তা দিয়ে দিনযাপন করা সিদ্দিকুরের জন্য কষ্টসাধ্যে হয়ে উঠেছে।
বেগুনবাড়িতে যে বাসায় থাকেন সেটি থাকার উপযুক্ত নয়।
গত বছরের ওই ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, কে নেবে তার দায়িত্ব? তার সহপাঠীরা সিদ্দিকুরের একটি চাকরির দাবি জানায় সরকারের কাছে। সরকারের পক্ষ থেকে সে দাবিও মানা হয়। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর সাত রাস্তায় অবস্থিত সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে অস্থায়ী ভিত্তিতে টেলিফোন অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়া হয় তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এ ছাত্রকে। এ সময় তার বেতন ধরা হয় ১৩ হাজার টাকা। অস্থায়ী এ চাকরিতে ‘নো ওয়ার্ক, নো পেমেন্ট’ ব্যবস্থা। অর্থাৎ যেদিন কাজ করবেন সেদিনের টাকাই দেয়া হয়। অনুপস্থিত থাকলে ওইদিনের টাকা দেয়া হয় না।
বর্তমানে সিদ্দিকুর তার মা ছুলেমা খাতুনকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের মধ্যে বেগুনবাড়িতে একটি বাসার নিচতলার একটি ঘরে ভাড়া থাকেন। ওই রুমের ভাড়া বিদ্যুৎ বিলসহ প্রতিমাসে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। তাই বেতনের টাকা দিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সিদ্দিকুরকে। মা ও এক ভাগনেসহ ওই বাসায় থাকেন তিনি। কিন্তু থাকার মতো ভালো পরিবেশ নেই। যে বেতন পান তা দিয়ে ভালো কোনো বাসায় উঠতেও পারছেন না । সিদ্দিকুর বলেন, প্রত্যেক সন্তান চায় তার মা-বাবাকে নিয়ে যেন ভালোভাবে বেঁচে থাকে। আমার তো বাবা নেই। মা-ই সব। কিন্তু সারাজীবন কষ্ট করে আসা এই মায়ের কষ্ট আমি কিছুতেই দূর করতে পারছি না। এক ঘরের মধ্যে তিনজন থাকতে হয়। আর ওই ছোট্ট ঘরের যে অবস্থা তাতে আমারই দম বন্ধ হয়ে আসে। মায়ের জন্য আলাদা একটি রুম দরকার হয়। আমার জন্য একটি। এরকম একটি ভালো বাসা ভাড়া নিতে গেলে মাস শেষে প্রচুর টাকা গুনতে হবে। সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর এই বাসায় কোনো নিরাপত্তা নেই। একবার মা ছিলেন না। আমি একা। এই সুযোগে চোর এসে আমার মোবাইল, টাকা পয়সাসহ কিছু মালামাল নিয়ে গেছে।
দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর থেকে চাকরি পেলেও কষ্ট পিছু ছাড়ছে না উল্লেখ করে সিদ্দিকুর বলেন, চাকরি পেয়েছি। এটা তো সরকারের দেয়া। এতে আমার কষ্ট কোনো অবস্থাতেই লাঘব হচ্ছে না। বরং দিনকে দিন চিন্তা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মায়ের জন্য। মা প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়। মাঝে একবার অসুস্থ হয়ে গেলে ময়মনসিংহ নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। কারণ ঢাকায় করাতে গেলে অনেক টাকা পয়সার হিসাব করতে হবে। এখন আমার একটাই চাওয়া- মাকে নিয়ে যদি একটি ভালো বাসায় উঠতে পারতাম।
চাকরির স্থায়ী হওয়া প্রসঙ্গে সিদ্দিকুর বলেন, এখানে তো এক বছরের কথা আগেই বলা হয়েছে। এক বছর আগে চাকরি স্থায়ী হবে না। তারপর স্যারকে বলেছি। বলেছে দেখবেন। তবে আশাবাদী হওয়ার মতো তেমন কিছু নেই। সিদ্দিকুর আরো বলেন, এ চাকরিটা সরকার তো আমাকে দিয়েছে। আমি অর্জন করে পাইনি। পড়ালেখা শেষ করে একটি ভালো চাকরির জন্য আবেদন করবো।
অফিসে আসা যাওয়ায় অসুবিধার কথা বলতে গিয়ে সিদ্দিকুর বলেন, চলাফেরায় খুব কষ্ট। আমার যদি দৃষ্টিশক্তি থাকতো তাহলে বাসে চলাফেরা করতে পারতাম। কিংবা হেঁটে হলেও অফিসে আসতে যেতে পারতাম। কিন্তু আমাকে চলতে ফিরতে রিকশা কিংবা অটোরিকশা নিতে হয়। আর কেউ একজন না থাকলে আমি পারি না। ভাগনে সেলিমই আমাকে অফিসে আনা নেয়া করে। এখন রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করতে গেলে অনেক টাকা চলে যায়। প্রতিদিন আমার আসা যাওয়ায় একশ টাকার মতো খরচ হয়। সব গুনতে গেলে মাস শেষে কোনো টাকা থাকে না। বড় ভাই বাড়িতে কৃষি কাজ করে। সে খাত থেকে চালটা আসে। নয়তো আরো বড় সমস্যায় পড়ে যেতাম।
অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে থাকলেও সিদ্দিকুর শারীরিকভাবে বেশ সুস্থ আছেন বলে জানান। তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থ আছি। কিন্তু মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে খুব টেনশন কাজ করে। আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
পড়ালেখা আর চাকরির পাশাপাশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য গড়া একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সিদ্দিকুর। বাংলাদেশ ভিস্যুয়েলি ইম্পেয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস)-এ প্রতি শুক্র ও শনিবার প্রশিক্ষণ নিতে যান তিনি। সিদ্দিকুর বলেন, চাকরির পাশাপাশি এ প্রশিক্ষণটি নিয়ে রাখছি। ভবিষ্যতে কোনো কাজে লাগানো যেতে পারে। এখানে আমার মতো অনেক দৃষ্টিশক্তি হারানো তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মিডিয়ারই এক আপু এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।
গত বছরের ওই ঘটনায় দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে। প্রশ্ন ওঠে, কে নেবে তার দায়িত্ব? তার সহপাঠীরা সিদ্দিকুরের একটি চাকরির দাবি জানায় সরকারের কাছে। সরকারের পক্ষ থেকে সে দাবিও মানা হয়। গত ১৩ই সেপ্টেম্বর রাজধানীর সাত রাস্তায় অবস্থিত সরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডে অস্থায়ী ভিত্তিতে টেলিফোন অপারেটর পদে নিয়োগ দেয়া হয় তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এ ছাত্রকে। এ সময় তার বেতন ধরা হয় ১৩ হাজার টাকা। অস্থায়ী এ চাকরিতে ‘নো ওয়ার্ক, নো পেমেন্ট’ ব্যবস্থা। অর্থাৎ যেদিন কাজ করবেন সেদিনের টাকাই দেয়া হয়। অনুপস্থিত থাকলে ওইদিনের টাকা দেয়া হয় না।
বর্তমানে সিদ্দিকুর তার মা ছুলেমা খাতুনকে নিয়ে তেজগাঁওয়ের মধ্যে বেগুনবাড়িতে একটি বাসার নিচতলার একটি ঘরে ভাড়া থাকেন। ওই রুমের ভাড়া বিদ্যুৎ বিলসহ প্রতিমাসে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। তাই বেতনের টাকা দিয়ে চলতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সিদ্দিকুরকে। মা ও এক ভাগনেসহ ওই বাসায় থাকেন তিনি। কিন্তু থাকার মতো ভালো পরিবেশ নেই। যে বেতন পান তা দিয়ে ভালো কোনো বাসায় উঠতেও পারছেন না । সিদ্দিকুর বলেন, প্রত্যেক সন্তান চায় তার মা-বাবাকে নিয়ে যেন ভালোভাবে বেঁচে থাকে। আমার তো বাবা নেই। মা-ই সব। কিন্তু সারাজীবন কষ্ট করে আসা এই মায়ের কষ্ট আমি কিছুতেই দূর করতে পারছি না। এক ঘরের মধ্যে তিনজন থাকতে হয়। আর ওই ছোট্ট ঘরের যে অবস্থা তাতে আমারই দম বন্ধ হয়ে আসে। মায়ের জন্য আলাদা একটি রুম দরকার হয়। আমার জন্য একটি। এরকম একটি ভালো বাসা ভাড়া নিতে গেলে মাস শেষে প্রচুর টাকা গুনতে হবে। সেটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আর এই বাসায় কোনো নিরাপত্তা নেই। একবার মা ছিলেন না। আমি একা। এই সুযোগে চোর এসে আমার মোবাইল, টাকা পয়সাসহ কিছু মালামাল নিয়ে গেছে।
দৃষ্টিশক্তি হারানোর পর থেকে চাকরি পেলেও কষ্ট পিছু ছাড়ছে না উল্লেখ করে সিদ্দিকুর বলেন, চাকরি পেয়েছি। এটা তো সরকারের দেয়া। এতে আমার কষ্ট কোনো অবস্থাতেই লাঘব হচ্ছে না। বরং দিনকে দিন চিন্তা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে মায়ের জন্য। মা প্রায়ই অসুস্থ থাকেন। চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়। মাঝে একবার অসুস্থ হয়ে গেলে ময়মনসিংহ নিয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। কারণ ঢাকায় করাতে গেলে অনেক টাকা পয়সার হিসাব করতে হবে। এখন আমার একটাই চাওয়া- মাকে নিয়ে যদি একটি ভালো বাসায় উঠতে পারতাম।
চাকরির স্থায়ী হওয়া প্রসঙ্গে সিদ্দিকুর বলেন, এখানে তো এক বছরের কথা আগেই বলা হয়েছে। এক বছর আগে চাকরি স্থায়ী হবে না। তারপর স্যারকে বলেছি। বলেছে দেখবেন। তবে আশাবাদী হওয়ার মতো তেমন কিছু নেই। সিদ্দিকুর আরো বলেন, এ চাকরিটা সরকার তো আমাকে দিয়েছে। আমি অর্জন করে পাইনি। পড়ালেখা শেষ করে একটি ভালো চাকরির জন্য আবেদন করবো।
অফিসে আসা যাওয়ায় অসুবিধার কথা বলতে গিয়ে সিদ্দিকুর বলেন, চলাফেরায় খুব কষ্ট। আমার যদি দৃষ্টিশক্তি থাকতো তাহলে বাসে চলাফেরা করতে পারতাম। কিংবা হেঁটে হলেও অফিসে আসতে যেতে পারতাম। কিন্তু আমাকে চলতে ফিরতে রিকশা কিংবা অটোরিকশা নিতে হয়। আর কেউ একজন না থাকলে আমি পারি না। ভাগনে সেলিমই আমাকে অফিসে আনা নেয়া করে। এখন রিকশা বা সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করতে গেলে অনেক টাকা চলে যায়। প্রতিদিন আমার আসা যাওয়ায় একশ টাকার মতো খরচ হয়। সব গুনতে গেলে মাস শেষে কোনো টাকা থাকে না। বড় ভাই বাড়িতে কৃষি কাজ করে। সে খাত থেকে চালটা আসে। নয়তো আরো বড় সমস্যায় পড়ে যেতাম।
অর্থনৈতিক টানাপড়েনের মধ্যে থাকলেও সিদ্দিকুর শারীরিকভাবে বেশ সুস্থ আছেন বলে জানান। তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে সুস্থ আছি। কিন্তু মায়ের স্বাস্থ্য নিয়ে খুব টেনশন কাজ করে। আমার মায়ের জন্য দোয়া করবেন।
পড়ালেখা আর চাকরির পাশাপাশি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য গড়া একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সিদ্দিকুর। বাংলাদেশ ভিস্যুয়েলি ইম্পেয়ার্ড পিপলস সোসাইটি (ভিপস)-এ প্রতি শুক্র ও শনিবার প্রশিক্ষণ নিতে যান তিনি। সিদ্দিকুর বলেন, চাকরির পাশাপাশি এ প্রশিক্ষণটি নিয়ে রাখছি। ভবিষ্যতে কোনো কাজে লাগানো যেতে পারে। এখানে আমার মতো অনেক দৃষ্টিশক্তি হারানো তরুণ-তরুণী প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। মিডিয়ারই এক আপু এখানে নিয়ে এসেছেন। আমি তার প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ।
No comments