আতিয়া মহলে অভিযানের ১ বছর by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
রাতটিকে
বৃহস্পতিবার হিসেবে ধরা হলেও ঘড়ির কাঁটার হিসেবে শুক্রবারে ঢুকে গেছে। আর
তারিখ হিসেবে ছুঁয়ে দিয়েছে ২৪শে মার্চকে। ২০১৭ সালের এমনই এক সন্ধিক্ষণে
উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ির আতিয়া মহলে। পাঁচতলা
ও বাড়ির নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে মধ্যরাতে খবর পায় পুলিশ।
চট্টগ্রামের সিতাকুণ্ড থেকে আটক হওয়া দুই জঙ্গির কাছে এ খবর পায় পুলিশ। সে
রাতেই বাড়িটি ঘেরাও করে আইন শৃঙ্ক্ষলা বাহিনী। রাত ভোর না হতেই আতিয়া মহলের
উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পুরো সিলেটে-সিলেট ছেড়ে পুরো বাংলাদেশে- দেশ পেরিয়ে
সারা বিশ্বে। ১১১ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়কতার পর নারীসহ ৪ জঙ্গির মৃত্যুর
মধ্য দিয়ে শেষ হয় অভিযান। সফল এ অভিযানে দুঃখ হয়ে উঠে র্যাব ও পুলিশের ৩
সদস্যসহ ৭টি প্রাণের ক্ষয়।
২৪শে মার্চ সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পায় আতিয়া মহলের নিচ তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকা জঙ্গিরা। সকাল ৭টার দিকে ভেতর থেকে বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে থাকে। সকালে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় র্যাব, পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), বিশেষ শাখা (এসবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা। আতিয়া মহলের চার তলাবিশিষ্ট ভবনের বারো ফ্ল্যাটের সকল বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু পাঁচ তলাবিশিষ্ট ভবনটির নিচ তলায় জঙ্গি আস্তানা থাকায় ওই ভবনের বাকি ২৯টি ফ্ল্যাটে থাকা বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার ঝুঁকি নেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার সকাল থেকেই পুলিশ হ্যান্ড মাইকে ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। তবে জঙ্গিরা সাড়া দেয়নি সে আহ্বানে। উল্টো বিস্ফোরক ছুঁড়ে তারা নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিতে থাকে। পরিস্থিতি জটিল হতে থাকায় বিকালে ঢাকা থেকে আসে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী ‘সোয়াত’। পুরো ভবন ঘিরে রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তারা। রাত ৮টার দিকে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ইউনিটের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ফিরে যায়। রাত কাটে উৎকণ্ঠায়। ২৫শে মার্চ সকাল ৮টার দিকে ভারি ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর শতাধিক সদস্যের প্যারা কমান্ডো টিম আসে ঘটনাস্থলে। ৯টার দিকে শুরু হয় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের রুদ্ধশ্বাস অভিযান। অভিযানের শুরুতেই পাঁচতলা ভবনে ২৯টি ফ্ল্যাটে আটকা পড়া ৭৮ জন বাসিন্দাকে উদ্ধার করা হয়। দুপুর ২টার দিকে শুরু হয় মূল অভিযান। দফায় দফায় গুলি আর বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো শিববাড়ি এলাকা। অভিযান যখন চলছিল তখন উৎসুক জনতা ঘিরে রেখেছিলেন চারপাশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বারবার তাদের সরিয়ে দিচ্ছিল, বারবারই তারা ফিরে আসছিলেন। আতিয়া মহল থেকে আড়াই শ’ গজ দূরে এমনই এক জটলার মাঝে প্রচণ্ড শব্দে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণ হয়। সে বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গোয়েন্দা ইউনিট প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, পুলিশের দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ও চৌধুরী মো. আবু কায়সারসহ ৭ জন।
পরদিন ২৬শে মার্চ। স্বাধীনতা দিবস। সিলেটের মানুষের কাছে অন্য এক রূপ নিয়ে ধরা দেয়। আতঙ্ক-উৎকণ্ঠার সে দিনটিও শুরু হয় বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দে। পরদিনও একই চিত্র। তবে এক সময় শান্ত হয়ে আসে আতিয়া মহল। ভগ্নদশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আতিয়া মহল। আর বাড়ির ভেতরে পড়ে ছিল চার জঙ্গির মৃতদেহ। ওই দিনই দুই জঙ্গির মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২৮শে মার্চ বিকালে পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয় আতিয়া মহল। শেষ হয় ৬ দিনব্যাপী সেনা কমান্ডোদের ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’। ভবনটিকে ঝুঁকিমুক্ত করে ১১ই এপ্রিল থেকে ভাড়াটিয়াদের ঢুকতে দেয় র্যাব।
আতিয়া মহল এখন ফিরে এসেছে অনেকটাই আগের রূপে। এজন্য বাড়ির মালিক উস্তার মিয়াকে প্রায় ৬০ লাখ টাকার মতো খরচ করতে হয়েছে। আগের মতোই উজ্জ্বল সবুজ বর্ণ লেগেছে আতিয়া মহলের ভবন দুটোর গায়ে। তবে দুঃসহ স্মৃতির চিহ্ন হয়ে এখনও বাড়ির সামনে পড়ে আছে ইঁট পাথরের স্তূপ। সকলেরই প্রাণপণ চেষ্টা সে স্মৃতি ভুলে যাওয়ার। আগের মতোই প্রাণ ফিরে এসেছে আতিয়া মহলে। ৩০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৮টিতেই এখন ভাড়াটে রয়েছে। ৫ তলা ভবনের যে ফ্ল্যাটটিতে জঙ্গিরা ঠিকানা গেঁড়েছিল সে ফ্ল্যাটেই এখন নূরজাহান বেগমের সংসার। ৩ মাস হয়েছে তারা এ ফ্ল্যাটটিতে উঠেছেন। ফ্ল্যাটটির অতীতের গল্প তার জানা থাকলেও তিনি সেটিকে পাশে রেখেই সাজিয়ে নিয়েছেন নিজের সংসার।
আতিয়া মহলের মালিক উস্তার আলী কিছুতেই ভুলতে পারছেন না এক বছর আগের স্মৃতিটিকে। তবে সব কিছু তিনি ভুলে যেতে চান। গ্লানিময় স্মৃতি মুছে দিতে তিনি আতিয়া মহলকে অনেকটাই আগের রূপে ফিরিয়ে এনেছেন। সেনাবাহিনীর অভিযানে আতিয়া মহল একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। সংস্কারে তার খরচ হয় ৬০ লাখ টাকার মতো। তবে তার দুঃখ নেই। তার বাড়িতে যে প্রাণ ফিরে এসেছে এতেই তিনি সন্তুষ্ট।
২৪শে মার্চ সকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পায় আতিয়া মহলের নিচ তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকা জঙ্গিরা। সকাল ৭টার দিকে ভেতর থেকে বিস্ফোরণ ঘটায় তারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে থাকে। সকালে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় র্যাব, পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি), বিশেষ শাখা (এসবি), পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) সদস্যরা। আতিয়া মহলের চার তলাবিশিষ্ট ভবনের বারো ফ্ল্যাটের সকল বাসিন্দাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু পাঁচ তলাবিশিষ্ট ভবনটির নিচ তলায় জঙ্গি আস্তানা থাকায় ওই ভবনের বাকি ২৯টি ফ্ল্যাটে থাকা বাসিন্দাদের সরিয়ে আনার ঝুঁকি নেয়নি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। শুক্রবার সকাল থেকেই পুলিশ হ্যান্ড মাইকে ভেতরে থাকা জঙ্গিদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানায়। তবে জঙ্গিরা সাড়া দেয়নি সে আহ্বানে। উল্টো বিস্ফোরক ছুঁড়ে তারা নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিতে থাকে। পরিস্থিতি জটিল হতে থাকায় বিকালে ঢাকা থেকে আসে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী ‘সোয়াত’। পুরো ভবন ঘিরে রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে তারা। রাত ৮টার দিকে সেনাবাহিনীর প্যারা-কমান্ডো ইউনিটের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ফিরে যায়। রাত কাটে উৎকণ্ঠায়। ২৫শে মার্চ সকাল ৮টার দিকে ভারি ও আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনীর শতাধিক সদস্যের প্যারা কমান্ডো টিম আসে ঘটনাস্থলে। ৯টার দিকে শুরু হয় ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের রুদ্ধশ্বাস অভিযান। অভিযানের শুরুতেই পাঁচতলা ভবনে ২৯টি ফ্ল্যাটে আটকা পড়া ৭৮ জন বাসিন্দাকে উদ্ধার করা হয়। দুপুর ২টার দিকে শুরু হয় মূল অভিযান। দফায় দফায় গুলি আর বিস্ফোরণের প্রচণ্ড শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো শিববাড়ি এলাকা। অভিযান যখন চলছিল তখন উৎসুক জনতা ঘিরে রেখেছিলেন চারপাশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বারবার তাদের সরিয়ে দিচ্ছিল, বারবারই তারা ফিরে আসছিলেন। আতিয়া মহল থেকে আড়াই শ’ গজ দূরে এমনই এক জটলার মাঝে প্রচণ্ড শব্দে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণ হয়। সে বোমার বিস্ফোরণে নিহত হন র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) গোয়েন্দা ইউনিট প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ, পুলিশের দুই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ও চৌধুরী মো. আবু কায়সারসহ ৭ জন।
পরদিন ২৬শে মার্চ। স্বাধীনতা দিবস। সিলেটের মানুষের কাছে অন্য এক রূপ নিয়ে ধরা দেয়। আতঙ্ক-উৎকণ্ঠার সে দিনটিও শুরু হয় বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দে। পরদিনও একই চিত্র। তবে এক সময় শান্ত হয়ে আসে আতিয়া মহল। ভগ্নদশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল আতিয়া মহল। আর বাড়ির ভেতরে পড়ে ছিল চার জঙ্গির মৃতদেহ। ওই দিনই দুই জঙ্গির মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ২৮শে মার্চ বিকালে পুলিশের কাছে বুঝিয়ে দেয়া হয় আতিয়া মহল। শেষ হয় ৬ দিনব্যাপী সেনা কমান্ডোদের ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’। ভবনটিকে ঝুঁকিমুক্ত করে ১১ই এপ্রিল থেকে ভাড়াটিয়াদের ঢুকতে দেয় র্যাব।
আতিয়া মহল এখন ফিরে এসেছে অনেকটাই আগের রূপে। এজন্য বাড়ির মালিক উস্তার মিয়াকে প্রায় ৬০ লাখ টাকার মতো খরচ করতে হয়েছে। আগের মতোই উজ্জ্বল সবুজ বর্ণ লেগেছে আতিয়া মহলের ভবন দুটোর গায়ে। তবে দুঃসহ স্মৃতির চিহ্ন হয়ে এখনও বাড়ির সামনে পড়ে আছে ইঁট পাথরের স্তূপ। সকলেরই প্রাণপণ চেষ্টা সে স্মৃতি ভুলে যাওয়ার। আগের মতোই প্রাণ ফিরে এসেছে আতিয়া মহলে। ৩০টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ২৮টিতেই এখন ভাড়াটে রয়েছে। ৫ তলা ভবনের যে ফ্ল্যাটটিতে জঙ্গিরা ঠিকানা গেঁড়েছিল সে ফ্ল্যাটেই এখন নূরজাহান বেগমের সংসার। ৩ মাস হয়েছে তারা এ ফ্ল্যাটটিতে উঠেছেন। ফ্ল্যাটটির অতীতের গল্প তার জানা থাকলেও তিনি সেটিকে পাশে রেখেই সাজিয়ে নিয়েছেন নিজের সংসার।
আতিয়া মহলের মালিক উস্তার আলী কিছুতেই ভুলতে পারছেন না এক বছর আগের স্মৃতিটিকে। তবে সব কিছু তিনি ভুলে যেতে চান। গ্লানিময় স্মৃতি মুছে দিতে তিনি আতিয়া মহলকে অনেকটাই আগের রূপে ফিরিয়ে এনেছেন। সেনাবাহিনীর অভিযানে আতিয়া মহল একেবারে ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। সংস্কারে তার খরচ হয় ৬০ লাখ টাকার মতো। তবে তার দুঃখ নেই। তার বাড়িতে যে প্রাণ ফিরে এসেছে এতেই তিনি সন্তুষ্ট।
No comments