একাত্তরে পাকিস্তান দখল করে নিতে চেয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী -অশোক পার্থসারথীর বইয়ে তথ্য
বাংলাদেশ
স্বাধীন হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান দখল করে নিতে চেয়েছিলেন ভারতের
তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তাতে সায় ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের
সাবেক প্রেসিডেন্ট লিওনিদ ইলিচ ব্রেজনেভের। তিনি এ জন্য ইন্দিরা গান্ধীকে
একটি গোপন টেলিগ্রামও পাঠিয়েছিলেন। এক্ষেত্রে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিতে ছিল
ভারতের সেনাবাহিনী। ‘জিপি: ১৯১৫-১৯৯৫’ শীর্ষক একটি বইয়ে এসব কথা লিখেছেন
অশোক পার্থসারথী। এ বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রণব
মুখার্জি। অশোক পার্থসারথী তখনকার প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর উপদেষ্টা
জি পার্থসারথীর ছেলে ও সাবেক সরকারি নীতিনির্ধারক। তার পিতা জি পার্থসারথীর
বিভিন্ন নোটের ওপর ভিত্তি করে তিনি এ বইটি লিখেছেন। বইটি প্রকাশ হওয়ার কথা
রয়েছে মার্চের শেষের দিকে। ভারতের অনলাইন ডিএনএ সেই বইয়ের ওপর ভিত্তি করে
একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ১৬ই মার্চ। এদিন
বিশেষ বৈঠক বসে ভারতের কেবিনেট কমিটি অন পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স (সিসিপিএ)।
ওই বৈঠকে উপস্থিতরা প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর পরিকল্পনায় সম্মতি দেন।
তাতে বলা হয়, ভারতের সেনাবাহিনীকে সরাসরি পেশোয়ারে পাঠানো হবে। এর মধ্য
দিয়ে তখনকার পশ্চিম পাকিস্তান দখল করে নেয়া হবে। ওই বইয়ে বলা হয়েছে, পিএন
হাকসার ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর মুখ্য সচিব। তিনি বাদে সিসিপিএ’র সব সদস্যই
দেশভাগের বিরোধী ছিলেন। অর্থাৎ তারা পাকিস্তান দখল করে পুনরেকত্রীকরণের
পক্ষে ছিলেন।
১৬ই ডিসেম্বর। ঢাকায় পাকিস্তান আত্মসমর্পণের ১৬ ঘণ্টা আগে স্থানীয় সময় রাত একটায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অফিস সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভের একটি অত্যন্ত গোপন টেলিগ্রাম পায়। এর পরই ইন্দিরা গান্ধী তার সেনাপ্রধান স্যাম মানেকশর সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন অশোক পার্থসারথী। তিনিও তার পিতার সঙ্গে সিসিপিএ’র ওইদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি লিখেছেন, সেনাপ্রধানকে ইন্দিরা গান্ধী বলেন ‘স্যাম, পেশোয়ার পৌঁছাতে আপনার কত সময় লাগবে?’
এর জবাবে স্যাম মানেকশ বলেন, ‘তিন দিন ম্যাডাম’।
এরপর ইন্দিরা গান্ধী তাকে আবার বলেন, ‘আপনাকে খুব আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে’
স্যাম মানেকশ বলেন, ‘ম্যাডাম আমরা পূর্ব পাকিস্তানের পতন দেখেছি। সেনা সদর দপ্তরে আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে, আপনি এবং আপনার সহকর্মীরা আমাদের কাছে এই প্রশ্নটিই করবেন, যেটা আপনি আমাকে করেছেন। তাই আমরা আগেভাগেই হোমওয়ার্ক করে রেখেছিলাম। আমরা পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিতে আছি।’
মন্ত্রীরা, সংশ্লিষ্ট সচিবগণ ও সার্ভিসের প্রধানরা যারা উপস্থিত ছিলেন সিসিপিএ’র বৈঠকে তারা সবাই চেয়েছিলেন পাকিস্তান দখল করে নিতে। তবে এক্ষেত্রে পিএন হাকসারই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করছিলেন। তিনি জানতে চাইছিলেন, ভারত কি পশ্চিম পাকিস্তান শাসন করবে কিনা। তখন হাকসার বলেছিলেন, যদি তাই হয় তাহলে প্রথমেই পশ্চিম পাকিস্তানের সব মানুষকে আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। স্লোগান দিতে হবে ‘ইয়াহিয়া খানের পতন হোক, টিক্কা খানের পতন হোক’। হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই। কিন্তু ছয় মাস পরে ওই একই জনগণ স্লোগান দেবে ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর পতন হোক, হিন্দুরা ফিরে যাও’।
এক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভের টেলিগ্রাম ইন্দিরা গান্ধীকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাছাড়া ইন্দিরা গান্ধীর এমন সিদ্ধান্তের প্রতি তার সমর্থনও প্রকাশ পেয়েছিল। তবে পিএন হাকসারের মন্তব্যের জবাব দিয়েছিলেন তখনকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম। তিনি বলেছিলেন, তিনি পশ্চিম পাকিস্তান দখল করতে চান না। তবে দখলীকৃত জম্মু ও কাশ্মীর অংশ ফেরত চান।
ওই বৈঠকে সবার কথা শোনার পর ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, এ বিষয়ে তিনি চিন্তা করবেন। এক পর্যায়ে বৈঠক শেষ হয়। অশোক পার্থসারথী লিখেছেন, এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার বাসভবনে যান এবং প্রধানমন্ত্রীকে তার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
ইন্দিরা গান্ধীকে এ সময় অশোক পার্থসারথী বলেন, ‘ইতিহাসে আমরা এমন আর কোনো সুযোগ কখনো পাবো না’।
জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, এটি হবে একটি স্মরণীয় সিদ্ধান্ত।
কিন্তু রাত ৮টায় অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে একটি ঘোষণা দেয়া হলো। তাতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেয়া হলো। ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পেশোয়ারমুখী অভিযানের সম্ভাবনা চূর্ণ হয়ে গেল। উল্লেখ্য, অশোক পার্থসারথীর পিতা গোপাল পার্থসারথী হলেন ভারতের বহুমুখী জনপ্রিয় একজন কূটনীতিক, সাংবাদিক। তিনি জিপি নামেই বেশি পরিচিত। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী স্যার গোপালস্বামী আয়াঙ্গারের পুত্র গোপাল পার্থসারথী। ওই বইয়ে তার সম্পর্কেও তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর গোপনে শ্রীনগর সফরে গিয়েছিলেন আয়াঙ্গার। তখন তিনি ডোগরা কিং হরি সিংকে ভারতের পক্ষে আনতে সফল হয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর বানানো হয় গোপাল পার্থসারথীকে।
১৬ই ডিসেম্বর। ঢাকায় পাকিস্তান আত্মসমর্পণের ১৬ ঘণ্টা আগে স্থানীয় সময় রাত একটায় ভারতের প্রধানমন্ত্রীর অফিস সোভিয়েত প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভের একটি অত্যন্ত গোপন টেলিগ্রাম পায়। এর পরই ইন্দিরা গান্ধী তার সেনাপ্রধান স্যাম মানেকশর সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময়ে প্রধানমন্ত্রীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন অশোক পার্থসারথী। তিনিও তার পিতার সঙ্গে সিসিপিএ’র ওইদিনের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। তিনি লিখেছেন, সেনাপ্রধানকে ইন্দিরা গান্ধী বলেন ‘স্যাম, পেশোয়ার পৌঁছাতে আপনার কত সময় লাগবে?’
এর জবাবে স্যাম মানেকশ বলেন, ‘তিন দিন ম্যাডাম’।
এরপর ইন্দিরা গান্ধী তাকে আবার বলেন, ‘আপনাকে খুব আত্মবিশ্বাসী দেখাচ্ছে’
স্যাম মানেকশ বলেন, ‘ম্যাডাম আমরা পূর্ব পাকিস্তানের পতন দেখেছি। সেনা সদর দপ্তরে আমরা নিশ্চিত ছিলাম যে, আপনি এবং আপনার সহকর্মীরা আমাদের কাছে এই প্রশ্নটিই করবেন, যেটা আপনি আমাকে করেছেন। তাই আমরা আগেভাগেই হোমওয়ার্ক করে রেখেছিলাম। আমরা পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিতে আছি।’
মন্ত্রীরা, সংশ্লিষ্ট সচিবগণ ও সার্ভিসের প্রধানরা যারা উপস্থিত ছিলেন সিসিপিএ’র বৈঠকে তারা সবাই চেয়েছিলেন পাকিস্তান দখল করে নিতে। তবে এক্ষেত্রে পিএন হাকসারই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি এ পরিকল্পনার বিরোধিতা করছিলেন। তিনি জানতে চাইছিলেন, ভারত কি পশ্চিম পাকিস্তান শাসন করবে কিনা। তখন হাকসার বলেছিলেন, যদি তাই হয় তাহলে প্রথমেই পশ্চিম পাকিস্তানের সব মানুষকে আমাদের সঙ্গে থাকতে হবে। স্লোগান দিতে হবে ‘ইয়াহিয়া খানের পতন হোক, টিক্কা খানের পতন হোক’। হিন্দু-মুসলিম ভাই ভাই। কিন্তু ছয় মাস পরে ওই একই জনগণ স্লোগান দেবে ‘ভারতীয় সেনাবাহিনীর পতন হোক, হিন্দুরা ফিরে যাও’।
এক্ষেত্রে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট ব্রেজনেভের টেলিগ্রাম ইন্দিরা গান্ধীকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। তাছাড়া ইন্দিরা গান্ধীর এমন সিদ্ধান্তের প্রতি তার সমর্থনও প্রকাশ পেয়েছিল। তবে পিএন হাকসারের মন্তব্যের জবাব দিয়েছিলেন তখনকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম। তিনি বলেছিলেন, তিনি পশ্চিম পাকিস্তান দখল করতে চান না। তবে দখলীকৃত জম্মু ও কাশ্মীর অংশ ফেরত চান।
ওই বৈঠকে সবার কথা শোনার পর ইন্দিরা গান্ধী বলেছিলেন, এ বিষয়ে তিনি চিন্তা করবেন। এক পর্যায়ে বৈঠক শেষ হয়। অশোক পার্থসারথী লিখেছেন, এরপর তিনি প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে তার বাসভবনে যান এবং প্রধানমন্ত্রীকে তার পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন।
ইন্দিরা গান্ধীকে এ সময় অশোক পার্থসারথী বলেন, ‘ইতিহাসে আমরা এমন আর কোনো সুযোগ কখনো পাবো না’।
জবাবে ইন্দিরা গান্ধী বলেন, এটি হবে একটি স্মরণীয় সিদ্ধান্ত।
কিন্তু রাত ৮টায় অল ইন্ডিয়া রেডিও থেকে একটি ঘোষণা দেয়া হলো। তাতে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেয়া হলো। ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পেশোয়ারমুখী অভিযানের সম্ভাবনা চূর্ণ হয়ে গেল। উল্লেখ্য, অশোক পার্থসারথীর পিতা গোপাল পার্থসারথী হলেন ভারতের বহুমুখী জনপ্রিয় একজন কূটনীতিক, সাংবাদিক। তিনি জিপি নামেই বেশি পরিচিত। ১৯৩৭ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী স্যার গোপালস্বামী আয়াঙ্গারের পুত্র গোপাল পার্থসারথী। ওই বইয়ে তার সম্পর্কেও তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ১৯৪৭ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর গোপনে শ্রীনগর সফরে গিয়েছিলেন আয়াঙ্গার। তখন তিনি ডোগরা কিং হরি সিংকে ভারতের পক্ষে আনতে সফল হয়েছিলেন।
১৯৭১ সালে জওহরলাল নেহরু ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর বানানো হয় গোপাল পার্থসারথীকে।
No comments