যেভাবে আড়াল পড়ে যায় ঐতিহাসিক এক অধ্যায় by চৌধুরী মুমতাজ আহমদ
বৃটিশদের
বিরুদ্ধে প্রথম হুঙ্কার উঠেছিল বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বের জনপদ সিলেট
থেকেই। উপমহাদেশে ভালোভাবে শিকড় গেঁড়ে উঠার আগেই সিলেটে বৃটিশ
সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন সৈয়দ মোহাম্মদ হাদী ও
সৈয়দ মোহাম্মদ মাহদী দুই ভাই। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে প্রথম শহীদ হন তারাই।
স্থানীয়ভাবে হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া নামে পরিচিত এ দুই বীর সোয়া দুই শ’ বছর
ধরে চির ঘুম ঘুমিয়ে আছেন সিলেট নগরীর মীরবক্সটুলায় একটি টিলার মাঝে। তবে এ
দুই বীর যোদ্ধাকে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে চিনিয়ে দেয়ার দায় যেন কারো নেই।
এমনকি এ দুই বীরের কবর রক্ষারও কোনো উদ্যোগ নেই।
সোয়া দুই শ’ বছরে তারা আড়াল হয়ে গেছেন ইতিহাসের পাতা থেকে। অথচ কি দোর্দণ্ড প্রতাপে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন বৃটিশ রাজের বিরুদ্ধে। বৃটিশের শোষণ, অন্যায় ও নিপীড়নের প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া। তখনকার বৃটিশ কর্মকর্তা রবার্ট লিন্ডসের জবানে সে লড়াইয়ের বর্ণনা মেলে। ১৭৮২ সালে আশুরা উপলক্ষে ইংরেজ রাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া। তারা পরিকল্পনা করেছিলেন আশুরার মিছিল থেকেই সিলেটের মাটি থেকে বিতাড়িত করবেন বৃটিশ রাজত্ব। তবে সে পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। সিলেটে শাহী ঈদগাহ ময়দানে আশুরার মিছিলগুলো জড়ো হওয়ার সঙ্গেই বাধা আসে বৃটিশ রাজের তরফ থেকে।
সিলেটের তৎকালীন কালেক্টর রবার্ট লিন্ডসের নেতৃত্বে বৃটিশবাহিনী বাধা দেয় বিদ্রোহীদের। হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া দুজনে বাধা ভেঙে সামনে এগিয়ে আসতে চাইলে লিন্ডসের গুলিতে নিহত হন দুই ভাই। ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র অপরাধে দুই ভাইয়ের লাশ সমাধিস্থ না করে ফেলে রাখা হয়েছিল ঈদগাহ’র ময়দানে। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে লাশগুলো অযত্নে সমাধিস্থ করা হয় পাশের একটি টিলায়। যা পরে হাদা মিয়া মাদা মিয়ার টিলা নামে পরিচিতি পায়। আরো পরে ঐ টিলার কাছে চার্চ নির্মাণ হওয়ায় তা পরিচিত হয় পাদ্রির টিলা নামে। আড়াল পড়ে যায় ঐতিহাসিক এক অধ্যায়। বৃটিশ আমলের পর, পাকিস্তান আমল পেরিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও সে ইতিহাস রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগ আর নেয়া হয়নি। উল্টো বেদখল হয়ে পড়ে দুই বীরের সমাধিস্থলের ১০.৮১ শতক ভূমি। পাশের একটি মাদরাসার দখলে চলে যায় কবরস্থানের ভূমি। বিষয়টি পরে ইতিহাস সচেতন কিছু ব্যক্তির নজরে পড়লে গঠিত হয় সৈয়দ হাদী ও সৈয়দ মাহদী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ। ঐ পরিষদের তৎপরতায় গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রশাসন কবর এলাকার ভূমি দখলমুক্ত করে। পরবর্তীতে কবরস্থানের সীমানা চিহ্নিত করে দেয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশনের দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে কবরস্থানের ভূমি আবারো দখলে চলে যায় পাশের মাদরাসার দখলে। আবারো আড়ালে পড়ে যায় উপমহাদেশে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ সৈয়দ মোহাম্মদ হাদী ও সৈয়দ মোহাম্মদ মাহদীর স্মৃতি।
হাদা মিয়া ও মাদা মিয়ার মাজার রক্ষায় তৎপরতা অব্যাহত থাকে সৈয়দ হাদী ও সৈয়দ মাহদী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে। তাদের প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালের ২৫শে জুন আবারও শুরু হয় কবরস্থানের সীমানা নির্ধারণের কার্যক্রম। সরকারি ভূমি অফিস ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে চিহ্নিত করা হয় কবরস্থানের সীমানা। সিলেট মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার ৮২৯৭ নং দাগে কবর এলাকার প্রায় নয় শতক ভূমি চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে কবর এলাকার এক দিকে দেয়াল তোলা হলে তিন দিক এখনও অরক্ষিতই রয়ে গেছে।
সিলেট ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, নগরীর মীরবক্সটুলায় বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ হাদা মিয়া ও মাদা মিয়ার কবর বেদখল করার জন্য একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রায় ৯ শতক জায়গার এই কবরস্থানের এক দিকে দেয়াল নির্মিত হলেও তিন দিকে কোনো দেয়াল নেই। ফলে অরক্ষিত অবস্থায় থাকা কবরস্থানের ভূমি দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। তিনি ঐতিহাসিক গুরত্বপূর্ণ কবরস্থানটি রক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
সোয়া দুই শ’ বছরে তারা আড়াল হয়ে গেছেন ইতিহাসের পাতা থেকে। অথচ কি দোর্দণ্ড প্রতাপে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন বৃটিশ রাজের বিরুদ্ধে। বৃটিশের শোষণ, অন্যায় ও নিপীড়নের প্রতিবাদে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া। তখনকার বৃটিশ কর্মকর্তা রবার্ট লিন্ডসের জবানে সে লড়াইয়ের বর্ণনা মেলে। ১৭৮২ সালে আশুরা উপলক্ষে ইংরেজ রাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া। তারা পরিকল্পনা করেছিলেন আশুরার মিছিল থেকেই সিলেটের মাটি থেকে বিতাড়িত করবেন বৃটিশ রাজত্ব। তবে সে পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে যায়। সিলেটে শাহী ঈদগাহ ময়দানে আশুরার মিছিলগুলো জড়ো হওয়ার সঙ্গেই বাধা আসে বৃটিশ রাজের তরফ থেকে।
সিলেটের তৎকালীন কালেক্টর রবার্ট লিন্ডসের নেতৃত্বে বৃটিশবাহিনী বাধা দেয় বিদ্রোহীদের। হাদা মিয়া ও মাদা মিয়া দুজনে বাধা ভেঙে সামনে এগিয়ে আসতে চাইলে লিন্ডসের গুলিতে নিহত হন দুই ভাই। ‘রাষ্ট্রদ্রোহিতা’র অপরাধে দুই ভাইয়ের লাশ সমাধিস্থ না করে ফেলে রাখা হয়েছিল ঈদগাহ’র ময়দানে। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে লাশগুলো অযত্নে সমাধিস্থ করা হয় পাশের একটি টিলায়। যা পরে হাদা মিয়া মাদা মিয়ার টিলা নামে পরিচিতি পায়। আরো পরে ঐ টিলার কাছে চার্চ নির্মাণ হওয়ায় তা পরিচিত হয় পাদ্রির টিলা নামে। আড়াল পড়ে যায় ঐতিহাসিক এক অধ্যায়। বৃটিশ আমলের পর, পাকিস্তান আমল পেরিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও সে ইতিহাস রক্ষায় তেমন কোনো উদ্যোগ আর নেয়া হয়নি। উল্টো বেদখল হয়ে পড়ে দুই বীরের সমাধিস্থলের ১০.৮১ শতক ভূমি। পাশের একটি মাদরাসার দখলে চলে যায় কবরস্থানের ভূমি। বিষয়টি পরে ইতিহাস সচেতন কিছু ব্যক্তির নজরে পড়লে গঠিত হয় সৈয়দ হাদী ও সৈয়দ মাহদী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদ। ঐ পরিষদের তৎপরতায় গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় প্রশাসন কবর এলাকার ভূমি দখলমুক্ত করে। পরবর্তীতে কবরস্থানের সীমানা চিহ্নিত করে দেয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সিলেট সিটি কর্পোরেশন। সিটি কর্পোরেশনের দীর্ঘসূত্রতার সুযোগে কবরস্থানের ভূমি আবারো দখলে চলে যায় পাশের মাদরাসার দখলে। আবারো আড়ালে পড়ে যায় উপমহাদেশে বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ সৈয়দ মোহাম্মদ হাদী ও সৈয়দ মোহাম্মদ মাহদীর স্মৃতি।
হাদা মিয়া ও মাদা মিয়ার মাজার রক্ষায় তৎপরতা অব্যাহত থাকে সৈয়দ হাদী ও সৈয়দ মাহদী স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদের উদ্যোগে। তাদের প্রচেষ্টায় ২০১৫ সালের ২৫শে জুন আবারও শুরু হয় কবরস্থানের সীমানা নির্ধারণের কার্যক্রম। সরকারি ভূমি অফিস ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের যৌথ উদ্যোগে চিহ্নিত করা হয় কবরস্থানের সীমানা। সিলেট মিউনিসিপ্যালিটি মৌজার ৮২৯৭ নং দাগে কবর এলাকার প্রায় নয় শতক ভূমি চিহ্নিত করা হয়। পরবর্তীতে কবর এলাকার এক দিকে দেয়াল তোলা হলে তিন দিক এখনও অরক্ষিতই রয়ে গেছে।
সিলেট ইতিহাস ঐতিহ্য সংরক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান চৌধুরী মানবজমিনকে বলেন, নগরীর মীরবক্সটুলায় বৃটিশবিরোধী আন্দোলনের প্রথম শহীদ হাদা মিয়া ও মাদা মিয়ার কবর বেদখল করার জন্য একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রায় ৯ শতক জায়গার এই কবরস্থানের এক দিকে দেয়াল নির্মিত হলেও তিন দিকে কোনো দেয়াল নেই। ফলে অরক্ষিত অবস্থায় থাকা কবরস্থানের ভূমি দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে একটি প্রভাবশালী মহল। তিনি ঐতিহাসিক গুরত্বপূর্ণ কবরস্থানটি রক্ষায় যথাযথ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
No comments