‘পুলিশ হয়্যা গুন্ডাক ধরিম’ by গোলাম মোর্তুজা
দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া নয়ন। ছবি: গোলাম মোর্তুজা |
নয়নের
সামনের দাঁতগুলো ভেঙেছে পড়ে গিয়ে। তাতে তার শৈশবের উচ্ছ্বাসে ভাটা পড়েনি।
দ্বিতীয় শ্রেণিপড়ুয়া নয়নের সঙ্গে দেখা হলো ঠাকুরগাঁও শহর থেকে ১০ মিনিট
দূরত্বে দেওগাঁও গ্রামে। বিকেলে চতুর্থ শ্রেণিপড়ুয়া মামাতো ভাই নিমাইকে
সঙ্গে নিয়ে গরু আনতে যাচ্ছিল সে।
নয়নের হাসিটাই ওর সঙ্গে কথা বলার আগ্রহটা বাড়িয়ে দিল। জিজ্ঞেস করলাম বড় হয়ে সে কী হতে চায়। উত্তর এল, ‘পুলিশ’। কেন রে, এত কিছু রেখে কেন পুলিশ হতে ইচ্ছে হলো। উত্তর এল, ‘পুলিশ হয়্যা গুন্ডাক ধরিম।’ জানতে চাইলাম নয়নের বাবা কী করে। নিমাই জানাল, তার বাবা ইটের ভাটায় কাজ করে। আর মা ঘরের কাজ করে।
মনে মনে শঙ্কা হয়, এই নয়ন-নিমাইয়ের মনের ইচ্ছে কি আদৌ পূরণ হবে! ভাবছিলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক আতিউর রহমানের কথা। দারিদ্র্যকে জয় করে পড়াশোনা শেষ করতে কঠোর সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে।
শুধু অধ্যাপক আতিউরই নন, তাঁর সমবয়সী যাঁরা এখন দেশের প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সফল, তাঁদের বেশির ভাগেরই অতীতটা সংগ্রামের। আর তাঁদের বেশির ভাগই এসেছেন গ্রাম থেকে। হাল চাষ করে কাদা মাখা পায়ে স্কুলে যাওয়া, কিংবা স্কুল থেকে ফেরার পরে ধান-পাট নিয়ে হাটে যাওয়ার গল্প শোনা যায় অধ্যাপক আতিউরদের প্রজন্মের বেশির ভাগের মুখ থেকে।
কিন্তু এখন যখন ঢাকা শহরে একেকটি বাচ্চার স্কুলে যাতায়াতের জন্যই মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তদের মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে গাড়ি পালতে হচ্ছে, আছে কোচিং আর টিউটরের খরচ। এই আমলে নয়ন আর নিমাইরা কি এই শহুরে সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকতে পারবে। হয়তো তাদের জীবনও তাদের বাবা-কাকাদের মতোই ইটের ভাটায় কাটবে।
নিমাইয়ের হাতে খুটসহ গরুর রশি। সন্ধ্যার আগেই গরু নিয়ে ঘরে ফিরতে হবে। অবশ্য তখনো সূর্য লাল হয়নি। মানে দুজনের হাতে খেলাধুলা করার আরও কিছু সময় আছে। আলাপ করার ইচ্ছে মোটেই নেই নয়নের। তরতর করে গাছে উঠে যাচ্ছে। এদিকে নিমাই গরুর রশি গাছের ডালে বেঁধে চমৎকার দোলনা বানিয়ে বসেছে। বললাম পড়ে গেলে মজাটা টের পাবে। কিন্তু নিমাই আত্মবিশ্বাসী।
নয়নের হাসিটাই ওর সঙ্গে কথা বলার আগ্রহটা বাড়িয়ে দিল। জিজ্ঞেস করলাম বড় হয়ে সে কী হতে চায়। উত্তর এল, ‘পুলিশ’। কেন রে, এত কিছু রেখে কেন পুলিশ হতে ইচ্ছে হলো। উত্তর এল, ‘পুলিশ হয়্যা গুন্ডাক ধরিম।’ জানতে চাইলাম নয়নের বাবা কী করে। নিমাই জানাল, তার বাবা ইটের ভাটায় কাজ করে। আর মা ঘরের কাজ করে।
মনে মনে শঙ্কা হয়, এই নয়ন-নিমাইয়ের মনের ইচ্ছে কি আদৌ পূরণ হবে! ভাবছিলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর অধ্যাপক আতিউর রহমানের কথা। দারিদ্র্যকে জয় করে পড়াশোনা শেষ করতে কঠোর সংগ্রাম করতে হয়েছে তাঁকে।
শুধু অধ্যাপক আতিউরই নন, তাঁর সমবয়সী যাঁরা এখন দেশের প্রশাসন, শিক্ষা, চিকিৎসা বা ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সফল, তাঁদের বেশির ভাগেরই অতীতটা সংগ্রামের। আর তাঁদের বেশির ভাগই এসেছেন গ্রাম থেকে। হাল চাষ করে কাদা মাখা পায়ে স্কুলে যাওয়া, কিংবা স্কুল থেকে ফেরার পরে ধান-পাট নিয়ে হাটে যাওয়ার গল্প শোনা যায় অধ্যাপক আতিউরদের প্রজন্মের বেশির ভাগের মুখ থেকে।
কিন্তু এখন যখন ঢাকা শহরে একেকটি বাচ্চার স্কুলে যাতায়াতের জন্যই মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তদের মাসে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করে গাড়ি পালতে হচ্ছে, আছে কোচিং আর টিউটরের খরচ। এই আমলে নয়ন আর নিমাইরা কি এই শহুরে সুবিধাপ্রাপ্ত শিশুদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকতে পারবে। হয়তো তাদের জীবনও তাদের বাবা-কাকাদের মতোই ইটের ভাটায় কাটবে।
নিমাইয়ের হাতে খুটসহ গরুর রশি। সন্ধ্যার আগেই গরু নিয়ে ঘরে ফিরতে হবে। অবশ্য তখনো সূর্য লাল হয়নি। মানে দুজনের হাতে খেলাধুলা করার আরও কিছু সময় আছে। আলাপ করার ইচ্ছে মোটেই নেই নয়নের। তরতর করে গাছে উঠে যাচ্ছে। এদিকে নিমাই গরুর রশি গাছের ডালে বেঁধে চমৎকার দোলনা বানিয়ে বসেছে। বললাম পড়ে গেলে মজাটা টের পাবে। কিন্তু নিমাই আত্মবিশ্বাসী।
No comments