মশাল তুমি কার? by সোহরাব হাসান
মশাল
নিয়ে ‘যুদ্ধ’ শুরু হয়েছে। নির্বাচন কমিশনে ইতিমধ্যে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক
দলের দুই অংশ নিজেদের আসল বলে মশাল প্রতীক দাবি করে যুক্তি তুলে ধরেছে।
নির্বাচন কমিশনে শুনানির পর গত রোববার জাসদের একাংশের সভাপতি ও
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু কমিশনে চিঠি দিয়ে সুবিচার কামনা করেছেন। তাঁর
বক্তব্য হলো, দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলরদের ভোটে তিনি সভাপতি ও
শিরিন আখতার এমপি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। এরপর জাসদের কতিপয় নেতা
কাউন্সিল থেকে বেরিয়ে এসে একটি কমিটি ঘোষণা করেছেন, যা অবৈধ। আবার অন্য
পক্ষের দাবি, কাউন্সিল থেকে তারা বেরিয়ে যাওয়ার পরই তথাকথিত ভোটের মহড়া
হয়েছে, যার আইনগত ভিত্তি নেই। তারা আগের সাধারণ সম্পাদক শরিফ নূরুল
আম্বিয়াকে সভাপতি ও নাজমুল হক প্রধানকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি
ঘোষণা করেছে। দলের কার্যকরী সভাপতি মইনউদ্দিন খান বাদল এই পক্ষের নেতৃত্ব
দিচ্ছেন। আসল লড়াইটা ইনু-বাদলে। অন্যরা পার্শ্বচরিত্রমাত্র। বর্তমান সংসদে
জাসদের ছয়জন সাংসদ আছেন। বিভক্তিরেখা টানার পর দুই পক্ষই দাবি করছে, চারজন
তাদের সঙ্গে আছেন। অঙ্ক মেলে না। এক পক্ষে চারজন থাকলে অন্য পক্ষে দুজন
হবে। আবার দলের সাধারণ কর্মীরা এই ভাগাভাগি পছন্দ করছেন না। তাঁরা এখনো
আশা করছেন, নেতৃত্ব নিয়ে সৃষ্ট বিরোধের শান্তিপূর্ণ সুরাহা হবে। আমাদের
দেশে রাজনৈতিক দলের বিভাজন হয় নেতাদের নিয়েই। পরে এটিতে নীতি ও আদর্শের
প্রলেপ লাগানো হয়। জাসদও ব্যতিক্রম নয়। জাসদ নেতারা নেতৃত্বের কোন্দলে
সময় ব্যয় না করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দিকে মনোযোগী হলে আরও দু-চারটি
চেয়ারম্যান পাওয়া অসম্ভব হতো না। ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর প্রতিষ্ঠিত
জাসদ এখন বহু ভাগে বিভক্ত। একাধিক নামে। মশালের উত্তাপ যত কমছে, ততই বাড়ছে
বিভক্তি। ১৯৮০ সালে প্রথম জাসদ ভেঙে একাংশ বেরিয়ে গিয়ে বাংলাদেশের
সমাজতান্ত্রিক দল বা বাসদ করে। সেই বাসদও এখন কয়েক টুকরো। জাসদের একদা
প্রভাবশালী নেতা আ স ম আবদুর রবের স্বৈরাচারী এরশাদের সংসদে গৃহপালিত
বিরোধী দলনেতার আসন নেওয়ার পরই জাসদের অধোগতি শুরু হয়। আরেক অংশ শাজাহান
সিরাজের নেতৃত্বে বিএনপির সঙ্গে একীভূত হয়। সেই কঠিন সময়ে কাজী আরেফ আহমেদ ও
হাসানুল হক ইনুরা ক্ষীণ কণ্ঠে হলেও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের স্লোগানটি
বাঁচিয়ে রাখেন।
চরমপন্থীদের হাতে কাজী আরেফ আহমেদ নিহত হওয়ার পর বলা যায় জাসদে হাসানুল হক ইনুর একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে একযোগে চলার যে নীতি কাজী আরেফ নিয়েছিলেন, গত দেড় দশক সেটিই মোটামুটি অনুসৃত হয়ে আসছে। এবারের কাউন্সিলে দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি কিংবা পথ ও মত নিয়ে বড় ধরনের বিরোধের কথা শোনা যায় না। কাউন্সিলে দু-একজন নেতা সরকার ও ১৪-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনভাবে পথ চলার প্রস্তাব দিলেও তা গৃহীত হয়নি। এমনকি গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে হাসানুল হক ইনুকে সভাপতি করার বিষয়টিও তাঁর বিরোধীরা মেনে নেন। কিন্তু একই যুক্তিতে তাঁরা সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আম্বিয়ার মেয়াদও বাড়ানোর দাবি তোলেন। সেটি গৃহীত না হওয়াই দলে বিভাজন। এখন এই সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, সেটি দলের নেতারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে প্রায় অগ্নিশেষ মশালের প্রতি এখনো যে সীমিতসংখ্যক মানুষের ভালোবাসা আছে এবং যাঁরা মনে করেন সরকারের বাইরে ও ভেতরে বাম ধারার ভূমিকা আরও জোরদার হওয়া উচিত, তাঁরা চান না জাসদ নামের দলটি ফের বিভক্ত হোক। প্রবল প্রতাপশালী আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর-কষাকষিতে যে সুবিধা করতে পারছে না, সাম্প্রতিক ইউপি নির্বাচনই তার প্রমাণ।
হাসানুল হক নির্বাচন কমিশনের কাছে সুবিচার চেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনকে বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত সঠিক মনে না করলে কোনো পক্ষ আদালতেও যেতে পারবে। কিন্তু তাতে দল লাভবান হবে না। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাসদ যে ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের’ রাজনীতি করছে বলে নেতারা দাবি করছেন, সেটিও এগোবে না। তাই নির্বাচন কমিশনের কাছে সুবিচার পাওয়ার আগে দলের কর্মী-সমর্থকেরা নেতাদের কাছে সুবিচার আশা করেন। ক্ষীয়মাণ মশালটি টিকে থাকুক, সেটাই তাঁদের প্রার্থনা।
চরমপন্থীদের হাতে কাজী আরেফ আহমেদ নিহত হওয়ার পর বলা যায় জাসদে হাসানুল হক ইনুর একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সঙ্গে একযোগে চলার যে নীতি কাজী আরেফ নিয়েছিলেন, গত দেড় দশক সেটিই মোটামুটি অনুসৃত হয়ে আসছে। এবারের কাউন্সিলে দলের ভবিষ্যৎ কর্মসূচি কিংবা পথ ও মত নিয়ে বড় ধরনের বিরোধের কথা শোনা যায় না। কাউন্সিলে দু-একজন নেতা সরকার ও ১৪-দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে এসে স্বাধীনভাবে পথ চলার প্রস্তাব দিলেও তা গৃহীত হয়নি। এমনকি গঠনতন্ত্র পরিবর্তন করে হাসানুল হক ইনুকে সভাপতি করার বিষয়টিও তাঁর বিরোধীরা মেনে নেন। কিন্তু একই যুক্তিতে তাঁরা সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল আম্বিয়ার মেয়াদও বাড়ানোর দাবি তোলেন। সেটি গৃহীত না হওয়াই দলে বিভাজন। এখন এই সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে, সেটি দলের নেতারাই ভালো বলতে পারবেন। তবে প্রায় অগ্নিশেষ মশালের প্রতি এখনো যে সীমিতসংখ্যক মানুষের ভালোবাসা আছে এবং যাঁরা মনে করেন সরকারের বাইরে ও ভেতরে বাম ধারার ভূমিকা আরও জোরদার হওয়া উচিত, তাঁরা চান না জাসদ নামের দলটি ফের বিভক্ত হোক। প্রবল প্রতাপশালী আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর-কষাকষিতে যে সুবিধা করতে পারছে না, সাম্প্রতিক ইউপি নির্বাচনই তার প্রমাণ।
হাসানুল হক নির্বাচন কমিশনের কাছে সুবিচার চেয়েছেন। নির্বাচন কমিশনকে বিধি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত সঠিক মনে না করলে কোনো পক্ষ আদালতেও যেতে পারবে। কিন্তু তাতে দল লাভবান হবে না। শত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জাসদ যে ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের’ রাজনীতি করছে বলে নেতারা দাবি করছেন, সেটিও এগোবে না। তাই নির্বাচন কমিশনের কাছে সুবিচার পাওয়ার আগে দলের কর্মী-সমর্থকেরা নেতাদের কাছে সুবিচার আশা করেন। ক্ষীয়মাণ মশালটি টিকে থাকুক, সেটাই তাঁদের প্রার্থনা।
No comments