শিশুদের এ কী শেখাচ্ছে পাঠ্যপুস্তক বোর্ড? by মো: গোলাম হোসেন
স্কুল
থেকে ফিরে এসে খুকুমণি যদি দাদা ভাইকে ‘দাদা বাবা’, বোনকে ‘আপু মা’,
ভাবীকে ‘ভাবী মা’, বাবাকে ‘বাবা ভাই’ আর ভাইকে ‘আব্বু ভাইয়া’ ডাকা শুরু করে
এবং তার এই অদ্ভূত আচরণের কারণ হিসেবে স্কুল থেকে শিখিয়ে দেয়ার কথা বলে,
অভিভাবকেরা তখন কী ভাববেন? খুব সম্ভব তার কথার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য
স্কুলমুখী দৌড় শুরুর পরিবর্তে শিক্ষিত ও আধুনিক পরিবার হলে হাসপাতাল বা
কোনো মানসিক রোগবিশেষজ্ঞের কাছেই নিয়ে যাবেন। সব রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে
ডাক্তার যখন সিদ্ধান্ত দিলেন তার ‘ব্রেন ও মাইন্ড একেবারেই ওকে’ তখন
অভিভাবকেরা বোধকরি ডাক্তার সাহেবের সার্টিফিকেট আর পেশাগত যোগ্যতা নিয়েই
প্রশ্ন তুলবেন এবং শেষ অবধি খুকুমণিকে নিয়ে ধরনা দেবেন কোনো
ঝাড়-ফুঁকবিশেষজ্ঞের বা ভূত-প্রেরণওয়ালা বৈদ্য-কবিরাজের আস্তানায়। কারণ,
কোনো ‘ভূতে পাওয়া’ লোকেও বিশ্বাস করবে না যে, আদতেই সে স্কুল থেকে এমনটিই
শিখে এসেছে।
একটানা প্রায় বছর চারেক বিভিন্ন ধরনের ‘মাইনাস ওয়ান’ ক্লাস ডিঙিয়ে আমার নাতিটা নতুন বর্ষে (২০১৬) প্রথম শ্রেণীতে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। প্রথম শ্রেণীতে সে কী পড়বে সে সম্পর্কে ধারণা নিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক সরবরাহকৃত প্রথম শ্রেণীর বইগুলো নভেম্বর মাসেই বেশ কষ্ট করে আগাম সংগ্রহ করলাম। ছোটবেলায় নতুন ক্লাসের নতুন বই হাতে পাওয়ার মতোই আগ্রহ ও অনুসন্ধিৎসু মনে এক এক করে বইগুলোর আদ্যপ্রান্ত চোখ বুলিয়ে যেতে থাকলাম। বইয়ের কাগজ, কালি, ছাপা, রঙ ও চিত্রের শিল্পমান শিশুদের জন্য রচিত বেসরকারি বইয়ের সাথে তুলনার যোগ্য না হলেও পূর্বাপেক্ষা অনেকটা উন্নত হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হলো। বোর্ড চেয়ারম্যান মো: শফিকুর রহমানের ‘প্রসঙ্গ কথা’ আদ্যপ্রান্ত পাঠশেষে মূল বইয়ে প্রবেশ করলাম। পৃষ্ঠা ৫৮তে ‘শুভ ও দাদিমা’ শিরোনামটি নজরে পড়তেই থমকে গেলাম। ভুল পড়ছি না তো? না, ভুল পড়িনি। কৌতূহল নিয়ে পড়তে শুরু করলাম, ‘শুভর দাদি সেলাই করবেন। তিনি সুঁচে সুতা পরাতে পারছেন না। শুভ দেখতে পেল। বলল, দাদিমা কী হয়েছে? দাদি বললেন, চশমাটা যে কোথায় রেখেছি। তাই সুঁচে সুতা পরাতে পারছি না। শুভ বলল, আমি চশমাটা খুঁজে আনছি। একটু পরেই সে চশমা নিয়ে এলো। হাসিমুখে বলল, দাদিমা চশমাটা নিন। দাদি খুশি হলেন। বললেন, বেঁচে থাকতো ভাই। শুভ বলল, দাদিমা তুমি খুব ভালো।’ সংলাপ বা ঘটনা এখানেই শেষ। নাতির জন্য সংগ্রহে রেখেছিলাম দ্বিতীয় শ্রেণীর এক সেট বইও। এবার দ্বিতীয় শ্রেণীর বাংলা বইটি হাতে নিলাম। একই রকম সংলাপ ২য় শ্রেণীর বাংলা বইয়ের ৩৬ পৃষ্ঠাতেও। ‘দাদির হাতের মজার পিঠা’ শিরোনামের লেখাটির এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘শীতের ছুটিতে তুলি আর তপু যায় নিজের গ্রামের বাড়িতে। ঘুম থেকে উঠে তারা দেখে দাদি পিঠা তৈরি করছেন। তুলি : দাদিমা এটা কী পিঠা? দাদি : এটাকে বলে ভাপা পিঠা।’ ব্যবহৃত বাংলা বানান রীতি, গুরুজনদের সাথে ‘তুমি’ শব্দ ব্যবহারের ‘উপকারিতা’ ইত্যাদি নানা সমালোচনার বিষয় থাকলেও আলোচনা সংক্ষিপ্তকরণে আমরা সে দিকে যাচ্ছি না। এখানে ভাবার বিষয় আমাদের পাঠ্যপুস্তক বোর্ড শিশুদের কী শেখাতে চাচ্ছেন? আর তাদের উদ্দেশ্যই বা কী?
সম্পর্কের বিষয়টি রক্তের সাথে সম্পর্কিত হোক কী আত্মীয়তার বা সামাজিক, মৌলিকভাবে তা নির্ণীত হয় বিশেষত দু’টি শ্রেণিকরণের মাধ্যমে। (১) ব্যক্তিটি নারী হলে মা না বোনের ক্যাটাগরিতে, (২) পুরুষ হলে পিতা না ভাইয়ের কাতারে? এর বাইরে ‘স্বামী-স্ত্রী’ নামে যে উপ-শ্রেণীটি রয়েছে তা-ও আদতে ২য় ক্যাটাগরিরই অন্তর্ভুক্ত। এই শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রে ‘রক্তসম্পর্ক ও আত্মীয়’ এ দুয়ের মধ্যে যেটি ঘনিষ্ঠতর বা নিকটতর সেটিই প্রাধান্য পেয়ে থাকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে অপরিবর্তনীয় ও অবিভাজ্যও বটে। যেমনÑ পিতা-পুত্র, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদী, নানা-নানী ইত্যাদি। উল্লিখিত দু’টি শ্রেণিকরণের বাইরে তাবৎ বিশ্বের আর সব মানুষের সাথে সামাজিক বা মানবিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বয়সকেই প্রধান নিয়ামক হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়। সুতরাং বাবার বয়সের সমতুল্য হলে চাচা, মামা, খালু একইভাবে খালা, চাচী, মামী ইত্যাদি শব্দও ব্যবহৃত হয়ে থাকে মায়ের সমতুল্যদের ক্ষেত্রে; কিন্তু তাই বলে চাচা বা মামা সমবয়সী হয়ে গেলেও কেউ চাচা ভাই বা মামা ভাই ডাকে না। অথচ নিজ সমবয়সী অনাত্মীয়দের ঠিকই ভাই, দাদা, দিদি, আপা ইত্যাদি শব্দে সম্বোধন সুপ্রচলিত। অনেক ক্ষেত্রে ছোটরা বড় ভাইকে যেমনি দাদা-নানা ডাকে, তেমনি নানা-দাদাকেও দাদা ভাই, নানা ভাই ডাকতে দেখা যায় সম্পর্কের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই। সবে কথা ফুটেছে এমন শিশুটির মুখেও কখনো ‘নানা বাবা’, ‘দাদা বাবা’, ‘আপুমা’, ‘ভাবীমা’ উচ্চারণ শোনা যায় কি? অবশ্যই নয়। তা হলে এটা কী ইংরেজি 'Grand Father' 'Grand Mother'-এর সাথে গোঁজামিল দেয়ার মতো কোনো ব্যর্থ প্রয়াস? না ভিন্ন কোনো রোগের আলামত? তবে ঘর পোড়া গরুর মতো আমাদের সংশয় ও সন্দেহ অন্যখানে। কোরবানির গরু আর বলির পাঁঠার গোশত-মাংস বোর্ডের বইয়ে হালাল করে দেয়ার মতো বাবা-ভাই, মা-বোনের পরিচয় ও পার্থক্য একাকার করে দেয়ার মিশনও কী এবার হাতে নিয়েছে কি না বোর্ড? সমলিঙ্গ বলেই যদি দাদীকে ‘মা’ বলায় আপত্তি না থাকে তাহলে মাকে দাদী ডাকাতেও বোর্ডের আপত্তি থাকার কথা নয়। আর একই সূত্রে শ্যালিকা বা স্ত্রীর বেলায় প্রয়োগেও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সম্মতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পক্ষান্তরে ভাই, দুলা ভাই, নানা, দাদা, সবারই লিঙ্গপরিচয় অভিন্ন বলে ‘বাবা’ ডাকাতেও একই কারণে দোষ থাকার কথা নয়।
প্রশ্ন জাগে ১৬ কোটি মানুষের এই ভূখণ্ডে কোথাও কী দাদাকে ‘দাদাবাবা’ নানীকে ‘নানিমা’ ডাকার প্রচলন আছে? না এমনটির প্রচলন আছে কর্তাদের পারিবারিক পরিমণ্ডলে? কোনো অনুসন্ধান ছাড়াই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, অবশ্যই নয়। তাহলে আমাদের অবুঝ শিশুদের মুখে এহেন আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক বোলচাল তুলে দেয়ার রহস্য কী? এ কি নিছক খেয়ালের ভুল, না কোনো সূক্ষ্ম ও গভীর দুরভিসন্ধির অংশ? শিশুদের নিরেট বস্তুবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘বাপের নাম ভুলিয়ে দেওয়া’ও কী একান্তই জরুরি? এই বিষয় লেখার ইচ্ছে জেগেছিল নভেম্বরেই। ভাবলাম নতুন বইয়ে হয়তো বা সংশোধিত পরিমার্জিত হতেও পারে; কিন্তু না, তার মানে পরিকল্পনাটি বুঝেশুনেই নেয়া।
একটানা প্রায় বছর চারেক বিভিন্ন ধরনের ‘মাইনাস ওয়ান’ ক্লাস ডিঙিয়ে আমার নাতিটা নতুন বর্ষে (২০১৬) প্রথম শ্রেণীতে পদার্পণ করতে যাচ্ছে। প্রথম শ্রেণীতে সে কী পড়বে সে সম্পর্কে ধারণা নিতে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক সরবরাহকৃত প্রথম শ্রেণীর বইগুলো নভেম্বর মাসেই বেশ কষ্ট করে আগাম সংগ্রহ করলাম। ছোটবেলায় নতুন ক্লাসের নতুন বই হাতে পাওয়ার মতোই আগ্রহ ও অনুসন্ধিৎসু মনে এক এক করে বইগুলোর আদ্যপ্রান্ত চোখ বুলিয়ে যেতে থাকলাম। বইয়ের কাগজ, কালি, ছাপা, রঙ ও চিত্রের শিল্পমান শিশুদের জন্য রচিত বেসরকারি বইয়ের সাথে তুলনার যোগ্য না হলেও পূর্বাপেক্ষা অনেকটা উন্নত হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হলো। বোর্ড চেয়ারম্যান মো: শফিকুর রহমানের ‘প্রসঙ্গ কথা’ আদ্যপ্রান্ত পাঠশেষে মূল বইয়ে প্রবেশ করলাম। পৃষ্ঠা ৫৮তে ‘শুভ ও দাদিমা’ শিরোনামটি নজরে পড়তেই থমকে গেলাম। ভুল পড়ছি না তো? না, ভুল পড়িনি। কৌতূহল নিয়ে পড়তে শুরু করলাম, ‘শুভর দাদি সেলাই করবেন। তিনি সুঁচে সুতা পরাতে পারছেন না। শুভ দেখতে পেল। বলল, দাদিমা কী হয়েছে? দাদি বললেন, চশমাটা যে কোথায় রেখেছি। তাই সুঁচে সুতা পরাতে পারছি না। শুভ বলল, আমি চশমাটা খুঁজে আনছি। একটু পরেই সে চশমা নিয়ে এলো। হাসিমুখে বলল, দাদিমা চশমাটা নিন। দাদি খুশি হলেন। বললেন, বেঁচে থাকতো ভাই। শুভ বলল, দাদিমা তুমি খুব ভালো।’ সংলাপ বা ঘটনা এখানেই শেষ। নাতির জন্য সংগ্রহে রেখেছিলাম দ্বিতীয় শ্রেণীর এক সেট বইও। এবার দ্বিতীয় শ্রেণীর বাংলা বইটি হাতে নিলাম। একই রকম সংলাপ ২য় শ্রেণীর বাংলা বইয়ের ৩৬ পৃষ্ঠাতেও। ‘দাদির হাতের মজার পিঠা’ শিরোনামের লেখাটির এক জায়গায় বলা হয়েছে, ‘শীতের ছুটিতে তুলি আর তপু যায় নিজের গ্রামের বাড়িতে। ঘুম থেকে উঠে তারা দেখে দাদি পিঠা তৈরি করছেন। তুলি : দাদিমা এটা কী পিঠা? দাদি : এটাকে বলে ভাপা পিঠা।’ ব্যবহৃত বাংলা বানান রীতি, গুরুজনদের সাথে ‘তুমি’ শব্দ ব্যবহারের ‘উপকারিতা’ ইত্যাদি নানা সমালোচনার বিষয় থাকলেও আলোচনা সংক্ষিপ্তকরণে আমরা সে দিকে যাচ্ছি না। এখানে ভাবার বিষয় আমাদের পাঠ্যপুস্তক বোর্ড শিশুদের কী শেখাতে চাচ্ছেন? আর তাদের উদ্দেশ্যই বা কী?
সম্পর্কের বিষয়টি রক্তের সাথে সম্পর্কিত হোক কী আত্মীয়তার বা সামাজিক, মৌলিকভাবে তা নির্ণীত হয় বিশেষত দু’টি শ্রেণিকরণের মাধ্যমে। (১) ব্যক্তিটি নারী হলে মা না বোনের ক্যাটাগরিতে, (২) পুরুষ হলে পিতা না ভাইয়ের কাতারে? এর বাইরে ‘স্বামী-স্ত্রী’ নামে যে উপ-শ্রেণীটি রয়েছে তা-ও আদতে ২য় ক্যাটাগরিরই অন্তর্ভুক্ত। এই শ্রেণিকরণের ক্ষেত্রে ‘রক্তসম্পর্ক ও আত্মীয়’ এ দুয়ের মধ্যে যেটি ঘনিষ্ঠতর বা নিকটতর সেটিই প্রাধান্য পেয়ে থাকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে একেবারে অপরিবর্তনীয় ও অবিভাজ্যও বটে। যেমনÑ পিতা-পুত্র, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, দাদা-দাদী, নানা-নানী ইত্যাদি। উল্লিখিত দু’টি শ্রেণিকরণের বাইরে তাবৎ বিশ্বের আর সব মানুষের সাথে সামাজিক বা মানবিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে বয়সকেই প্রধান নিয়ামক হিসেবে বিবেচনায় নেয়া হয়। সুতরাং বাবার বয়সের সমতুল্য হলে চাচা, মামা, খালু একইভাবে খালা, চাচী, মামী ইত্যাদি শব্দও ব্যবহৃত হয়ে থাকে মায়ের সমতুল্যদের ক্ষেত্রে; কিন্তু তাই বলে চাচা বা মামা সমবয়সী হয়ে গেলেও কেউ চাচা ভাই বা মামা ভাই ডাকে না। অথচ নিজ সমবয়সী অনাত্মীয়দের ঠিকই ভাই, দাদা, দিদি, আপা ইত্যাদি শব্দে সম্বোধন সুপ্রচলিত। অনেক ক্ষেত্রে ছোটরা বড় ভাইকে যেমনি দাদা-নানা ডাকে, তেমনি নানা-দাদাকেও দাদা ভাই, নানা ভাই ডাকতে দেখা যায় সম্পর্কের ধারাবাহিকতা রক্ষা করেই। সবে কথা ফুটেছে এমন শিশুটির মুখেও কখনো ‘নানা বাবা’, ‘দাদা বাবা’, ‘আপুমা’, ‘ভাবীমা’ উচ্চারণ শোনা যায় কি? অবশ্যই নয়। তা হলে এটা কী ইংরেজি 'Grand Father' 'Grand Mother'-এর সাথে গোঁজামিল দেয়ার মতো কোনো ব্যর্থ প্রয়াস? না ভিন্ন কোনো রোগের আলামত? তবে ঘর পোড়া গরুর মতো আমাদের সংশয় ও সন্দেহ অন্যখানে। কোরবানির গরু আর বলির পাঁঠার গোশত-মাংস বোর্ডের বইয়ে হালাল করে দেয়ার মতো বাবা-ভাই, মা-বোনের পরিচয় ও পার্থক্য একাকার করে দেয়ার মিশনও কী এবার হাতে নিয়েছে কি না বোর্ড? সমলিঙ্গ বলেই যদি দাদীকে ‘মা’ বলায় আপত্তি না থাকে তাহলে মাকে দাদী ডাকাতেও বোর্ডের আপত্তি থাকার কথা নয়। আর একই সূত্রে শ্যালিকা বা স্ত্রীর বেলায় প্রয়োগেও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সম্মতি থাকবে এটাই স্বাভাবিক। পক্ষান্তরে ভাই, দুলা ভাই, নানা, দাদা, সবারই লিঙ্গপরিচয় অভিন্ন বলে ‘বাবা’ ডাকাতেও একই কারণে দোষ থাকার কথা নয়।
প্রশ্ন জাগে ১৬ কোটি মানুষের এই ভূখণ্ডে কোথাও কী দাদাকে ‘দাদাবাবা’ নানীকে ‘নানিমা’ ডাকার প্রচলন আছে? না এমনটির প্রচলন আছে কর্তাদের পারিবারিক পরিমণ্ডলে? কোনো অনুসন্ধান ছাড়াই নিশ্চিতভাবে বলা যায়, অবশ্যই নয়। তাহলে আমাদের অবুঝ শিশুদের মুখে এহেন আপত্তিকর ও বিভ্রান্তিমূলক বোলচাল তুলে দেয়ার রহস্য কী? এ কি নিছক খেয়ালের ভুল, না কোনো সূক্ষ্ম ও গভীর দুরভিসন্ধির অংশ? শিশুদের নিরেট বস্তুবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ‘বাপের নাম ভুলিয়ে দেওয়া’ও কী একান্তই জরুরি? এই বিষয় লেখার ইচ্ছে জেগেছিল নভেম্বরেই। ভাবলাম নতুন বইয়ে হয়তো বা সংশোধিত পরিমার্জিত হতেও পারে; কিন্তু না, তার মানে পরিকল্পনাটি বুঝেশুনেই নেয়া।
No comments