বোমায় কাঁপল ইস্তাম্বুল
ঐতিহাসিক এই ব্লু মস্কের কাছেই আত্মঘাতী হামলা চালানো হয়। এএফপি |
তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকায় শক্তিশালী আত্মঘাতী বোমা হামলায় বিদেশি পর্যটকসহ অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের আটজন জার্মানির নাগরিক বলে জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেল। নিহত ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খবর রয়টার্স, এএফপি ও বিবিসির। গতকাল মঙ্গলবার এ হামলার পর রাজধানী আঙ্কারায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর প্রধানদের সঙ্গে এক জরুরি বৈঠকে বসেন তুর্কি প্রধানমন্ত্রী আহমেত দাভুতোগলু। তিনি এ হামলার জন্য সিরিয়া ও ইরাকভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, হামলায় নিহত সবাই বিদেশি নাগরিক। হামলাকারী নিজেও বিদেশি নাগরিক ছিল এবং আইএসের সদস্য ছিল। তবে কেউ হামলার দায় এখনো সরাসরি স্বীকার করেনি। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে উদ্ধৃত করে বিবিসির খবরে বলা হয়, ইস্তাম্বুলের প্রাণকেন্দ্র সুলতানআহমেত এলাকায় একজন সিরীয় ওই আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়। তুরস্কের ঐতিহাসিক মসজিদ ব্লু মস্কের কাছে এ হামলা চালানো হয়েছে। ইস্তাম্বুলের গভর্নর অফিস থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, হামলায় ১০ জন নিহত এবং ১৫ জন আহত হয়েছেন। হামলায় ব্যবহৃত বিস্ফোরক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে কর্তৃপক্ষ। তুরস্কের বার্তা সংস্থা দোগানের বরাত দিয়ে রয়টার্স বলেছে, আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জন জার্মানির, একজন নরওয়ের এবং একজন পেরুর নাগরিক। মুরাত মানাজ নামে একজন প্রত্যক্ষদর্শী বিবিসিকে বলেন, এটা ছিল আত্মঘাতী বোমার বিস্ফোরণ।
হামলার পর শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। আতঙ্কে সবাই দিগ্বিদিক ছুটছিলেন। তিনি আরও বলেন, হামলার পর দ্বিতীয় বিস্ফোরণের আশঙ্কায় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সবাইকে সরিয়ে দিচ্ছিল। নরওয়ের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, হামলায় আহত তাদের এক নাগরিকের হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। জার্মানির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইস্তাম্বুলে থাকা জার্মান পর্যটকদের জনসমাগম ও আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছে। তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ও সন্ত্রাসী হামলার সম্ভাবনার ব্যাপারেও সতর্ক করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়। রয়টার্স জানায়, তাৎক্ষণিকভাবে কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার না করলেও অতীতে তুরস্কে ইসলামপন্থী, বামপন্থী ও কুর্দি বিদ্রোহীদের বিভিন্ন হামলার নজির রয়েছে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান বলেছেন, এই অঞ্চলের সব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর শীর্ষ লক্ষ্যবস্তুতে রয়েছে তুরস্ক। তাই তাঁর দেশ এদের সবার বিরুদ্ধেই সমভাবে লড়াই চালাচ্ছে। জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এটাকে ‘চরম গর্হিত অপরাধ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। বিবিসির সংবাদদাতা মার্ক লোয়েন বলেন, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ইস্তাম্বুলে একটি অতি বামপন্থী গ্রুপ বিক্ষিপ্ত হামলা চালিয়েছে। আবার তুর্কি সেনাবাহিনী ও পিকেকের কুর্দি বিদ্রোহীদের মধ্যে অস্ত্রবিরতি ভেঙে পড়ার পর বিশেষত দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে সহিংসতা। আগেও তুরস্কে বোমা হামলার ঘটনা ঘটেছে। সেসবের জন্য আইএসকে দায়ী করেছেন দেশটির সরকারি কৌঁসুলিরা। গত অক্টোবরে আঙ্কারায় দুটি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে শতাধিক লোক নিহত হন। জুলাইয়ে সিরিয়া সীমান্তের কাছে আরেক হামলায় নিহত হন ৩০ জনের বেশি।
No comments