‘ঢেঁকুর’ তুললো পৃথিবীর নিকটবর্তী ব্ল্যাক হোল
এতদিন
পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা মনে করতেন, ব্ল্যাক হোলের আশপাশের সবকিছুকেই ‘খেয়ে
ফেলে’। সেই ধারণা এবারে বদলে যাওয়ার উপক্রম হলো। পৃথিবীর কাছাকাছি একটি
ব্ল্যাক হোল থেকে গ্যাস উদ্গিরণ হওয়ার ঘটনা লক্ষ্য করেছেন জ্যোতির্বিদরা।
সিএনএনের খবরে বলা হয়, পৃথিবী থেকে ২৬ মিলিয়ন আলোকবর্ষ দূরের এনজিসি ৫১৯৫
নামের গ্যালাক্সির কেন্দ্রে রয়েছে ওই বিশাল ব্ল্যাক হোল। পৃথিবী থেকে এর
দূরত্ব ২৬ মিলিয়ন আলোকবর্ষ হলেও নিকটতম দূরত্বের ব্ল্যাক হোলগুলোর মধ্যে
এটি একটি। এই ব্ল্যাক হোল থেকেই গ্যাসের দুটি বড় ধরনের প্রবাহ দেখা গেছে।
জ্যোতির্বিদরা মনে করছেন, এনজিসি ৫১৯৫ গ্যালাক্সির সঙ্গে নিকটবর্তী বড় একটি
গ্যালাক্সির ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফল হিসেবেই এই গ্যাস উদ্গিরণের ঘটনা
ঘটেছে। ব্ল্যাক হোলটির দিকে গ্যাসের হঠাৎ বিপুল প্রবাহের কারণেই এ উদ্গিরণ
ঘটেছে। আর এই উদ্গিরণ নতুন একটি নক্ষত্র তৈরির জন্য পর্যাপ্ত বলেই মনে
করছেন জ্যোতির্বিদরা। এই জ্যোতির্বিদ দলের প্রধান ইউনিভার্সিটি অব
টেক্সাসের এরিক শ্লেগেল নাসাকে বলেন, ‘আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ব্ল্যাক হোল
খাওয়ার পর ঢেঁকুরও তুলতে পারে! এ ধরনের ঘটনা বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের শুরুর
দিকে দেখা যেত। আমাদের এই পর্যবেক্ষণ তাই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বড় আকারের
ব্ল্যাক হোলের ক্ষেত্রে গ্যাস উদ্গিরণের ঘটনা ঘটে থাকলেও এই ধরনের ঘটনার
এমন নিবিড় পর্যবেক্ষণের সুযোগ অত্যন্ত বিরল।’ নাসার চন্দ্র অবজারভেটরি থেকে
এক্সরে ইমেজ ও কিট পিক ন্যাশনাল অবজারভেটরি থেকে অপটিক্যাল ইমেজ ব্যবহার
করে শ্লেগেল ও তার সহকর্মীরা এই ব্ল্যাক হোল থেকে বের হওয়া দুটি গ্যাসের
স্তর দেখতে পেয়েছেন। এর মধ্যে সামনের দিকে ছিল ঠাণ্ডা হাইড্রোজেন গ্যাসের
পাতলা একটি স্তর। জ্যোতির্বিদ দলের আরেক সদস্য হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান
সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রেফিজিক্সের মেরি ম্যাচাচেক বলেন, ‘আমরা মনে করছি, এ
ধরনের ঘটনা গ্যালাক্সিদের খুব বড় হয়ে উঠতে দেয় না। আবার একই সঙ্গে নক্ষত্র
তৈরির প্রক্রিয়ার কারণ হিসেবেও একে দেখা যেতে পারে। এর থেকে দেখা যায় যে,
ব্ল্যাক হোল কেবল ধ্বংসই করে না, তৈরিও করতে পারে।’ আমেরিকান
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির ২২৭তম সভায় এ পর্যবেক্ষণবিষয়ক গবেষণার তথ্য
তুলে ধরতে গিয়ে গবেষক দলটি জানিয়েছে, ব্ল্যাক হোলের ‘ঢেঁকুর’ তোলার এই
ঘটনাটি কয়েক মিলিয়ন বছর আগে ঘটে গেছে। দুই স্তরের গ্যাসের মধ্যে ভেতরের
স্তরটিকে বর্তমান অবস্থানে পৌঁছাতে সময় লেগেছে তিন মিলিয়ন বছর; আর বাইরের
স্তরটির জন্য সময় লেগেছে এর দ্বিগুণ বা ছয় মিলিয়ন বছর।
No comments