শিক্ষার্থীদের হাতে নিম্নমানের বই by শরিফুজ্জামান
সারা দেশের শিক্ষার্থীরা সময়মতো পাঠ্যবই পেলেও বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রাথমিকের বইয়ে নিম্নমানের কাগজ ব্যবহার করায় অনেক ক্ষেত্রে ছাপা অস্পষ্ট হয়েছে। বাঁধাইয়ের কাজটাও যথাযথ হয়নি। ফলে এ বই কত দিন টিকবে, তা নিয়ে শঙ্কিত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), দাতাদের মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথকভাবে পাঠ্যবইয়ের মান যাচাই শুরু করেছে।
এডিবির নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম পাঠ্যবইয়ের মান যাচাইয়ের জন্য ভারতের একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এডিবি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এনসিটিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানও এ পর্যন্ত ১০০ উপজেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিম্নমানের কাগজে ঝাপসা বই ছাপার প্রমাণ পেয়েছে।
এ ছাড়া মান যাচাইয়ে এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রতন সিদ্দিকীকে প্রধান করে ১১ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতেও গত মঙ্গলবার নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপার বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে।
বিভিন্ন শ্রেণির ১১টি নতুন বই সংগ্রহ করে দেখা যায়, এগুলোর কাগজ ও ছাপার মান খারাপ। কোনো কোনো ছবি থেকে কালি উঠছে। ছবির ব্যক্তিদের চেহারা অনেক ক্ষেত্রে বোঝা যাচ্ছে না। প্রাথমিকের কাগজ, ছাপা ও বাঁধাই খারাপ, মাধ্যমিক স্তরে ছাপা ও বাঁধাই খারাপ হয়েছে। মুদ্রাকরেরা বিষয়টি মানলেও নানা কারণ দেখাচ্ছেন।
ঢাকায় ছাপা ও বাঁধাইয়ের মান তুলনামূলক ভালো হলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় তা খারাপ হয়েছে। রাজশাহী গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক আজমিরা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকের বইয়ের কাগজ ও ছাপার মান গত বছরের চেয়ে বেশ খারাপ। রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, মাধ্যমিকের বই এমনভাবে বাঁধাই করা হয়েছে যে মেলতে গেলেই সুতা ছিঁড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এমনিতে শিশুদের হাতে বই বেশি ছিঁড়ে। নিম্নমানের বাঁধাইয়ের কারণে দ্রুতই বইগুলো পড়ার অযোগ্য হয়ে যাবে।
বইয়ের মান খারাপ পাচ্ছে কন্টিনেন্টাল: বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই সংগ্রহ করে দেখা গেছে, চার রঙের পাঠ্যবই ৮০ গ্রাম সাদা কাগজে ছাপার যেসব শর্ত ছিল, তা মানা হয়নি। বইয়ের বেশির ভাগ ছবি ঝাপসা, নড়বড়ে বাঁধাই। কাগজ ও বইয়ের মান দেখভালের জন্য এনসিটিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল বিডি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক শেখ বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি প্যাকেজের কাগজে ত্রুটি পেয়ে বিষয়টি এনসিটিবিকে জানানো হয়েছে। আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না, এনসিটিবিকে অবহিত করাই আমাদের কাজ, সেটি নিয়মিত করা হচ্ছে।’
বইয়ের মান সম্পর্কে শেখ বেলাল বলেন, ৫০৮টি উপজেলা থেকে কন্টিনেন্টাল বই সংগ্রহ করে দরপত্রের শর্তের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে। ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ উপজেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত মানা হয়নি।
তবে এনসিটিবি বলছে, নিম্নমানের কাগজের বিষয়টি কন্টিনেন্টালের প্রথম প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল না।
অসহায়ত্বের দাবি মুদ্রাকরদের: মুদ্রাকরেরা পাঠ্যবই ছাপতে গিয়ে তাঁদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। সবচেয়ে বেশি বই ছাপার কাজ নেওয়া সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিংয়ের স্বত্বাধিকারী দুলাল সরকার বলেন, ‘কাজ নেওয়ার পর মিলমালিকেরা কাগজের দাম ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেন। অগ্রিম টাকা দিয়েও সময়মতো ও মানসম্মত কাগজ পাওয়া যায়নি। এর কিছুটা প্রভাব পাঠ্যবইয়ের ওপর পড়তে পারে।’ তবে তিনি বলেন, ‘লোকসান নিশ্চিত জেনে এবং বদনামের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে সময়মতো বই দিয়েছি।’
৩৫ শতাংশ বিল এনসিটিবির হাতে: দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী মুদ্রাকরদের ৮০ শতাংশ বিল এখন দেওয়া হচ্ছে, যার পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বাকি ২০ শতাংশ বিল বকেয়া থাকছে। এ ছাড়া এনসিটিবির হাতে রয়েছে ১৫ শতাংশ নিরাপত্তা জামানত। এই ৩৫ শতাংশ টাকা মুদ্রাকরেরা পাবেন বইয়ের মান পরীক্ষার পর। মুদ্রাকরেরা অস্বাভাবিক কম দর দিয়ে কাজ নেওয়ার সময় বিশ্বব্যাংক আপত্তি তুলেছিল। বিনা মূল্যের প্রাথমিকের বইয়ের টাকার একটি অংশ এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ একটি কনসোর্টিয়াম দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাংক তখন আপত্তি জানালেও সময়ের কথা বিবেচনা করে অবস্থান থেকে সরে যায়। তবে শর্ত দেয়, নিরাপত্তা জামানত ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করতে হবে। এখন বইয়ের মান খারাপ হওয়ায় মুদ্রাকরদের এই জামানত ঝুঁকিতে পড়েছে।
সামনে তিন ধরনের শাস্তি: এনসিটিবি সূত্র জানায়, তিন ধরনের শাস্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ বই আবার ছেপে দেওয়া, শর্ত লঙ্ঘনকারী মুদ্রাকরকে আর্থিক জরিমানা করা এবং দায়ী প্রতিষ্ঠানকে তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুদ্রাকরেরা দরপত্রের শর্ত না মানলে নানা রকম ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের হাতে রয়েছে।’ তিনি বলেন, সময়মতো বই দিয়ে তাঁরা দরপত্রের শর্ত মেনেছেন। আবার নিম্নমানের কাগজে বই দিয়ে থাকলে তা দরপত্রের শর্তের লঙ্ঘন, যেটি কাম্য নয়।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্র মেনে কাজ করতে হবে এবং না মানা হলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা দরপত্রেই বলা আছে।
বিদেশি প্রতিষ্ঠান হটাতে গিয়ে এ অবস্থা: ২০১১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সাদা কাগজে প্রাথমিকের চার রঙের বই ছাপা হচ্ছে। তখন থেকে ভারত, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি ছাপাখানা দরপত্রে অংশ নেওয়া শুরু করে। যদিও পরে শুধু ভারতের কয়েকটি ছাপাখানা অংশ নিয়ে আসছিল। সরকারের যুক্তি ছিল, প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কাজ হলে পাঠ্যবইয়ের মান বাড়বে। এ বছর বিদেশি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণ ঠেকাতে দেশীয় ২২ মুদ্রাকর জোট বেঁধে অস্বাভাবিক কম দামে দরপত্রে অংশ নেন। বিদেশি প্রকাশনা সংস্থাকে ঠেকাতে ১২১ কোটি টাকা কম দর দিয়ে কাজ নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত প্রথম আলোকে বলেন, সময়মতো বই দিতে গিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে পাঠ্যবইয়ের মানে কিছুটা হেরফের হতে পারে। এবার কাগজকলের মালিকেরা সময় কম থাকায় মুদ্রাকরদের জিম্মি করে ফেলেন, কাগজের দাম বাড়িয়ে দেন।
২০১৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক্-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ি ও দাখিল স্তরের বিনা মূল্যের বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ কপি, যা শিক্ষার্থীদের কাছে বিনা মূল্যে পৌঁছে দিয়েছে সরকার।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি), দাতাদের মধ্যে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান পৃথক পৃথকভাবে পাঠ্যবইয়ের মান যাচাই শুরু করেছে।
এডিবির নেতৃত্বাধীন কনসোর্টিয়াম পাঠ্যবইয়ের মান যাচাইয়ের জন্য ভারতের একটি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দিয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও এডিবি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
এনসিটিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানও এ পর্যন্ত ১০০ উপজেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে নিম্নমানের কাগজে ঝাপসা বই ছাপার প্রমাণ পেয়েছে।
এ ছাড়া মান যাচাইয়ে এনসিটিবির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রতন সিদ্দিকীকে প্রধান করে ১১ সদস্যের আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতেও গত মঙ্গলবার নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই ছাপার বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে।
বিভিন্ন শ্রেণির ১১টি নতুন বই সংগ্রহ করে দেখা যায়, এগুলোর কাগজ ও ছাপার মান খারাপ। কোনো কোনো ছবি থেকে কালি উঠছে। ছবির ব্যক্তিদের চেহারা অনেক ক্ষেত্রে বোঝা যাচ্ছে না। প্রাথমিকের কাগজ, ছাপা ও বাঁধাই খারাপ, মাধ্যমিক স্তরে ছাপা ও বাঁধাই খারাপ হয়েছে। মুদ্রাকরেরা বিষয়টি মানলেও নানা কারণ দেখাচ্ছেন।
ঢাকায় ছাপা ও বাঁধাইয়ের মান তুলনামূলক ভালো হলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় তা খারাপ হয়েছে। রাজশাহী গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের শিক্ষক আজমিরা খাতুন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকের বইয়ের কাগজ ও ছাপার মান গত বছরের চেয়ে বেশ খারাপ। রাজশাহীর লক্ষ্মীপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারুক হোসেন বলেন, মাধ্যমিকের বই এমনভাবে বাঁধাই করা হয়েছে যে মেলতে গেলেই সুতা ছিঁড়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, এমনিতে শিশুদের হাতে বই বেশি ছিঁড়ে। নিম্নমানের বাঁধাইয়ের কারণে দ্রুতই বইগুলো পড়ার অযোগ্য হয়ে যাবে।
বইয়ের মান খারাপ পাচ্ছে কন্টিনেন্টাল: বিভিন্ন শ্রেণির পাঠ্যবই সংগ্রহ করে দেখা গেছে, চার রঙের পাঠ্যবই ৮০ গ্রাম সাদা কাগজে ছাপার যেসব শর্ত ছিল, তা মানা হয়নি। বইয়ের বেশির ভাগ ছবি ঝাপসা, নড়বড়ে বাঁধাই। কাগজ ও বইয়ের মান দেখভালের জন্য এনসিটিবির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান কন্টিনেন্টাল বিডি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটির প্রকল্প ব্যবস্থাপক শেখ বেলাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘বেশ কয়েকটি প্যাকেজের কাগজে ত্রুটি পেয়ে বিষয়টি এনসিটিবিকে জানানো হয়েছে। আমরা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারি না, এনসিটিবিকে অবহিত করাই আমাদের কাজ, সেটি নিয়মিত করা হচ্ছে।’
বইয়ের মান সম্পর্কে শেখ বেলাল বলেন, ৫০৮টি উপজেলা থেকে কন্টিনেন্টাল বই সংগ্রহ করে দরপত্রের শর্তের সঙ্গে মিলিয়ে দেখবে। ইতিমধ্যে প্রায় ১০০ উপজেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত যা পাওয়া গেছে, তাতে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দরপত্রের শর্ত মানা হয়নি।
তবে এনসিটিবি বলছে, নিম্নমানের কাগজের বিষয়টি কন্টিনেন্টালের প্রথম প্রতিবেদনে উল্লেখ ছিল না।
অসহায়ত্বের দাবি মুদ্রাকরদের: মুদ্রাকরেরা পাঠ্যবই ছাপতে গিয়ে তাঁদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। সবচেয়ে বেশি বই ছাপার কাজ নেওয়া সরকার প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিশিংয়ের স্বত্বাধিকারী দুলাল সরকার বলেন, ‘কাজ নেওয়ার পর মিলমালিকেরা কাগজের দাম ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে দেন। অগ্রিম টাকা দিয়েও সময়মতো ও মানসম্মত কাগজ পাওয়া যায়নি। এর কিছুটা প্রভাব পাঠ্যবইয়ের ওপর পড়তে পারে।’ তবে তিনি বলেন, ‘লোকসান নিশ্চিত জেনে এবং বদনামের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে সময়মতো বই দিয়েছি।’
৩৫ শতাংশ বিল এনসিটিবির হাতে: দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী মুদ্রাকরদের ৮০ শতাংশ বিল এখন দেওয়া হচ্ছে, যার পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি টাকা। বাকি ২০ শতাংশ বিল বকেয়া থাকছে। এ ছাড়া এনসিটিবির হাতে রয়েছে ১৫ শতাংশ নিরাপত্তা জামানত। এই ৩৫ শতাংশ টাকা মুদ্রাকরেরা পাবেন বইয়ের মান পরীক্ষার পর। মুদ্রাকরেরা অস্বাভাবিক কম দর দিয়ে কাজ নেওয়ার সময় বিশ্বব্যাংক আপত্তি তুলেছিল। বিনা মূল্যের প্রাথমিকের বইয়ের টাকার একটি অংশ এডিবি, বিশ্বব্যাংকসহ একটি কনসোর্টিয়াম দিয়ে থাকে। বিশ্বব্যাংক তখন আপত্তি জানালেও সময়ের কথা বিবেচনা করে অবস্থান থেকে সরে যায়। তবে শর্ত দেয়, নিরাপত্তা জামানত ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ করতে হবে। এখন বইয়ের মান খারাপ হওয়ায় মুদ্রাকরদের এই জামানত ঝুঁকিতে পড়েছে।
সামনে তিন ধরনের শাস্তি: এনসিটিবি সূত্র জানায়, তিন ধরনের শাস্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। এগুলো হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ বই আবার ছেপে দেওয়া, শর্ত লঙ্ঘনকারী মুদ্রাকরকে আর্থিক জরিমানা করা এবং দায়ী প্রতিষ্ঠানকে তিন বছরের জন্য কালো তালিকাভুক্ত করা।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুদ্রাকরেরা দরপত্রের শর্ত না মানলে নানা রকম ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ আমাদের হাতে রয়েছে।’ তিনি বলেন, সময়মতো বই দিয়ে তাঁরা দরপত্রের শর্ত মেনেছেন। আবার নিম্নমানের কাগজে বই দিয়ে থাকলে তা দরপত্রের শর্তের লঙ্ঘন, যেটি কাম্য নয়।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষাসচিব মো. সোহরাব হোসাইন গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, দরপত্র মেনে কাজ করতে হবে এবং না মানা হলে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তা দরপত্রেই বলা আছে।
বিদেশি প্রতিষ্ঠান হটাতে গিয়ে এ অবস্থা: ২০১১ সাল থেকে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সাদা কাগজে প্রাথমিকের চার রঙের বই ছাপা হচ্ছে। তখন থেকে ভারত, ভিয়েতনাম ও দক্ষিণ কোরিয়ার কয়েকটি ছাপাখানা দরপত্রে অংশ নেওয়া শুরু করে। যদিও পরে শুধু ভারতের কয়েকটি ছাপাখানা অংশ নিয়ে আসছিল। সরকারের যুক্তি ছিল, প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কাজ হলে পাঠ্যবইয়ের মান বাড়বে। এ বছর বিদেশি প্রকাশনা সংস্থার অংশগ্রহণ ঠেকাতে দেশীয় ২২ মুদ্রাকর জোট বেঁধে অস্বাভাবিক কম দামে দরপত্রে অংশ নেন। বিদেশি প্রকাশনা সংস্থাকে ঠেকাতে ১২১ কোটি টাকা কম দর দিয়ে কাজ নেওয়া হয়।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুদ্রণশিল্প সমিতির চেয়ারম্যান শহীদ সেরনিয়াবাত প্রথম আলোকে বলেন, সময়মতো বই দিতে গিয়ে বিচ্ছিন্নভাবে পাঠ্যবইয়ের মানে কিছুটা হেরফের হতে পারে। এবার কাগজকলের মালিকেরা সময় কম থাকায় মুদ্রাকরদের জিম্মি করে ফেলেন, কাগজের দাম বাড়িয়ে দেন।
২০১৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য প্রাক্-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, ইবতেদায়ি ও দাখিল স্তরের বিনা মূল্যের বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩৩ কোটি ৩৮ লাখ কপি, যা শিক্ষার্থীদের কাছে বিনা মূল্যে পৌঁছে দিয়েছে সরকার।
No comments