মধ্যপ্রাচ্যে স্নায়ুযুদ্ধ by বার্নাড হাকেল
অস্থিতিশীল
ও যুদ্ধরত মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও সৌদি আরবের কূটনৈতিক সম্পর্কের তীব্র অবনতি
ঘটেছে। সৌদি আরব সম্প্রতি শিয়াধর্মীয় নেতা নিমর আল নিমরের শিরñেদ করে। এই
শিয়াধর্মীয় নেতা বহু দিন থেকেই সৌদি আরবের রাজ শাসনের অবসান চেয়ে প্রচার
চালাচ্ছিলেন। তবে তাদের সম্পর্কের এই ভাঙন মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে চলমান কৌশলগত
বৈরিতার অতীত ইতিহাসকেই আবারো সামনে নিয়ে এলো।
দেশ দু’টির মধ্যে দীর্ঘ দিন থেকেই বৈরিতা চলছে। যা প্রথম স্পষ্ট হয়ে ওঠে ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সময়। এই বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি কখনোই সৌদি রাজপরিবারের ব্যাপারে তার তিক্ত মনোভাব আড়াল করার চেষ্টা করেননি। তিনি খুব দ্রুতই ইরানকে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ শক্তি’ যুক্তরাষ্ট্র এবং এর আঞ্চলিক মিত্র সৌদি আরব ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন।
তবে বৈরিতা যখন ধর্মীয় গোষ্ঠী-উপগোষ্ঠী এবং আদর্শের দিকে মোড় নেয় তখন আঞ্চলিক স্বার্থ পেছনের আসনে গিয়ে স্থান পায়। ইরানের দৃষ্টিতে আরব বিশ্বের রাজনৈতিক ব্যবস্থা তার শত্রুদের স্বার্থ রক্ষা করছে। ফলে তেহরান ক্রমাগত এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে মদদ জোগাচ্ছে এবং ওই অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারে ছায়াযুদ্ধের সহায়তা নিচ্ছে। মক্কায় হাজীদের মধ্যে দাঙ্গা বাধাতে সহায়তা করে তারা, লেবাননে আত্মঘাতী হামলার ব্যবস্থা করে, হিজবুল্লাহর জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরেই, ইসরাইলে হামলা চালাচ্ছে এবং সর্বশেষ সিরিয়ায় সৌদি সমর্থিত বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
গত শতাব্দীতেও এ ব্যাপারে সৌদি আরবের প্রতিক্রিয়া ছিল বেশ উষ্ণ। তারা শক্ত হাতে শরিয়া আইনের বাস্তবায়ন করে এবং দেশের বাইরে মুসলমানদের মুক্তির পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। আফগানিস্তান বা বসনিয়াতে তাদের এ ধরনের তৎপরতা লক্ষ করা যায়। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এ অঞ্চলের এই দু’টি দেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ২০০৩ সালে ইরাকে অভিযান চালানোর পর বাগদাদে শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সময় সৌদি আববের শাসকেরা সতর্কতার সাথে লক্ষ করে ইরান সেখানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। আর এর মধ্যে দিয়ে ওই অঞ্চলেও তাদের প্রভাব বাড়ছে। ২০০৬ সালে ইসরাইলের সাথে লড়াই করে হিজবুল্লাহ। এরপর ২০১৪ সালে শিয়া হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী দখল করে। হুথি বিদ্রোহীরা ইরানেরই একটি প্রক্সি গ্রুপ। ইরানের এই তৎপরতা সৌদি আরবের জন্য ভীতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য (সাথে জার্মানি) ইরানের সাথে একটি পরমাণু চুক্তি সই করে। তারা ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহারে সম্মত হয়। বিনিময়ে ইরানকে তার পরমাণুসংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হয়। তবে পরমাণু প্রকল্প ছাড়া ইরানের আর কোনো তৎপরতার বিষয়ে কোনো উল্লেখ এই চুক্তিতে ছিল না। ফলে ইরান সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবাননসহ ওই অঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রাখে। সৌদি নেতৃবৃন্দ এই পরিস্থিতিতে ক্রমেই চার পাশ থেকে চাপ বোধ করতে থাকে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ সিংহাসন গ্রহণের পর থেকে আবার ইরানের প্রভাব কমানোর চেষ্টা শুরু করেন। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে হতে পারে, আবার সাহায্য ছাড়াও এই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এই দুই পক্ষের প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র হলো সিরিয়া ও ইয়েমেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় সৌদি আরব। প্রেসিডেন্ট আসাদ ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র। পাশাপাশি সিরিয়ার নানা বিরোধে বিভক্ত বিরোধী গোষ্ঠীকে একত্র করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব।
অন্য দিকে আসাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে ইরান। আর এদের সাহায্য করছে রাশিয়া।
এই যুদ্ধ এখন জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে। কোনো পক্ষই এগিয়ে রয়েছে এমন দাবি করতে পারছে না। এই সহিংসতা চলতেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্প্রতি লেবাননে একটি শান্তিচুক্তির চেষ্টা করে। তবে এই দুই পক্ষের বিবাদের মুখে সেই চুক্তি কার্যকর হয়নি। এই যুক্তিতে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়া হয় যাতে আসাদকে সরিয়ে তার কোনো সহযোগীকে ক্ষমতায় বসানোর কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা হয়। সৌদি আরব এই চুক্তিটি মেনে নিলেও হিজবুল্লাহর প্রস্তাবিত প্রার্থীদের পছন্দ হয়নি। আর তাদের সাথে একমত হয়ে ইরানও চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করে।
২০১৫ সালের মার্চে সৌদি আরব তার সুন্নি মিত্রদের নিয়ে ইয়েমেনে হামলা চালায়। এখানে আরেকটি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ইরানপন্থী হুথি যোদ্ধা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর বাহিনী সৌদি আরব সমর্থিত বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করছে। এই সঙ্ঘাত নিরসনের সব আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। ইয়েমেনে পূর্ণ দখলদারিত্ব কেউই কায়েম করেনি। ফলে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একই সাথে এ লড়াইও যে দীর্ঘ দিন চলবে তাও প্রায় নিশ্চিত।
অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের দমনের উদ্দেশ্য নিয়েই আল নিমরের শিরñেদ করে সৌদি আরব। সন্ত্রাসের অভিযোগে শিরñেদ করা ৪৭ জনের মধ্যে নিমর অন্যতম। এদের মধ্যে অনেক সুন্নিও রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আলকায়েদার সাথে সংযোগ থাকার অভিযোগ ছিল। সৌদি আরবের এ পদক্ষেপের ব্যাপারে ইরানে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তেহরানে সৌদি দূতাবাসে ভাঙচুর করা হয়। ইরাক ও বাহরাইনেও একই ধরনের বিক্ষোভ দেখা গেছে। তবে দুই দেশের সম্পর্কে যে তিক্ততা রয়েছে তার গভীরতা মাপার জন্য এই ঘটনাগুলোই যথেষ্ট নয়।
তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে গেলে, ইরানের এই প্রতিক্রিয়ায় সৌদি শাসকেরা উপকৃত হয়েছে। ইরানের এই প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে খোদ সৌদি আরব এবং সৌদি আরবের বাইরে লোকজন মিছিল করেছে। তবে এই দুই পক্ষকে আলোচনার টেবিলে না এনে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা সফল হবে না। বরং পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দেবে।
বার্নাড হাকেল : প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটপ্রাচ্য-বিষয়ক অধ্যাপক। এই নিবন্ধটি গত ৮ জানুয়ারি প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত হয়।
অনুবাদ : তানজিলা কাওকাব
দেশ দু’টির মধ্যে দীর্ঘ দিন থেকেই বৈরিতা চলছে। যা প্রথম স্পষ্ট হয়ে ওঠে ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সময়। এই বিপ্লবের নেতা আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি কখনোই সৌদি রাজপরিবারের ব্যাপারে তার তিক্ত মনোভাব আড়াল করার চেষ্টা করেননি। তিনি খুব দ্রুতই ইরানকে ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ শক্তি’ যুক্তরাষ্ট্র এবং এর আঞ্চলিক মিত্র সৌদি আরব ও ইসরাইলের বিরুদ্ধে শক্তি হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন।
তবে বৈরিতা যখন ধর্মীয় গোষ্ঠী-উপগোষ্ঠী এবং আদর্শের দিকে মোড় নেয় তখন আঞ্চলিক স্বার্থ পেছনের আসনে গিয়ে স্থান পায়। ইরানের দৃষ্টিতে আরব বিশ্বের রাজনৈতিক ব্যবস্থা তার শত্রুদের স্বার্থ রক্ষা করছে। ফলে তেহরান ক্রমাগত এই পরিস্থিতি পরিবর্তনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে মদদ জোগাচ্ছে এবং ওই অঞ্চলে নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারে ছায়াযুদ্ধের সহায়তা নিচ্ছে। মক্কায় হাজীদের মধ্যে দাঙ্গা বাধাতে সহায়তা করে তারা, লেবাননে আত্মঘাতী হামলার ব্যবস্থা করে, হিজবুল্লাহর জঙ্গিদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরেই, ইসরাইলে হামলা চালাচ্ছে এবং সর্বশেষ সিরিয়ায় সৌদি সমর্থিত বিদ্রোহী গ্রুপের সাথে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।
গত শতাব্দীতেও এ ব্যাপারে সৌদি আরবের প্রতিক্রিয়া ছিল বেশ উষ্ণ। তারা শক্ত হাতে শরিয়া আইনের বাস্তবায়ন করে এবং দেশের বাইরে মুসলমানদের মুক্তির পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে। আফগানিস্তান বা বসনিয়াতে তাদের এ ধরনের তৎপরতা লক্ষ করা যায়। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোতে এ অঞ্চলের এই দু’টি দেশের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চরম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। ২০০৩ সালে ইরাকে অভিযান চালানোর পর বাগদাদে শিয়া নেতৃত্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। এ সময় সৌদি আববের শাসকেরা সতর্কতার সাথে লক্ষ করে ইরান সেখানে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। আর এর মধ্যে দিয়ে ওই অঞ্চলেও তাদের প্রভাব বাড়ছে। ২০০৬ সালে ইসরাইলের সাথে লড়াই করে হিজবুল্লাহ। এরপর ২০১৪ সালে শিয়া হুথি বিদ্রোহীরা ইয়েমেনের রাজধানী দখল করে। হুথি বিদ্রোহীরা ইরানেরই একটি প্রক্সি গ্রুপ। ইরানের এই তৎপরতা সৌদি আরবের জন্য ভীতিকর হয়ে দাঁড়ায়।
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রসহ জাতিসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ স্থায়ী সদস্য (সাথে জার্মানি) ইরানের সাথে একটি পরমাণু চুক্তি সই করে। তারা ইরানের ওপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ প্রত্যাহারে সম্মত হয়। বিনিময়ে ইরানকে তার পরমাণুসংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ করতে বলা হয়। তবে পরমাণু প্রকল্প ছাড়া ইরানের আর কোনো তৎপরতার বিষয়ে কোনো উল্লেখ এই চুক্তিতে ছিল না। ফলে ইরান সিরিয়া, ইয়েমেন, লেবাননসহ ওই অঞ্চলে তাদের প্রভাব বিস্তার অব্যাহত রাখে। সৌদি নেতৃবৃন্দ এই পরিস্থিতিতে ক্রমেই চার পাশ থেকে চাপ বোধ করতে থাকে। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ সিংহাসন গ্রহণের পর থেকে আবার ইরানের প্রভাব কমানোর চেষ্টা শুরু করেন। সেটা যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে হতে পারে, আবার সাহায্য ছাড়াও এই চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
এই দুই পক্ষের প্রধান যুদ্ধক্ষেত্র হলো সিরিয়া ও ইয়েমেন। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায় সৌদি আরব। প্রেসিডেন্ট আসাদ ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র। পাশাপাশি সিরিয়ার নানা বিরোধে বিভক্ত বিরোধী গোষ্ঠীকে একত্র করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সৌদি আরব।
অন্য দিকে আসাদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে ইরান। আর এদের সাহায্য করছে রাশিয়া।
এই যুদ্ধ এখন জলাভূমিতে পরিণত হয়েছে। কোনো পক্ষই এগিয়ে রয়েছে এমন দাবি করতে পারছে না। এই সহিংসতা চলতেই থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ায় শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সম্প্রতি লেবাননে একটি শান্তিচুক্তির চেষ্টা করে। তবে এই দুই পক্ষের বিবাদের মুখে সেই চুক্তি কার্যকর হয়নি। এই যুক্তিতে ক্ষমতা ভাগাভাগির প্রস্তাব দেয়া হয় যাতে আসাদকে সরিয়ে তার কোনো সহযোগীকে ক্ষমতায় বসানোর কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দীর্ঘ দিন ধরে সৌদি আরবের ঘনিষ্ঠ এক ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করা হয়। সৌদি আরব এই চুক্তিটি মেনে নিলেও হিজবুল্লাহর প্রস্তাবিত প্রার্থীদের পছন্দ হয়নি। আর তাদের সাথে একমত হয়ে ইরানও চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করে।
২০১৫ সালের মার্চে সৌদি আরব তার সুন্নি মিত্রদের নিয়ে ইয়েমেনে হামলা চালায়। এখানে আরেকটি অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ইরানপন্থী হুথি যোদ্ধা এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর বাহিনী সৌদি আরব সমর্থিত বাহিনীর বিরুদ্ধে তীব্র লড়াই করছে। এই সঙ্ঘাত নিরসনের সব আলোচনা ব্যর্থ হয়েছে। ইয়েমেনে পূর্ণ দখলদারিত্ব কেউই কায়েম করেনি। ফলে হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। একই সাথে এ লড়াইও যে দীর্ঘ দিন চলবে তাও প্রায় নিশ্চিত।
অভ্যন্তরীণ বিরোধীদের দমনের উদ্দেশ্য নিয়েই আল নিমরের শিরñেদ করে সৌদি আরব। সন্ত্রাসের অভিযোগে শিরñেদ করা ৪৭ জনের মধ্যে নিমর অন্যতম। এদের মধ্যে অনেক সুন্নিও রয়েছে। এদের বিরুদ্ধে আলকায়েদার সাথে সংযোগ থাকার অভিযোগ ছিল। সৌদি আরবের এ পদক্ষেপের ব্যাপারে ইরানে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। তেহরানে সৌদি দূতাবাসে ভাঙচুর করা হয়। ইরাক ও বাহরাইনেও একই ধরনের বিক্ষোভ দেখা গেছে। তবে দুই দেশের সম্পর্কে যে তিক্ততা রয়েছে তার গভীরতা মাপার জন্য এই ঘটনাগুলোই যথেষ্ট নয়।
তাৎক্ষণিকভাবে দেখতে গেলে, ইরানের এই প্রতিক্রিয়ায় সৌদি শাসকেরা উপকৃত হয়েছে। ইরানের এই প্রতিক্রিয়ার বিরুদ্ধে খোদ সৌদি আরব এবং সৌদি আরবের বাইরে লোকজন মিছিল করেছে। তবে এই দুই পক্ষকে আলোচনার টেবিলে না এনে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা সফল হবে না। বরং পরিস্থিতিকে আরো অবনতির দিকে ঠেলে দেবে।
বার্নাড হাকেল : প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিকটপ্রাচ্য-বিষয়ক অধ্যাপক। এই নিবন্ধটি গত ৮ জানুয়ারি প্রজেক্ট সিন্ডিকেটে প্রকাশিত হয়।
অনুবাদ : তানজিলা কাওকাব
No comments