তরুণ চিকিৎসকের উভয় সঙ্কট by মো: মাকসুদ উল্যাহ
ইন্টারমিডিয়েট
পাসের ছয় মাস পর মেডিক্যালে ভর্তি হয়ে কিছু সিস্টেমলসসহ এমবিবিএস পাস করে
ইন্টার্নি শেষ করতে কমপক্ষে সাড়ে ছয় বছর লাগে। ইন্টার্নি শেষ করা মাত্র
তরুণ চিকিৎসকের সামনে একসাথে অনেক চ্যালেঞ্জ চলে আসে। পরবর্তী ডিগ্রি
অর্জনের জন্য মেডিক্যাল লাইনের লেখাপড়া করা। সে জন্য অবৈতনিক প্রশিক্ষণ
শুরু করা এবং চালিয়ে যাওয়া। নিজের খরচ জোগানোর জন্য প্রাইভেট চাকরি করা।
বিসিএসের জন্য আলাদা লেখাপড়া করা। অর্থাৎ একসাথে ২ চাকরি আর ২ লাইনের
পর্বতসমান লেখাপড়া!
মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। একজন চিকিৎসক বিনাবেতনে সারা দিন সরকারি হাসপাতালে প্রশিক্ষণ করে বিকেল-রাতে নিজের খরচ জোগানোর জন্য প্রাইভেট চাকরি করে এমনিতেই যখন অস্বাভাবিক ক্লান্ত থাকেন, তখন বিসিএস আর মেডিক্যাল ক্যারিয়ারের জন্য লেখাপড়া করার সুযোগ কই? প্রাইভেট চাকরি করে মাসে বর্তমানে ২০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এ টাকা দিয়ে নিজের মেসের মাসিক ভাড়ার টাকা, খাওয়া, যাতায়াত খরচ, ব্যক্তিগত সরঞ্জামাদি ক্রয় এবং লেখাপড়ার খরচ জোগাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তরুণ চিকিৎসককে। এমবিবিএস পাসের পর পরবর্তী উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে হলে প্রথমেই নতুন করে পাঁচ বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এ সময়ে প্রাইভেট ইনকাম করা কঠিন। রোগীরা সাধারণত তরুণ ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। আর্থিক সঙ্কটের কারণে অনেক তরুণ ডাক্তার অতি প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারেন না। তরুণ ডাক্তারদের অনেকে বিয়ে করে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে! এমতাবস্থায় সমাজের লোকেরা যখন ওই তরুণ ডাক্তারের মা-বাবাকে বুঝাতে শুরু করে, ‘আপনার সন্তান ডাক্তার হয়ে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে, কই এখনো দালান বানান নি?’ তখন অবস্থাটা কেমন হয়?
মূলত এমবিবিএস পাসের পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বিশেষজ্ঞ হতে একজন ডাক্তারের গড়পড়তায় বয়স ৪০ বছর পার হয়ে যায় । আর আর্থিকভাবে সর্বনিম্ন স্বাবলম্বী হতে আরো কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগে। তত দিনে ডাক্তার নিজেই ডায়াবেটিস ও প্রেশারের রোগী হয়ে যান । তখন ডায়াবেটিসের কারণে আর ভালো কিছু খাওয়ার সুযোগ থাকে না ডাক্তারের। আনন্দ উপভোগের সময় ও মানসিকতা কোনোটাই তখন আর থাকে না তার। এ কারণে ডাক্তারির ইনকাম দিয়ে পিতামাতার মুখে হাসি ফুটানোর স্বপ্নটা অধরাই থেকে যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কিছুটা সুখী হতে পারে ডাক্তারের সন্তান আর নাতি-নাতনীরা। সমাজের সবাই যেভাবে মনে করে ও প্রচার করে, ডাক্তার মানেই টাকা আর টাকা; সেটা অন্ততপক্ষে তরুণ ডাক্তারের বাস্তবতার সাথে মেলে না। সামাজিক এ ভুল ধারণা তথা এ কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে অনেক পরিবার বা পিতামাতা তার ২৫-৪০ বছর বয়স্ক একমাত্র অপ্রতিষ্ঠিত ডাক্তার সন্তানের কাছে অনেক কিছু আশা করে যখন তেমন কিছুই পান না, তখন ওই পরিবারে সম্পর্কের তিক্ততা সৃষ্টি হয়। আত্মীয়তার বন্ধন শিথিল হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটা বাইরে প্রকাশ হয় না। অশান্তি নেমে আসে ওই পরিবারে। সমাজের লোকেরা তখন প্রচার করতে থাকে, ‘বাবা-মা কষ্ট করে সন্তানকে ডাক্তার বানাইছে, এখন সে বাবা-মায়ের খোঁজখবর নেয় না।’
সমাজে কিছু লোক আছে যারা নিজেরা কিছু গড়তে পারে না, কিন্তু আরেকজনের গড়া জিনিস ভাঙতে ওস্তাদ। এ ধরনের লোকেরা অপ্রতিষ্ঠিত তরুণ ডাক্তারের বাবা-মাকে উসকে দেয়। অনারারি মেডিক্যাল অফিসারদের জন্য একটি যুক্তিসঙ্গত ভাতার ব্যবস্থা করা উচিত। হাতে গোনা কিছু ব্যতিক্রম আছে। আর ব্যতিক্রম কখনোই উদাহরণ নয়।
লেখক : স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত চিকিৎসক
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
মানুষের শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতার একটা সীমাবদ্ধতা আছে। একজন চিকিৎসক বিনাবেতনে সারা দিন সরকারি হাসপাতালে প্রশিক্ষণ করে বিকেল-রাতে নিজের খরচ জোগানোর জন্য প্রাইভেট চাকরি করে এমনিতেই যখন অস্বাভাবিক ক্লান্ত থাকেন, তখন বিসিএস আর মেডিক্যাল ক্যারিয়ারের জন্য লেখাপড়া করার সুযোগ কই? প্রাইভেট চাকরি করে মাসে বর্তমানে ২০ হাজার টাকা পাওয়া যায়। এ টাকা দিয়ে নিজের মেসের মাসিক ভাড়ার টাকা, খাওয়া, যাতায়াত খরচ, ব্যক্তিগত সরঞ্জামাদি ক্রয় এবং লেখাপড়ার খরচ জোগাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় তরুণ চিকিৎসককে। এমবিবিএস পাসের পর পরবর্তী উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন করতে হলে প্রথমেই নতুন করে পাঁচ বছরের প্রশিক্ষণ নিতে হয়। এ সময়ে প্রাইভেট ইনকাম করা কঠিন। রোগীরা সাধারণত তরুণ ডাক্তারের কাছে যেতে চায় না। আর্থিক সঙ্কটের কারণে অনেক তরুণ ডাক্তার অতি প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে পারেন না। তরুণ ডাক্তারদের অনেকে বিয়ে করে ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে! এমতাবস্থায় সমাজের লোকেরা যখন ওই তরুণ ডাক্তারের মা-বাবাকে বুঝাতে শুরু করে, ‘আপনার সন্তান ডাক্তার হয়ে লাখ লাখ টাকা ইনকাম করছে, কই এখনো দালান বানান নি?’ তখন অবস্থাটা কেমন হয়?
মূলত এমবিবিএস পাসের পর স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বিশেষজ্ঞ হতে একজন ডাক্তারের গড়পড়তায় বয়স ৪০ বছর পার হয়ে যায় । আর আর্থিকভাবে সর্বনিম্ন স্বাবলম্বী হতে আরো কমপক্ষে পাঁচ বছর লাগে। তত দিনে ডাক্তার নিজেই ডায়াবেটিস ও প্রেশারের রোগী হয়ে যান । তখন ডায়াবেটিসের কারণে আর ভালো কিছু খাওয়ার সুযোগ থাকে না ডাক্তারের। আনন্দ উপভোগের সময় ও মানসিকতা কোনোটাই তখন আর থাকে না তার। এ কারণে ডাক্তারির ইনকাম দিয়ে পিতামাতার মুখে হাসি ফুটানোর স্বপ্নটা অধরাই থেকে যায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কিছুটা সুখী হতে পারে ডাক্তারের সন্তান আর নাতি-নাতনীরা। সমাজের সবাই যেভাবে মনে করে ও প্রচার করে, ডাক্তার মানেই টাকা আর টাকা; সেটা অন্ততপক্ষে তরুণ ডাক্তারের বাস্তবতার সাথে মেলে না। সামাজিক এ ভুল ধারণা তথা এ কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে অনেক পরিবার বা পিতামাতা তার ২৫-৪০ বছর বয়স্ক একমাত্র অপ্রতিষ্ঠিত ডাক্তার সন্তানের কাছে অনেক কিছু আশা করে যখন তেমন কিছুই পান না, তখন ওই পরিবারে সম্পর্কের তিক্ততা সৃষ্টি হয়। আত্মীয়তার বন্ধন শিথিল হয়ে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেটা বাইরে প্রকাশ হয় না। অশান্তি নেমে আসে ওই পরিবারে। সমাজের লোকেরা তখন প্রচার করতে থাকে, ‘বাবা-মা কষ্ট করে সন্তানকে ডাক্তার বানাইছে, এখন সে বাবা-মায়ের খোঁজখবর নেয় না।’
সমাজে কিছু লোক আছে যারা নিজেরা কিছু গড়তে পারে না, কিন্তু আরেকজনের গড়া জিনিস ভাঙতে ওস্তাদ। এ ধরনের লোকেরা অপ্রতিষ্ঠিত তরুণ ডাক্তারের বাবা-মাকে উসকে দেয়। অনারারি মেডিক্যাল অফিসারদের জন্য একটি যুক্তিসঙ্গত ভাতার ব্যবস্থা করা উচিত। হাতে গোনা কিছু ব্যতিক্রম আছে। আর ব্যতিক্রম কখনোই উদাহরণ নয়।
লেখক : স্নাতকোত্তর প্রশিক্ষণরত চিকিৎসক
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল
No comments