গলদঘর্ম ভাড়াটিয়া by মহিউদ্দিন অদুল
দেশে
‘বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন’ আছে। নেই আইনের প্রয়োগ বা ‘নিয়ন্ত্রক’।
স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দেয়া হয়নি। এতে আজ পর্যন্ত
নির্ধারিত হয়নি এলাকাভিত্তিক ‘মানসম্মত’ বাড়ি ভাড়া। ফলে সব শহরে, বিশেষ করে
রাজধানীতে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ি ভাড়া বাড়ছে তো বাড়ছেই। দুই বছরে একবার
ভাড়া বাড়ার কথা থাকলেও বছরে বাড়ছে কমপক্ষে দুবার। বাড়ির মালিকরা ইচ্ছেমতো
বাড়াচ্ছে ভাড়া। এর আগে ১৪ বছরে ঢাকার বাড়ি ভাড়া বেড়েছিল ২৫০ গুণ। আইনে
দণ্ডনীয় অপরাধ হলেও বাড়তি ভাড়ার সঙ্গে ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে আদায় করা হচ্ছে
কয়েক মাস থেকে প্রায় এক বছরের অগ্রিম ভাড়া। কিন্তু এসবের বিপরীতে সুবিধা না
বাড়ায় ভাড়াটিয়াদের দুর্ভোগ বাড়ছে। নিয়ন্ত্রকের অভাবে আইনটির অধিকাংশ বিধান
অকার্যকর হয়ে পড়ায় রাজধানীর ১৫ ভাগ বাড়ি মালিকের কাছে শোষণের শিকার হচ্ছে
৮৫ ভাগ ভাড়াটিয়া। বাড়ি মালিকরা লিখিত চুক্তিপত্র না করায় এবং ভাড়া গ্রহণের
রসিদ না দেয়ায় অসহায় ভাড়াটিয়ারা আইনি প্রতিকারও চাইতে পারছে না। যা বিপুল
জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার লঙ্ঘন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে রাজধানী শহর ঢাকায় ৪ লাখ ১৪ হাজার ৯০৬ হোল্ডিং নম্বরের বিপরীতে সমপরিমাণ বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯০৬টি বাড়ি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার বাড়ি। এক কোটির বেশি মানুষের বসবাসের এই রাজধানী শহরে এই চার লক্ষাধিক বাড়ির বেশিরভাগই আবাসিক। ভাড়াটিয়া কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৮৫ ভাগ মানুষ ভাড়া বাড়িতে থাকে। ৫ ভাগ বসবাস করে নিজ বাড়িতে। যারা কাউকে ভাড়া দেয় বা নেয় না। আর বাকি ১০ ভাগ বাড়ি মালিকই ৮৫ ভাগ ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে। আর এই দশ ভাগ মানুষের কাছে মহানগরীর ৮৫ ভাগ মানুষ জিম্মি হয়ে থাকে। কিন্তু সরকার ৮৫ ভাগ ভাড়াটিয়ার কল্যাণে আজ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দিয়ে আইনটি কার্যকরের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে ভাড়াটিয়ারা দিন দিন অতিরিক্ত ভাড়ার কবলে পড়ছেন। বাড়ি ভাড়ায় চলে যাচ্ছে বেতনের বড় অংশ। এতে অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোনোমতে করুণ জীবন পার করছেন। রাজধানী ঢাকায় ২৭ ভাগ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ ভাগ, ৫৭ ভাগ ভাড়াটিয়া প্রায় অর্ধেক এবং ১২ ভাগ আয়ের প্রায় ৭৫ ভাগ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়ায় ব্যয় করেন বলে জানা গেছে। অথচ বিষয়টি নিয়ে সরকার, স্থানীয় সিটি করপোরেশন বা অন্যান্য সংস্থা রহস্যজনকভাবে যুগের পর যুগ ধরে নির্লিপ্ত রয়েছে। এতে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার ভাড়াটিয়ারা রীতিমত দুর্বিষহ ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। বাড়ছে সামাজিক অবিচার ও বৈষম্য। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই।
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এর ৩ (১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে কোনো এলাকার জন্য বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রক নিযুক্ত করিতে পারিবে।’ একই ধারার ২ ও ৩ উপধারায় অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রক এবং উপনিয়ন্ত্রক নিয়োগ দেয়ার বিধানও রয়েছে। আইন মতে বাড়ির মালিক নয়, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকই বাড়ির ভাড়া নির্ধারণের আইনগত ক্ষমতার অধিকারী। এছাড়া দুই বছরে একবার ভাড়া বাড়ানোর কথা থাকলেও বাড়ির মালিকরা ইচ্ছেমতো বছরে একাধিকবার ভাড়া বাড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, আইনটি অনেক ক্ষেত্রে সময়োপযোগী না হলেও এর জনহিতকর এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ না থাকায় যুগ যুগ ধরে বাড়ি মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর কার্যক্রমও বেআইনিভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে লিখিত চুক্তি করে বাড়ি ভাড়া দেয়ার বিধান থাকলেও তা হচ্ছে না। বাধ্যতামূলক হলেও দেয়া হচ্ছে না ভাড়া গ্রহণের রসিদ। এছাড়া বাড়ির বাজারমূল্য, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদির ভিত্তিতে এলাকাভিত্তিক ‘মানসম্মত’ ভাড়া নির্ধারণের বিধান থাকলেও আজ পর্যন্ত তাও হয়নি। আইনটির ২৩ (ক) বিধান অনুযায়ী মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত গ্রহণের জন্য এর দুই থেকে তিনগুণ অর্থদণ্ড এবং একই ধারার (খ) উপধারা মতে এক মাসের বেশি প্রিমিয়াম, সালামি, জামানত বা অগ্রিম গ্রহণ করলে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধানও কার্যকর হচ্ছে না। মালিকপক্ষ লিখিত চুক্তি না করায় এবং রসিদ প্রদান না করায় বাড়ি মালিকদের বেআইনি ভাড়া বৃদ্ধিসহ যে কোনো অন্যায়-অবিচারের ন্যূনতম আইনি প্রতিকারও চাইতে পারছেন না ভাড়াটিয়ারা। কোনো অভিযোগ বা মামলা করার ন্যূনতম সুযোগও নেই তাদের। অথচ এই কারণে আপসে উভয়পক্ষ লিখিত চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের জন্য একটি মানসম্মত ভাড়া ঠিক করার যে আইনি ফাঁক বা সুযোগ রয়েছে (আইনে মানসম্মত ভাড়া হিসেবে ট্রিট) তাও সম্ভব হচ্ছে না বাসা মালিকদের লিখিত চুক্তি না করার কারণে।
তবে সরকার বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রক নিয়োগ না দিলেও আমজনতার জন্য শুভংকরের ফাঁকি হিসেবে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত মামলাগুলো নিষ্পত্তির সুযোগটাই রেখেছে মাত্র। স্থানীয় কয়েকটি সহকারী জজ আদালতে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত মামলা দায়ের এবং নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু ওই বিচারকদের সরকারি গ্যাজেটে বাড়ি ভাড়া ‘নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। অন্যান্য মামলার সঙ্গে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচারকাজ পরিচালনার বিশেষ বিচারিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাত্র। আবার এ আদালতগুলোতে বাড়ি মালিকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি রয়েছে এমন ভাড়াটিয়া বা মালিকরাই কেবল আইনি প্রতিকার চাইতে পারেন। মামলা করতে পারবেন। অধিকাংশ ভাড়াটিয়া বা মালিক লিখিত চুক্তি বা রসিদের আওতার বাইরে থেকে যাওয়ায় তারা কোনো আইনি প্রতিকারও চাইতে পারছেন না। এছাড়া ওই বিচারকরা দেওয়ানি, অর্থ সংক্রান্ত মামলা, মিস মামলা, পারিবারিক মামলা, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল, দেওয়ানি ডিক্রি জারি নিয়মিত মামলার ভিড়ে বাড়ি ভাড়া মামলাগুলোর বিচারকাজ পরিচালনা করছেন। গত ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সিনিয়র সহকারী জজ প্রথম থেকে চতুর্থ ও ষষ্ঠ আদালতে মোট ৯ হাজার ১৬৮টি মামলা ছিল। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা মহানগরীর সব থানার বাড়ি ভাড়া মামলা রয়েছে ৭৪৯টি। এর মধ্যে ঢাকা সিনিয়র সহকারী জজ প্রথম আদালতে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও পল্লবী থানার মামলা রয়েছে ১৪৩টি। একইভাবে রাজধানীর অন্যান্য থানার মামলাগুলো অধিক্ষেত্র অনুযায়ী দ্বিতীয় আদালতে ৩৫টি, তৃতীয় আদালতে ২৯১, চতুর্থ আদালতে ১৪৮ ও ঢাকা সিনিয়র সহকারী জজ ষষ্ঠ আদালতে রয়েছে ১৩২টি ঘরভাড়া মামলা রয়েছে। অপরদিকে ঢাকা মহানগরীর বাইরের উপজেলা সাভার, ধামরাই, নওয়াবগঞ্জ ও দোহারের বিচারকাজের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট চার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৩৫টি বাড়িভাড়া মামলা। সাভার উপজেলায় কোনো ঘরভাড়া মামলা নেই। অপরদিকে এই পাঁচ আদালতে গত নভেম্বর পর্যন্ত মামলা ছিল ৭ হাজার ৬১৫টি।
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আবদুর রায়হান জানান, আমার তিন দশকের কর্মজীবনে সরকার ঘরভাড়া নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দেননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারকরা শুধু চুক্তিপত্র বা ভাড়া আদায়ের রসিদ রয়েছে এমন ঘরভাড়ার বিরোধ সংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচারকাজ পরিচালনার ভার পেয়েছেন। তারা গেজেট আকারে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক হিসেবেও নিয়োগ পাননি। ফলে তারা মানসম্মত ভাড়াও নির্ধারণ করেন না। এজন্য তো আমরা অধিকাংশ মানুষই ভোক্তভোগী। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এখন অনেক বিচারক নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হচ্ছে। এতদিন হাউজ রেন্ট কন্ট্রোলার নিয়োগ দেয়া হয়নি। এজন্য স্বতন্ত্রভাবে হাউজ রেন্ট কন্ট্রোলার নিয়োগ দেয়ার বিষয়টিও আমরা দেখছি। অধিকাংশ ভাড়াটিয়া যেহেতু সাফার করছে তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হবে।
ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে রাজধানী শহর ঢাকায় ৪ লাখ ১৪ হাজার ৯০৬ হোল্ডিং নম্বরের বিপরীতে সমপরিমাণ বাড়ি রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় রয়েছে ১ লাখ ৮২ হাজার ৯০৬টি বাড়ি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে রয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার বাড়ি। এক কোটির বেশি মানুষের বসবাসের এই রাজধানী শহরে এই চার লক্ষাধিক বাড়ির বেশিরভাগই আবাসিক। ভাড়াটিয়া কল্যাণ সমিতির তথ্য মতে, এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে ৮৫ ভাগ মানুষ ভাড়া বাড়িতে থাকে। ৫ ভাগ বসবাস করে নিজ বাড়িতে। যারা কাউকে ভাড়া দেয় বা নেয় না। আর বাকি ১০ ভাগ বাড়ি মালিকই ৮৫ ভাগ ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ভাড়া আদায় করে। আর এই দশ ভাগ মানুষের কাছে মহানগরীর ৮৫ ভাগ মানুষ জিম্মি হয়ে থাকে। কিন্তু সরকার ৮৫ ভাগ ভাড়াটিয়ার কল্যাণে আজ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দিয়ে আইনটি কার্যকরের কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। এতে ভাড়াটিয়ারা দিন দিন অতিরিক্ত ভাড়ার কবলে পড়ছেন। বাড়ি ভাড়ায় চলে যাচ্ছে বেতনের বড় অংশ। এতে অন্যান্য ব্যয় নির্বাহ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। কোনোমতে করুণ জীবন পার করছেন। রাজধানী ঢাকায় ২৭ ভাগ ভাড়াটিয়া আয়ের প্রায় ৩০ ভাগ, ৫৭ ভাগ ভাড়াটিয়া প্রায় অর্ধেক এবং ১২ ভাগ আয়ের প্রায় ৭৫ ভাগ পর্যন্ত বাড়ি ভাড়ায় ব্যয় করেন বলে জানা গেছে। অথচ বিষয়টি নিয়ে সরকার, স্থানীয় সিটি করপোরেশন বা অন্যান্য সংস্থা রহস্যজনকভাবে যুগের পর যুগ ধরে নির্লিপ্ত রয়েছে। এতে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সব শ্রেণি-পেশার ভাড়াটিয়ারা রীতিমত দুর্বিষহ ভোগান্তির মধ্যে রয়েছে। বাড়ছে সামাজিক অবিচার ও বৈষম্য। কিন্তু দেখার যেন কেউ নেই।
বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৯১-এর ৩ (১) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, ‘সরকার সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা কোনো ব্যক্তিকে কোনো এলাকার জন্য বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রক নিযুক্ত করিতে পারিবে।’ একই ধারার ২ ও ৩ উপধারায় অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রক এবং উপনিয়ন্ত্রক নিয়োগ দেয়ার বিধানও রয়েছে। আইন মতে বাড়ির মালিক নয়, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রকই বাড়ির ভাড়া নির্ধারণের আইনগত ক্ষমতার অধিকারী। এছাড়া দুই বছরে একবার ভাড়া বাড়ানোর কথা থাকলেও বাড়ির মালিকরা ইচ্ছেমতো বছরে একাধিকবার ভাড়া বাড়াচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, আইনটি অনেক ক্ষেত্রে সময়োপযোগী না হলেও এর জনহিতকর এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগ না থাকায় যুগ যুগ ধরে বাড়ি মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর কার্যক্রমও বেআইনিভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। ফলে লিখিত চুক্তি করে বাড়ি ভাড়া দেয়ার বিধান থাকলেও তা হচ্ছে না। বাধ্যতামূলক হলেও দেয়া হচ্ছে না ভাড়া গ্রহণের রসিদ। এছাড়া বাড়ির বাজারমূল্য, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদির ভিত্তিতে এলাকাভিত্তিক ‘মানসম্মত’ ভাড়া নির্ধারণের বিধান থাকলেও আজ পর্যন্ত তাও হয়নি। আইনটির ২৩ (ক) বিধান অনুযায়ী মানসম্মত ভাড়ার অতিরিক্ত গ্রহণের জন্য এর দুই থেকে তিনগুণ অর্থদণ্ড এবং একই ধারার (খ) উপধারা মতে এক মাসের বেশি প্রিমিয়াম, সালামি, জামানত বা অগ্রিম গ্রহণ করলে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধানও কার্যকর হচ্ছে না। মালিকপক্ষ লিখিত চুক্তি না করায় এবং রসিদ প্রদান না করায় বাড়ি মালিকদের বেআইনি ভাড়া বৃদ্ধিসহ যে কোনো অন্যায়-অবিচারের ন্যূনতম আইনি প্রতিকারও চাইতে পারছেন না ভাড়াটিয়ারা। কোনো অভিযোগ বা মামলা করার ন্যূনতম সুযোগও নেই তাদের। অথচ এই কারণে আপসে উভয়পক্ষ লিখিত চুক্তির মাধ্যমে নিজেদের জন্য একটি মানসম্মত ভাড়া ঠিক করার যে আইনি ফাঁক বা সুযোগ রয়েছে (আইনে মানসম্মত ভাড়া হিসেবে ট্রিট) তাও সম্ভব হচ্ছে না বাসা মালিকদের লিখিত চুক্তি না করার কারণে।
তবে সরকার বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রক নিয়োগ না দিলেও আমজনতার জন্য শুভংকরের ফাঁকি হিসেবে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত মামলাগুলো নিষ্পত্তির সুযোগটাই রেখেছে মাত্র। স্থানীয় কয়েকটি সহকারী জজ আদালতে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত মামলা দায়ের এবং নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কিন্তু ওই বিচারকদের সরকারি গ্যাজেটে বাড়ি ভাড়া ‘নিয়ন্ত্রক’ হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। অন্যান্য মামলার সঙ্গে বাড়ি ভাড়া সংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচারকাজ পরিচালনার বিশেষ বিচারিক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে মাত্র। আবার এ আদালতগুলোতে বাড়ি মালিকের সঙ্গে লিখিত চুক্তি রয়েছে এমন ভাড়াটিয়া বা মালিকরাই কেবল আইনি প্রতিকার চাইতে পারেন। মামলা করতে পারবেন। অধিকাংশ ভাড়াটিয়া বা মালিক লিখিত চুক্তি বা রসিদের আওতার বাইরে থেকে যাওয়ায় তারা কোনো আইনি প্রতিকারও চাইতে পারছেন না। এছাড়া ওই বিচারকরা দেওয়ানি, অর্থ সংক্রান্ত মামলা, মিস মামলা, পারিবারিক মামলা, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনাল, দেওয়ানি ডিক্রি জারি নিয়মিত মামলার ভিড়ে বাড়ি ভাড়া মামলাগুলোর বিচারকাজ পরিচালনা করছেন। গত ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত ঢাকা সিনিয়র সহকারী জজ প্রথম থেকে চতুর্থ ও ষষ্ঠ আদালতে মোট ৯ হাজার ১৬৮টি মামলা ছিল। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকা মহানগরীর সব থানার বাড়ি ভাড়া মামলা রয়েছে ৭৪৯টি। এর মধ্যে ঢাকা সিনিয়র সহকারী জজ প্রথম আদালতে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, হাজারীবাগ, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও পল্লবী থানার মামলা রয়েছে ১৪৩টি। একইভাবে রাজধানীর অন্যান্য থানার মামলাগুলো অধিক্ষেত্র অনুযায়ী দ্বিতীয় আদালতে ৩৫টি, তৃতীয় আদালতে ২৯১, চতুর্থ আদালতে ১৪৮ ও ঢাকা সিনিয়র সহকারী জজ ষষ্ঠ আদালতে রয়েছে ১৩২টি ঘরভাড়া মামলা রয়েছে। অপরদিকে ঢাকা মহানগরীর বাইরের উপজেলা সাভার, ধামরাই, নওয়াবগঞ্জ ও দোহারের বিচারকাজের দায়িত্বরত সংশ্লিষ্ট চার সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে বিচারাধীন রয়েছে ৩৫টি বাড়িভাড়া মামলা। সাভার উপজেলায় কোনো ঘরভাড়া মামলা নেই। অপরদিকে এই পাঁচ আদালতে গত নভেম্বর পর্যন্ত মামলা ছিল ৭ হাজার ৬১৫টি।
ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. আবদুর রায়হান জানান, আমার তিন দশকের কর্মজীবনে সরকার ঘরভাড়া নিয়ন্ত্রক নিয়োগ দেননি। দায়িত্বপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের বিচারকরা শুধু চুক্তিপত্র বা ভাড়া আদায়ের রসিদ রয়েছে এমন ঘরভাড়ার বিরোধ সংক্রান্ত মামলাগুলোর বিচারকাজ পরিচালনার ভার পেয়েছেন। তারা গেজেট আকারে বাড়িভাড়া নিয়ন্ত্রক হিসেবেও নিয়োগ পাননি। ফলে তারা মানসম্মত ভাড়াও নির্ধারণ করেন না। এজন্য তো আমরা অধিকাংশ মানুষই ভোক্তভোগী। এ ব্যাপারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, এখন অনেক বিচারক নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়া হাতে নেয়া হচ্ছে। এতদিন হাউজ রেন্ট কন্ট্রোলার নিয়োগ দেয়া হয়নি। এজন্য স্বতন্ত্রভাবে হাউজ রেন্ট কন্ট্রোলার নিয়োগ দেয়ার বিষয়টিও আমরা দেখছি। অধিকাংশ ভাড়াটিয়া যেহেতু সাফার করছে তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেয়া হবে।
No comments