নান্নু–আকরামদের পথ ধরে তামিম, কিন্তু এর পর...? by রানা আব্বাস
নান্নু-আকরামদের দেখানো পথ ধরে উঠে এসেছেন তামিম। কিন্তু চট্টগ্রাম থেকে কেন উঠে আসছে না আর কোনো প্রতিভা? |
‘ও
ভাই আরা চাটগাঁইয়া নওজয়ান!’ চট্টলার জনপ্রিয় গানটি হয়তো এক সময় ঠোঁটে
ঠোঁট মিলিয়ে গাইতেন নুরুল আবেদীন নোবেল, শহীদুর রহমান, মিনহাজুল আবেদীন
নান্নু, আকরাম খানরা! জাতীয় দলে তখন চট্টগ্রামের অনেক ‘নওজয়ান’।
আশি-নব্বইয়ের দশকেও চট্টলার তরুণেরা মাঠ কাঁপিয়ে বেড়িয়েছেন দেশের শীর্ষ
লিগ-টুর্নামেন্টগুলোয়।
নোবেল-নান্নু-আকরামদের সেই মশাল পরে টেনে বয়েছেন আরও অনেকে। চট্টগ্রাম থেকে উঠে এসেছেন এহসানুল হক, তারেক আজিজ, নাফিস ইকবাল, আফতাব আহমেদ, তামিম ইকবালদের মতো প্রতিভা। কিন্তু আশি-নব্বইয়ের দশকে জাতীয় দলে যেখানে একসঙ্গে চার-পাঁচজন চট্টগ্রামের খেলোয়াড় খেলেছেন, এখান মাত্র একজন। চট্টলার সবেধন নীলমণি ওই এক তামিম। এক সময় চট্টগ্রামবাসী গর্ব করে বলতে পারত, ‘জাতীয় দলের অর্ধেকই তো আমাদের।’ সেই চট্টগ্রামে এখন হাহাকার। বয়সভিত্তিক দলগুলোতেও চট্টলার নাম উজ্জ্বল করছে তেমন কোনো খেলোয়াড় নেই।
প্রশ্নটা তাই ওঠেই। এক সময় যে চট্টগ্রাম একের পর এক তারকার জোগান দিয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে, সেই চট্টগ্রামের প্রতিভার স্রোতোধারা এমন শুকিয়ে গেল কেন হঠাৎ?
‘সেই এক সময় ছিল চট্টগ্রামের’—সোনালি দিনগুলোর কথা বৃষ্টিমুখর বিকেলে রোমন্থন করলেন বাংলাদেশের আইসিসি-জয়ী অধিনায়ক আকরাম খান, ‘চট্টগ্রাম থেকে যখন অনেক খেলোয়াড় একসঙ্গে জাতীয় দলে খেলেছে, তখন বাংলাদেশে ক্রিকেট অতটা জনপ্রিয় ছিল না। তবে চট্টগ্রামে বেশ জনপ্রিয় ছিল। জমজমাট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হতো। যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডই স্পনসর পেত না, তখনো চট্টগ্রামে লিগে অনেক স্পনসর পাওয়া যেত। এলিট পেইন্ট, ইস্পাহানি এমন নানা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে সহযোগিতা করতে। স্টার সামার টুর্নামেন্ট ছিল, যেখানে থেকে আমরা উঠে এসেছি। আরেকটি পথ ছিল, রেলওয়ের দল। চট্টগ্রামের ছেলেরা ওখানে খেলত। সেখানে দারুণ পারফর্ম করে জাতীয় দলে আসার সুযোগ ছিল। চট্টগ্রামে পঞ্জিকা অনুযায়ী খেলাটা নিয়মিত হতো।’
চট্টগ্রামের আরেক সন্তান, বর্তমান জাতীয় দলের নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন মনে করেন সত্তর-আশির দশকে চট্টলার উন্নত লিগগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এ ক্ষেত্রে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে জনদাবির মুখে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপের নায়ক নান্নু বললেন, ‘বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট বেশি হতো তখন। এখনো মনে আছে, ১৯৭৯ সালের কথা। ক্লাস সেভেনে পড়তাম। প্রথম ক্রিকেট খেলতে নামি, তখন লিগগুলোর সেমিফাইনাল-ফাইনালই হতো তিন দিনের। স্টার সামার, স্টার যুব ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ছিল। স্কুল ক্রিকেট ছিল। সব কিছু একটা কাঠামোর মধ্যে ছিল। এ কারণে প্রচুর খেলোয়াড় উঠে আসত।’
প্রশ্নটা অবধারিতভাবেই আসত। আসার আগেই আকরাম নিজেই তুললেন প্রসঙ্গটি। ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাসই যেন বেরিয়ে এল বাংলাদেশ দলের এ সাবেক অধিনায়কের, ‘এখন চট্টগ্রাম থেকে খুবই কম খেলোয়াড় উঠে আসছে। ঢাকায় রেলওয়ের মতো একটা দল নেই; যেখানে চট্টগ্রামের ছেলেরা খেলবে। পঞ্জিকা অনুযায়ী খেলাটা হচ্ছে না। যে স্টার সামারে আমরা খেলতাম, ওই ধরনের টুর্নামেন্ট থেকেও বঞ্চিত এখনকার ছেলেরা। কীভাবে ভালো মানের খেলোয়াড় উঠে আসবে বলেন?’
নোবেল-নান্নু-আকরামদের সেই মশাল পরে টেনে বয়েছেন আরও অনেকে। চট্টগ্রাম থেকে উঠে এসেছেন এহসানুল হক, তারেক আজিজ, নাফিস ইকবাল, আফতাব আহমেদ, তামিম ইকবালদের মতো প্রতিভা। কিন্তু আশি-নব্বইয়ের দশকে জাতীয় দলে যেখানে একসঙ্গে চার-পাঁচজন চট্টগ্রামের খেলোয়াড় খেলেছেন, এখান মাত্র একজন। চট্টলার সবেধন নীলমণি ওই এক তামিম। এক সময় চট্টগ্রামবাসী গর্ব করে বলতে পারত, ‘জাতীয় দলের অর্ধেকই তো আমাদের।’ সেই চট্টগ্রামে এখন হাহাকার। বয়সভিত্তিক দলগুলোতেও চট্টলার নাম উজ্জ্বল করছে তেমন কোনো খেলোয়াড় নেই।
প্রশ্নটা তাই ওঠেই। এক সময় যে চট্টগ্রাম একের পর এক তারকার জোগান দিয়ে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে, সেই চট্টগ্রামের প্রতিভার স্রোতোধারা এমন শুকিয়ে গেল কেন হঠাৎ?
‘সেই এক সময় ছিল চট্টগ্রামের’—সোনালি দিনগুলোর কথা বৃষ্টিমুখর বিকেলে রোমন্থন করলেন বাংলাদেশের আইসিসি-জয়ী অধিনায়ক আকরাম খান, ‘চট্টগ্রাম থেকে যখন অনেক খেলোয়াড় একসঙ্গে জাতীয় দলে খেলেছে, তখন বাংলাদেশে ক্রিকেট অতটা জনপ্রিয় ছিল না। তবে চট্টগ্রামে বেশ জনপ্রিয় ছিল। জমজমাট ক্রিকেট টুর্নামেন্ট হতো। যখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডই স্পনসর পেত না, তখনো চট্টগ্রামে লিগে অনেক স্পনসর পাওয়া যেত। এলিট পেইন্ট, ইস্পাহানি এমন নানা প্রতিষ্ঠান এগিয়ে এসেছে সহযোগিতা করতে। স্টার সামার টুর্নামেন্ট ছিল, যেখানে থেকে আমরা উঠে এসেছি। আরেকটি পথ ছিল, রেলওয়ের দল। চট্টগ্রামের ছেলেরা ওখানে খেলত। সেখানে দারুণ পারফর্ম করে জাতীয় দলে আসার সুযোগ ছিল। চট্টগ্রামে পঞ্জিকা অনুযায়ী খেলাটা নিয়মিত হতো।’
চট্টগ্রামের আরেক সন্তান, বর্তমান জাতীয় দলের নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন মনে করেন সত্তর-আশির দশকে চট্টলার উন্নত লিগগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে এ ক্ষেত্রে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে জনদাবির মুখে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত হয়ে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপের নায়ক নান্নু বললেন, ‘বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেট বেশি হতো তখন। এখনো মনে আছে, ১৯৭৯ সালের কথা। ক্লাস সেভেনে পড়তাম। প্রথম ক্রিকেট খেলতে নামি, তখন লিগগুলোর সেমিফাইনাল-ফাইনালই হতো তিন দিনের। স্টার সামার, স্টার যুব ক্রিকেট টুর্নামেন্ট ছিল। স্কুল ক্রিকেট ছিল। সব কিছু একটা কাঠামোর মধ্যে ছিল। এ কারণে প্রচুর খেলোয়াড় উঠে আসত।’
প্রশ্নটা অবধারিতভাবেই আসত। আসার আগেই আকরাম নিজেই তুললেন প্রসঙ্গটি। ভেতর থেকে একটা দীর্ঘশ্বাসই যেন বেরিয়ে এল বাংলাদেশ দলের এ সাবেক অধিনায়কের, ‘এখন চট্টগ্রাম থেকে খুবই কম খেলোয়াড় উঠে আসছে। ঢাকায় রেলওয়ের মতো একটা দল নেই; যেখানে চট্টগ্রামের ছেলেরা খেলবে। পঞ্জিকা অনুযায়ী খেলাটা হচ্ছে না। যে স্টার সামারে আমরা খেলতাম, ওই ধরনের টুর্নামেন্ট থেকেও বঞ্চিত এখনকার ছেলেরা। কীভাবে ভালো মানের খেলোয়াড় উঠে আসবে বলেন?’
তামিম ইকবাল । ফাইল ছবি |
নান্নুও
দায়ী করলেন চট্টগ্রামের ঘরোয়া ক্রিকেটের আগের সেই অবকাঠামো হারিয়ে
যাওয়াকে, ‘আগে চট্টগ্রামের ক্রিকেট একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল। খেলোয়াড়েরা
পর্যাপ্ত অনুশীলন করতে পারত। নানা টুর্নামেন্ট খেলতে পারত। নব্বইয়ের দশকে
এসে সব যেন থমকে গিয়েছিল। এরপর দীর্ঘ দিনের একটা শূন্যতা তৈরি হয়ে গেছে। ওই
ধাক্কা সামলে ওঠা যায়নি। কেবল ক্রিকেট নয়; অন্য খেলা, যেমন ফুটবলেও এই
শূন্যতা এখন দেখা যাচ্ছে।’
তবে হতাশার আঁধারেই দেখা মেলে আশার আলোকরেখা। চট্টগ্রাম টেস্টের এই বৃষ্টিবিঘ্নিত সময়ে আকরাম-নান্নু আশার কথাই শোনালেন। জানালেন, আবারও ফিরবে চট্টলার সুদিন। আকরাম বললেন, ‘প্রতিটি বিভাগেই বিসিবি ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ কারণেই মুমিনুল-মুস্তাফিজের মতো নতুন প্রতিভারা উঠে আসতে পেরেছে। চট্টগ্রামে যাঁরা নীতিনির্ধারক আছেন, আর আমরা যারা সিনিয়র খেলোয়াড়েরা আছি, সবাই মিলে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। নাসির ভাই (চট্টগ্রামে নতুন মেয়র) আসার পর কিছু বদল আমরা দেখতে পাচ্ছি। তিনি কিছু উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন।’
চট্টগ্রামের ক্রিকেট উন্নয়নে বিসিবির বর্তমান ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম জানালেন আরও কিছু পরিকল্পনার কথা, ‘নাসির ভাই (মেয়র) ঢাকা ব্রাদার্সের দায়িত্বে আছেন। ওনার সঙ্গে কথা হয়েছে। পরিকল্পনা করেছি, আগের সেই রেলওয়ের সিস্টেমে ওখানে চট্টগ্রামের ছেলেদের সুযোগ করে দেওয়ার। স্টার সামারের মতো সিজেকেএসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথাও ভাবা হচ্ছে।’
নান্নু ও আকরাম দুজনই একই সুরে সুর মিলিয়ে বললেন, ‘আশা করি তিন-চার বছরের মধ্যে আমরা একটা সুফল পাব। বাংলাদেশ ক্রিকেট আবারও ফিরবে চট্টগ্রামের সুদিন।’
তবে হতাশার আঁধারেই দেখা মেলে আশার আলোকরেখা। চট্টগ্রাম টেস্টের এই বৃষ্টিবিঘ্নিত সময়ে আকরাম-নান্নু আশার কথাই শোনালেন। জানালেন, আবারও ফিরবে চট্টলার সুদিন। আকরাম বললেন, ‘প্রতিটি বিভাগেই বিসিবি ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ কারণেই মুমিনুল-মুস্তাফিজের মতো নতুন প্রতিভারা উঠে আসতে পেরেছে। চট্টগ্রামে যাঁরা নীতিনির্ধারক আছেন, আর আমরা যারা সিনিয়র খেলোয়াড়েরা আছি, সবাই মিলে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে। নাসির ভাই (চট্টগ্রামে নতুন মেয়র) আসার পর কিছু বদল আমরা দেখতে পাচ্ছি। তিনি কিছু উদ্যোগ নিতে শুরু করেছেন।’
চট্টগ্রামের ক্রিকেট উন্নয়নে বিসিবির বর্তমান ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম জানালেন আরও কিছু পরিকল্পনার কথা, ‘নাসির ভাই (মেয়র) ঢাকা ব্রাদার্সের দায়িত্বে আছেন। ওনার সঙ্গে কথা হয়েছে। পরিকল্পনা করেছি, আগের সেই রেলওয়ের সিস্টেমে ওখানে চট্টগ্রামের ছেলেদের সুযোগ করে দেওয়ার। স্টার সামারের মতো সিজেকেএসের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে টুর্নামেন্ট আয়োজনের কথাও ভাবা হচ্ছে।’
নান্নু ও আকরাম দুজনই একই সুরে সুর মিলিয়ে বললেন, ‘আশা করি তিন-চার বছরের মধ্যে আমরা একটা সুফল পাব। বাংলাদেশ ক্রিকেট আবারও ফিরবে চট্টগ্রামের সুদিন।’
No comments