বাল্যবিয়েতে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ
বাংলাদেশে
বাল্যবিয়ের হার সারা বিশ্বে চতুর্থ। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের
মতে, এ ক্ষেত্রে বিশ্বে নাইজার, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র এবং চাঁদের
পরেই দেশটির অবস্থান। ইউনিসেফের মতে, ২০০৫ থেকে ২০১৩ সালে বাংলাদেশে শতকরা
২৯ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের আগেই। আর শতকরা ৬৫ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয়েছে
১৮ বছর বয়সের আগেই। বাল্যবিয়ে সারা বিশ্বেই কতগুলো ক্ষতিকর পরিণতির সঙ্গে
সম্পৃক্ত। এর মধ্যে রয়েছে আগাম গর্ভধারণজনিত স্বাস্থ্যগত বিপদ, অল্প বয়সে
বিয়ে হওয়া মেয়েদের শিক্ষার নিম্নহার, অধিকতর দাম্পত্য সংঘাত এবং ক্রমাগত
দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হওয়ার আশঙ্কা। এসব কথা বলা হয়েছে আন্তর্জাতিক
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ প্রকাশিত ‘বাল্যবিবাহ: বাংলাদেশ’
শীর্ষক ১৩৪ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্টে। এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী গবেষণায়
দেখা গেছে, ২০-২৪ বয়সের মায়েদের তুলনায়, প্রসবকালীন সময়ে ১০-১৪ বছর বয়সের
মেয়েদের মৃত্যুঝুঁকি পাঁচ গুণ বেশি। আর যেসব মেয়ের বয়স ১৫-১৯, তাদের
মৃত্যুঝুঁকি ২০-২৪ বয়সের মহিলাদের তুলনায় দ্বিগুণ। অশিক্ষা অথবা
অল্পশিক্ষার সঙ্গে বাল্যবিয়ের সম্পর্ক নিয়ে করা গবেষণায় বাংলাদেশে দেখা
গেছে, যারা কোন সময়ে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা পায়নি, তাদের তুলনায়, প্রাথমিক,
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত মেয়েদের ক্ষেত্রে যথাক্রমে শতকরা ২৪, ৭২ ও
৯৪ ভাগের অল্প বয়সে বিয়ে করার সম্ভাবনা কম। বিশ্বের সাতটি দেশে করা এক
গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব মেয়ের ১৫ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়, তার ২৫ বছর
বয়সের পরে বিয়ে হওয়া মেয়েদের তুলনায় দাম্পত্য নির্যাতনের শিকার হওয়ার
আশঙ্কা বেশি। বিশ্বব্যাপী প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, শতকরা ২০ ভাগ গরিব
পরিবারের মেয়েদের, শতকরা ২০ ভাগ ধনী পরিবারের মেয়েদের তুলনায় ১৮ বছর বয়সের
আগেই বিয়ে করার সম্ভাবনা বেশি। অন্য অনেক ক্ষেত্রেই উন্নয়নের সফল উদাহরণ
হিসেবে বাংলাদেশের নাম উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নারীর অধিকারও।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ১৯৯১-৯২ সালের তুলনায় ২০১০ সালে ৫৬.৭ শতাংশ থেকে
৩১.৫ শতাংশে নামিয়ে আনার বিষয়টি জাতিসংঘকে ‘চমৎকৃত’ করেছে। প্রাথমিক ও
মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ লিঙ্গগত সমতা অর্জন করেছে।
জাতিসংঘের মতে, দেশটিতে ২০০১ সালের তুলনায় ২০১০ সালে মাতৃমৃত্যু ৪০ ভাগ কমে
এসেছে।
নানা বিষয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যে এ প্রশ্নটি আরও বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে, তাহলে এখানে কেন এখনও বাল্যবিয়ের উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে? এ প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য হচ্ছে এ প্রশ্নের উত্তের খুঁজে বেড়ানো এবং বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে তুলনামূলক সাফল্য অর্জনে বাংলাদেশ সরকার যেসব কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে পারে, সে উপায়গুলো বাতলে দেয়া।
বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের উচ্চ হারের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সামাজিক অনেক রীতিনীতি ও প্রথা লিঙ্গবৈষম্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে, যা জীবনের প্রতি পদে পদে মেয়েদের ক্ষতি করছে এবং বাল্যবিয়ের উচ্চহারের পেছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। চরম দারিদ্র্য বাংলাদেশের অনেক পরিবারেই দৈনন্দিন বাস্তবতা। অনেক বাবা-মাই মনে করেন, যে মেয়েকে তারা ঠিকমতো খাওয়াতে, লেখাপড়া করাতে এবং নিরাপত্তা দিতে পারেন না, তার ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে, তাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়া। বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক পরিবারের দারিদ্র্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। যারা প্রান্তিক ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বসবাস করেন তাদের বেলায় এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতার ফলে বাংলাদেশ সরকারও তৎপর হয়েছে এবং দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। লন্ডনে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব কন্যাশিশু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন, যাতে বলা হয়, ২০৪১ সালের মধ্যে এটি একেবারে নির্মূল করা হবে। তিনি কথা দেন, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে এবং ১৫-১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়েও এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা হবে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি কথা দেন, তার সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধে প্রাসঙ্গিক আইন-বাল্যবিয়ে নিয়ন্ত্রণ আইন (সিএমআরএ) পর্যালোচনা করবে, ২০১৪ সালের আগেই বাল্যবিয়ে নিয়ে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে, সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তনে আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সুশীলসমাজকে সম্পৃক্ত করবে।
কিন্তু বিশ্ব কন্যাশিশু সম্মেলনে শেখ হাসিনার দেয়া আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে এর মধ্যেই কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, বাল্যবিয়ে নিয়ন্ত্রণ আইন পর্যালোচনার সময় মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স ১৬ ও ছেলেদের ১৮-তে নামিয়ে আনার সর্বনাশা প্রস্তাব। বাংলাদেশের সুশীলসমাজ ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা ওই প্রস্তাবের ঘোরতর বিরোধিতা করেছেন। এ প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখন মনে হচ্ছে সরকার এ প্রস্তাবকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতিও বিলম্বিত হয়েছে এবং এ প্রতিবেদন লেখার সময় এটি শেষ হয়নি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১৪ সালের শেষের দিকে ১১৪ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী, যারা নিজেরাই বাল্যবিয়ের সরাসরি শিকার। এদের সঙ্গে কথা বলে, বাল্যবিয়ে বন্ধের সফলতার কথা যেমন জানা গেছে, তেমনি জানা গেছে, এ বিষয়ে সরকারের অনেক কিছুই করণীয় আছে এবং করা উচিত।
বাংলাদেশে এখন বিয়ের বৈধ বয়স হচ্ছে ছেলেদের জন্য ২১ ও মেয়েদের ১৮। ১৯২৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম বাল্যবিয়ে আইন পাস হয়। এরপর এটি বেশ কয়েকবার সংশোধিত হয়। ওই আইন অনুসারে ১৮ ও ২১ বছর বয়সের আগে ছেলে বা মেয়েদের বিয়ে করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু ওই আইন খুব কমই প্রয়োগ হয়।
বিভিন্ন পরিবারকে জিজ্ঞেস করা হয়, মেয়ের বিয়ের সিদ্ধান্ত কিভাবে তারা নিয়েছে। তারা বারবার তখন নিজেদের দারিদ্র্যের কথা বলেছে। অন্যদিকে মেয়েরা জানিয়েছে, শুধু ক্ষুদার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে বাবা-মা তাদের বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ছে। দারিদ্র্য, শিক্ষা ও বাল্যবিয়ে একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেক পরিবার বলেছে, তারা এতই গরিব, মেয়েকে স্কুলে রাখার সামর্থ্য তাদের ছিল না। ১০টা পরীক্ষার ফি দেয়ার সামর্থ্যও তাদের নেই। সামাজিক রীতিনীতি ও লিঙ্গবৈষম্যের ফলে বাবা-মায়েরা মনে করেন, ছেলেসন্তান তাদের ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দেবে। কিন্তু মেয়েসন্তান পরিবারের বোঝা, যে একসময় শ্বশুরবাড়িতে চলে যাবে। ফলে টাকা-পয়সার টান পড়লেই, ওই পরিবারগুলো মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। অসচ্ছলতার কারণে অনেক ছেলেও স্কুলে যেতে পারে না। অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদের ঝরে পড়তে না দেয়া, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় যৌন ও প্রজনন শিক্ষা দেয়া এবং বাল্যবিয়ের আইনগত ও ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে ধারণা দেয়ার ক্ষেত্রে স্কুলগুলো খুব সামান্য কিছুই করে থাকে।
বিভিন্ন পরিবারের চরম দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হওয়ার অন্যতম কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এসবের সঙ্গে যোগ হওয়া, অনেক পরিবার ঘর-বাড়ি, জমি, ইত্যাদি বন্যা, নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে সাক্ষাৎকার দেয়া বেশ কিছু পরিবার জানিয়েছে, তাদের সন্তানদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়ার পেছনে দুর্যোগের বিষয়টি সরাসরি সম্পৃক্ত। অন্য পরিবারগুলোও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট সংকটের কথা জানিয়েছে। যার ফলে দ্রুত বিয়ে দেয়াই মেয়ে ও পরিবারের কাছে সবচেয়ে ভাল উপায় মনে হয়। হয়রানি এবং ভয়ভীতিও বাল্যবিয়ের অন্যতম বড় অনুঘটক। অবিবাহিত উঠতি বয়সের মেয়েদের নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দেয় বখাটেরা। এর মধ্যে রয়েছে বিয়ের উদ্দেশ্যে অপহরণও। বাবা-মায়ের যখন মনে হয়, ওই বখাটেদের হাত থেকে মেয়েকে রক্ষা করা সম্ভব নয়, পুলিশও সাহায্য করবে না, তখন মেয়েকে বিয়ে দেয়াই একমাত্র সমাধান মনে হয় তাদের। পাড়া-প্রতিবেশী ও সমাজের অন্যরাও পরিবারগুলোকে প্রভাবিত করে। সমাজে মনে করা হয়, ঋতুস্রাব হওয়া মানেই মেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে যাওয়া। মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে বরকে যৌতুক দেয়ার বহুল চর্চিত রীতিও পরিবারগুলোর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। ভাবা হয়, মেয়ের বয়স কম হলে, বিয়েতে যৌতুকও কম দেয়া যাবে বা না দিলেও চলবে। বাংলাদেশে ছেলেরাও বাল্যবিয়ের শিকার, কিন্তু মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বাল্যবিয়ের সংখ্যা ১১ গুণ কম।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যেসব বিবাহিত মেয়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, দেখা গেছে তারা পড়ালেখা পাকাপাকিভাবে ছেড়েই দিয়েছে। তাদের খুব দ্রুত গর্ভধারণ করতে হয়েছে, কখনও চাপের মুখে, কখনও জন্মনিরোধক সামগ্রী না থাকায় কিংবা পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে ধারণা না থাকায়। স্বামীকে ছেড়ে দেয়া বা বিচ্ছেদের শিকার হওয়া অনেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপের কারণে নতুন করে পড়ালেখা শুরু করতে পারেনি। আগাম গর্ভধারণের কারণে অনেকে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়েছে, কেউ কেউ মারধর ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেকের কাহিনী খুব করুণ। স্বামীর পরিত্যক্তা কিংবা স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের শিকার হওয়া অনেক মেয়ে বিকল্প খুঁজে না পেয়ে স্বামীর কাছেই ফেরার আকুতি জানাচ্ছে।
বাল্যবিয়ে বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের চেষ্টা ও অঙ্গীকার পর্যাপ্ত কাজে রূপ নেয়নি। জন্মনিবন্ধন পদ্ধতি সম্প্রসারণে সরকারের সংস্কারের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভালভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাল্যবিয়ে বন্ধে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে, একজন ব্যক্তির বয়স যাচাই করে দেখা সম্ভব, তিনি আইনসম্মতভাবে বিয়ের উপযুক্ত কিনা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষণায় দেখা গেছে, স্থানীয় কর্মকর্তারা নিয়মিতই ঘুষের বিনিময়ে জাল জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে একরকম বাল্যবিয়েকে উৎসাহিত করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করে সরকার সবার মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু কিছু ব্যয় এখনও রয়ে গেছে, যার ফলে অনেক গরিব শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। মেয়েশিশুদের ক্ষেত্রে শিক্ষার অভাবের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হচ্ছে বাল্যবিয়ে। সরকারি যেসব সংস্থা গরিব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার পরিবারদের সাহায্য করছে, তাদের উচিত বাল্যবিয়ে বন্ধে আরও সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া। বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রচলিত আইনটির সংস্কার প্রয়োজন। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আইনটির যথাযথ প্রয়োগ।
লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে আন্তর্জাতিক যেসব আইন আছে, সেখানে বলা হয়েছে, বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ের ন্যূনতম বয়স সমান হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়সে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হচ্ছে ১৮। বিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য ন্যূনতম বয়স যেখানে ১৮, সেখানে ছেলেদের বয়স বেশি নির্ধারণ করা এক ধরনের ক্ষতিকর লিঙ্গবৈষম্য। এটি নিশ্চিত করে, বেশি বয়সী ছেলে কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে। আন্তর্জাতিক আইন প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সে কখন বিয়ে করবে তা নির্ধারণ করার স্বাধীনতা দেয়। অথবা নিজে স্বাধীন, স্বাবলম্বী ও সাবালক হওয়ার আগ পর্যন্ত বিয়ে স্থগিত রাখার অধিকার দেয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, নিজের নাগরিকদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের যে কোন ধরনের শারীরিক, মানসিক ও যৌন সন্ত্রাস হতে রক্ষা করা।
হিউম্যান রাইটস প্রতিবেদন তৈরিতে যেসব গ্রামে গিয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগেই বাল্যবিয়ে কেবল গ্রহণযোগ্যই নয়, প্রত্যাশিতও। বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ে বাল্যবিয়ে বন্ধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার গ্রহণ একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। কিন্তু এ লক্ষ্য কখনোই অর্জিত হবে না, যদি সরকারের সর্বক্ষেত্রে, অর্থাৎ কার্যকর আইন, নীতি ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়েকে স্থায়ীভাবে প্রাধান্য দেয়া না হয়।
নানা বিষয়ে উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সাফল্যে এ প্রশ্নটি আরও বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে, তাহলে এখানে কেন এখনও বাল্যবিয়ের উচ্চমাত্রায় রয়ে গেছে? এ প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য হচ্ছে এ প্রশ্নের উত্তের খুঁজে বেড়ানো এবং বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে তুলনামূলক সাফল্য অর্জনে বাংলাদেশ সরকার যেসব কার্যকর কৌশল অবলম্বন করতে পারে, সে উপায়গুলো বাতলে দেয়া।
বাংলাদেশে বাল্যবিয়ের উচ্চ হারের বেশ কিছু কারণ রয়েছে। সামাজিক অনেক রীতিনীতি ও প্রথা লিঙ্গবৈষম্যের ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে, যা জীবনের প্রতি পদে পদে মেয়েদের ক্ষতি করছে এবং বাল্যবিয়ের উচ্চহারের পেছনে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করছে। চরম দারিদ্র্য বাংলাদেশের অনেক পরিবারেই দৈনন্দিন বাস্তবতা। অনেক বাবা-মাই মনে করেন, যে মেয়েকে তারা ঠিকমতো খাওয়াতে, লেখাপড়া করাতে এবং নিরাপত্তা দিতে পারেন না, তার ভবিষ্যৎ সুনিশ্চিত করার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে, তাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয়া। বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ ও জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক পরিবারের দারিদ্র্যে বাড়তি মাত্রা যোগ করেছে। যারা প্রান্তিক ও দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বসবাস করেন তাদের বেলায় এটি বিশেষভাবে প্রযোজ্য।
বাল্যবিয়ের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান সচেতনতার ফলে বাংলাদেশ সরকারও তৎপর হয়েছে এবং দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছে। লন্ডনে ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব কন্যাশিশু সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাল্যবিয়ের হার কমিয়ে আনতে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দেন, যাতে বলা হয়, ২০৪১ সালের মধ্যে এটি একেবারে নির্মূল করা হবে। তিনি কথা দেন, ২০২১ সালের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের বিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হবে এবং ১৫-১৮ বছর বয়সী মেয়েদের বিয়েও এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা হবে। এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে তিনি কথা দেন, তার সরকার ২০১৫ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধে প্রাসঙ্গিক আইন-বাল্যবিয়ে নিয়ন্ত্রণ আইন (সিএমআরএ) পর্যালোচনা করবে, ২০১৪ সালের আগেই বাল্যবিয়ে নিয়ে একটি কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবে, সামাজিক রীতিনীতি পরিবর্তনে আরও কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করবে এবং বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সুশীলসমাজকে সম্পৃক্ত করবে।
কিন্তু বিশ্ব কন্যাশিশু সম্মেলনে শেখ হাসিনার দেয়া আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে এর মধ্যেই কিছুটা দেরি হয়ে গেছে। এর একটি বড় কারণ হচ্ছে, বাল্যবিয়ে নিয়ন্ত্রণ আইন পর্যালোচনার সময় মেয়েদের ন্যূনতম বিয়ের বয়স ১৬ ও ছেলেদের ১৮-তে নামিয়ে আনার সর্বনাশা প্রস্তাব। বাংলাদেশের সুশীলসমাজ ও আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা ওই প্রস্তাবের ঘোরতর বিরোধিতা করেছেন। এ প্রতিবেদন যখন লেখা হচ্ছে, তখন মনে হচ্ছে সরকার এ প্রস্তাবকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। বাল্যবিয়ে বন্ধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনার অগ্রগতিও বিলম্বিত হয়েছে এবং এ প্রতিবেদন লেখার সময় এটি শেষ হয়নি।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০১৪ সালের শেষের দিকে ১১৪ জন ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নিয়েছে। এদের বেশির ভাগই শিশু ও নারী, যারা নিজেরাই বাল্যবিয়ের সরাসরি শিকার। এদের সঙ্গে কথা বলে, বাল্যবিয়ে বন্ধের সফলতার কথা যেমন জানা গেছে, তেমনি জানা গেছে, এ বিষয়ে সরকারের অনেক কিছুই করণীয় আছে এবং করা উচিত।
বাংলাদেশে এখন বিয়ের বৈধ বয়স হচ্ছে ছেলেদের জন্য ২১ ও মেয়েদের ১৮। ১৯২৯ সালে বাংলাদেশে প্রথম বাল্যবিয়ে আইন পাস হয়। এরপর এটি বেশ কয়েকবার সংশোধিত হয়। ওই আইন অনুসারে ১৮ ও ২১ বছর বয়সের আগে ছেলে বা মেয়েদের বিয়ে করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কিন্তু ওই আইন খুব কমই প্রয়োগ হয়।
বিভিন্ন পরিবারকে জিজ্ঞেস করা হয়, মেয়ের বিয়ের সিদ্ধান্ত কিভাবে তারা নিয়েছে। তারা বারবার তখন নিজেদের দারিদ্র্যের কথা বলেছে। অন্যদিকে মেয়েরা জানিয়েছে, শুধু ক্ষুদার জ্বালায় অতিষ্ঠ হয়ে বাবা-মা তাদের বিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ছে। দারিদ্র্য, শিক্ষা ও বাল্যবিয়ে একে অন্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেক পরিবার বলেছে, তারা এতই গরিব, মেয়েকে স্কুলে রাখার সামর্থ্য তাদের ছিল না। ১০টা পরীক্ষার ফি দেয়ার সামর্থ্যও তাদের নেই। সামাজিক রীতিনীতি ও লিঙ্গবৈষম্যের ফলে বাবা-মায়েরা মনে করেন, ছেলেসন্তান তাদের ভবিষ্যতে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তা দেবে। কিন্তু মেয়েসন্তান পরিবারের বোঝা, যে একসময় শ্বশুরবাড়িতে চলে যাবে। ফলে টাকা-পয়সার টান পড়লেই, ওই পরিবারগুলো মেয়ের পড়ালেখা বন্ধ করে দেয়। অসচ্ছলতার কারণে অনেক ছেলেও স্কুলে যেতে পারে না। অন্যদিকে ছাত্রছাত্রীদের ঝরে পড়তে না দেয়া, বাল্যবিয়ে প্রতিরোধ, ছাত্রছাত্রীদের প্রয়োজনীয় যৌন ও প্রজনন শিক্ষা দেয়া এবং বাল্যবিয়ের আইনগত ও ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে ধারণা দেয়ার ক্ষেত্রে স্কুলগুলো খুব সামান্য কিছুই করে থাকে।
বিভিন্ন পরিবারের চরম দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হওয়ার অন্যতম কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বাংলাদেশ ব্যাপকভাবে দুর্যোগপ্রবণ একটি দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা এসবের সঙ্গে যোগ হওয়া, অনেক পরিবার ঘর-বাড়ি, জমি, ইত্যাদি বন্যা, নদীভাঙন, ঘূর্ণিঝড় ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকির মুখে পড়ে যাচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে সাক্ষাৎকার দেয়া বেশ কিছু পরিবার জানিয়েছে, তাদের সন্তানদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়ার পেছনে দুর্যোগের বিষয়টি সরাসরি সম্পৃক্ত। অন্য পরিবারগুলোও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ফলে সৃষ্ট সংকটের কথা জানিয়েছে। যার ফলে দ্রুত বিয়ে দেয়াই মেয়ে ও পরিবারের কাছে সবচেয়ে ভাল উপায় মনে হয়। হয়রানি এবং ভয়ভীতিও বাল্যবিয়ের অন্যতম বড় অনুঘটক। অবিবাহিত উঠতি বয়সের মেয়েদের নানা ধরনের হুমকি-ধমকি দেয় বখাটেরা। এর মধ্যে রয়েছে বিয়ের উদ্দেশ্যে অপহরণও। বাবা-মায়ের যখন মনে হয়, ওই বখাটেদের হাত থেকে মেয়েকে রক্ষা করা সম্ভব নয়, পুলিশও সাহায্য করবে না, তখন মেয়েকে বিয়ে দেয়াই একমাত্র সমাধান মনে হয় তাদের। পাড়া-প্রতিবেশী ও সমাজের অন্যরাও পরিবারগুলোকে প্রভাবিত করে। সমাজে মনে করা হয়, ঋতুস্রাব হওয়া মানেই মেয়ের বিয়ের বয়স হয়ে যাওয়া। মেয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে বরকে যৌতুক দেয়ার বহুল চর্চিত রীতিও পরিবারগুলোর ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করে। ভাবা হয়, মেয়ের বয়স কম হলে, বিয়েতে যৌতুকও কম দেয়া যাবে বা না দিলেও চলবে। বাংলাদেশে ছেলেরাও বাল্যবিয়ের শিকার, কিন্তু মেয়েদের চেয়ে ছেলেদের বাল্যবিয়ের সংখ্যা ১১ গুণ কম।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যেসব বিবাহিত মেয়ের সাক্ষাৎকার নিয়েছে, দেখা গেছে তারা পড়ালেখা পাকাপাকিভাবে ছেড়েই দিয়েছে। তাদের খুব দ্রুত গর্ভধারণ করতে হয়েছে, কখনও চাপের মুখে, কখনও জন্মনিরোধক সামগ্রী না থাকায় কিংবা পরিবার পরিকল্পনা নিয়ে ধারণা না থাকায়। স্বামীকে ছেড়ে দেয়া বা বিচ্ছেদের শিকার হওয়া অনেকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক চাপের কারণে নতুন করে পড়ালেখা শুরু করতে পারেনি। আগাম গর্ভধারণের কারণে অনেকে স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়েছে, কেউ কেউ মারধর ও নির্যাতনের শিকার হয়েছে। অনেকের কাহিনী খুব করুণ। স্বামীর পরিত্যক্তা কিংবা স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নির্যাতনের শিকার হওয়া অনেক মেয়ে বিকল্প খুঁজে না পেয়ে স্বামীর কাছেই ফেরার আকুতি জানাচ্ছে।
বাল্যবিয়ে বন্ধে বাংলাদেশ সরকারের চেষ্টা ও অঙ্গীকার পর্যাপ্ত কাজে রূপ নেয়নি। জন্মনিবন্ধন পদ্ধতি সম্প্রসারণে সরকারের সংস্কারের উদ্যোগ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ভালভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বাল্যবিয়ে বন্ধে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। এর ফলে, একজন ব্যক্তির বয়স যাচাই করে দেখা সম্ভব, তিনি আইনসম্মতভাবে বিয়ের উপযুক্ত কিনা। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষণায় দেখা গেছে, স্থানীয় কর্মকর্তারা নিয়মিতই ঘুষের বিনিময়ে জাল জন্মনিবন্ধন সনদ দিয়ে একরকম বাল্যবিয়েকে উৎসাহিত করেন। প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক করে সরকার সবার মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু কিছু ব্যয় এখনও রয়ে গেছে, যার ফলে অনেক গরিব শিশু স্কুলে যেতে পারছে না। মেয়েশিশুদের ক্ষেত্রে শিক্ষার অভাবের অবশ্যম্ভাবী পরিণতি হচ্ছে বাল্যবিয়ে। সরকারি যেসব সংস্থা গরিব এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার পরিবারদের সাহায্য করছে, তাদের উচিত বাল্যবিয়ে বন্ধে আরও সক্রিয়ভাবে অংশ নেয়া। বাল্যবিয়ে বন্ধে প্রচলিত আইনটির সংস্কার প্রয়োজন। এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আইনটির যথাযথ প্রয়োগ।
লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণে আন্তর্জাতিক যেসব আইন আছে, সেখানে বলা হয়েছে, বিয়ের ক্ষেত্রে ছেলেমেয়ের ন্যূনতম বয়স সমান হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়সে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হচ্ছে ১৮। বিয়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে মেয়েদের জন্য ন্যূনতম বয়স যেখানে ১৮, সেখানে ছেলেদের বয়স বেশি নির্ধারণ করা এক ধরনের ক্ষতিকর লিঙ্গবৈষম্য। এটি নিশ্চিত করে, বেশি বয়সী ছেলে কম বয়সী মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে। আন্তর্জাতিক আইন প্রত্যেক ব্যক্তিকেই সে কখন বিয়ে করবে তা নির্ধারণ করার স্বাধীনতা দেয়। অথবা নিজে স্বাধীন, স্বাবলম্বী ও সাবালক হওয়ার আগ পর্যন্ত বিয়ে স্থগিত রাখার অধিকার দেয়। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে, নিজের নাগরিকদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যগত অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের যে কোন ধরনের শারীরিক, মানসিক ও যৌন সন্ত্রাস হতে রক্ষা করা।
হিউম্যান রাইটস প্রতিবেদন তৈরিতে যেসব গ্রামে গিয়েছে, সেগুলোর বেশির ভাগেই বাল্যবিয়ে কেবল গ্রহণযোগ্যই নয়, প্রত্যাশিতও। বাংলাদেশ সরকারের উচ্চপর্যায়ে বাল্যবিয়ে বন্ধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার গ্রহণ একটি ইতিবাচক উদ্যোগ। কিন্তু এ লক্ষ্য কখনোই অর্জিত হবে না, যদি সরকারের সর্বক্ষেত্রে, অর্থাৎ কার্যকর আইন, নীতি ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বাল্যবিয়েকে স্থায়ীভাবে প্রাধান্য দেয়া না হয়।
No comments