ফাঁসিতে অবসান ২২ বছরের অপেক্ষার ‘মৃত্যুর আগেই বহুবার মরেছি’
অপ্রাপ্ত
বয়সে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাকিস্তানের নাগরিক আফতাব বাহাদুরের রায়টি ২২ বছর
পর আজ বুধবার কার্যকর করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে একটি লেখা লিখেছিলেন আফতাব।
২২ বছর ধরে কারাগারে বসে মৃত্যুর জন্য দুঃসহ অপেক্ষার কথা উঠে এসেছে এই
লেখায়—
‘মাত্রই আমার মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পেয়েছি। পরোয়ানায় বলা হয়েছে, ১০ জুন বুধবার আমাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। আমি নির্দোষ, তবে জানি না এতে কোনো কিছুর হেরফের হবে কি না। গত ২২ বছর ধরে কারাবাসকালে আমি অনেকবারই মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েছি। খুবই অদ্ভুত ঘটনা এটা। আমি বলতে পারব না আমাকে যে কতবার বলা হয়েছে, আমি মরতে যাচ্ছি যেকোনো সময়। পরোয়ানা জারি হলে অনেক খারাপ লাগে। আমি দিন গুনতে শুরু করি। এটা খুবই কষ্টের। আমার স্নায়ু ও শরীর হিম হয়ে আসে।
সত্যি বলতে কি, আমি আমার মৃত্যুর আগেই বহুবার মরেছি। আমার মনে হয় আমার অভিজ্ঞতা অন্য অনেকের চেয়ে আলাদা। এর চেয়ে নির্মম আর কিছু হতে পারে না যে কাউকে বলা হলো তোমার মৃত্যু আসন্ন; আর এরপর কারাগারে বসে বসে সেই দিনটির জন্য অপেক্ষা করা। সেই ১৫ বছর বয়স থেকে আমি জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি আছি। অনেকটা মৃত আত্মা নিয়ে বাস করার মতো, যেখানে কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
আমি একজন খ্রিষ্টান। বিষয়টা অনেক সময় এখানে জটিল। দুর্ভাগ্যজনক যে একজন বন্দী আমাদের জীবনটাকে কঠিন বানিয়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। জানি না, কেন তিনি এমনটা করেন। পেশোয়ারে খ্রিষ্টানদের ওপর বোমা হামলা আমাকে হতাশ করে। আমাকে গভীরভাবে আহত করে। আশা করি পাকিস্তানের জনগণ উপদলে বিভক্ত হওয়ার বদলে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হবে। খ্রিষ্টানরা এখানে সংখ্যায় অল্প, তবে একতাবদ্ধ।
এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমি সবকিছু করতে পারি। আমি আঁকতে ভালোবাসি। আমি শিল্পী ছিলাম, খুবই সাধারণ মানের; সেই ছোটবেলায় জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই। পরে আমি আঁকাআঁকির দিকে ঝুঁকেছি, পাশাপাশি লেখালেখিও করেছি। আমার কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না, এটা শুধুই স্রষ্টার উপহার। তবে কারাগারে আসার পর আমার আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের কোনো রাস্তা থাকল না। আমি বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্বের রাজ্যে এসে পড়ি। এক সময় আমি এই কোট লাখপট কারাগারের সবকিছু আঁকতে শুরু করি। পরে আমাকে অন্য কারাগারের ছবিও আঁকতে বলা হয়। আঁকতে পারার চেয়ে এই পৃথিবীর আর কোনো কিছু আমাকে এতটা সুখ দিতে পারে না। এটাই আমার জীবন, এটা নিয়েই আমি সুখী।
‘মাত্রই আমার মৃত্যু পরোয়ানা হাতে পেয়েছি। পরোয়ানায় বলা হয়েছে, ১০ জুন বুধবার আমাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। আমি নির্দোষ, তবে জানি না এতে কোনো কিছুর হেরফের হবে কি না। গত ২২ বছর ধরে কারাবাসকালে আমি অনেকবারই মৃত্যু পরোয়ানা পেয়েছি। খুবই অদ্ভুত ঘটনা এটা। আমি বলতে পারব না আমাকে যে কতবার বলা হয়েছে, আমি মরতে যাচ্ছি যেকোনো সময়। পরোয়ানা জারি হলে অনেক খারাপ লাগে। আমি দিন গুনতে শুরু করি। এটা খুবই কষ্টের। আমার স্নায়ু ও শরীর হিম হয়ে আসে।
সত্যি বলতে কি, আমি আমার মৃত্যুর আগেই বহুবার মরেছি। আমার মনে হয় আমার অভিজ্ঞতা অন্য অনেকের চেয়ে আলাদা। এর চেয়ে নির্মম আর কিছু হতে পারে না যে কাউকে বলা হলো তোমার মৃত্যু আসন্ন; আর এরপর কারাগারে বসে বসে সেই দিনটির জন্য অপেক্ষা করা। সেই ১৫ বছর বয়স থেকে আমি জীবন আর মৃত্যুর মাঝামাঝি আছি। অনেকটা মৃত আত্মা নিয়ে বাস করার মতো, যেখানে কোনো ভবিষ্যৎ নেই।
আমি একজন খ্রিষ্টান। বিষয়টা অনেক সময় এখানে জটিল। দুর্ভাগ্যজনক যে একজন বন্দী আমাদের জীবনটাকে কঠিন বানিয়ে ফেলার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। জানি না, কেন তিনি এমনটা করেন। পেশোয়ারে খ্রিষ্টানদের ওপর বোমা হামলা আমাকে হতাশ করে। আমাকে গভীরভাবে আহত করে। আশা করি পাকিস্তানের জনগণ উপদলে বিভক্ত হওয়ার বদলে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হবে। খ্রিষ্টানরা এখানে সংখ্যায় অল্প, তবে একতাবদ্ধ।
এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আমি সবকিছু করতে পারি। আমি আঁকতে ভালোবাসি। আমি শিল্পী ছিলাম, খুবই সাধারণ মানের; সেই ছোটবেলায় জ্ঞান হওয়ার পর থেকেই। পরে আমি আঁকাআঁকির দিকে ঝুঁকেছি, পাশাপাশি লেখালেখিও করেছি। আমার কোনো প্রশিক্ষণ ছিল না, এটা শুধুই স্রষ্টার উপহার। তবে কারাগারে আসার পর আমার আবেগ-অনুভূতি প্রকাশের কোনো রাস্তা থাকল না। আমি বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্বের রাজ্যে এসে পড়ি। এক সময় আমি এই কোট লাখপট কারাগারের সবকিছু আঁকতে শুরু করি। পরে আমাকে অন্য কারাগারের ছবিও আঁকতে বলা হয়। আঁকতে পারার চেয়ে এই পৃথিবীর আর কোনো কিছু আমাকে এতটা সুখ দিতে পারে না। এটাই আমার জীবন, এটা নিয়েই আমি সুখী।
আমার
পরিবারের কেউ নেই আমাকে দেখতে আসার। তার পরও বসে থাকি, কখন কে আসবেন, সে
জন্য। অদ্ভুত একটা অভিজ্ঞতা। কেউ এলে বাইরের জগৎ সম্পর্কে জানতে পারি। সেটা
তখন ক্যানভাসে আঁকতে পারি। পুলিশ আমাকে কীভাবে নির্যাতন করেছিল, জানতে
চাইলে আমার পুরোনো দুঃসহ স্মৃতির কথা মনে পড়ে যায়। সেগুলো আমার ছবির
ক্যানভাসে চলে আসে। যদিও অপরাধের সঙ্গে আমাকে অন্যায়ভাবে জড়াতে পুলিশ আমাকে
যে নির্যাতন করেছিল সে স্মৃতি মনে না আনতে পারলেই ভালো হতো।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা যখন শুনলাম সরকার মৃত্যুদণ্ড রহিত করার বিধানটি বাতিল করে দিয়েছে, তখন কারাগারের কক্ষগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ের ভাব ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের চারপাশে ফাঁসি, দম বন্ধ করা পরিবেশ। এরই মধ্যে কোট লাখপট কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শুরু হয়ে যায়। সবাইকে মানসিক নিপীড়নের মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়। যাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে, তাদের অনেকেই এই মৃত্যুর যাত্রায় বহু বছর ধরে আমাদের সাথি ছিলেন। আমাদের ফেলে গেলেন হতাশার রাজ্যে।
জঙ্গিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য মৃত্যুদণ্ড রহিত করার বিধানটি বাতিল করা হয়। অথচ কোট লাখপট কারাগারের বন্দীরা সাধারণ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত। এভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের উপদল-ভিত্তিক সহিংসতা কীভাবে বন্ধ হবে, আমি বলতে পারি না। আমি বুধবার মরতে চাই না। আমার টাকা নেই, আমি কেবল আমার স্রষ্টা ও স্বেচ্ছাসেবী আইনজীবীদের ওপর নির্ভর করতে পারি। যদিও রাত্রি অনেক অন্ধকার, তবুও আমি আশা ছাড়তে নারাজ।’
২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসে আমরা যখন শুনলাম সরকার মৃত্যুদণ্ড রহিত করার বিধানটি বাতিল করে দিয়েছে, তখন কারাগারের কক্ষগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভয়ের ভাব ছড়িয়ে পড়ে। আমাদের চারপাশে ফাঁসি, দম বন্ধ করা পরিবেশ। এরই মধ্যে কোট লাখপট কারাগারে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর শুরু হয়ে যায়। সবাইকে মানসিক নিপীড়নের মধ্য দিয়ে সময় পার করতে হয়। যাদের ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছে, তাদের অনেকেই এই মৃত্যুর যাত্রায় বহু বছর ধরে আমাদের সাথি ছিলেন। আমাদের ফেলে গেলেন হতাশার রাজ্যে।
জঙ্গিদের শাস্তি দেওয়ার জন্য মৃত্যুদণ্ড রহিত করার বিধানটি বাতিল করা হয়। অথচ কোট লাখপট কারাগারের বন্দীরা সাধারণ অপরাধে দোষী সাব্যস্ত। এভাবে হত্যার মধ্য দিয়ে দেশের উপদল-ভিত্তিক সহিংসতা কীভাবে বন্ধ হবে, আমি বলতে পারি না। আমি বুধবার মরতে চাই না। আমার টাকা নেই, আমি কেবল আমার স্রষ্টা ও স্বেচ্ছাসেবী আইনজীবীদের ওপর নির্ভর করতে পারি। যদিও রাত্রি অনেক অন্ধকার, তবুও আমি আশা ছাড়তে নারাজ।’
ফাঁসিতে অবসান ২২ বছরের অপেক্ষার
অপ্রাপ্ত
বয়সে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া পাকিস্তানের খ্রিষ্টান নাগরিক আফতাব বাহাদুরের
রায়টি ২২ বছর পর আজ বুধবার কার্যকর করা হয়েছে। ভোরে লাহোরের কারাগারে
ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাঁর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয় বলে বিবিসি অনলাইনের খবরে
জানানো হয়।
১৯৯২ সালে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার সময় আফতাবের বয়স ছিল ১৫ বছর। সে সময় পাকিস্তানে ১৫ বছর বয়সী কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় কোনো আইনি বাধা ছিল না। পরে ২০০০ সালে বিধান করা হয়, ১৮ বছরের কম বয়সী কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না।
আফতাবের এই রায় কার্যকর করাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
লাহোরে ১৯৯২ সালে জোড়া খুনের দায়ে কিশোর আফতাবকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার দাবিতে সোচ্চার হয় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে গত ২২ বছরে বহুবার তাঁর ফাঁসি কার্যকর করার আয়োজন করেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়। যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর হতে পারে এমন আতঙ্ক নিয়ে ২২টি বছর কারাগারে কাটিয়েছেন আফতাব। আজ ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে তাঁর অপেক্ষার শেষ হলো।
মৃত্যুর আগে একটি লেখা লিখেছিলেন আফতাব। এই লেখাটি ছিল তাঁর ফাঁসির রায় বাতিলের দাবিতে সোচ্চার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী রিপ্রীভের জন্য। মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ২২ বছর ধরে কারাগারে তাঁর দুঃসহ অপেক্ষার কথা উঠে এসেছে তাঁর সেই লেখায়।
১৯৯২ সালে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার সময় আফতাবের বয়স ছিল ১৫ বছর। সে সময় পাকিস্তানে ১৫ বছর বয়সী কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় কোনো আইনি বাধা ছিল না। পরে ২০০০ সালে বিধান করা হয়, ১৮ বছরের কম বয়সী কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যাবে না।
আফতাবের এই রায় কার্যকর করাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মীরা।
লাহোরে ১৯৯২ সালে জোড়া খুনের দায়ে কিশোর আফতাবকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এই মৃত্যুদণ্ড বাতিল করার দাবিতে সোচ্চার হয় স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীরা। এই পরিস্থিতিতে গত ২২ বছরে বহুবার তাঁর ফাঁসি কার্যকর করার আয়োজন করেও শেষ মুহূর্তে তা স্থগিত করা হয়। যেকোনো সময় ফাঁসি কার্যকর হতে পারে এমন আতঙ্ক নিয়ে ২২টি বছর কারাগারে কাটিয়েছেন আফতাব। আজ ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে তাঁর অপেক্ষার শেষ হলো।
মৃত্যুর আগে একটি লেখা লিখেছিলেন আফতাব। এই লেখাটি ছিল তাঁর ফাঁসির রায় বাতিলের দাবিতে সোচ্চার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী রিপ্রীভের জন্য। মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে ২২ বছর ধরে কারাগারে তাঁর দুঃসহ অপেক্ষার কথা উঠে এসেছে তাঁর সেই লেখায়।
No comments