ফোনালাপ ফাঁস আতঙ্ক by কাজী সুমন
আতঙ্কের
নাম ফোনালাপ ফাঁস। সবচেয়ে আতঙ্কে বিরোধী রাজনীতিবিদরা। একের পর এক ফাঁস
হচ্ছে তাদের ফোনালাপ। ফাঁসকারীরা থেকে যাচ্ছে পর্দার আড়ালে। আর যাদের
ফোনালাপ ফাঁস হচ্ছে তারা পড়ছেন বিপাকে। হুমকির মুখে পড়ছে তাদের রাজনৈতিক
ক্যারিয়ার। কাউকে কাউকে যেতে হয়েছে কারাগারেও। লঙ্ঘন হচ্ছে ব্যক্তিগত
গোপনীয়তা।
সর্বশেষ ফোনালাপ ফাঁসের কারণে বিপাকে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির দু’সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান। যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা রইস উদ্দিনের সঙ্গে মাহবুবুর রহমানের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এর আগে ছাত্রদলের সাবেক নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের সঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ফোনালাপ ফাঁস হয়।
এমন করে গত দুই বছরে ধারাবাহিকভাবে বিএনপির অন্তত একডজন শীর্ষ নেতার ফোনালাপ ফাঁস করা হয়। এতে দলের মধ্যে তৈরি হচ্ছে সন্দেহ-অবিশ্বাস। বিভ্রান্ত হচ্ছেন কর্মীরা। বেকায়দায় পড়ছেন সিনিয়র নেতারা। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কের কারণে বিএনপি নেতারা এখন ফোনালাপে খুবই সতর্ক। এমনকি সাংবাদিকদের সঙ্গেও অত্যন্ত সতর্ক হয়ে কথা বলছেন তারা। দলের বিরুদ্ধে যায় এমন কোন নেতিবাচক মন্তব্য মোবাইল ফোনে বলতে সাহস করছেন না। মন খুলে কথা বলছেন না দলের কর্মীদের সঙ্গেও। সবাইকে সামনাসামনি এসে কথা বলার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, দলের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে অনেক নেতাই আত্মসমালোচনা করেন। সরকার অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সংস্থাগুলোকে দিয়ে এই ফোনালাপ ফাঁস করাচ্ছে।
বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদের শেষদিকে ফোনালাপ ফাঁসের প্রথম ঘটনাটি ঘটে। ২০১৩ সালে ২৬শে অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের প্রায় ৩৭ মিনিট কথোপকথন হয়। এর একদিন পরই একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ওই কথোপকথন সম্প্রচারিত হয়। এ ঘটনার পর দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ২০১১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে খালেদা জিয়া মোবাইল ফোনে নানা দিকনির্দেশনা দেন। পুরনো ওই ফোনালাপের পাঁচটি অডিও দীর্ঘদিন পর ফাঁস হয় বাংলালিক নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে। ফোনালাপ ফাঁসের শিকার হন বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির শীর্ষ নেতা ফোন দিয়েছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে। প্রায় ১০ মিনিটের কথোপকথনে আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন তারেক রহমান। এর কিছুদিন পরই বাংলালিক নামে ইউটিউব চ্যানেলে তাদের ফোনালাপটি ফাঁস হয়ে যায়। এই ফোনালাপটি ফাঁস হওয়ার পর দলের মধ্যে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন মির্জা আলমগীর। ফোনালাপ ফাঁসের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে প্রায় ২৩ মিনিট ফোনে কথা বলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। একই সময় আরেক ব্যক্তির সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন তিনি। ফোনালাপে তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলন ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন তারা। কয়েকদিন পরই তাদের ফোনালাপ ফাঁস করে দেয়া হয়। ওই ফোনালাপে সেনাবাহিনীকে উসকানি দেয়ার অভিযোগ এনে গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় মান্নাকে। ওই ঘটনায় এখনও কারাভোগ করছেন মান্না।
গত ২৮শে এপ্রিল সিটি নির্বাচন বর্জন নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ফোনালাপ ফাঁস করে দেয়া হয়। ওই কথোপকথনে নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে খালেদা জিয়ার মতামত আছে কিনা শিমুল বিশ্বাসের কাছে জানতে চেয়েছিলেন মওদুদ আহমদ। শিমুল বিশ্বাসও হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছিলেন। একদিন পরই ওই ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায়। এরপর ফের ফোনালাপ ফাঁসের শিকার হন মওদুদ আহমদ। গত ৮ই মে দুপুরে ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তিনি। এরপর তাদের দুই মিনিট ৮ সেকেন্ডের কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস করে দেয়া হয়। ওই ফোনালাপে আবেদকে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এই বিএনপিকে দিয়ে হবে না। দলকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এখন জিয়ার বিএনপি লাগবে। জামায়াতের ব্যাপারেও বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেন তিনি।’ এই কথোপকথন ফাঁসের পর জোটের শরিক দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সর্বশেষ ফোনালাপ ফাঁসের শিকার হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। গত ৩রা জুন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রইসউদ্দিনের সঙ্গে প্রায় ২২ মিনিট দলের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। ৫ই জুন তাদের ওই কথোপকথন ফাঁস করে দেয় বাংলালিক ইউটিউব চ্যানেল। ওই ফোনালাপে খালেদা জিয়ার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন মাহবুবুর রহমান। ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ না করা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, হাসিনা-খালেদা টেলিফোন আলাপ, চীন, জামায়াত, সেনাবাহিনী, ২০১৯ সালের নির্বাচনেও বিএনপির ক্ষমতায় আসতে না পারা, সিনিয়র নেতাদের জামিনসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন তিনি। ফোনালাপটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তোপের মুখে পড়েন কর্মীদের। এরপর থেকে জেনারেল মাহবুব অনেকটা আড়ালে চলে গেছেন। সভা-সমাবেশ ও দলীয় কর্মসূচিগুলোতেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। এদিকে ফোনালাপটির ব্যাপারে জানতে চাইলে লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি কিছু জানি না। অনেকের সঙ্গেই প্রতিদিন কথা হয়, খোলা মন নিয়েই কথা বলি। কিন্তু কে কখন ফোন রেকর্ড করে প্রকাশ করছে, এসব নিম্নশ্রেণীর আচরণ। ইদানীং তো চরিত্রহননে এসব করা হচ্ছে। এদিকে বিএনপি নেতাদের ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির দুজন নেতা ফোনে কথা বলতে রাজি হননি। সরাসরি বাসায় বা অফিসে গিয়ে কথা বলার আহ্বান জানান তারা। এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আধুনিক যুগে প্রযুক্তির সাহায্যে টেলিফোনের কথাগুলো ট্র্যাপ করে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী বানিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রকাশ করছে। বিএনপিতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নেই- এমন কোন নেতা আছে বলে আমার মনে হয় না। যদি কোন ব্যতিক্রম থাকে তাহলে সাংগঠনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সরকারের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিএনপিতে কোন ধরনের প্রভাব পড়বে না।
সর্বশেষ ফোনালাপ ফাঁসের কারণে বিপাকে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির দু’সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান। যুবদলের কেন্দ্রীয় নেতা রইস উদ্দিনের সঙ্গে মাহবুবুর রহমানের ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। এর আগে ছাত্রদলের সাবেক নেতা বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের সঙ্গে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ফোনালাপ ফাঁস হয়।
এমন করে গত দুই বছরে ধারাবাহিকভাবে বিএনপির অন্তত একডজন শীর্ষ নেতার ফোনালাপ ফাঁস করা হয়। এতে দলের মধ্যে তৈরি হচ্ছে সন্দেহ-অবিশ্বাস। বিভ্রান্ত হচ্ছেন কর্মীরা। বেকায়দায় পড়ছেন সিনিয়র নেতারা। এই পরিস্থিতিতে আতঙ্কের কারণে বিএনপি নেতারা এখন ফোনালাপে খুবই সতর্ক। এমনকি সাংবাদিকদের সঙ্গেও অত্যন্ত সতর্ক হয়ে কথা বলছেন তারা। দলের বিরুদ্ধে যায় এমন কোন নেতিবাচক মন্তব্য মোবাইল ফোনে বলতে সাহস করছেন না। মন খুলে কথা বলছেন না দলের কর্মীদের সঙ্গেও। সবাইকে সামনাসামনি এসে কথা বলার আহ্বান জানাচ্ছেন তারা। বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন, দলের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে অনেক নেতাই আত্মসমালোচনা করেন। সরকার অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সংস্থাগুলোকে দিয়ে এই ফোনালাপ ফাঁস করাচ্ছে।
বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদের শেষদিকে ফোনালাপ ফাঁসের প্রথম ঘটনাটি ঘটে। ২০১৩ সালে ২৬শে অক্টোবর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ফোন দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাদের প্রায় ৩৭ মিনিট কথোপকথন হয়। এর একদিন পরই একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে ওই কথোপকথন সম্প্রচারিত হয়। এ ঘটনার পর দেশব্যাপী তোলপাড় সৃষ্টি হয়। ২০১১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর রাজধানীতে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশের প্রস্তুতি হিসেবে দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে খালেদা জিয়া মোবাইল ফোনে নানা দিকনির্দেশনা দেন। পুরনো ওই ফোনালাপের পাঁচটি অডিও দীর্ঘদিন পর ফাঁস হয় বাংলালিক নামে একটি ইউটিউব চ্যানেলে। ফোনালাপ ফাঁসের শিকার হন বিএনপি সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ২০১৪ সালের শুরুর দিকে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির শীর্ষ নেতা ফোন দিয়েছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে। প্রায় ১০ মিনিটের কথোপকথনে আন্দোলনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলার পাশাপাশি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভূমিকার সমালোচনা করেছিলেন তারেক রহমান। এর কিছুদিন পরই বাংলালিক নামে ইউটিউব চ্যানেলে তাদের ফোনালাপটি ফাঁস হয়ে যায়। এই ফোনালাপটি ফাঁস হওয়ার পর দলের মধ্যে কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন মির্জা আলমগীর। ফোনালাপ ফাঁসের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনাটি ঘটে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝিতে। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকার সঙ্গে প্রায় ২৩ মিনিট ফোনে কথা বলেন ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। একই সময় আরেক ব্যক্তির সঙ্গেও ফোনে কথা বলেন তিনি। ফোনালাপে তৎকালীন সরকারবিরোধী আন্দোলন ও দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেন তারা। কয়েকদিন পরই তাদের ফোনালাপ ফাঁস করে দেয়া হয়। ওই ফোনালাপে সেনাবাহিনীকে উসকানি দেয়ার অভিযোগ এনে গত ২৫শে ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় মান্নাকে। ওই ঘটনায় এখনও কারাভোগ করছেন মান্না।
গত ২৮শে এপ্রিল সিটি নির্বাচন বর্জন নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের ফোনালাপ ফাঁস করে দেয়া হয়। ওই কথোপকথনে নির্বাচন বর্জনের বিষয়ে খালেদা জিয়ার মতামত আছে কিনা শিমুল বিশ্বাসের কাছে জানতে চেয়েছিলেন মওদুদ আহমদ। শিমুল বিশ্বাসও হ্যাঁ সূচক জবাব দিয়েছিলেন। একদিন পরই ওই ফোনালাপ ফাঁস হয়ে যায়। এরপর ফের ফোনালাপ ফাঁসের শিকার হন মওদুদ আহমদ। গত ৮ই মে দুপুরে ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র সহ-সভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন তিনি। এরপর তাদের দুই মিনিট ৮ সেকেন্ডের কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস করে দেয়া হয়। ওই ফোনালাপে আবেদকে মওদুদ আহমদ বলেন, ‘এই বিএনপিকে দিয়ে হবে না। দলকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এখন জিয়ার বিএনপি লাগবে। জামায়াতের ব্যাপারেও বিএনপিকে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলেন তিনি।’ এই কথোপকথন ফাঁসের পর জোটের শরিক দলের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়। সর্বশেষ ফোনালাপ ফাঁসের শিকার হন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। গত ৩রা জুন যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রইসউদ্দিনের সঙ্গে প্রায় ২২ মিনিট দলের সফলতা-ব্যর্থতা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন তিনি। ৫ই জুন তাদের ওই কথোপকথন ফাঁস করে দেয় বাংলালিক ইউটিউব চ্যানেল। ওই ফোনালাপে খালেদা জিয়ার বিভিন্ন সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেন মাহবুবুর রহমান। ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির সঙ্গে খালেদা জিয়ার সাক্ষাৎ না করা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাক্ষাৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, হাসিনা-খালেদা টেলিফোন আলাপ, চীন, জামায়াত, সেনাবাহিনী, ২০১৯ সালের নির্বাচনেও বিএনপির ক্ষমতায় আসতে না পারা, সিনিয়র নেতাদের জামিনসহ নানা প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেন তিনি। ফোনালাপটি প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তোপের মুখে পড়েন কর্মীদের। এরপর থেকে জেনারেল মাহবুব অনেকটা আড়ালে চলে গেছেন। সভা-সমাবেশ ও দলীয় কর্মসূচিগুলোতেও তাকে দেখা যাচ্ছে না। এদিকে ফোনালাপটির ব্যাপারে জানতে চাইলে লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমি কিছু জানি না। অনেকের সঙ্গেই প্রতিদিন কথা হয়, খোলা মন নিয়েই কথা বলি। কিন্তু কে কখন ফোন রেকর্ড করে প্রকাশ করছে, এসব নিম্নশ্রেণীর আচরণ। ইদানীং তো চরিত্রহননে এসব করা হচ্ছে। এদিকে বিএনপি নেতাদের ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে দলটির স্থায়ী কমিটির দুজন নেতা ফোনে কথা বলতে রাজি হননি। সরাসরি বাসায় বা অফিসে গিয়ে কথা বলার আহ্বান জানান তারা। এ ব্যাপারে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্ট বার কাউন্সিলের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন মানবজমিনকে বলেন, আধুনিক যুগে প্রযুক্তির সাহায্যে টেলিফোনের কথাগুলো ট্র্যাপ করে সরকারের ইচ্ছা অনুযায়ী বানিয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রকাশ করছে। বিএনপিতে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা নেই- এমন কোন নেতা আছে বলে আমার মনে হয় না। যদি কোন ব্যতিক্রম থাকে তাহলে সাংগঠনিকভাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে সরকারের এ ধরনের কর্মকাণ্ডে বিএনপিতে কোন ধরনের প্রভাব পড়বে না।
No comments