অপহৃত রফিক খুনের লোমহর্ষক বর্ণনা -নেপথ্যে পরকীয়া by নুরুজ্জামান লাবু
প্রায়
বছর দেড়েক আগে নিখোঁজ হয়েছিল রফিক নামে এক যুবক। বন্ধুদের সঙ্গে গিয়েছিল
নারায়ণগঞ্জে একটি কাজে। বন্ধুরা ফিরে এলেও ফেরেনি রফিক। পরিবারের পক্ষ থেকে
বন্ধুদের বিরুদ্ধে করা হয়েছিল অপহরণ মামলা। পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করলেও
বের করতে পারেনি কোন তথ্য। আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে এসেছিল তারা। কিন্তু
শেষ রক্ষা হয়নি। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে গোয়েন্দা পুলিশ সেই রফিকের গুমরহস্য
উদ্ঘাটন করেছে। বন্ধুরাই তাকে শীতলক্ষ্যা নদীতে নিয়ে নৌকার মধ্যে গলা টিপে
হত্যার পর লাশ ফেলে দেয়। বন্ধু হয়ে বন্ধুকে হত্যার নিমর্ম এই ঘটনার নেপথ্যে
ছিল ত্রিমুখী প্রেমের চাঞ্চল্যকর ঘটনা। গোয়েন্দা পুলিশ এ ঘটনায় ঘাতক
রাসেল, নাসের, মুন্নী, মৌ ও দুলাল নামে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে। এদের
মধ্যে মুন্নী বাদে বাকি সবাই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাসেল ও রফিক ছিল বন্ধু। বাসাবো এলাকায় বাসা তাদের। একই এলাকার মৌ নামে এক তরুণীর সঙ্গে রফিকের প্রেম ছিল। কিন্তু রফিকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় মৌকে তার পরিবারের সদস্যরা বিয়ে দেয় রাসেলের সঙ্গে। মৌ স্বেচ্ছায় এই বিয়ে মেনে নেয়। কিন্তু এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি রফিক। সে বিয়ের পরও মৌয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করার চেষ্টা করতো। এতে কিছুটা বিরক্ত ছিল মৌ। বিষয়টি টের পেয়ে যায় রাসেলও। যে কোন উপায়ে রফিককে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে পরিকল্পনা করে সে। তার এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হয় বন্ধু নাসের, মৌয়ের বড় বোন মুন্নী ও খালু দুলাল। গত বছরের ১৩ই ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা মতো তারা মৌকে এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে আসে। পরে মৌকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে রাসেল তার বন্ধু রফিককে জানায়। রফিক, নাসের, দুলাল ও মুন্নী মিলে নারায়ণগঞ্জে মৌকে খুঁজতে যাওয়ার নাটক করে। তাদের টার্গেট ছিল ট্রেনে যেতে যেতে রফিককে কৌশলে গেটে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করবে। কিন্তু ট্রেনে ভিড় থাকায় সেই সুযোগ তারা পায়নি। পরে তারা নারায়ণগঞ্জ গিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে সন্ধ্যায় বাসাবোয় ফিরে আসে। কিন্তু রফিককে বাসায় ফেরার সুযোগ না দিয়ে তারা কৌশলে আবার নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। এবার দুলাল আর নাসেরকে সঙ্গে নিয়ে যায় রাসেল। তারা রাতের বেলায় দুলালের নির্দেশিত পথে সিএনজিযোগে শীতলক্ষ্যার একটি স্কুল ঘাটে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে তারা একটি নৌকা ভাড়া নেয়। রাসেল তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, নৌকায় উঠে মাঝ নদীতে যাওয়ার পর কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই রফিকের গলা টিপে ধরি। আমাকে সহযোগিতা করে খালু দুলাল ও বন্ধু নাসের। তিনজন মিলে শ্বাসরোধে রফিককে হত্যার পর লাশটি নদীতে ভাসিয়ে দেই। এই দৃশ্য দেখে মাঝি চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করে। তাকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখাই প্রথমে। পরে তাকে বুঝিয়ে বলি জানাজানি হলে তুমিও ফাঁসবে। পরে মাঝির হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে আরেকটি ঘাটে নেমে যাই আমরা। রাতেই সবাই বাড়িতে ফিরে আসি। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, রফিককে হত্যার পর লাশ নদীতে ভাসিয়ে নতুন একটি গল্প বানায় রাসেল ও তার সহযোগীরা। রফিকের পরিবারের সদস্যরা রফিকের খোঁজ জানতে চাইলে বলে নারায়ণগঞ্জ থেকে ও হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রফিকের পরিবারের সদস্যরা প্রথমে সরল মনে এই কথা বিশ্বাস করে। তারাও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানা ও হাসপাতালে খোঁজ করে। ঘটনার রাতেই বাসায় ফিরে আসে মৌ। পুরো ঘটনাটি গুমের ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু রাসেল, নাসের, দুলাল, মৌ ও মুন্নীর কথাবার্তায় সন্দেহজনক মনে হলে গত বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারি সবুজবাগ থানায় একটি মামলা (নং ২২) দায়ের করা হয়। মামলাটি সবুজবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করলেও আসামিদের কারও কাছ থেকে কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। পরে মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের এসি ইকবাল হোছাইনের টিম। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে তারা আসামিদের জামিন বাতিল করেন। পরে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা। একে একে সবাই স্বীকার করে হত্যার কথা। রফিকের সাবেক প্রেমিকা মৌও জানতো পুরো কাহিনী। হত্যাকাণ্ডের পুরো পরিকল্পনার সঙ্গে ছিল বড় বোন মুন্নী। তবে মুন্নী চতুর হওয়ায় নিজে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইকবাল হোছাইন বলেন, এই ঘটনাটির রহস্য উদ্ঘাটন করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। অনেক সময় পার হওয়ার কারণে আসামিদের মনোবল ছিল শক্ত। সাধারণ জিজ্ঞাসাবাদে সবাই বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। পরে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের সামনে হাজির করলে প্রথমে দুলাল বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। পরে একে একে সবাই হত্যার কথা স্বীকার করে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাসেল ও রফিক ছিল বন্ধু। বাসাবো এলাকায় বাসা তাদের। একই এলাকার মৌ নামে এক তরুণীর সঙ্গে রফিকের প্রেম ছিল। কিন্তু রফিকের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় মৌকে তার পরিবারের সদস্যরা বিয়ে দেয় রাসেলের সঙ্গে। মৌ স্বেচ্ছায় এই বিয়ে মেনে নেয়। কিন্তু এই বিয়ে মেনে নিতে পারেনি রফিক। সে বিয়ের পরও মৌয়ের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করার চেষ্টা করতো। এতে কিছুটা বিরক্ত ছিল মৌ। বিষয়টি টের পেয়ে যায় রাসেলও। যে কোন উপায়ে রফিককে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিতে পরিকল্পনা করে সে। তার এই পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত হয় বন্ধু নাসের, মৌয়ের বড় বোন মুন্নী ও খালু দুলাল। গত বছরের ১৩ই ফেব্রুয়ারি পরিকল্পনা মতো তারা মৌকে এক আত্মীয়ের বাসায় রেখে আসে। পরে মৌকে পাওয়া যাচ্ছে না বলে রাসেল তার বন্ধু রফিককে জানায়। রফিক, নাসের, দুলাল ও মুন্নী মিলে নারায়ণগঞ্জে মৌকে খুঁজতে যাওয়ার নাটক করে। তাদের টার্গেট ছিল ট্রেনে যেতে যেতে রফিককে কৌশলে গেটে নিয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে হত্যা করবে। কিন্তু ট্রেনে ভিড় থাকায় সেই সুযোগ তারা পায়নি। পরে তারা নারায়ণগঞ্জ গিয়ে এদিক-সেদিক ঘুরে সন্ধ্যায় বাসাবোয় ফিরে আসে। কিন্তু রফিককে বাসায় ফেরার সুযোগ না দিয়ে তারা কৌশলে আবার নারায়ণগঞ্জে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। এবার দুলাল আর নাসেরকে সঙ্গে নিয়ে যায় রাসেল। তারা রাতের বেলায় দুলালের নির্দেশিত পথে সিএনজিযোগে শীতলক্ষ্যার একটি স্কুল ঘাটে গিয়ে পৌঁছে। সেখানে তারা একটি নৌকা ভাড়া নেয়। রাসেল তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানায়, নৌকায় উঠে মাঝ নদীতে যাওয়ার পর কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই রফিকের গলা টিপে ধরি। আমাকে সহযোগিতা করে খালু দুলাল ও বন্ধু নাসের। তিনজন মিলে শ্বাসরোধে রফিককে হত্যার পর লাশটি নদীতে ভাসিয়ে দেই। এই দৃশ্য দেখে মাঝি চিৎকার দেয়ার চেষ্টা করে। তাকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখাই প্রথমে। পরে তাকে বুঝিয়ে বলি জানাজানি হলে তুমিও ফাঁসবে। পরে মাঝির হাতে ৫০০ টাকা দিয়ে আরেকটি ঘাটে নেমে যাই আমরা। রাতেই সবাই বাড়িতে ফিরে আসি। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, রফিককে হত্যার পর লাশ নদীতে ভাসিয়ে নতুন একটি গল্প বানায় রাসেল ও তার সহযোগীরা। রফিকের পরিবারের সদস্যরা রফিকের খোঁজ জানতে চাইলে বলে নারায়ণগঞ্জ থেকে ও হারিয়ে গেছে। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যায়নি। রফিকের পরিবারের সদস্যরা প্রথমে সরল মনে এই কথা বিশ্বাস করে। তারাও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানা ও হাসপাতালে খোঁজ করে। ঘটনার রাতেই বাসায় ফিরে আসে মৌ। পুরো ঘটনাটি গুমের ঘটনা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু রাসেল, নাসের, দুলাল, মৌ ও মুন্নীর কথাবার্তায় সন্দেহজনক মনে হলে গত বছরের ২১শে ফেব্রুয়ারি সবুজবাগ থানায় একটি মামলা (নং ২২) দায়ের করা হয়। মামলাটি সবুজবাগ থানা পুলিশ তদন্ত করলেও আসামিদের কারও কাছ থেকে কোন তথ্য উদ্ধার করতে পারেনি। পরে মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে কাজ শুরু করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের এসি ইকবাল হোছাইনের টিম। দীর্ঘ অনুসন্ধান শেষে তারা আসামিদের জামিন বাতিল করেন। পরে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা। একে একে সবাই স্বীকার করে হত্যার কথা। রফিকের সাবেক প্রেমিকা মৌও জানতো পুরো কাহিনী। হত্যাকাণ্ডের পুরো পরিকল্পনার সঙ্গে ছিল বড় বোন মুন্নী। তবে মুন্নী চতুর হওয়ায় নিজে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়নি।
মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইকবাল হোছাইন বলেন, এই ঘটনাটির রহস্য উদ্ঘাটন করতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে। অনেক সময় পার হওয়ার কারণে আসামিদের মনোবল ছিল শক্ত। সাধারণ জিজ্ঞাসাবাদে সবাই বিষয়টি এড়িয়ে গেছে। পরে নানা তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে তাদের সামনে হাজির করলে প্রথমে দুলাল বিষয়টি স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। পরে একে একে সবাই হত্যার কথা স্বীকার করে।
No comments