সিটি নির্বাচনের অনিয়ম স্বচ্ছতার সঙ্গে তদন্ত করতে হবে -ওয়েন্ডি শারম্যান
সদ্য
সমাপ্ত ৩ সিটি নির্বাচনের যাবতীয় অনিয়ম-কারচুপি তদন্তের জোর তাগিদ দিয়েছেন
ঢাকা সফর করে যাওয়া মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের রাজনীতি বিভাগের আন্ডার
সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারম্যান। বাংলাদেশের সঙ্গে চতুর্থ পার্টনারশিপ সংলাপের
সমাপনীতে শুক্রবার পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ
তাগিদ দেন। বলেন, অবশ্যই এসব অভিযোগ তদন্ত করতে হবে। আগামীর যে কোন
নির্বাচন তথা গণতন্ত্রের জন্য উত্থাপিত অভিযোগগুলোর তদন্ত করা
‘গুরুত্বপূর্ণ’। ঢাকা-ওয়াশিংটন সম্পর্ক জোরদারে বাৎসরিক আলোচনা পার্টনারশিপ
ডায়ালগ-এর এবারের দু’দিনের আয়োজন ছিল রাজধানীর রমনাস্থ রাষ্ট্রীয় অতিথি
ভবন মেঘনায়। মহাপরিচালক বা যুগ্ম সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাদের আলোচনার মধ্য
দিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া ওই আয়োজনে সমাপনী দিনে পররাষ্ট্র সচিব মো.
শহীদুল হক ও মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি যৌথভাবে সভাপতিত্ব করেন। তারা নিজ
নিজ দলের নেতৃত্বে ছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের পার্টনারশিপ আরও
জোরদার করার কর্ম-কৌশল নির্ধারণী ওই আলোচনা শেষে প্রতিনিধি দলের নেতাদ্বয়
সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। সেখানে মূল আয়োজনের আউটকাম জানানো ছাড়াও সামপ্রতিক
রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তারা।
২৮শে এপ্রিলের বহুল আলোচিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, আজ সকালে (শুক্রবার) ও গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় আমরা নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা করেছি। ভোটে অনিয়মের ব্যাপারে স্পষ্টত সবাই ভীষণ উদ্বিগ্ন, এটা আমাকে অবশ্যই বলতে হবে। তিনি বলেন, ভোট চলাকালে বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। আমি মনে করি, নির্বাচনে অনিয়মগুলোর ব্যাপারে কিভাবে স্বচ্ছ তদন্ত করা যায়, এ ব্যাপারে সবার লক্ষ্য করা প্রয়োজন। গণতন্ত্রের জন্য ওই অনিয়ম তদন্তগুলোর তদন্ত করা খুব জরুরি। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দেয়া সূচনা বক্তব্যেও সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপি ও ভোটের মাঝখানে বিএনপির নির্বাচন বর্জনে আমরা হতাশ হয়েছি। এখন সব দলের সমঝোতায় এটির দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানের দিকে আমরা নজর রাখছি, যাতে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। ডায়ালগে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নে মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান জানান, আলোচনায় দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গও এসেছিল। এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। যে ইস্যুতে ডায়ালগ সেই ঢাকা-ওয়াশিংটন পার্টনারশিপ বা অংশীদারিত্বের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে শারম্যান বলেন, এটি এখন যথেষ্ট বিস্তৃত ও গভীর। এটি কেবল দুই দেশ নয়, বিশ্ব সমপ্রদায়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার বিষয়টি সামনে আনেন। বলেন, আমাদের বিশ্বাস, দক্ষিণ অঞ্চলকে বদলে দেয়ার ‘প্রায় অসীম সম্ভাবনা’ বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। বাংলাদেশের সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে যুক্তরাষ্ট্র অংশীদার হতে পেরে আনন্দিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনকে ‘গ্রহণযোগ্য’ বলে মনে করে না যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি মনে করে চলমান দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসন এবং শান্তি ফেরাতে সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জরুরি। নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ওই মনোভাবের কারণে বাংলাদেশের সম্পর্কে কিছুটা ‘ভাটা’ পড়েছে। এর মধ্যে সদ্য সমাপ্ত ২৮শে এপ্রিল সিটি নির্বাচন নিয়েও সরকারের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য আসছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারিও ভবিষ্যতের জন্য সিটি নির্বাচনের অনিয়মগুলোর অভিযোগের তাগিদ দিলেন। রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতভিন্নতার প্রসঙ্গ আসে সংবাদ সম্মেলনে। জবাবে শারম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। তবে কিসে আমাদের ঐক্যবদ্ধ রেখেছে তা মনে রাখতে হবে। এ সময় তিনি শিশুদের পুষ্টি ও শিক্ষায় প্রতিশ্রুতি, নারী ও মেয়ে শিশুদের জন্য সুযোগ সমপ্রসারণে অনুরাগ, ধর্মীয় ও নৃগোষ্ঠীগত বৈচিত্র্য ও সহনশীলতা এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিখুঁত করার অন্তহীন প্রক্রিয়ার প্রতি যৌথ দায়িত্বের কথা তুলে ধরেন শারম্যান। তবে দু’দেশের মধ্যেকার ভিন্নতাগুলোর বিষয়ে মুখ খুলেননি মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। ঢাকায় আসার বিষয়ে তিনি বলেন, “উন্নয়ন, বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সংহতিতে সাধারণ লক্ষ্যসমূহ এগিয়ে নিতে দুটি উদার, বহুত্ববাদী দেশের একসঙ্গে কাজ করার উপায়গুলো খুঁজতে আলোচনার জন্য আমি এখানে এসেছি। আমরা ওই সব লক্ষ্যে অনেক অগ্রগতি করেছি। বিশেষ করে উন্নয়নে, যেখানে বাংলাদেশের জোর পদচারণা রয়েছে। তিনি বলেন, “দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিকে যুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে আয় ও জীবনযাত্রার উন্নয়নে আমরা আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। “আমরা আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রও বৃদ্ধি করছি। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় যুদ্ধ জাহাজ কোস্টগার্ড কার্টার আগামী ৬ই মে ক্যালিফোর্নিয়ায় বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধানের হাতে তা তুলে দেবেন। নারী ও শিশুর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীকে ‘অপ্রতিরোধ্য সৈনিক’ আখ্যা দেন ওয়েন্ডি শারম্যান। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপালে ত্রাণ ও চিকিৎসা দল পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এবারের অংশীদারিত্ব সংলাপ ছিল খুবই গঠনমূলক। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক
ওদিকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) ওয়েন্ডি শারম্যান। শুক্রবার বিকালে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিটি নির্বাচনে কারচুপিসহ দেশের চলমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণগুলো ওয়েন্ডি শারম্যানের কাছে তুলে ধরেছেন। বৈঠকের পর বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্কের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস অন্তর সরকারের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ঢাকায় আসেন। তাদের এ সফরের অংশ হিসেবে ওয়েন্ডি শারম্যান খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারির আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনায় দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি কোন কিছুই বাদ যায়নি। ড. মঈন খান বলেন, ওয়েন্ডি শারম্যান এমন এক সময়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন, যেই সময়টি বাংলাদেশের রাজনীতি গতিধারার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনটি সিটি নির্বাচন হয়ে গেছে। গণমাধ্যম সবকিছু জানিয়ে দিয়েছে। ওই নির্বাচনের রহস্য কারও অজানা নয়। খালেদা জিয়ার সঙ্গে শারম্যানের বৈঠকে স্বাভাবিকভাবেই এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বৈঠকে ওই নির্বাচন নিয়ে কী বলা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা (ওয়েন্ডি শারম্যান) কি বলেছেন, তা তারা বলবেন। যা দূতাবাস থেকে বিবৃতি আকারে দিয়ে থাকে। আমরা এ বিষয়ে কিছু বলছি না। এ বিষয়ে আমার কোন কিছু বলা নীতিগতভাবে ঠিক হবে না। সিটি নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্বেগ বিবৃতিতে জানিয়েছে। বিএনপি নেতারা জানান, বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের দমননীতি, স্থানীয় সরকারের সদ্য শেষ হওয়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে সরকার-নির্বাচন কমিশন-শাসকদলের যৌথ উদ্যোগে ভোট কারচুপি, বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের ওপর সরকারের নিপীড়ন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে বরখাস্ত করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়াবলীর ওপর তথ্য প্রমাণাদিও মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির কাছে উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ এবং ওয়েন্ডি শারম্যানের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট অংশ নেন। তবে সফররত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বৈঠকে ছিলেন না। এর আগে বিকাল ৪টা ২৭ মিনিটে গুলশানের ৭৯ নং সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসা ‘ফিরোজা’য় যান ওয়েন্ডি শারম্যান ও মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। দীর্ঘ ৪০ মিনিট পর ৫টা ৭ মিনিটে তারা খালেদা জিয়ার বাসভবন ত্যাগ করেন।
জিএসপি ফেরাতে শারম্যানকে রওশনের অনুরোধ: এদিকে ঢাকা সফরকালে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারম্যান। শুক্রবার বিকালে সংসদ নেতার গুলশানস্থ বাসভবনে যান তিনি। সেখানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করতে শারম্যানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানান রওশন এরশাদ। এ সময় উন্নয়ন ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তাসহ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যুসহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেন বিরোধী নেতা। বলেন, গার্মেন্টস সেক্টর আমাদের দেশে অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক হাতিয়ার। তাই এ সেক্টরকে বেগবান রাখার জন্য জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করা খুবই জরুরি। জবাবে ওয়েন্ডি শারম্যান জিএসপি সুবিধা বিবেচনা করা হবে বলে বিরোধীদলীয় নেতাকে আশ্বাস দেন বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস খবর প্রকাশ করেছে। ওই খবরে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নির্ভর করছে বাংলাদেশের জনগণের ওপর। জনগণই ঠিক করবে তাদের কি করা উচিত। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। বিরোধী নেতার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতার বৈঠকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, ফখরুল ইমাম এমপি, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, সেলিম উদ্দিন এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট, মার্কিন দূতাবাসে নিযুক্ত রাজনৈতিক কর্মকর্তা ক্যাথলিন গিবিলিসকো উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রীর বৈঠকে ‘আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি’ প্রসঙ্গ: এদিকে পার্টনারশিপ ডায়ালগ শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন ওয়েন্ডি শারম্যান। পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়- বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আন্ডার সেক্রেটারিকে অনুরোধ করেন মন্ত্রী। জবাবে প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে কাজ চলছে বলে জানান শারম্যান। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠককালে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- সহিংস উগ্রপন্থা দমন নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশগ্রহণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বৈঠক করার জন্য মাহমুদ আলীকে ধন্যবাদ জানান শারম্যান। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করে আগামীতেও বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জন কেরির সঙ্গে তার বৈঠকের পর ‘দুই দেশের সম্পর্কে আস্থা বাড়ার লক্ষণ দেখা গেছে’। ওয়াশিংটনে বৈঠককালে জন কেরির বাংলাদেশ সফরের আগ্রহের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘দুই পক্ষের সুবিধামতো সময়ে’ কেরিকে ঢাকায় অভ্যর্থনা জানাতে তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটও বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন মাত্রা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন মাহমুদ আলী। এ প্রসঙ্গে শারম্যান বলেন, নয়া দিল্লি থেকে সরাসরি ঢাকায় এসে তিনি বাংলাদেশ-ভারত উষ্ণ সম্পর্কের ‘ধারণা’ পেয়েছেন। মিয়ানমারের শরণার্থী এবং বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের অবৈধভাবে বসবাসের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে এলেও এ বিষয়টিতে প্রত্যাশিত অগ্রগতি আসছে না বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদানের কথা শারম্যান স্বীকার করেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
২৮শে এপ্রিলের বহুল আলোচিত সিটি করপোরেশন নির্বাচনবিষয়ক এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, আজ সকালে (শুক্রবার) ও গতকাল (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় আমরা নির্বাচনের ব্যাপারে আলোচনা করেছি। ভোটে অনিয়মের ব্যাপারে স্পষ্টত সবাই ভীষণ উদ্বিগ্ন, এটা আমাকে অবশ্যই বলতে হবে। তিনি বলেন, ভোট চলাকালে বিরোধী দলের নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন। আমি মনে করি, নির্বাচনে অনিয়মগুলোর ব্যাপারে কিভাবে স্বচ্ছ তদন্ত করা যায়, এ ব্যাপারে সবার লক্ষ্য করা প্রয়োজন। গণতন্ত্রের জন্য ওই অনিয়ম তদন্তগুলোর তদন্ত করা খুব জরুরি। যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দেয়া সূচনা বক্তব্যেও সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। বলেন, নির্বাচনে অনিয়ম-কারচুপি ও ভোটের মাঝখানে বিএনপির নির্বাচন বর্জনে আমরা হতাশ হয়েছি। এখন সব দলের সমঝোতায় এটির দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানের দিকে আমরা নজর রাখছি, যাতে বাংলাদেশের মানুষ শান্তিপূর্ণ উপায়ে তাদের মতামত প্রকাশ করতে পারে। ডায়ালগে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নে মার্কিন প্রতিনিধি দলের প্রধান জানান, আলোচনায় দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশের সিটি করপোরেশন নির্বাচন প্রসঙ্গও এসেছিল। এ নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। যে ইস্যুতে ডায়ালগ সেই ঢাকা-ওয়াশিংটন পার্টনারশিপ বা অংশীদারিত্বের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে শারম্যান বলেন, এটি এখন যথেষ্ট বিস্তৃত ও গভীর। এটি কেবল দুই দেশ নয়, বিশ্ব সমপ্রদায়ের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার বিষয়টি সামনে আনেন। বলেন, আমাদের বিশ্বাস, দক্ষিণ অঞ্চলকে বদলে দেয়ার ‘প্রায় অসীম সম্ভাবনা’ বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। বাংলাদেশের সেই লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে যুক্তরাষ্ট্র অংশীদার হতে পেরে আনন্দিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনকে ‘গ্রহণযোগ্য’ বলে মনে করে না যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি মনে করে চলমান দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসন এবং শান্তি ফেরাতে সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জরুরি। নির্বাচন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের ওই মনোভাবের কারণে বাংলাদেশের সম্পর্কে কিছুটা ‘ভাটা’ পড়েছে। এর মধ্যে সদ্য সমাপ্ত ২৮শে এপ্রিল সিটি নির্বাচন নিয়েও সরকারের অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত বক্তব্য আসছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারিও ভবিষ্যতের জন্য সিটি নির্বাচনের অনিয়মগুলোর অভিযোগের তাগিদ দিলেন। রাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের মতভিন্নতার প্রসঙ্গ আসে সংবাদ সম্মেলনে। জবাবে শারম্যান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের মধ্যে অনেক বিষয়ে মতপার্থক্য আছে। তবে কিসে আমাদের ঐক্যবদ্ধ রেখেছে তা মনে রাখতে হবে। এ সময় তিনি শিশুদের পুষ্টি ও শিক্ষায় প্রতিশ্রুতি, নারী ও মেয়ে শিশুদের জন্য সুযোগ সমপ্রসারণে অনুরাগ, ধর্মীয় ও নৃগোষ্ঠীগত বৈচিত্র্য ও সহনশীলতা এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিখুঁত করার অন্তহীন প্রক্রিয়ার প্রতি যৌথ দায়িত্বের কথা তুলে ধরেন শারম্যান। তবে দু’দেশের মধ্যেকার ভিন্নতাগুলোর বিষয়ে মুখ খুলেননি মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি। ঢাকায় আসার বিষয়ে তিনি বলেন, “উন্নয়ন, বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক সংহতিতে সাধারণ লক্ষ্যসমূহ এগিয়ে নিতে দুটি উদার, বহুত্ববাদী দেশের একসঙ্গে কাজ করার উপায়গুলো খুঁজতে আলোচনার জন্য আমি এখানে এসেছি। আমরা ওই সব লক্ষ্যে অনেক অগ্রগতি করেছি। বিশেষ করে উন্নয়নে, যেখানে বাংলাদেশের জোর পদচারণা রয়েছে। তিনি বলেন, “দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বর্ধনশীল অর্থনীতিকে যুক্ত করার মাধ্যমে বাংলাদেশে আয় ও জীবনযাত্রার উন্নয়নে আমরা আপনাদের সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী। “আমরা আমাদের নিরাপত্তা সহযোগিতার ক্ষেত্রও বৃদ্ধি করছি। যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় যুদ্ধ জাহাজ কোস্টগার্ড কার্টার আগামী ৬ই মে ক্যালিফোর্নিয়ায় বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করবে। ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধানের হাতে তা তুলে দেবেন। নারী ও শিশুর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রীকে ‘অপ্রতিরোধ্য সৈনিক’ আখ্যা দেন ওয়েন্ডি শারম্যান। ভূমিকম্প বিধ্বস্ত নেপালে ত্রাণ ও চিকিৎসা দল পাঠানোর জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদও জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এবারের অংশীদারিত্ব সংলাপ ছিল খুবই গঠনমূলক। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল এবং ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক
ওদিকে আমাদের স্টাফ রিপোর্টার জানান, বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটের শীর্ষ নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেছেন ঢাকায় সফররত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) ওয়েন্ডি শারম্যান। শুক্রবার বিকালে খালেদা জিয়ার গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজায়’ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সিটি নির্বাচনে কারচুপিসহ দেশের চলমান অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণগুলো ওয়েন্ডি শারম্যানের কাছে তুলে ধরেছেন। বৈঠকের পর বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের পারস্পরিক সম্পর্কের চুক্তি অনুযায়ী প্রতি ছয় মাস অন্তর সরকারের আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ঢাকায় আসেন। তাদের এ সফরের অংশ হিসেবে ওয়েন্ডি শারম্যান খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। মঈন খান সাংবাদিকদের বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারির আলোচনা হয়েছে। ওই আলোচনায় দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক পরিস্থিতি কোন কিছুই বাদ যায়নি। ড. মঈন খান বলেন, ওয়েন্ডি শারম্যান এমন এক সময়ে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন, যেই সময়টি বাংলাদেশের রাজনীতি গতিধারার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তিনটি সিটি নির্বাচন হয়ে গেছে। গণমাধ্যম সবকিছু জানিয়ে দিয়েছে। ওই নির্বাচনের রহস্য কারও অজানা নয়। খালেদা জিয়ার সঙ্গে শারম্যানের বৈঠকে স্বাভাবিকভাবেই এ বিষয়গুলো উঠে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বৈঠকে ওই নির্বাচন নিয়ে কী বলা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা (ওয়েন্ডি শারম্যান) কি বলেছেন, তা তারা বলবেন। যা দূতাবাস থেকে বিবৃতি আকারে দিয়ে থাকে। আমরা এ বিষয়ে কিছু বলছি না। এ বিষয়ে আমার কোন কিছু বলা নীতিগতভাবে ঠিক হবে না। সিটি নির্বাচন নিয়ে ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র তার উদ্বেগ বিবৃতিতে জানিয়েছে। বিএনপি নেতারা জানান, বৈঠকে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সরকারের দমননীতি, স্থানীয় সরকারের সদ্য শেষ হওয়া ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে সরকার-নির্বাচন কমিশন-শাসকদলের যৌথ উদ্যোগে ভোট কারচুপি, বিভিন্ন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত বিরোধী দলের প্রতিনিধিদের ওপর সরকারের নিপীড়ন, তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে বরখাস্ত করার বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়াবলীর ওপর তথ্য প্রমাণাদিও মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারির কাছে উপস্থাপন করা হয়। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ এবং ওয়েন্ডি শারম্যানের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট অংশ নেন। তবে সফররত দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বৈঠকে ছিলেন না। এর আগে বিকাল ৪টা ২৭ মিনিটে গুলশানের ৭৯ নং সড়কে বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসা ‘ফিরোজা’য় যান ওয়েন্ডি শারম্যান ও মার্শিয়া স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। দীর্ঘ ৪০ মিনিট পর ৫টা ৭ মিনিটে তারা খালেদা জিয়ার বাসভবন ত্যাগ করেন।
জিএসপি ফেরাতে শারম্যানকে রওশনের অনুরোধ: এদিকে ঢাকা সফরকালে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি ওয়েন্ডি শারম্যান। শুক্রবার বিকালে সংসদ নেতার গুলশানস্থ বাসভবনে যান তিনি। সেখানে অনুষ্ঠিত বৈঠকে জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করতে শারম্যানের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি আহ্বান জানান রওশন এরশাদ। এ সময় উন্নয়ন ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তাসহ দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক ইস্যুসহ অন্যান্য বিভিন্ন বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের সহযোগিতা কামনা করেন বিরোধী নেতা। বলেন, গার্মেন্টস সেক্টর আমাদের দেশে অন্যতম শক্তিশালী অর্থনৈতিক হাতিয়ার। তাই এ সেক্টরকে বেগবান রাখার জন্য জিএসপি সুবিধা পুনর্বহাল করা খুবই জরুরি। জবাবে ওয়েন্ডি শারম্যান জিএসপি সুবিধা বিবেচনা করা হবে বলে বিরোধীদলীয় নেতাকে আশ্বাস দেন বলে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা বাসস খবর প্রকাশ করেছে। ওই খবরে আরও বলা হয়েছে, মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেছেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নির্ভর করছে বাংলাদেশের জনগণের ওপর। জনগণই ঠিক করবে তাদের কি করা উচিত। এ বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বাত্মক সহযোগিতা থাকবে বলেও তিনি জানিয়েছেন। বিরোধী নেতার সঙ্গে মার্কিন প্রতিনিধি দলের নেতার বৈঠকে বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী এমপি, ফখরুল ইমাম এমপি, নূর-ই-হাসনা লিলি চৌধুরী এমপি, সেলিম উদ্দিন এমপি, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট, মার্কিন দূতাবাসে নিযুক্ত রাজনৈতিক কর্মকর্তা ক্যাথলিন গিবিলিসকো উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রীর বৈঠকে ‘আসামি প্রত্যর্পণ চুক্তি’ প্রসঙ্গ: এদিকে পার্টনারশিপ ডায়ালগ শেষে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবনেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন ওয়েন্ডি শারম্যান। পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে বলা হয়- বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে অপরাধী প্রত্যর্পণ চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে আন্ডার সেক্রেটারিকে অনুরোধ করেন মন্ত্রী। জবাবে প্রক্রিয়াটি এগিয়ে নিতে কাজ চলছে বলে জানান শারম্যান। এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ কাজ করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠককালে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান মন্ত্রী। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়- সহিংস উগ্রপন্থা দমন নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশগ্রহণ এবং যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির সঙ্গে বৈঠক করার জন্য মাহমুদ আলীকে ধন্যবাদ জানান শারম্যান। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির প্রশংসা করে আগামীতেও বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জন কেরির সঙ্গে তার বৈঠকের পর ‘দুই দেশের সম্পর্কে আস্থা বাড়ার লক্ষণ দেখা গেছে’। ওয়াশিংটনে বৈঠককালে জন কেরির বাংলাদেশ সফরের আগ্রহের কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ‘দুই পক্ষের সুবিধামতো সময়ে’ কেরিকে ঢাকায় অভ্যর্থনা জানাতে তার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আঞ্চলিক প্রেক্ষাপটও বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে নতুন মাত্রা দিয়েছে বলে মন্তব্য করেন মাহমুদ আলী। এ প্রসঙ্গে শারম্যান বলেন, নয়া দিল্লি থেকে সরাসরি ঢাকায় এসে তিনি বাংলাদেশ-ভারত উষ্ণ সম্পর্কের ‘ধারণা’ পেয়েছেন। মিয়ানমারের শরণার্থী এবং বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের অবৈধভাবে বসবাসের বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসে। বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে মিয়ানমারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টা চালিয়ে এলেও এ বিষয়টিতে প্রত্যাশিত অগ্রগতি আসছে না বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। মিয়ানমারের শরণার্থীদের আশ্রয় দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবদানের কথা শারম্যান স্বীকার করেন বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
No comments