রুনা লায়লাকে নিয়ে পালাতেন নচিকেতা! by আহমেদ মুনির
সংগীতজগতের তারকা হলেও নচিকেতা এখনো নিজেকে কলকাতার দত্তবাগানের পাড়ার ছেলে বলেই ভাবেন l সৌরভ দাশ |
ভারতীয়
কণ্ঠশিল্পী নচিকেতার জন্ম কলকাতায় হলেও বাপ–দাদার ভিটা বরিশালে। তাই
বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর বিশেষ অনুভূতি থাকারই কথা। তবে কেবল বরিশাল নয়, এ দেশের
প্রতি গভীর অনুরাগের পেছনের আরেকটা বড় কারণ রুনা লায়লাও। নচিকেতা সেই
ছেলেবেলায় গান শুনে প্রেমে পড়েছিলেন তাঁর। রুনা লায়লার বয়স কম হলে নাকি
তাঁকে নিয়ে পালিয়েও যেতেন।
নীল রঙের খোলা শার্টের নিচে উঁকি দিচ্ছে লাল গেঞ্জি। এলোমেলো চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। হতে জ্বলছে পাতার বিড়ি। কবির সুমনের পর ‘জীবনমুখী’ ধারার শিল্পী হিসেবে পরিচিতি জুটেছিল নব্বইয়ের দশকেই। সেই নচিকেতা চক্রবর্তী নিজেকে সাধারণ মানুষ ভাবতেই পছন্দ করেন। এখনো কলকাতার দত্তবাগানের ছেলেই রয়ে গেছেন। পাড়ার রকে হরদম আড্ডাও দেন।
গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিনিয়রস ক্লাবে এ বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া গায়ক চন্দন সিনহার সংবর্ধনা উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গান গাইলেন নচিকেতা। তার আগে সকালে ঘণ্টা দেড়েকের জমজমাট আড্ডা হলো। গান, লেখালেখি, চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক, রাজনীতি—সব প্রসঙ্গই উঠে এল।
কিন্তু সব ছাপিয়ে এল নীলাঞ্জনার প্রসঙ্গ। তিন–তিনটে সিক্যুয়েল গেয়েছেন নীলাঞ্জনাকে নিয়ে। ‘হাজার কবিতা’ লিখতে হয়েছে যাকে নিয়ে, কে সেই মানুষটি?
প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে সপ্রতিভ নচিকেতার জবাব, ‘বলা যাবে না, বলব না।’ একটু থেমে বললেন, ‘একটা উর্দু শের আছে, যার অর্থ হলো সুন্দর জিনিস থেকে দূরে থাকাই ভালো। সুতরাং, এই নীলাঞ্জনা থেকে দূরেই থাকুন। হা হা হা...’
‘নীলাঞ্জনা’ গানটি অবলম্বনে যে এ দেশের টিভি চ্যানেলে ছয় পর্বের ধারাবাহিক নাটক হয়েছে, এই তথ্যও অজানা তাঁর। শুনে অবাক হলেন। বললেন, ‘ভালো তো!’
প্রসঙ্গ এড়িয়ে দত্তবাগানের কথায় ফিরে যান। বললেন, ‘আমার বাড়িতে সংগীতচর্চার জন্য আলাদা কোনো রুম নেই। পাড়ার রকে বসেই অনেক গান রচিত হয়েছে। পাড়ায় পালা করে আমরা নাইট ডিউটি দিতাম। বিখ্যাত হওয়ার পর এখনো তেমনই আছি।’
নীলাঞ্জনাও কী দত্তবাগানেরই বাসিন্দা?
এবার আর এড়াতে পারলেন না। বললেন, ‘শুধু এটুকুই বলব কিন্তু। হ্যাঁ, নীলাঞ্জনা দত্তবাগানেরই মেয়ে।’
১৯৯৩ সালে এই বেশ ভালো আছি অ্যালবাম বের হওয়ার পরপরই নচিকেতার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গত বছর পর্যন্ত ১৮টি একক অ্যালবাম বেরিয়েছে। মিশ্র অ্যালবাম আছে ১১টির মতো। এ ছাড়া চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক তো আছেই। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হঠাৎ বৃষ্টি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। সেই চলচ্চিত্রে তাঁর গাওয়া ‘একদিন স্বপ্নের দিন’ শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরেছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে একঝলক নতুন হাওয়াও এনে দিয়েছে। কণ্ঠ দিয়েছেন বিশাল ভরদ্বাজ পরিচালিত বলিউডের ওমকারাসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। এর পরও প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার কোনো ভাবনা নেই তাঁর। বললেন, ‘প্লেব্যাক একদম ভালো লাগে না। আসলে ফরমায়েশি গান পছন্দ নয়। তা ছাড়া এসব মিষ্টি ভালোবাসার চটুল গান থেকে দূরেই থাকতে চাই।’
এই বেশ ভালো আছি অ্যালবামের আগের নচিকেতা আর আজকের নচিকেতার মধ্যে কোনো তফাত আছে? ‘আছেই তো। তখন বয়স ছিল মাত্র ২৮ বছর। প্রতিবাদ করার সাহস ছিল। আর এখন সাহসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অভিজ্ঞতা আর পরিপক্বতা।’
কেমন মানুষ নচিকেতা? প্রশ্ন করতেই ভ্রু কোঁচকালেন, ‘এই প্রশ্ন অনেকেই করে। আসলে আমি বেশ অহংকারী।’ বলেই একচোট হাসলেন।
কবির সুমন, অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা—এই তিন শিল্পীর গান একই সময়ে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছে। নচিকেতা কেন বিশিষ্ট, সে ব্যাখা দিয়ে গিয়ে বললেন, ‘কবির সুমন বা অঞ্জন দত্ত গুণী শিল্পী। তবে তাঁরা আমার মতো নন। আমি জনপ্রিয় ধারার গায়ক। হিন্দি গানের দাপটের সময় বাংলা গানকে জনপ্রিয় করেছি। আমি এই ধারার গান প্রতিষ্ঠিত করেছি। এখন যাঁরা গাইছেন অনুপম রায় বা অরিজিৎ সিং, তাঁরাও আমার গান শুনেছেন। আমার শো দেখে বড় হয়েছেন।’
নচিকেতার অনেক গানের মধ্যে গল্প খঁুজে পাওয়া যায়। বেশ কিছু গল্প লিখেছেনও। বেরিয়েছে ক্যকটাস ও জন্মদিনের রাত নামের দুটো উপন্যাস। লেখালিখির প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘আসলে আমি খুব অলস। যে সব গল্প মাথায় ঘোরে সেসব আর লেখার ফুসরত হয় না। আমি সেসব গানে ঢুকিয়ে দিই।’
জ্যাক লন্ডন, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং হুমায়ুন আহমেদ তাঁর ভীষণ প্রিয়। হুমায়ুন বেঁচে থাকতে কেন দেখা করনেনি এ নিয়ে আফসোস হয় খুব। তাঁর ধারণা হুমায়ুনের ‘মিসির আলী’ চরিত্রটি অমর হয়ে থাকবে।
সলিল চৌধুরী, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের পাশাপাশি বব ডিলান ও মাইকেল জ্যাকসনের গান তাঁর খুব ভালো লাগে। তবে এদের বাইরে তিনি যাঁর বড় ভক্ত তাঁর নাম রুনা লায়লা। উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘রুনাজি সুফি, গজল, রোমান্টিক সব ধারার গানই করেন। কী অপূর্ব তাঁর গলা। আরেকটু আগে জন্মালে নিশ্চিত তাঁকে নিয়ে আমি পালিয়ে যেতাম।’
কেবল রুনা লায়লা নন, হুট করে যে কোনো মেয়েরই প্রেমে পড়ে যান নচিকেতা। ঘন ঘন প্রেমে পড়া তাঁর স্বাভাব। তবে হৃদয়ের সবচেয়ে বড় লেনদেনটা হয় স্ত্রী রুমকির সঙ্গেই।
একজন শিল্পীর সব চেয়ে বড় সম্পদ কী? এ কথার উত্তর দিতে গিয়ে একটু ভাবলেন। এরপর বললেন, ‘বিশ্বাস। শিল্পী নিজে যা করছেন তার প্রতি বিশ্বাস থাকাটা খুব জরুরি। এটাই তাকে বাঁচিয়ে রাখে।’
নীল রঙের খোলা শার্টের নিচে উঁকি দিচ্ছে লাল গেঞ্জি। এলোমেলো চুল, মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। হতে জ্বলছে পাতার বিড়ি। কবির সুমনের পর ‘জীবনমুখী’ ধারার শিল্পী হিসেবে পরিচিতি জুটেছিল নব্বইয়ের দশকেই। সেই নচিকেতা চক্রবর্তী নিজেকে সাধারণ মানুষ ভাবতেই পছন্দ করেন। এখনো কলকাতার দত্তবাগানের ছেলেই রয়ে গেছেন। পাড়ার রকে হরদম আড্ডাও দেন।
গত ৯ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিনিয়রস ক্লাবে এ বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া গায়ক চন্দন সিনহার সংবর্ধনা উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গান গাইলেন নচিকেতা। তার আগে সকালে ঘণ্টা দেড়েকের জমজমাট আড্ডা হলো। গান, লেখালেখি, চলচ্চিত্রের প্লেব্যাক, রাজনীতি—সব প্রসঙ্গই উঠে এল।
কিন্তু সব ছাপিয়ে এল নীলাঞ্জনার প্রসঙ্গ। তিন–তিনটে সিক্যুয়েল গেয়েছেন নীলাঞ্জনাকে নিয়ে। ‘হাজার কবিতা’ লিখতে হয়েছে যাকে নিয়ে, কে সেই মানুষটি?
প্রশ্ন করার সঙ্গে সঙ্গে সপ্রতিভ নচিকেতার জবাব, ‘বলা যাবে না, বলব না।’ একটু থেমে বললেন, ‘একটা উর্দু শের আছে, যার অর্থ হলো সুন্দর জিনিস থেকে দূরে থাকাই ভালো। সুতরাং, এই নীলাঞ্জনা থেকে দূরেই থাকুন। হা হা হা...’
‘নীলাঞ্জনা’ গানটি অবলম্বনে যে এ দেশের টিভি চ্যানেলে ছয় পর্বের ধারাবাহিক নাটক হয়েছে, এই তথ্যও অজানা তাঁর। শুনে অবাক হলেন। বললেন, ‘ভালো তো!’
প্রসঙ্গ এড়িয়ে দত্তবাগানের কথায় ফিরে যান। বললেন, ‘আমার বাড়িতে সংগীতচর্চার জন্য আলাদা কোনো রুম নেই। পাড়ার রকে বসেই অনেক গান রচিত হয়েছে। পাড়ায় পালা করে আমরা নাইট ডিউটি দিতাম। বিখ্যাত হওয়ার পর এখনো তেমনই আছি।’
নীলাঞ্জনাও কী দত্তবাগানেরই বাসিন্দা?
এবার আর এড়াতে পারলেন না। বললেন, ‘শুধু এটুকুই বলব কিন্তু। হ্যাঁ, নীলাঞ্জনা দত্তবাগানেরই মেয়ে।’
১৯৯৩ সালে এই বেশ ভালো আছি অ্যালবাম বের হওয়ার পরপরই নচিকেতার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর গত বছর পর্যন্ত ১৮টি একক অ্যালবাম বেরিয়েছে। মিশ্র অ্যালবাম আছে ১১টির মতো। এ ছাড়া চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক তো আছেই। ১৯৯৮ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হঠাৎ বৃষ্টি চলচ্চিত্রের সংগীত পরিচালনা করেছেন। সেই চলচ্চিত্রে তাঁর গাওয়া ‘একদিন স্বপ্নের দিন’ শ্রোতাদের মুখে মুখে ফিরেছে। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের গানে একঝলক নতুন হাওয়াও এনে দিয়েছে। কণ্ঠ দিয়েছেন বিশাল ভরদ্বাজ পরিচালিত বলিউডের ওমকারাসহ বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। এর পরও প্লেব্যাক শিল্পী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার কোনো ভাবনা নেই তাঁর। বললেন, ‘প্লেব্যাক একদম ভালো লাগে না। আসলে ফরমায়েশি গান পছন্দ নয়। তা ছাড়া এসব মিষ্টি ভালোবাসার চটুল গান থেকে দূরেই থাকতে চাই।’
এই বেশ ভালো আছি অ্যালবামের আগের নচিকেতা আর আজকের নচিকেতার মধ্যে কোনো তফাত আছে? ‘আছেই তো। তখন বয়স ছিল মাত্র ২৮ বছর। প্রতিবাদ করার সাহস ছিল। আর এখন সাহসের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অভিজ্ঞতা আর পরিপক্বতা।’
কেমন মানুষ নচিকেতা? প্রশ্ন করতেই ভ্রু কোঁচকালেন, ‘এই প্রশ্ন অনেকেই করে। আসলে আমি বেশ অহংকারী।’ বলেই একচোট হাসলেন।
কবির সুমন, অঞ্জন দত্ত, নচিকেতা—এই তিন শিল্পীর গান একই সময়ে শ্রোতাদের কাছে পৌঁছেছে। নচিকেতা কেন বিশিষ্ট, সে ব্যাখা দিয়ে গিয়ে বললেন, ‘কবির সুমন বা অঞ্জন দত্ত গুণী শিল্পী। তবে তাঁরা আমার মতো নন। আমি জনপ্রিয় ধারার গায়ক। হিন্দি গানের দাপটের সময় বাংলা গানকে জনপ্রিয় করেছি। আমি এই ধারার গান প্রতিষ্ঠিত করেছি। এখন যাঁরা গাইছেন অনুপম রায় বা অরিজিৎ সিং, তাঁরাও আমার গান শুনেছেন। আমার শো দেখে বড় হয়েছেন।’
নচিকেতার অনেক গানের মধ্যে গল্প খঁুজে পাওয়া যায়। বেশ কিছু গল্প লিখেছেনও। বেরিয়েছে ক্যকটাস ও জন্মদিনের রাত নামের দুটো উপন্যাস। লেখালিখির প্রসঙ্গ তুলতেই বললেন, ‘আসলে আমি খুব অলস। যে সব গল্প মাথায় ঘোরে সেসব আর লেখার ফুসরত হয় না। আমি সেসব গানে ঢুকিয়ে দিই।’
জ্যাক লন্ডন, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং হুমায়ুন আহমেদ তাঁর ভীষণ প্রিয়। হুমায়ুন বেঁচে থাকতে কেন দেখা করনেনি এ নিয়ে আফসোস হয় খুব। তাঁর ধারণা হুমায়ুনের ‘মিসির আলী’ চরিত্রটি অমর হয়ে থাকবে।
সলিল চৌধুরী, হেমাঙ্গ বিশ্বাস, জ্যোতিরিন্দ্র মৈত্রের পাশাপাশি বব ডিলান ও মাইকেল জ্যাকসনের গান তাঁর খুব ভালো লাগে। তবে এদের বাইরে তিনি যাঁর বড় ভক্ত তাঁর নাম রুনা লায়লা। উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন, ‘রুনাজি সুফি, গজল, রোমান্টিক সব ধারার গানই করেন। কী অপূর্ব তাঁর গলা। আরেকটু আগে জন্মালে নিশ্চিত তাঁকে নিয়ে আমি পালিয়ে যেতাম।’
কেবল রুনা লায়লা নন, হুট করে যে কোনো মেয়েরই প্রেমে পড়ে যান নচিকেতা। ঘন ঘন প্রেমে পড়া তাঁর স্বাভাব। তবে হৃদয়ের সবচেয়ে বড় লেনদেনটা হয় স্ত্রী রুমকির সঙ্গেই।
একজন শিল্পীর সব চেয়ে বড় সম্পদ কী? এ কথার উত্তর দিতে গিয়ে একটু ভাবলেন। এরপর বললেন, ‘বিশ্বাস। শিল্পী নিজে যা করছেন তার প্রতি বিশ্বাস থাকাটা খুব জরুরি। এটাই তাকে বাঁচিয়ে রাখে।’
No comments