তুমি আবার এসো বুদ্ধ by প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু
বুদ্ধের
জীবদ্দশায় কালজয়ী যেসব ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল, তার বেশির ভাগ
পূর্ণিমাকেন্দ্রিক। বাংলা বারো মাসে বারোটি পূর্ণিমা দেখা যায়। চৈত্র
পূর্ণিমা, বৈশাখী পূর্ণিমা, আষাঢ়ী পূর্ণিমা, শ্রাবণী পূর্ণিমা, ভাদ্র
পূর্ণিমা, আশ্বিনী পূর্ণিমা, কার্তিকী পূর্ণিমা, পৌষ পূর্ণিমা, মাঘী
পূর্ণিমা, ফাল্গুনী পূর্ণিমা, জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমা, অগ্রহায়ণ পূর্ণিমা। এক এক
পূর্ণিমার সঙ্গে এক এক স্মৃতি বিজড়িত আছে। তবে বৈশাখী পূর্ণিমা অন্য সব
পূর্ণিমার চেয়ে বেশি ঘটনা, বেশি স্মৃতি ধারণ করে আছে। তাই বৈশাখী পূর্ণিমা
বৌদ্ধ বিশ্বে সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। কেননা রাজপুত্র সিদ্ধার্থের জন্ম,
বুদ্ধত্ব লাভ এবং বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্তি এই তিনটি অনন্য ঘটনা ঘটে
শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে। এ জন্য বৈশাখী পূর্ণিমার অপর নাম ‘বুদ্ধ
পূর্ণিমা’।
অনেকে মনে করেন বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্তি যেমন একই পূর্ণিমা তিথিতে ঘটেছিল, তেমনি এই তিনটি ঘটনা একই ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল। আমি এ ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করি। কেননা, সিদ্ধার্থ পরবর্তী সময়ে বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন। সিদ্ধার্থ হলেন গৌতম বুদ্ধের আগের অবস্থা আর গৌতম বুদ্ধ হলেন সিদ্ধার্থের পরবর্তী অবস্থা। যাঁরা এটুকু পার্থক্য বোঝেন না, তাঁরা বলেন বুদ্ধের সংসার, স্ত্রী, পুত্র ছিল। এটা সঠিক ধারণা নয়। সিদ্ধার্থের মধ্যে মোহ, কাম, তৃষ্ণা ছিল। কিন্তু বুদ্ধগণ এসব বিকার মুক্ত হন।
বুদ্ধের নয়টি গুণের মধ্যে দুটি হলো তিনি অরহৎ এবং ভগবান। সকল প্রকার অরি বা রিপুকে হত্যা করেছেন, ধ্বংস করেছেন বলে তিনি অরহৎ। তাঁর মধ্যে লোভ, দ্বেষ, মোহ, কাম, ক্রোধ ইত্যাদি বিকার উৎপন্ন হওয়ার কারণ ধ্বংস হয়ে গেছে। অপর দিকে তৃষ্ণা বা চাহিদার শৃঙ্খল তিনি ভগ্ন করেছেন। মোহবন্ধন চিরতরে ছিন্ন করেছেন, ভেঙে ফেলেছেন। এই অর্থে তিনি ভগবান। সিদ্ধার্থ কিন্তু অরহৎ কিংবা ভগবান নন। আমরা রাজকুমার সিদ্ধার্থের মহানতাকে ভক্তি করি কিন্তু পূজা করি বুদ্ধজ্ঞানকে, মুক্তির পথপ্রদর্শক মানি বুদ্ধকে। সিদ্ধার্থ নামটি অন্য কোনো নামও হতে পারত। কিন্তু বুদ্ধ শব্দটি কোনো নামবাচক শব্দ নয়, এটা গুণবাচক শব্দ।
রাজা শুদ্ধোধনের দীর্ঘ সাংসারিক জীবনে তখনো কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ না করায় রাজা মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে ফুটফুটে একটি শিশু জন্ম নিল। এবার রাজার দীর্ঘদিনের কামনা, প্রার্থনা সিদ্ধিলাভ করল। তাই রাজা পুত্রের নাম রাখলেন ‘সিদ্ধার্থ’।
সিদ্ধার্থের জন্মের এক সপ্তাহ পর মাতা মহামায়া স্বর্গবাসী হন। পরে রাজা শুদ্ধোধন মহামায়ার ছোট বোন মহাপ্রজাপতি গৌতমীকে বিবাহ করেন। গৌতমী সিদ্ধার্থের বিমাতা হন। কিন্তু তিনি আজকের বিমাতার মতো আচরণ করেননি। গৌতমীর এক পুত্র ছিলেন। তাঁর নাম ছিল নন্দ। সিদ্ধার্থের পরিচর্যা এবং লালন-পালনে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পারে ভেবে তিনি নিজের গর্ভজাত সন্তান নন্দকে লালন-পালনের ভার অন্যের হাতে সঁপে দিয়েছিলেন। সিদ্ধার্থকে মহাপ্রজাপতি গৌতমী লালন-পালন করেছিলেন বলে তাঁকে গৌতম বুদ্ধ বলা হয়। শাক্যরাজ বংশীয় বলে বুদ্ধকে শাক্যসিংহও বলা হয়।
২৯ বছর বয়সী রাজনন্দন সিদ্ধার্থ নগর ভ্রমণে সে সময় যে চার নিমিত্ত বা দৃশ্য দেখেছিলেন তা তাঁর মধ্যে গভীর রেখাপাত করল। জরাগ্রস্ত ব্যক্তি, ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি, মৃত ব্যক্তি এবং সন্ন্যাসী এই চারটি ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্য তাঁকে গৃহবাস ত্যাগে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে অনুপ্রাণিত করেছিল। রোগ, জরা, মৃত্যু, শোক ইত্যাদি দুঃখ থেকে মুক্তির পথ অন্বেষণ করার জন্যই তিনি সংসার ত্যাগ করেছিলেন। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব তাঁর Buddha, The Humanist গ্রন্থে লিখেছেন, ‘বুদ্ধ এ জগতে যে পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে পরিবেশের বিরুদ্ধেই তিনি এক দ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। এই দ্রোহ বা বিপ্লব ছিল জীবনের দুঃখ, জরার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে দেওয়ার প্রয়াস।’
দীর্ঘ ছয় বছর সাধনার মাধ্যমে তিনি বুদ্ধজ্ঞান লাভ করেছিলেন। তিনি উদ্ঘাটন করলেন যে জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর কারণ হলো জন্ম। জন্মের মূল কারণ হলো তৃষ্ণা। আর তৃষ্ণার মূল কারণ হলো অবিদ্যা। তৃষ্ণা নিবৃত্ত হলেই মানুষ দুঃখ মুক্তি লাভ করতে পারে, যার প্রমাণ বুদ্ধ নিজেই। আর এই দুঃখ মুক্তির জন্য যে পথে হাঁটতে হবে তা হলো আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ। আর এই মার্গে বিচরণ করতে হলে প্রয়োজন প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি, পরিবর্তনবাদ, কর্মবাদ এবং অনাতবাদ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান।
৩৫ বছর বয়সে বুদ্ধত্ব লাভের পর দীর্ঘ ৪৫ বছর ধর্মপ্রচার করে অবশেষে তিনি ৮০ বছর বয়সে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভের ২৫৫৯ বছর পূর্ণ হলো। বিশ্ব বৌদ্ধরা বৈশাখী পূর্ণিমা উদ্যাপনের মাধ্যমে নতুন বুদ্ধবর্ষকেও বরণ করে নেবেন।
বৈশাখী পূর্ণিমা দিনে যদিও বা বুদ্ধ জন্মোৎসব পালিত হয়, প্রকৃতপক্ষে এটা বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ দিবসও বটে। বুদ্ধ পূর্ণিমা উদ্যাপনে আনন্দটা মুখ্য নয়। ভাবগম্ভীর পরিবেশে সম্পূর্ণ ধর্মীয় মর্যাদায় দিনটি পালন করা সবার নৈতিক দায়িত্ব।
কবিগুরু তাঁর বুদ্ধদেব গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আমি যাঁকে অন্তরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে উপলব্ধি করি, আজ এই বৈশাখী পূর্ণিমায় তাঁর জন্মোৎসবে আমার প্রণাম নিবেদন করতে এসেছি। এ কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানের অলংকার নয়, একান্তে নিভৃতে যা তাঁকে বারবার সমর্পণ করেছি সেই অর্ঘ্যই আজ এখানে উৎসর্গ করি।’ [বৈশাখী পূর্ণিমা, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪২]
যিনি ভারতবর্ষ থেকে অমিয় প্রেমের মন্ত্র, বিশ্বমৈত্রীর বাণী বিশ্বে ছড়িয়েছেন, আজ তাঁর শূন্যতা বিশ্বময় উপলব্ধি হচ্ছে। কবিগুরু লিখেছেন, ‘একদিন বুদ্ধগয়াতে গিয়েছিলাম মন্দির দর্শনে, সেই দিন এই কথা আমার মনে জেগেছিল—যাঁর চরণ স্পর্শে বসুন্ধরা একদিন পবিত্র হয়েছিল, তিনি যেদিন সশরীরে এই গয়াতে ভ্রমণ করেছিলেন, সেদিন কেন আমি জন্মাই নি, সমস্ত শরীর মন দিয়ে প্রত্যক্ষ তাঁর পুণ্য প্রভাব অনুভব করি নি ?’
কবিগুরুর ভাষায়—
‘‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব
ঘোর কুটিল পন্থ তার, লোভজটিল বন্ধ।
নূতন তব জন্ম লাগি কাতর যত প্রাণী,
কর’ ত্রাণ মহাপ্রাণ, আন’ অমৃতবাণী,
বিকশিত কর’, প্রেমপদ চিরমধুনিষ্যন্দ।
শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্ত পুণ্য,
করুণাঘন, ধরণীতল কর’ কলঙ্কশূন্য।’’
‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক।’
বাংলাদেশ চিরজীবী হউক।
প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু: সহকারী পরিচালিক, সীমা বৌদ্ধ বিহার, রামু।
অনেকে মনে করেন বুদ্ধের জন্ম, বুদ্ধত্ব লাভ এবং বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ প্রাপ্তি যেমন একই পূর্ণিমা তিথিতে ঘটেছিল, তেমনি এই তিনটি ঘটনা একই ব্যক্তিকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল। আমি এ ক্ষেত্রে দ্বিমত পোষণ করি। কেননা, সিদ্ধার্থ পরবর্তী সময়ে বুদ্ধত্ব লাভ করেছিলেন। সিদ্ধার্থ হলেন গৌতম বুদ্ধের আগের অবস্থা আর গৌতম বুদ্ধ হলেন সিদ্ধার্থের পরবর্তী অবস্থা। যাঁরা এটুকু পার্থক্য বোঝেন না, তাঁরা বলেন বুদ্ধের সংসার, স্ত্রী, পুত্র ছিল। এটা সঠিক ধারণা নয়। সিদ্ধার্থের মধ্যে মোহ, কাম, তৃষ্ণা ছিল। কিন্তু বুদ্ধগণ এসব বিকার মুক্ত হন।
বুদ্ধের নয়টি গুণের মধ্যে দুটি হলো তিনি অরহৎ এবং ভগবান। সকল প্রকার অরি বা রিপুকে হত্যা করেছেন, ধ্বংস করেছেন বলে তিনি অরহৎ। তাঁর মধ্যে লোভ, দ্বেষ, মোহ, কাম, ক্রোধ ইত্যাদি বিকার উৎপন্ন হওয়ার কারণ ধ্বংস হয়ে গেছে। অপর দিকে তৃষ্ণা বা চাহিদার শৃঙ্খল তিনি ভগ্ন করেছেন। মোহবন্ধন চিরতরে ছিন্ন করেছেন, ভেঙে ফেলেছেন। এই অর্থে তিনি ভগবান। সিদ্ধার্থ কিন্তু অরহৎ কিংবা ভগবান নন। আমরা রাজকুমার সিদ্ধার্থের মহানতাকে ভক্তি করি কিন্তু পূজা করি বুদ্ধজ্ঞানকে, মুক্তির পথপ্রদর্শক মানি বুদ্ধকে। সিদ্ধার্থ নামটি অন্য কোনো নামও হতে পারত। কিন্তু বুদ্ধ শব্দটি কোনো নামবাচক শব্দ নয়, এটা গুণবাচক শব্দ।
রাজা শুদ্ধোধনের দীর্ঘ সাংসারিক জীবনে তখনো কোনো সন্তান জন্মগ্রহণ না করায় রাজা মানসিকভাবে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। অবশেষে শুভ বৈশাখী পূর্ণিমা তিথিতে ফুটফুটে একটি শিশু জন্ম নিল। এবার রাজার দীর্ঘদিনের কামনা, প্রার্থনা সিদ্ধিলাভ করল। তাই রাজা পুত্রের নাম রাখলেন ‘সিদ্ধার্থ’।
সিদ্ধার্থের জন্মের এক সপ্তাহ পর মাতা মহামায়া স্বর্গবাসী হন। পরে রাজা শুদ্ধোধন মহামায়ার ছোট বোন মহাপ্রজাপতি গৌতমীকে বিবাহ করেন। গৌতমী সিদ্ধার্থের বিমাতা হন। কিন্তু তিনি আজকের বিমাতার মতো আচরণ করেননি। গৌতমীর এক পুত্র ছিলেন। তাঁর নাম ছিল নন্দ। সিদ্ধার্থের পরিচর্যা এবং লালন-পালনে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হতে পারে ভেবে তিনি নিজের গর্ভজাত সন্তান নন্দকে লালন-পালনের ভার অন্যের হাতে সঁপে দিয়েছিলেন। সিদ্ধার্থকে মহাপ্রজাপতি গৌতমী লালন-পালন করেছিলেন বলে তাঁকে গৌতম বুদ্ধ বলা হয়। শাক্যরাজ বংশীয় বলে বুদ্ধকে শাক্যসিংহও বলা হয়।
২৯ বছর বয়সী রাজনন্দন সিদ্ধার্থ নগর ভ্রমণে সে সময় যে চার নিমিত্ত বা দৃশ্য দেখেছিলেন তা তাঁর মধ্যে গভীর রেখাপাত করল। জরাগ্রস্ত ব্যক্তি, ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তি, মৃত ব্যক্তি এবং সন্ন্যাসী এই চারটি ভিন্ন ভিন্ন দৃশ্য তাঁকে গৃহবাস ত্যাগে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হতে অনুপ্রাণিত করেছিল। রোগ, জরা, মৃত্যু, শোক ইত্যাদি দুঃখ থেকে মুক্তির পথ অন্বেষণ করার জন্যই তিনি সংসার ত্যাগ করেছিলেন। ড. গোবিন্দচন্দ্র দেব তাঁর Buddha, The Humanist গ্রন্থে লিখেছেন, ‘বুদ্ধ এ জগতে যে পরিবেশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন সে পরিবেশের বিরুদ্ধেই তিনি এক দ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। এই দ্রোহ বা বিপ্লব ছিল জীবনের দুঃখ, জরার বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করে দেওয়ার প্রয়াস।’
দীর্ঘ ছয় বছর সাধনার মাধ্যমে তিনি বুদ্ধজ্ঞান লাভ করেছিলেন। তিনি উদ্ঘাটন করলেন যে জরা, ব্যাধি, মৃত্যুর কারণ হলো জন্ম। জন্মের মূল কারণ হলো তৃষ্ণা। আর তৃষ্ণার মূল কারণ হলো অবিদ্যা। তৃষ্ণা নিবৃত্ত হলেই মানুষ দুঃখ মুক্তি লাভ করতে পারে, যার প্রমাণ বুদ্ধ নিজেই। আর এই দুঃখ মুক্তির জন্য যে পথে হাঁটতে হবে তা হলো আর্য অষ্টাঙ্গিক মার্গ। আর এই মার্গে বিচরণ করতে হলে প্রয়োজন প্রতীত্যসমুৎপাদ নীতি, পরিবর্তনবাদ, কর্মবাদ এবং অনাতবাদ সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান।
৩৫ বছর বয়সে বুদ্ধত্ব লাভের পর দীর্ঘ ৪৫ বছর ধর্মপ্রচার করে অবশেষে তিনি ৮০ বছর বয়সে মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন। বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ লাভের ২৫৫৯ বছর পূর্ণ হলো। বিশ্ব বৌদ্ধরা বৈশাখী পূর্ণিমা উদ্যাপনের মাধ্যমে নতুন বুদ্ধবর্ষকেও বরণ করে নেবেন।
বৈশাখী পূর্ণিমা দিনে যদিও বা বুদ্ধ জন্মোৎসব পালিত হয়, প্রকৃতপক্ষে এটা বুদ্ধের মহাপরিনির্বাণ দিবসও বটে। বুদ্ধ পূর্ণিমা উদ্যাপনে আনন্দটা মুখ্য নয়। ভাবগম্ভীর পরিবেশে সম্পূর্ণ ধর্মীয় মর্যাদায় দিনটি পালন করা সবার নৈতিক দায়িত্ব।
কবিগুরু তাঁর বুদ্ধদেব গ্রন্থে লিখেছেন, ‘আমি যাঁকে অন্তরের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মানব বলে উপলব্ধি করি, আজ এই বৈশাখী পূর্ণিমায় তাঁর জন্মোৎসবে আমার প্রণাম নিবেদন করতে এসেছি। এ কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানের অলংকার নয়, একান্তে নিভৃতে যা তাঁকে বারবার সমর্পণ করেছি সেই অর্ঘ্যই আজ এখানে উৎসর্গ করি।’ [বৈশাখী পূর্ণিমা, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৩৪২]
যিনি ভারতবর্ষ থেকে অমিয় প্রেমের মন্ত্র, বিশ্বমৈত্রীর বাণী বিশ্বে ছড়িয়েছেন, আজ তাঁর শূন্যতা বিশ্বময় উপলব্ধি হচ্ছে। কবিগুরু লিখেছেন, ‘একদিন বুদ্ধগয়াতে গিয়েছিলাম মন্দির দর্শনে, সেই দিন এই কথা আমার মনে জেগেছিল—যাঁর চরণ স্পর্শে বসুন্ধরা একদিন পবিত্র হয়েছিল, তিনি যেদিন সশরীরে এই গয়াতে ভ্রমণ করেছিলেন, সেদিন কেন আমি জন্মাই নি, সমস্ত শরীর মন দিয়ে প্রত্যক্ষ তাঁর পুণ্য প্রভাব অনুভব করি নি ?’
কবিগুরুর ভাষায়—
‘‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব
ঘোর কুটিল পন্থ তার, লোভজটিল বন্ধ।
নূতন তব জন্ম লাগি কাতর যত প্রাণী,
কর’ ত্রাণ মহাপ্রাণ, আন’ অমৃতবাণী,
বিকশিত কর’, প্রেমপদ চিরমধুনিষ্যন্দ।
শান্ত হে, মুক্ত হে, হে অনন্ত পুণ্য,
করুণাঘন, ধরণীতল কর’ কলঙ্কশূন্য।’’
‘জগতের সকল প্রাণী সুখী হউক।’
বাংলাদেশ চিরজীবী হউক।
প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু: সহকারী পরিচালিক, সীমা বৌদ্ধ বিহার, রামু।
No comments