নামতে পারছে না বিএনপি by হাবিবুর রহমান খান
সিটি
কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ কাটছে না বিএনপির। বিশেষ করে ঢাকার দুই
সিটির সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায়
ভাবিয়ে তুলছে দলটির নীতিনির্ধারকদের। ‘রাজনৈতিক’ মামলায় জর্জরিত
নেতাকর্মীরা প্রার্থীর পক্ষে অবাধে প্রচার-প্রচারণা চালাতে পারবে কিনা তা
নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে সংশয়। গ্রেফতারের আশঙ্কায় এখন পর্যন্ত নেতাকর্মীরা
প্রকাশ্যে আসছেন না। ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক প্রার্থীরা যেখানে নির্বাচনী
প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত, সেখানে বিএনপি সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থী অথবা
তাদের প্রতিনিধিরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন আইনজীবীদের চেম্বারে। মামলার করণীয়
নিয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ করেছেন তারা। শুধু সম্ভাব্য প্রার্থী নয়, যারা
প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন, তারাও
বিভিন্ন মামলার আসামি। নির্বাচনী মাঠে তাদের নামাও অনিশ্চিত। তবে প্রকাশ্যে
আসতে না পারলেও নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার কৌশল নিয়ে কর্মপরিকল্পনা তৈরি
করছেন বিএনপি সমর্থিত সম্ভাব্য প্রার্থীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তারা শিগগিরই আদালতের শরণাপন্ন হবেন। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা। ইতিমধ্যেই মামলার ফাইল তৈরি করতে বলা হয়েছে আইনজীবীদের। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া নির্বাচনী মাঠে থাকা কঠিন হবে। সরকার না চাইলে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও মামলা থেকে রেহাই পাওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সরকার শেষ পর্যন্ত বিএনপি জোটকে নির্র্বাচনী মাঠে নামতে প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
বিএনপি সূত্র জানায়, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি, প্রার্থী ও তাদেও নেতাকর্মী-সমর্থকদের অবাধে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেয়াসহ ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে শিগগিরই সুনির্দিষ্টভাবে কিছু দাবি জানানো হবে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এই দাবি তুলে ধরা হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে দলের পক্ষে লিখিত আকারে এসব দাবি জানানোর পক্ষে কেউ কেউ মত দিচ্ছেন। আবার একটি অংশ এর বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়ে কোনো লাভ নেই। এর চেয়ে সুনির্দিষ্ট দাবিসহ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়াই ভালো।
গতকাল ২০ দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে তিন সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি হুশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, নির্বাচনে সরকার দস্যুবৃত্তি করলে এবং নির্বাচন কমিশন এতে সহযোগিতা করলে জাতি ক্ষমা করবে না। সূত্র জানায়, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে এখনও শঙ্কা কাটছে না। তাদের আশঙ্কা, সরকার চাইলে নানাভাবে বিএনপির প্রার্থীদের হয়রানি করার সুযোগ রয়েছে। এখনও প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে বিএনপি সমর্থিত যে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে। বিশেষ করে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় এ শঙ্কা আরও বাড়ছে। সরকারের ইতিবাচক মনোভাব থাকলে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যত মামলাই থাকুক ইসি তাদের প্রার্থিতা বাতিল করবে না। নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েও নানাভাবে হয়রানি করতে পারে। শুধু প্রার্থী নয়, যারা প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী কাজ পরিচালনা করবেন তাদের নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ভয়ভীতি দেখাতে পারেন। শেষ পর্যন্ত সরকার বিএনপিকে ছাড় দেবে কিনা সেই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে। এজন্য সরকারের আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তারা। দলটির নেতারা মনে করেন, তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে প্রায় সবগুলোই রাজনৈতিক হয়রানিমূলক। এসব মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্তও অনেকটা রাজনৈতিক।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা সিটি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানানো হচ্ছে। বিএনপি সমর্থিত একটি পেশাজীবী দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ ব্যাপারে আহ্বানও জানিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার ও নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
তিনি বলেন, তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দেয়া হয়েছে। এগুলো সবই ‘রাজনৈতিক’ হয়রানিমূলক। এসব মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে নানা ভয়ভীতি কাজ করছে। এ কারণে অনেকে সশরীরে গিয়ে মনোনয়নপত্রও জমা দিতে পারেননি। ভয়ভীতি নিয়ে তো নির্বাচন করা যায় না। নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে হলে অবশ্যই সব দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। প্রার্থী ও সমর্থকদের নির্ভয়ে কাজ করতে দিতে হবে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ না নিলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে বলে আশা করেন তিনি।
সূত্র জানায়, সরকারের মনোভাব পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীদের মামলাগুলো আইনিভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীদের এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সম্ভাব্য কাউন্সিলর এবং সক্রিয় নেতাদেরও আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রের এমন নির্দেশনা পাওয়ার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে করা মামলার হিসাব নিতে শুরু করেছেন। কোনা কোন মামলায় তাদের জামিন নেই তা নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছেন। কেন্দ্রের নির্দেশ পেলেই তারা জামিনের জন্য আদালতে যাবেন।
জানা গেছে, ঢাকা সিটি উত্তরে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ১৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। বাকি তিন মামলায় জামিন নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মিন্টুর ঘনিষ্ঠ একজন যুগান্তরকে বলেন, তারা জানতেন তার (মিন্টুর) বিরুদ্ধে ১০টি মামলাই আছে। কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে আরও তিনটি মামলার কথা জানা যায়।
জানতে চাইলে মিন্টুর আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আইনগতভাবে তার (মিন্টুর) নির্বাচনে প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে বেশির ভাগই উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেয়া রয়েছে।
তিনি বলেন, চলমান আন্দোলনে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেয়া হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো মামলায় জামিন না থাকলে জামিন নেয়ার ব্যাপারে শিগগিরই আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আরও জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মির্জা আব্বাসকে সমর্থন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে রয়েছে অর্ধশত মামলা। বিগত আন্দোলন শুরুর আগে তার বিরুদ্ধে করা সব কটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন তিনি। কিন্তু ৬ জানুয়ারি থেকে চলা অবরোধে নাশকতার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২-৩টি মামলা হয়। এগুলোতে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকলেও আদালত থেকে জামিন নেয়া হয়নি। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের করা একটি মামলায় অভিযোগ আমলে নেয়ার জন্য ধার্য তারিখ ২৪ ফেব্র“য়ারি আদালতে হাজির না থাকায় মির্জা আব্বাসসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে ২৮ এপ্রিল।
জানতে চাইলে আব্বাসের আইনজীবী এএইচএম শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, আইনগতভাবে মির্জা আব্বাসের প্রার্থী হতে কোনো বাধা দেখছি না। কারণ কোনো মামলায় তার সাজা হয়নি। মামলাগুলো চলমান আছে। তিনি বলেন, আইনগতভাবে কোনো সমস্যা থাকলে তা আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে। যেসব মামলায় জামিন নেই সেগুলোতে জামিন নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও দাবি করেন আব্বাসের এই আইনজীবী।
শুধু ঢাকার দুই সিটিতে নয়, চট্টগ্রামেও সম্ভাব্য বেশ কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া সক্রিয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। প্রার্থী ও সক্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় চট্টগ্রাম বিএনপির নেতারাও নানা শঙ্কায় রয়েছেন।
তারা প্রকাশ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে উৎকণ্ঠিত। যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রে অবহিত করা হয়েছে। ঘটনার সময় দেশে না থাকার পরও কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলেও জানা যায়। ৩৪ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল বালির বিরুদ্ধে যে ঘটনায় মামলা করা হয়েছে ওই সময় তিনি ওমরাহ পালন করতে গিয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, নির্বাচনে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার কী করে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে বলে আশা করেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যেসব গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তারা শিগগিরই আদালতের শরণাপন্ন হবেন। উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা। ইতিমধ্যেই মামলার ফাইল তৈরি করতে বলা হয়েছে আইনজীবীদের। তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের মতে, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া নির্বাচনী মাঠে থাকা কঠিন হবে। সরকার না চাইলে আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েও মামলা থেকে রেহাই পাওয়া নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। সরকার শেষ পর্যন্ত বিএনপি জোটকে নির্র্বাচনী মাঠে নামতে প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে প্রত্যাশা তাদের।
বিএনপি সূত্র জানায়, নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি, প্রার্থী ও তাদেও নেতাকর্মী-সমর্থকদের অবাধে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ নিশ্চিত করা, কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলে দেয়াসহ ২০ দলীয় জোটের পক্ষ থেকে শিগগিরই সুনির্দিষ্টভাবে কিছু দাবি জানানো হবে। তবে কোন প্রক্রিয়ায় এই দাবি তুলে ধরা হবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে। নির্বাচন কমিশনে গিয়ে দলের পক্ষে লিখিত আকারে এসব দাবি জানানোর পক্ষে কেউ কেউ মত দিচ্ছেন। আবার একটি অংশ এর বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়ে কোনো লাভ নেই। এর চেয়ে সুনির্দিষ্ট দাবিসহ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের কাছে আহ্বান জানিয়ে গণমাধ্যমে বিবৃতি দেয়াই ভালো।
গতকাল ২০ দলের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে তিন সিটির নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি হুশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, নির্বাচনে সরকার দস্যুবৃত্তি করলে এবং নির্বাচন কমিশন এতে সহযোগিতা করলে জাতি ক্ষমা করবে না। সূত্র জানায়, তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে এখনও শঙ্কা কাটছে না। তাদের আশঙ্কা, সরকার চাইলে নানাভাবে বিএনপির প্রার্থীদের হয়রানি করার সুযোগ রয়েছে। এখনও প্রার্থী বাছাই চূড়ান্ত হয়নি। নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে বিএনপি সমর্থিত যে কোনো প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হতে পারে এমন আশঙ্কাও রয়েছে। বিশেষ করে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় এ শঙ্কা আরও বাড়ছে। সরকারের ইতিবাচক মনোভাব থাকলে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যত মামলাই থাকুক ইসি তাদের প্রার্থিতা বাতিল করবে না। নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েও নানাভাবে হয়রানি করতে পারে। শুধু প্রার্থী নয়, যারা প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী কাজ পরিচালনা করবেন তাদের নানাভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে ভয়ভীতি দেখাতে পারেন। শেষ পর্যন্ত সরকার বিএনপিকে ছাড় দেবে কিনা সেই প্রশ্নই ঘুরেফিরে আসছে। এজন্য সরকারের আচরণ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে তারা। দলটির নেতারা মনে করেন, তাদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে প্রায় সবগুলোই রাজনৈতিক হয়রানিমূলক। এসব মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্তও অনেকটা রাজনৈতিক।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে তারা সিটি নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এজন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবি জানানো হচ্ছে। বিএনপি সমর্থিত একটি পেশাজীবী দল নির্বাচন কমিশনে গিয়ে এ ব্যাপারে আহ্বানও জানিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকার ও নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি।
তিনি বলেন, তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শত শত মামলা দেয়া হয়েছে। এগুলো সবই ‘রাজনৈতিক’ হয়রানিমূলক। এসব মামলায় গ্রেফতারের ভয়ে তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে নানা ভয়ভীতি কাজ করছে। এ কারণে অনেকে সশরীরে গিয়ে মনোনয়নপত্রও জমা দিতে পারেননি। ভয়ভীতি নিয়ে তো নির্বাচন করা যায় না। নির্বাচনকে উৎসবমুখর করতে হলে অবশ্যই সব দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে। প্রার্থী ও সমর্থকদের নির্ভয়ে কাজ করতে দিতে হবে। সরকার ও নির্বাচন কমিশন এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে কার্যকর উদ্যোগ না নিলেও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে বলে আশা করেন তিনি।
সূত্র জানায়, সরকারের মনোভাব পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি সম্ভাব্য প্রার্থীদের মামলাগুলো আইনিভাবে মোকাবেলার প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীদের এ ব্যাপারে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া সম্ভাব্য কাউন্সিলর এবং সক্রিয় নেতাদেরও আইনি প্রক্রিয়া শুরু করতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, কেন্দ্রের এমন নির্দেশনা পাওয়ার পর সম্ভাব্য প্রার্থীরা তাদের বিরুদ্ধে করা মামলার হিসাব নিতে শুরু করেছেন। কোনা কোন মামলায় তাদের জামিন নেই তা নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলছেন। কেন্দ্রের নির্দেশ পেলেই তারা জামিনের জন্য আদালতে যাবেন।
জানা গেছে, ঢাকা সিটি উত্তরে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী আবদুল আউয়াল মিন্টুর বিরুদ্ধে সব মিলিয়ে ১৩টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন। বাকি তিন মামলায় জামিন নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মিন্টুর ঘনিষ্ঠ একজন যুগান্তরকে বলেন, তারা জানতেন তার (মিন্টুর) বিরুদ্ধে ১০টি মামলাই আছে। কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ নিয়ে আরও তিনটি মামলার কথা জানা যায়।
জানতে চাইলে মিন্টুর আইনজীবী ব্যারিস্টার এহসানুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আইনগতভাবে তার (মিন্টুর) নির্বাচনে প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই। তার বিরুদ্ধে যেসব মামলা হয়েছে বেশির ভাগই উচ্চ আদালত থেকে আগাম জামিন নেয়া রয়েছে।
তিনি বলেন, চলমান আন্দোলনে তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা দেয়া হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো মামলায় জামিন না থাকলে জামিন নেয়ার ব্যাপারে শিগগিরই আইনি প্রক্রিয়া শুরু হবে।
আরও জানা গেছে, ঢাকা দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মির্জা আব্বাসকে সমর্থন দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু তার বিরুদ্ধে রয়েছে অর্ধশত মামলা। বিগত আন্দোলন শুরুর আগে তার বিরুদ্ধে করা সব কটি মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়েছেন তিনি। কিন্তু ৬ জানুয়ারি থেকে চলা অবরোধে নাশকতার ঘটনায় তার বিরুদ্ধে ২-৩টি মামলা হয়। এগুলোতে কোনো গ্রেফতারি পরোয়ানা না থাকলেও আদালত থেকে জামিন নেয়া হয়নি। এছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশনের করা একটি মামলায় অভিযোগ আমলে নেয়ার জন্য ধার্য তারিখ ২৪ ফেব্র“য়ারি আদালতে হাজির না থাকায় মির্জা আব্বাসসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গ্রেফতারি পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে ২৮ এপ্রিল।
জানতে চাইলে আব্বাসের আইনজীবী এএইচএম শাহজাহান যুগান্তরকে বলেন, আইনগতভাবে মির্জা আব্বাসের প্রার্থী হতে কোনো বাধা দেখছি না। কারণ কোনো মামলায় তার সাজা হয়নি। মামলাগুলো চলমান আছে। তিনি বলেন, আইনগতভাবে কোনো সমস্যা থাকলে তা আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে। যেসব মামলায় জামিন নেই সেগুলোতে জামিন নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলেও দাবি করেন আব্বাসের এই আইনজীবী।
শুধু ঢাকার দুই সিটিতে নয়, চট্টগ্রামেও সম্ভাব্য বেশ কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়া সক্রিয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। প্রার্থী ও সক্রিয় নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকায় চট্টগ্রাম বিএনপির নেতারাও নানা শঙ্কায় রয়েছেন।
তারা প্রকাশ্যে নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে পারবেন কিনা তা নিয়ে উৎকণ্ঠিত। যেসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে তাদের ব্যাপারে কেন্দ্রে অবহিত করা হয়েছে। ঘটনার সময় দেশে না থাকার পরও কারও বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে বলেও জানা যায়। ৩৪ ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ইসমাইল বালির বিরুদ্ধে যে ঘটনায় মামলা করা হয়েছে ওই সময় তিনি ওমরাহ পালন করতে গিয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী জানান, নির্বাচনে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার বিষয়টি কেন্দ্রীয়ভাবে ঢাকায় জানানো হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকার কী করে, তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকার লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করবে বলে আশা করেন তিনি।
No comments