ভাইকে গিফট দেয়া হলো না তামান্নার by আল আমিন
‘পিতা
চিকিৎসক। একমাত্র ভাইও চিকিৎসক। বাবা-মায়ের ইচ্ছা ছিল একমাত্র মেয়ে
তামান্না রহমান হৃদিও চিকিৎসক হবে। দুঃখী মানুষের সেবা করবে। কিন্তু ছোট
থেকেই হৃদির স্বপ্ন ছিল পাইলট হওয়ার। মুক্ত আকাশে ডানা মেলে বিচরণ করার।
কিন্তু তামান্নার সেই স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। প্রশিক্ষণ নিতে গিয়ে পরিপূর্ণ
পাইলট হওয়ার আগেই তার প্রশিক্ষণের বিমান আছড়ে পড়লো রানওয়ের পাশে। মৃত্যু
হলো তার। শুধু প্রাণের নয়, স্বপ্নেরও। কথাগুলো কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন
তামান্নার মা রেহানা ইয়াসমিন ডলি।
বুধবার দুপুরে রাজশাহীর শাহ মখদুম (র.) বিমানবন্দরে একটি প্রশিক্ষণ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। এতে দগ্ধ হয়ে মারা যান ওই বিমানের প্রশিক্ষণরত পাইলট তামান্না। এতে আহত হয়েছেন প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন শাহেদ কামাল। তামান্নার পরিবারের অভিযোগ, ওই প্রশিক্ষণ বিমান থেকে শাহেদ কামাল কাচ ভেঙে বের হয়েছেন। তামান্না অনেকক্ষণ ধরে বাঁচার জন্য আকুতি জানিয়েছিল। প্রায় ২০ মিনিট ধরে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত গেলে তামান্নাকে বাঁচানো যেত। গতকাল সকালে খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ-২-এর আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তামান্নার লাশ বাড়ির নিচতলায় রাখা। বাড়িটির সামনে নিহতের আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয়দের ভিড়। সবাই নির্বিকার, নিস্তব্ধ। বাড়ির নিচতলায় তামান্নার লাশের কফিন ধরে তার বাবা, মা, একমাত্র ভাই আহাজারি করছেন। তাদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। তাদের কান্না দেখে অন্য স্বজনরা আবেগ-আপ্লুত হয়ে ওঠেন।
নিহতের মা রেহানা ইয়াসমিন ডলি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নানারবাড়ি গাজীপুরের জয়দেবপুরের কানাইয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে তামান্না। জন্মের পর থেকেই ঢাকায় বেড়ে উঠেছে সে। প্রায় ১০ বছর ধরে নিকুঞ্জের নিজ বাড়িতে আমরা বসবাস করে আসছি। তিনি আরও জানান, খুব ছোট থেকেই তার বিমান সম্পর্কে জানার আগ্রহটা ছিল অনেক বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৌতূহলও ছিল। পাশেই বিমানবন্দর। সেখান থেকে উড়ে যাওয়া বিমানগুলো দেখার জন্য বাড়ির ছাদে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো। তখন থেকেই তামান্না বাবা ও মাকে বলতো সে পাইলট হবে। ২০১২ সালে উত্তরার একটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল থেকে তামান্না ও-লেবেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। পরে ২০১৪ সালে এ-লেবেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নে রূপ দিতে যোগ দেয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্লাই একাডেমি অ্যান্ড সিভিল এভিয়েশনে। ২ বছরের কোর্স। সেখানে পড়াটা খুব ব্যয়বহুল। তামান্নার আগ্রহ দেখে তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। এরপর প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য সে রাজশাহীতে চলে যায়। প্রায় ৬ মাস ধরে সেখানে সে অবস্থান করছিল। দুই মাস আগে সে একবার বাড়িতে এসেছিল। এরপর থেকে মোবাইলে যোগাযোগ হতো। নিহতের পিতা স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান আবেগ-আপ্লুত হয়ে জানান, আমি একজন চিকিৎসক। আমার দুই সন্তান। আসিফ রহমান ও তামান্না। আসিফ ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পথে। তামান্নাকে চিকিৎসক করার ইচ্ছা ছিল আমাদের। কিন্তু তার পাইলট হওয়ার ইচ্ছা অনেক দিনের। একপ্রকারের জেদও ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হওয়ার কারণে আমরা কেউ রাজি ছিলাম না। তার স্বপ্ন বিমানের আগুনে পুড়ে গেল। আমার একমাত্র মেয়েটি এভাবে পুড়ে মারা গেল। এখন কি নিয়ে বাঁচবো? নিহতের বড় ভাই ডা. আসিফ রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, গত কয়েক দিন আগে তামান্নার সঙ্গে মোবাইলে তার কথা হয়েছিল। সে আমাকে বলেছিল সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে আমাকে একটি বড় ধরনের গিফট দেবে? সেই গিফট আর পাওয়া হলো না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেই প্রতিষ্ঠানে আমার বোন ফ্লাইংয়ের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল, ওই প্রতিষ্ঠানের এয়ার কার্পটগুলো পুরনো। লক্কর-ঝক্কর। সেগুলোকে সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো না বলে আমাদের কাছে জানিয়েছিল। তামান্নার মৃত্যুর পর আমার মা সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছেন। মাকে নিয়ে আমরা চিন্তিত। কেননা তার কিছুদিন আগে হার্টের অপারেশন হয়েছে।
নিহতের সহকর্মী অপর্ণা গোমেজ জানান, আমরা একসঙ্গে রাজশাহীতে প্রশিক্ষণরত ছিলাম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্লাই একাডেমি অ্যান্ড সিভিল এভিয়েশনের ঢাকায় ফ্লাইংয়ের কোন অনুমতি না থাকায় আমাদের রাজশাহীতে থাকতে হয়েছে। বিমানবন্দরের পাশেই একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। তামান্না খুব প্রাণোচ্ছল একটি মেয়ে ছিল। রাজশাহী বিমানবন্দরে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। তামান্নার প্রশিক্ষণের বিমানটির ইঞ্জিনটিতে আগুন ধরে গিয়ে রানওয়ের পাশে বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রায় ২০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের একটি মাত্র ইউনিট আসে। খবর পাওয়া মাত্র ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এলে ওই বিমান থেকে তামান্নাকে উদ্ধার করা যেত। ফায়ার সার্ভিস আসতে আসতে ততক্ষণে সেখানে এমনিতেই আগুন নিভে যায়। বিমানবন্দরে জরুরি কোন ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট নেই, যা প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। নিহত তামান্নার জানাজা গতকাল দুপুরে নিকুঞ্জ-২-এর ৫ নম্বর রোডের মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।
বুধবার দুপুরে রাজশাহীর শাহ মখদুম (র.) বিমানবন্দরে একটি প্রশিক্ষণ বিমান রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। এতে দগ্ধ হয়ে মারা যান ওই বিমানের প্রশিক্ষণরত পাইলট তামান্না। এতে আহত হয়েছেন প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন শাহেদ কামাল। তামান্নার পরিবারের অভিযোগ, ওই প্রশিক্ষণ বিমান থেকে শাহেদ কামাল কাচ ভেঙে বের হয়েছেন। তামান্না অনেকক্ষণ ধরে বাঁচার জন্য আকুতি জানিয়েছিল। প্রায় ২০ মিনিট ধরে। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেননি। ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস দ্রুত গেলে তামান্নাকে বাঁচানো যেত। গতকাল সকালে খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ-২-এর আবাসিক এলাকার ১২ নম্বর রোডের ২০ নম্বর বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তামান্নার লাশ বাড়ির নিচতলায় রাখা। বাড়িটির সামনে নিহতের আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয়দের ভিড়। সবাই নির্বিকার, নিস্তব্ধ। বাড়ির নিচতলায় তামান্নার লাশের কফিন ধরে তার বাবা, মা, একমাত্র ভাই আহাজারি করছেন। তাদের আহাজারিতে সেখানকার পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। তাদের কান্না দেখে অন্য স্বজনরা আবেগ-আপ্লুত হয়ে ওঠেন।
নিহতের মা রেহানা ইয়াসমিন ডলি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ১৯৯৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে নানারবাড়ি গাজীপুরের জয়দেবপুরের কানাইয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে তামান্না। জন্মের পর থেকেই ঢাকায় বেড়ে উঠেছে সে। প্রায় ১০ বছর ধরে নিকুঞ্জের নিজ বাড়িতে আমরা বসবাস করে আসছি। তিনি আরও জানান, খুব ছোট থেকেই তার বিমান সম্পর্কে জানার আগ্রহটা ছিল অনেক বেশি। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কৌতূহলও ছিল। পাশেই বিমানবন্দর। সেখান থেকে উড়ে যাওয়া বিমানগুলো দেখার জন্য বাড়ির ছাদে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতো। তখন থেকেই তামান্না বাবা ও মাকে বলতো সে পাইলট হবে। ২০১২ সালে উত্তরার একটি ইংরেজি মিডিয়াম স্কুল থেকে তামান্না ও-লেবেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। পরে ২০১৪ সালে এ-লেবেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। এরপর তার স্বপ্নকে বাস্তবায়নে রূপ দিতে যোগ দেয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্লাই একাডেমি অ্যান্ড সিভিল এভিয়েশনে। ২ বছরের কোর্স। সেখানে পড়াটা খুব ব্যয়বহুল। তামান্নার আগ্রহ দেখে তাকে সেখানে ভর্তি করা হয়। এরপর প্রশিক্ষণ নেয়ার জন্য সে রাজশাহীতে চলে যায়। প্রায় ৬ মাস ধরে সেখানে সে অবস্থান করছিল। দুই মাস আগে সে একবার বাড়িতে এসেছিল। এরপর থেকে মোবাইলে যোগাযোগ হতো। নিহতের পিতা স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান আবেগ-আপ্লুত হয়ে জানান, আমি একজন চিকিৎসক। আমার দুই সন্তান। আসিফ রহমান ও তামান্না। আসিফ ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজে এমবিবিএস সম্পন্ন করার পথে। তামান্নাকে চিকিৎসক করার ইচ্ছা ছিল আমাদের। কিন্তু তার পাইলট হওয়ার ইচ্ছা অনেক দিনের। একপ্রকারের জেদও ছিল। ঝুঁকিপূর্ণ পেশা হওয়ার কারণে আমরা কেউ রাজি ছিলাম না। তার স্বপ্ন বিমানের আগুনে পুড়ে গেল। আমার একমাত্র মেয়েটি এভাবে পুড়ে মারা গেল। এখন কি নিয়ে বাঁচবো? নিহতের বড় ভাই ডা. আসিফ রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, গত কয়েক দিন আগে তামান্নার সঙ্গে মোবাইলে তার কথা হয়েছিল। সে আমাকে বলেছিল সফলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ শেষে আমাকে একটি বড় ধরনের গিফট দেবে? সেই গিফট আর পাওয়া হলো না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যেই প্রতিষ্ঠানে আমার বোন ফ্লাইংয়ের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল, ওই প্রতিষ্ঠানের এয়ার কার্পটগুলো পুরনো। লক্কর-ঝক্কর। সেগুলোকে সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো না বলে আমাদের কাছে জানিয়েছিল। তামান্নার মৃত্যুর পর আমার মা সবচেয়ে বেশি ভেঙে পড়েছেন। মাকে নিয়ে আমরা চিন্তিত। কেননা তার কিছুদিন আগে হার্টের অপারেশন হয়েছে।
নিহতের সহকর্মী অপর্ণা গোমেজ জানান, আমরা একসঙ্গে রাজশাহীতে প্রশিক্ষণরত ছিলাম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ফ্লাই একাডেমি অ্যান্ড সিভিল এভিয়েশনের ঢাকায় ফ্লাইংয়ের কোন অনুমতি না থাকায় আমাদের রাজশাহীতে থাকতে হয়েছে। বিমানবন্দরের পাশেই একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। তামান্না খুব প্রাণোচ্ছল একটি মেয়ে ছিল। রাজশাহী বিমানবন্দরে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা অনেক কম। তামান্নার প্রশিক্ষণের বিমানটির ইঞ্জিনটিতে আগুন ধরে গিয়ে রানওয়ের পাশে বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রায় ২০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের একটি মাত্র ইউনিট আসে। খবর পাওয়া মাত্র ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট এলে ওই বিমান থেকে তামান্নাকে উদ্ধার করা যেত। ফায়ার সার্ভিস আসতে আসতে ততক্ষণে সেখানে এমনিতেই আগুন নিভে যায়। বিমানবন্দরে জরুরি কোন ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট নেই, যা প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য অনেক ঝুঁকিপূর্ণ। নিহত তামান্নার জানাজা গতকাল দুপুরে নিকুঞ্জ-২-এর ৫ নম্বর রোডের মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়।
No comments