‘বোঝেনই তো সব, মেয়রের আর কী ক্ষমতা?’ by কুন্তল রায়
সকাল
১০টা। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, ভ্যান,
মোটরসাইকেল ও লেগুনার (হিউম্যান হলার) দীর্ঘ সারি। একটি লেগুনা আইন অমান্য
করে রাস্তার উল্টো দিক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করায় সৃষ্টি হওয়া যানজট ছাড়াতে
হিমশিম খাচ্ছে ট্রাফিক পুলিশ। স্বগতোক্তির স্বরে রিকশাচালক শফিউদ্দিন
বলেন, ‘কেউ কাউরে মানে না! সবাই আগে যাইতে চায়।’
ঢাকা সিটি করপোরেশন মেয়র নির্বাচন সামনে। রিকশাযাত্রী এই প্রতিবেদক কেমন মেয়র চান জানতে চাইলে দিনাজপুরের শফিউদ্দিন বলেন, ‘আমি তো আর ভোট দিমু না, এলাকার ভোটার। কিন্তু নতুন মেয়র যেন জ্যাম (যানজট) ঠিক করবার পারে।’
ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে যানজট নৈমিত্তিক সমস্যা। গতকাল মঙ্গলবার এই প্রতিবেদক মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, হাইকোর্ট ও পল্টন এলাকার যত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন, প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে নতুন মেয়রের কাছে যানজট দূর হওয়ার প্রত্যাশা করেছেন। তবে এর সঙ্গে আছে কঠোরভাবে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ এবং গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো। অনেকেই মনে করছেন, ঢাকা শহরে ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।
ভোটের আর এক মাসও সময় নেই। শ্যামলী রিং রোডের ব্যবসায়ী মাহমুদ চৌধুরী জানান, নির্বাচন নিয়ে তেমন কিছু ভাবেননি। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসা নিয়ে উৎকণ্ঠিত মাহমুদ উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘নতুন মেয়র এসে কি ঢাকাকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে দেবেন? বহু বছর ধরে মেয়র নেই, তাতে কী এমন হয়েছে?’
মাহমুদের মতো ভাবনার লোকের যে অভাব নেই, সেটা বোঝা গেল হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকার একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকানদার বা চাকরিজীবীর সঙ্গে কথা বলে। নতুন মেয়র রাতারাতি ঢাকাকে বদলে দেবেন, এমনটা যেমন কেউ মনে করেন না, তেমনি নতুন মেয়রের কাছে তাঁদের তেমন কোনো প্রত্যাশাও নেই। পল্টনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইকরামের মতে, নতুন মেয়র হয়তো অনেক আশ্বাস দিয়ে নির্বাচিত হবেন, কিন্তু কোনো আশ্বাসই তিনি পূরণ করতে পারবেন না। কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বোঝেনই তো সব, মেয়রের আর কী ক্ষমতা?’
বছরে বছরে বাসাভাড়া বাড়ানো ঢাকার অন্যতম সমস্যা। ঝিগাতলার বাসিন্দা ও ব্যাংক কর্মকর্তা নুরুজ্জামান চান, যে ব্যক্তি ঢাকার বাসাভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, তারই মেয়র হওয়া উচিত। গরম আসতে না আসতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে, এসব সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা থাকতে হবে নতুন মেয়রের।
ঢাকায় এমনও ব্যক্তিরা আছেন, যাঁদের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সীমানা সম্পর্কেই কোনো ধারণা নেই। ধানমন্ডির বাসিন্দা রুমা আহমেদ বলতে পারেননি, ধানমন্ডি সিটি করপোরেশনের উত্তর না দক্ষিণ অংশের মধ্যে পড়েছে। কারা মেয়রপ্রার্থী হয়েছেন, সে বিষয়েও তাঁর কোনো ধারণা নেই। শাহবাগের ওষুধ ব্যবসায়ী মো. ফারুকও নিশ্চিত নন, শাহবাগ কোন সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত।
মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রতন আশাবাদী যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যবসাবান্ধব হবেন। কারণ, এখানে প্রার্থীদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধ হলে ব্যবসা ভালো হবে। আর ক্রেতাদের মতে, নিয়মিত বাজার পরিদর্শন ও মূল্যতালিকা সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে সিটি করপোরেশনের। বাজার করতে আসা নিজামুল করিম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের বাজারগুলো কেন মীনাবাজার, আগোরার মতো হয় না?’
সিটি করপোরেশনের সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সেবা পাওয়ার সুযোগ আরও সহজলভ্য করার পরামর্শ দেন একাধিক ব্যক্তি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মিঠুন বিশ্বাস বলেন, অনলাইনে সিটি করপোরেশনের সব সেবা পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে বিল পরিশোধ, আবেদন জমা প্রভৃতি সবকিছু অনলাইনভিত্তিক হলে মানুষের হয়রানি কমবে বলে তিনি মনে করেন। কেউ কেউ মনে করেন, সিটি করপোরেশনের সেবা ও কাজ নিয়ে মানুষের ধারণা কম। এ জন্য এসব নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা থাকা দরকার।
তবে অনেকেই বলেছেন, ঢাকাকে একটি আধুনিক মহানগর হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন, এমন ব্যক্তিকেই তাঁরা মেয়র দেখতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তামান্না বাশার বলেন, পরিচ্ছন্ন, দুর্নীতি ও সংঘাতমুক্ত ঢাকা গড়তে পারবেন এমন ব্যক্তিকে মেয়র হিসেবে চাই। রাজনৈতিক দলের পরিচয় যেন মেয়রের মুখ্য পরিচয় না হয়। মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাইফুলের মতে, নতুন মেয়রের দায়িত্ব হবে ঢাকাকে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানো।
ঢাকা সিটি করপোরেশন মেয়র নির্বাচন সামনে। রিকশাযাত্রী এই প্রতিবেদক কেমন মেয়র চান জানতে চাইলে দিনাজপুরের শফিউদ্দিন বলেন, ‘আমি তো আর ভোট দিমু না, এলাকার ভোটার। কিন্তু নতুন মেয়র যেন জ্যাম (যানজট) ঠিক করবার পারে।’
ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে যানজট নৈমিত্তিক সমস্যা। গতকাল মঙ্গলবার এই প্রতিবেদক মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, হাইকোর্ট ও পল্টন এলাকার যত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেছেন, প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে নতুন মেয়রের কাছে যানজট দূর হওয়ার প্রত্যাশা করেছেন। তবে এর সঙ্গে আছে কঠোরভাবে ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ এবং গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো। অনেকেই মনে করছেন, ঢাকা শহরে ট্রাফিক আইন অমান্য করার প্রবণতা আগের চেয়ে বেড়ে গেছে।
ভোটের আর এক মাসও সময় নেই। শ্যামলী রিং রোডের ব্যবসায়ী মাহমুদ চৌধুরী জানান, নির্বাচন নিয়ে তেমন কিছু ভাবেননি। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে ব্যবসা নিয়ে উৎকণ্ঠিত মাহমুদ উল্টো প্রশ্ন করেন, ‘নতুন মেয়র এসে কি ঢাকাকে সিঙ্গাপুর বানিয়ে দেবেন? বহু বছর ধরে মেয়র নেই, তাতে কী এমন হয়েছে?’
মাহমুদের মতো ভাবনার লোকের যে অভাব নেই, সেটা বোঝা গেল হাইকোর্ট, প্রেসক্লাব ও পল্টন এলাকার একাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, দোকানদার বা চাকরিজীবীর সঙ্গে কথা বলে। নতুন মেয়র রাতারাতি ঢাকাকে বদলে দেবেন, এমনটা যেমন কেউ মনে করেন না, তেমনি নতুন মেয়রের কাছে তাঁদের তেমন কোনো প্রত্যাশাও নেই। পল্টনের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ইকরামের মতে, নতুন মেয়র হয়তো অনেক আশ্বাস দিয়ে নির্বাচিত হবেন, কিন্তু কোনো আশ্বাসই তিনি পূরণ করতে পারবেন না। কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বোঝেনই তো সব, মেয়রের আর কী ক্ষমতা?’
বছরে বছরে বাসাভাড়া বাড়ানো ঢাকার অন্যতম সমস্যা। ঝিগাতলার বাসিন্দা ও ব্যাংক কর্মকর্তা নুরুজ্জামান চান, যে ব্যক্তি ঢাকার বাসাভাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন, তারই মেয়র হওয়া উচিত। গরম আসতে না আসতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে, এসব সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা থাকতে হবে নতুন মেয়রের।
ঢাকায় এমনও ব্যক্তিরা আছেন, যাঁদের ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সীমানা সম্পর্কেই কোনো ধারণা নেই। ধানমন্ডির বাসিন্দা রুমা আহমেদ বলতে পারেননি, ধানমন্ডি সিটি করপোরেশনের উত্তর না দক্ষিণ অংশের মধ্যে পড়েছে। কারা মেয়রপ্রার্থী হয়েছেন, সে বিষয়েও তাঁর কোনো ধারণা নেই। শাহবাগের ওষুধ ব্যবসায়ী মো. ফারুকও নিশ্চিত নন, শাহবাগ কোন সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত।
মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের মাছ ব্যবসায়ী রতন আশাবাদী যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যবসাবান্ধব হবেন। কারণ, এখানে প্রার্থীদের বেশির ভাগই ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, চাঁদাবাজি বন্ধ হলে ব্যবসা ভালো হবে। আর ক্রেতাদের মতে, নিয়মিত বাজার পরিদর্শন ও মূল্যতালিকা সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে সিটি করপোরেশনের। বাজার করতে আসা নিজামুল করিম বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের বাজারগুলো কেন মীনাবাজার, আগোরার মতো হয় না?’
সিটি করপোরেশনের সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি সেবা পাওয়ার সুযোগ আরও সহজলভ্য করার পরামর্শ দেন একাধিক ব্যক্তি। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মিঠুন বিশ্বাস বলেন, অনলাইনে সিটি করপোরেশনের সব সেবা পাওয়ার সুযোগ থাকতে হবে। সেই সঙ্গে বিল পরিশোধ, আবেদন জমা প্রভৃতি সবকিছু অনলাইনভিত্তিক হলে মানুষের হয়রানি কমবে বলে তিনি মনে করেন। কেউ কেউ মনে করেন, সিটি করপোরেশনের সেবা ও কাজ নিয়ে মানুষের ধারণা কম। এ জন্য এসব নিয়ে ব্যাপক প্রচারণা থাকা দরকার।
তবে অনেকেই বলেছেন, ঢাকাকে একটি আধুনিক মহানগর হিসেবে গড়ে তুলতে পারবেন, এমন ব্যক্তিকেই তাঁরা মেয়র দেখতে চান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী তামান্না বাশার বলেন, পরিচ্ছন্ন, দুর্নীতি ও সংঘাতমুক্ত ঢাকা গড়তে পারবেন এমন ব্যক্তিকে মেয়র হিসেবে চাই। রাজনৈতিক দলের পরিচয় যেন মেয়রের মুখ্য পরিচয় না হয়। মনোবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র সাইফুলের মতে, নতুন মেয়রের দায়িত্ব হবে ঢাকাকে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে বাঁচানো।
No comments