সিটি নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়ার নির্দেশ
সিটি
কর্পোরেশন নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সংসদ নেতা ও
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, হরতাল-অবরোধের নামে
বিএনপি-জামায়াত জোট যে সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে তার বিরুদ্ধে জনগন
ভোট দিতে প্রস্তুত। এজন্য জনগনকে সংগঠিত হতে হবে। তিন সিটি করপোরেশন
নির্বাচনে দল সমর্থিত মেয়র ও কাউন্সিলদের বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে
হবে। নিজের নির্বাচনী এলাকায় নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য সকল
সংসদ সদস্যকে নির্দেশ দেন তিনি। গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায়
তিনি এই নির্দেশ দেন। অধিবেশন শেষে জাতীয় সংসদ ভবনে সরকারী দলের সভাকক্ষে
এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে দলের
সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, সিনিয়র সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ, শেখ
ফজলুল করিম সেলিম, ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান, হুইপ
আতিউর রহমান আতিক, ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস প্রমুূখ বক্তব্য রাখেন।
দলীয় সূত্র জানায়, সভায় নেতাদের পুরো বক্তব্যেই ছিল আসন্ন তিন সিটি
করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে
আমাদের শান্তির পক্ষে ভোটযুদ্ধ। বিএনপি-জামায়াত জোট যে আন্দোলনের নামে
সহিংসতা-নাশকতা-মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে, এসব বিষয়গুলো নির্বাচনী প্রচারে
জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে। যাতে ভোটাররা সচেতন হয়ে সন্ত্রাসী-নাশকতাকারী
ও খুনীদের ‘না’ বলে আমাদের পক্ষে অর্থাৎ শান্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে ভোট
দেয়। একইসঙ্গে বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুত-পানি-গ্যাস সমস্যার সমাধান,
হাতিরঝিলসহ রাজধানী ঢাকার বৈপ্লবিক উন্নয়ন সাধনের বিষয়গুলোও ঢাকার ভোটারদের
সামনে তুলে ধরারও নির্দেশ দেন তিনি। বৈঠকে তিন সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে
প্রতিটি এলাকায় যে যে এলাকার জনগোষ্ঠী বেশি, সেই এলাকার এমপিদের ওই সব
এলাকায় দলের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকা উত্তরে
ফারুক খান এবং দক্ষিণে ড. আবদুর রাজ্জাক নির্বাচন পরিচালনায় সমন্বয়কের
দায়িত্ব পালন করবেন। আর ঢাকা মহানগরীর ১৫টি নির্বাচনী এলাকায়
ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হবে। সংসদ সদস্যরা এসব টিমে বিভক্ত হয়ে
প্রচার চালাবেন। আর কেন্দ্রীয় শীর্ষ নেতারা পুরো নির্বাচনগুলো মনিটরিং
করবেন। তবে কোনভাবেই নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে লঙ্ঘিত না হয় সেজন্য
মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদেরও সতর্ক করা হয়। একইসঙ্গে সিটি নির্বাচনকে নামনে
রেখে বিএনপি-জামায়াত জোটের সন্ত্রাসীরা কোন নাশকতা-সহিংসতা সৃষ্টি করতে না
পারে সেজন্যও এমপিদের নিজ নিজ এলাকায় সতর্ক অবস্থানে থাকারও নির্দেশনা
দেওয়া হয়। বৈঠকে তোফায়েল আহমেদ বলেন, তিন সিটি করপোরেশন এলাকায় যে যে জেলার
আঞ্চলিক জনসংখ্যা বেশি, ওই এলাকার সংসদ সদস্যদের সেখানে কাজ করতে হবে।
নিজের এলাকার লোকদের সংগঠিত করে দলের প্রার্থীর পক্ষে ভোট আনতে হবে। সৈয়দ
আশরাফ বলেন, তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই নিতে হবে। তাই
এমপি-নেতাদের ঘরে বসে থাকলে চলবে না। প্রতিটি ভোটারের কাছে গিয়ে
বিএনপি-জামায়াত জোটের নৈরাজ্য এবং বর্তমান সরকারের উন্নয়ন-সাফল্যেগুলো তুলে
ধরতে হবে। একাধিক প্রার্থীতা প্রসঙ্গে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, এক একটি
ওয়ার্ডে ৮/১০ জন করে আমাদের দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থী। সেক্ষেত্রে একক
প্রার্থী চূড়ান্ত করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত একক প্রার্থী
নিশ্চিত করা সম্ভব হতে পারে। ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস বলেন, ঢাকা উত্তরের
চাইতে দক্ষিণে দলের মেয়র প্রার্থীকে বিজয়ী করতে বেশি পরিশ্রম করতে হবে।
এসময় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, মানুষের আস্থা অর্জনে এলাকার জনগণের পাশে
থাকতে হবে। জনগণের সঙ্গে কথা বলতে হবে। তাদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকতে হবে।
একইসঙ্গে সংগঠনকেও জোরদার করতে হবে, ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করতে
হবে।
খালেদা ব্যর্থ নেত্রী: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী হচ্ছেন ধ্বংসের রানী। তিনি শুধু ধ্বংস করতেই জানেন। আমরা সৃষ্টি করছি, তিনি ধ্বংসের খেলা খেলছেন। দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও সর্বনাশ করতে জানেন। মানুষের লাশের স্তূপের ওপর দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু দেশের জনগণ তা কোন দিনই হতে দেবে না। এ ধরনের অমানবিক কাজ যারা করতে পারে তাদের দেশের মানুষ মেনে নেবে না, বাংলাদেশের মাটিতে তাদের স্থান হবে না। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘ব্যর্থ নেত্রী’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) সরকার পরিচালনা করতেও ব্যর্থ হয়েছেন, আন্দোলনেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। আর এ ব্যর্থতার আক্ষেপ থেকেই বিএনপি নেত্রী দেশের মানুষের বিরুদ্ধে জিঘাংসার পথ বেছে নিয়েছেন। জনসমর্থন না পাওয়ার আক্রোশ থেকেই তিনি দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছেন। রাজনীতি যদি দেশের জনগণের কল্যাণে হয়, তবে তিনি সে দেশের মানুষকেই কিভাবে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারেন? এটা কোন ধরনের রাজনীতি? খালেদা জিয়ার এ ধ্বংসাত্মক রাজনীতি দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদে প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর সমাপনী বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বশেষ রাজনীতি, বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা-সহিংসতার সমালোচনা এবং সরকারের সফলতার দিকটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতির নামে যিনি দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেন, মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড করেন, সেই নেত্রীর (খালেদা জিয়া) সঙ্গে কোন বিবেকবান মানুষ থাকতে পারে না। শত নাগরিকের নামে যারা তৎপরতা চালাচ্ছেন তাদের হৃদয়ে এত দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ, মৃত্যুও কি নাড়া দেয় না। তারা কিভাবে এভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার জঘন্য রাজনীতিকে সমর্থন করেন? তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীর আহ্বানে কেউ সাড়া দেয় না, ন্যূনতম জনসমর্থন নেই। বিএনপি নেত্রী হুকুম দেন, মন্ত্রীর লোভ দেখান- তবুও তার দল ও দলের নেতারা নড়ে না। এটা কার দোষ? জনগণ ও তার দলের নেতারাই বিএনপি নেতার নির্দেশ শুনে না, সেই আক্রোশ থেকেই জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। সরকার থেকেও ব্যর্থ হয়েছেন, এখনও ব্যর্থ হয়েছেন। সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেও তিনি (খালেদা জিয়া) সফল হয়েছেন হত্যা, দুর্নীতি, নিজের, পুত্র ও নেতাদের হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ গড়ে তুলতে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা, সারা দেশে বোমা ও গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করতে। ক্ষমতায় থেকে মানুষের গ্রাস কেড়ে নিয়ে বিএনপি নেত্রী ও তার দুই পুত্র আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতি আর খোয়াব ভবন খুলে ফুর্তি করার ক্ষেত্রেও বিএনপি নেত্রীর দল সফল হয়েছেন। সংসদ নেতা বলেন, আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে অর্থনীতিসহ দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি, সারাবিশ্বে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আর দেশের এ উন্নয়নকে ধ্বংস করতেই ষড়যন্ত্রে নেমেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, সৃষ্টির সেরা জীব হচ্ছেন মানুষ। সেই মানুষকে কেউ কি এমনভাবে গায়ে পেট্রল দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারতে পারে? এত মানুষকে হত্যা করেও বিএনপি নেত্রীর এতটুকু অনুতাপ বা দুঃখবোধ নেই। সংবাদ সম্মেলনেও এত পোড়া মানুষের কথা একবারও বললেন না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি নেত্রীসহ তার দলের নেতারা এতই অর্থ-সম্পদ গড়ে তুলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই এজেন্টকে বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে ভাড়া করেছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র ধরা পড়েছে, মার্কিন আদালতে বিএনপি নেতার জেল হয়েছে। শুধু এখানেই নয়, এফবিআই সাক্ষী দিয়েছে বিএনপি নেত্রীর দুই পুত্র কত অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। দেশের ইতিহাসে আমরাই প্রথম সিঙ্গাপুর থেকে বিএনপি নেত্রীর পুত্রদের পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনেছি। এ প্রসঙ্গে ভারতের বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে মিথ্যা ফোনালাপ এবং ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের ভুয়া বিবৃতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বিএনপি নেত্রী বোকা বানিয়েছে। কিন্তু শুধু দেশের মানুষই নয়, বিদেশীদের নিয়েও বিএনপি নেত্রী ধোঁকাবাজি-ভাঁওতাবাজি ধরা পড়েছে। বিএনপি নেত্রীকে নাকি ভারতের বিজেপি সভাপতি ফোন করেছে- এটা প্রচার করা হলো। কিন্তু বিজেপি সভাপতি তা অস্বীকার করলো। এমনকি মার্কিন ৬ কংগ্রেসম্যানের নামেও ভুয়া বিবৃতি দিলে ওই কংগ্রেসম্যানরা তা অস্বীকার করে নানা কথা বলেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের মাথা এসব ভাঁওতাবাজি করে নিচু ও হেঁট করার অধিকার বিএনপি নেত্রীকে কে দিয়েছে? বাংলাদেশের মানুষের মানসম্মান নিয়ে খেলার অধিকারইবা তিনি কোথায় পেলেন? দেশের জনগণ এসব আর মেনে নেবে না। বিভিন্ন ভূমি অফিসে হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি গোয়েন্দা সংস্থাদের নির্দেশ দিয়েছি কারা ভূমি অফিসে আগুন দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করতে। জড়িতদের কোন জমি থাকবে না, সরকার থেকে তাদের সব জমি অধিগ্রহণ করে জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হবে। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কারণে লাখো শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রীর যত ক্ষোভই যেন দেশের নিরীহ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের ওপর। আড়াইটি মাস শিশুরা স্কুলে যেতে পারেনি। বিএনপি নেত্রীর কারণে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেবেলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারেননি। এভাবে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস করে বিএনপি নেত্রী কি অর্জন করতে পেরেছেন? জনসমর্থনহীন সন্ত্রাস-নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যা কি ধরনের রাজনীতি? মানুষের কল্যাণে রাজনীতি হলে মানুষকে এভাবে পুড়িয়ে হত্যা কেন?
খালেদা ব্যর্থ নেত্রী: সংসদে প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী হচ্ছেন ধ্বংসের রানী। তিনি শুধু ধ্বংস করতেই জানেন। আমরা সৃষ্টি করছি, তিনি ধ্বংসের খেলা খেলছেন। দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও সর্বনাশ করতে জানেন। মানুষের লাশের স্তূপের ওপর দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু দেশের জনগণ তা কোন দিনই হতে দেবে না। এ ধরনের অমানবিক কাজ যারা করতে পারে তাদের দেশের মানুষ মেনে নেবে না, বাংলাদেশের মাটিতে তাদের স্থান হবে না। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘ব্যর্থ নেত্রী’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) সরকার পরিচালনা করতেও ব্যর্থ হয়েছেন, আন্দোলনেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। আর এ ব্যর্থতার আক্ষেপ থেকেই বিএনপি নেত্রী দেশের মানুষের বিরুদ্ধে জিঘাংসার পথ বেছে নিয়েছেন। জনসমর্থন না পাওয়ার আক্রোশ থেকেই তিনি দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছেন। রাজনীতি যদি দেশের জনগণের কল্যাণে হয়, তবে তিনি সে দেশের মানুষকেই কিভাবে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারেন? এটা কোন ধরনের রাজনীতি? খালেদা জিয়ার এ ধ্বংসাত্মক রাজনীতি দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে গতকাল সংসদে প্রেসিডেন্টের ভাষণের ওপর সমাপনী বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বশেষ রাজনীতি, বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা-সহিংসতার সমালোচনা এবং সরকারের সফলতার দিকটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতির নামে যিনি দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেন, মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড করেন, সেই নেত্রীর (খালেদা জিয়া) সঙ্গে কোন বিবেকবান মানুষ থাকতে পারে না। শত নাগরিকের নামে যারা তৎপরতা চালাচ্ছেন তাদের হৃদয়ে এত দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ, মৃত্যুও কি নাড়া দেয় না। তারা কিভাবে এভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার জঘন্য রাজনীতিকে সমর্থন করেন? তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রীর আহ্বানে কেউ সাড়া দেয় না, ন্যূনতম জনসমর্থন নেই। বিএনপি নেত্রী হুকুম দেন, মন্ত্রীর লোভ দেখান- তবুও তার দল ও দলের নেতারা নড়ে না। এটা কার দোষ? জনগণ ও তার দলের নেতারাই বিএনপি নেতার নির্দেশ শুনে না, সেই আক্রোশ থেকেই জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। সরকার থেকেও ব্যর্থ হয়েছেন, এখনও ব্যর্থ হয়েছেন। সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেও তিনি (খালেদা জিয়া) সফল হয়েছেন হত্যা, দুর্নীতি, নিজের, পুত্র ও নেতাদের হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ গড়ে তুলতে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা, সারা দেশে বোমা ও গ্রেনেড হামলা, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করতে। ক্ষমতায় থেকে মানুষের গ্রাস কেড়ে নিয়ে বিএনপি নেত্রী ও তার দুই পুত্র আঙুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতি আর খোয়াব ভবন খুলে ফুর্তি করার ক্ষেত্রেও বিএনপি নেত্রীর দল সফল হয়েছেন। সংসদ নেতা বলেন, আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে অর্থনীতিসহ দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি, সারাবিশ্বে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আর দেশের এ উন্নয়নকে ধ্বংস করতেই ষড়যন্ত্রে নেমেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, সৃষ্টির সেরা জীব হচ্ছেন মানুষ। সেই মানুষকে কেউ কি এমনভাবে গায়ে পেট্রল দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারতে পারে? এত মানুষকে হত্যা করেও বিএনপি নেত্রীর এতটুকু অনুতাপ বা দুঃখবোধ নেই। সংবাদ সম্মেলনেও এত পোড়া মানুষের কথা একবারও বললেন না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি নেত্রীসহ তার দলের নেতারা এতই অর্থ-সম্পদ গড়ে তুলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই এজেন্টকে বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে ভাড়া করেছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র ধরা পড়েছে, মার্কিন আদালতে বিএনপি নেতার জেল হয়েছে। শুধু এখানেই নয়, এফবিআই সাক্ষী দিয়েছে বিএনপি নেত্রীর দুই পুত্র কত অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। দেশের ইতিহাসে আমরাই প্রথম সিঙ্গাপুর থেকে বিএনপি নেত্রীর পুত্রদের পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনেছি। এ প্রসঙ্গে ভারতের বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে মিথ্যা ফোনালাপ এবং ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের ভুয়া বিবৃতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বিএনপি নেত্রী বোকা বানিয়েছে। কিন্তু শুধু দেশের মানুষই নয়, বিদেশীদের নিয়েও বিএনপি নেত্রী ধোঁকাবাজি-ভাঁওতাবাজি ধরা পড়েছে। বিএনপি নেত্রীকে নাকি ভারতের বিজেপি সভাপতি ফোন করেছে- এটা প্রচার করা হলো। কিন্তু বিজেপি সভাপতি তা অস্বীকার করলো। এমনকি মার্কিন ৬ কংগ্রেসম্যানের নামেও ভুয়া বিবৃতি দিলে ওই কংগ্রেসম্যানরা তা অস্বীকার করে নানা কথা বলেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের মাথা এসব ভাঁওতাবাজি করে নিচু ও হেঁট করার অধিকার বিএনপি নেত্রীকে কে দিয়েছে? বাংলাদেশের মানুষের মানসম্মান নিয়ে খেলার অধিকারইবা তিনি কোথায় পেলেন? দেশের জনগণ এসব আর মেনে নেবে না। বিভিন্ন ভূমি অফিসে হামলার প্রসঙ্গ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি গোয়েন্দা সংস্থাদের নির্দেশ দিয়েছি কারা ভূমি অফিসে আগুন দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করতে। জড়িতদের কোন জমি থাকবে না, সরকার থেকে তাদের সব জমি অধিগ্রহণ করে জনগণের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হবে। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কারণে লাখো শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রীর যত ক্ষোভই যেন দেশের নিরীহ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের ওপর। আড়াইটি মাস শিশুরা স্কুলে যেতে পারেনি। বিএনপি নেত্রীর কারণে ‘ও’ এবং ‘এ’ লেবেলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারেননি। এভাবে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস করে বিএনপি নেত্রী কি অর্জন করতে পেরেছেন? জনসমর্থনহীন সন্ত্রাস-নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যা কি ধরনের রাজনীতি? মানুষের কল্যাণে রাজনীতি হলে মানুষকে এভাবে পুড়িয়ে হত্যা কেন?
No comments